শিক্ষা সভ্যতার বিকাশ ঘটায়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৯:০৬:২১ রাত
'শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড' এ কথাটি ছোট বেলা থেকে অধ্যয়ন করে আসছি।এমনকি স্কুল জীবনে রচনা শিখার সময় আমরা প্রতিযোগিতা করেছিলাম এবং এ বিষয়ের গভিরতা বুঝার ব্যাপার ছিল না কেবল মাত্র সহপাঠিদের মধ্যে কে কার ছেয়ে বেশী মার্ক অর্জন করবো সেটাই ছিল মুল লক্ষ্য।আজ দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসে এর ভাবার্থ নতুন করে বুঝতে শুরু করলাম।নি:সন্দেহে শিক্ষা সভ্যতার বিকাশ ঘটায়।শিক্ষাই মানুষকে মুল্যবোধ শিখায় ও অবচেতন মনকে চেতনা যোগায়।একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।শিক্ষা মানুষকে বন্য জীবন থেকে সভ্যতায় পৌঁছে দিয়েছে।শৃংঙ্খলাবধ্য জীবনে আবদ্ধ করেছে।আমাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করি না।শিক্ষাকে কেন মেরুদন্ডের সাথে তুলনা করা হলো? একটি মেরুদন্ডি ও অমেরুদন্ডি প্রানীর যেমন পার্থক্য আছে তেমনি পার্থক্য আছে শিক্ষা ও মেরুদন্ডের সাথে।একটি মেরুদন্ডি প্রানীর সাথে অমেরুদন্ডি প্রানী কখনো প্রতিযোগিতা করতে পারেনা।যদিও করে তাহলে নির্ঘাত হারতে বাধ্য হবে।মানুষের মধ্যে যারা সচেতন তারা মেরুদন্ড সোজা করেই বাঁচতে চায়।কেউই মেরুদন্ডহীনভাবে বাঁচতে চায় না।আমরা অনেকে শিক্ষিত বলে গৌরব করি।একশত ভাগ শিক্ষার হার নিয়ে স্কুল কলেজ , অভিভাবকবৃন্দ ও ছাত্র ছাত্রীদের উল্লাস করতে দেখি।কিন্তু শিক্ষার আসল রুপ কি হওয়া উচিত তা অনেকেই জানি না।শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে যুগের পর যুগ পর্যালোচনা,পরিবর্তন , পরিবর্ধন কোন কিছুই নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে পারেনি।এই মেরুদন্ডকে সোজা ও সুদৃড় করার জন্য জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনে ব্যায় করি।এই অর্জিত শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ব্যার্থতায় পর্যবেশিত করে।সভ্যতার এ যুগ যাকে আমরা বিজ্গানের উৎকর্ষতার যুগ বলি তাতে শিক্ষার উৎকর্ষতা না হয়ে মুল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রবল ধারা বর্ষিত হতে দেখা যায়।
আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি পাঠ্যপুস্তকের সাথে নৈতিক শিক্ষার একটা প্রভাব ছিল।ইসলামিয়াত বলে যে বিষয়টি ছিল তাতে দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো সন্নিবেশিত ছিল অন্তত: এতটুকু আমরা শিখেছিলাম কিভাবে ভাল ও মন্দের পার্থক্য করা যায়।তাছাড়া যে ছড়ার বইগুলো ছিল তাতেও নৈতিক শিক্ষা সম্বলিত ছড়া ছিল যা সমাজের অনেক বিষয় শিশুদের কচি মনকে নৈতিকতা গঠনে সহায়তা করতো।অধিকাংশ শিক্ষক ছিলেন উদার ও ধর্মানুরাগী।আমার মনে পড়ে একজন কঠোর ব্যাক্তিত্বের শিক্ষক ছিলেন যিনি ইসলামিয়াত পড়াতেন।শরিয়তের ছোট ছোট বিষয়গুলো পড়ে না আসলে বেত্রাঘাত করতেন ও সকল ছাত্র ছাত্রীর সামনে টেবিলে দাঁড় করে রাখতেন।আমার মনে হয় , এই কঠোর শাসনে ইসলাম ধর্মের উপর যে হাতে খড়ি হয়েছে আজ এত পরেও সে অবদান ভুলতে পারছিনে।সেই মূলধারাটি কুরআন ও হাদিসের দিকে প্রবলভাবে ধাবিত করেছে।আজকের বৈজ্গানিক সভ্যতার যুগে শিক্ষার যতটা প্রসার ঘটেছে তার ছেয়ে বেশি পদস্খলন হছ্ছে ছাত্র ছাত্রীদের পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতি অনুকরনের ফলে।এর প্রভাব আমাদের হাজার বছরের লালিত ইসলামি সংস্কৃতিকে পর্যুদস্ত করেছে।বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্হায় নৈতিক মান বজায় রাখার জন্য ইসলামের তেমন অনুশীলন নেই।বরং পাঠ্য বিষয়ে অনেইসলামিক সংস্কৃতি ,শরিয়তের ভুল তথ্য সন্নিবেশিত করা হছ্ছে যা ধরা পড়ছে দীর্ঘ পরে।কি করে সম্ভব হয় একটি পাঠ্য পুস্তকে ভুল তথ্য উপস্হাপন।এ কোন সহজ ভুল নয়।এর পিছনে রয়েছে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব।কোন বই ছাপা হলে বিশেষজ্গ দিয়ে ফ্রুপ রিডিং হয়ে থাকে।আর জাতীয় কোন ব্যাপার হলে সেখানে মিনিষ্ট্রি জড়িত থাকে।বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানের প্রফেসর যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেন।সেখানে ভুল থাকার কারন থাকতে পারে কি? আমরা এখানে দু'টো বিষয়কে জড়িত করতে পারি।এক-বিষয় সম্পর্কে অজ্গতা দুই-বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব।এছাড়া আর কোন কারন দেখিনা।সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্হায় নৈতিক মান বজায় রাখার জন্য ইসলামের তেমন অনুশীলন নেই বললেই চলে।অথচ আমরা মুসলমান নাম ধারন করে বেঁচে আছি।স্কুল কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলোতে যে শিক্ষা দেয়া হছ্ছে তা দুনিয়া নির্ভর।সত্তর ও আশির দশকেও এ রকম ভয়াভহ অবস্হা ছিল না আজ যেমন পরিলক্ষিত হয়।স্কুল কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলোতে যে অরাজকতা চলছে তাতে পড়াশুনার মান নিছের দিকেই যাছ্ছে।আমরা এক সময় দেখেছি ছাত্র নেতাদের দেখে সাধারন ছাত্ররা সম্মান ও সমীহ করতো।নেতারাও কনিষ্ঠদের স্নেহ করতেন যদিও সেখানে ইসলামের বালাই ছিলনা।সামজিকভাবে বসবাসের যে সাধারন নীতি তা পরিলক্ষিত হতো।আজ তার উল্টো।এখন শিক্ষকরা ছাত্রদের সমীহ করে চলেন।এক শ্রেনীর শিক্ষকরা এখন আন্দোলন নির্ভর অর্থাৎ ছাত্ররা যেমন রাজনৈতিক সংগঠনের লেজুড় শিক্ষকরাও তেমন।শিক্ষকদের সাথে ভাল সম্পর্ক হয়ে গেলে পড়ালেখা না করেও ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়া যায়।এ যখন জাতির অবস্হা তখন মেরুদন্ড তৈরি হছ্ছে কোথায়? দীর্ঘকাল পর এক প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যিনি এখন সন্তানের জনক,নিজের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন।ছাত্র ছাত্রিরা এখন ক্যাম্পাসে অশ্লিল কাজ করতে কা্উকে তোয়াক্কা করে না।ভদ্রলোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে তার দ্বাদশী মেয়েকে নিয়ে যাছ্ছিলেন।এমএস করার সময় কয়েকমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ষ্টাপ কোয়ার্টারে থেকেছিলেন কয়েকমাস।ভাবলেন ওখানে মেয়েকে পুরনো স্মৃতি দেখিয়ে গন্তব্যে চলে যাবেন।মসজিদের পাশ দিয়ে ঢুকতেই কয়েকজোড়া ছাত্র ছাত্রীকে দেখলেন অশ্লিল কাজে লিপ্ত।মেয়েটি জিজ্গেস করলো বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরা অশ্লিল কাজ করছে কেন? কি জবাব দেবে বাবা। তিনি আর কালক্ষেপন না করে বেরিয়ে গেলেন।যে মেয়েটির এখনো ১২ বা ১৩ পার হয়নি সে বুঝতে পারলো অশ্লিলতা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তারা বুঝছেনা।এ পরিস্হিতি বিরাজ করছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।শুধু কি তাই,একবার জাহান্ঙির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে পত্রিকায় পড়েছি এক ছাত্র ধর্ষনের সেন্চুরির উৎসব পালন করেছে।বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তৈরি হওয়ার পিছনে একটা ইতিহাস রয়েছে।ইংরেজরা এদেশে উচ্চশিক্ষার নামে অপসংস্কৃতি চালু করার জন্যই স্হাপন করেছিল।এটা বলবোনা ওখান থেকে ভাল মানুষ বের হছ্ছে না।তবে ভাল মানুষগুলোর সংখ্যা খুবই কম।যার পরিনতি দেখতে পাছ্ছেন।একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কি ঘুষ বানিজ্য করতে পারে? কাউকে ঠকাতে পারে? সরাকরি অর্থ আত্মসাৎকারিরা এ সমস্ত বিদ্যাপিঠ থেকেই বেরুছ্ছে।নৈতিক মান না থাকার কারনে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেখানেই দায়িত্ব পেয়েছে তারা খেয়ানত করে টাকার পাহাড় বানিয়েছে।একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় কি করে ২৫/৩০ বছরের মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়।ছাত্র জীবনে যাদের দেখেছি পরিবার থেকে মাসে ১০০০ হাজার টাকা খরচ করতে পারেনি।মাত্র একটি চাকুরির কারনে ২৫/৩০ বছরে ১/২ টি বাড়ি , ফ্লাট ,মার্কেট কমপ্লেক্সে দোকান আাবার তারই বন্ধু একসাথে পড়াশুনা করে কোনভাবে ছোট একটা অফিসার্স কোয়ার্টারে থেকে দিনাতিপাত করছে।এ আলাদিনের ছেরাগ কোথা থেকে এলো।পাঠক ভেবে দেখবেন।এ রকম হাজারো উদাহরন ছড়িয়ে আছে আমাদের সমাজে।লেটেষ্ট মডেলের গাড়ি হাঁকিয়ে চলে যাছ্ছে।কুরআন বলেছে সূরা বাক্কারার প্রথম দিকে মানুসের যখন অন্তর রোগগ্রস্ত হয়ে যায় তখন সে অন্তরে ঢাকনা পড়ে যায় আর সে কিছুই দেখতে পায় না।এই যে মেরুদন্ড হীন শিক্ষা লাভ করলো তা দ্বারা জাতিকে পিছিয়ে দেয়া হলো।
বর্তমান সময়ে নৈতিকতা বিপর্যয়ের আর একটি কারন হলো ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক ও কোচিং নির্ভরতা।খুব বেশি দিনের কথা নয়,আমরা যখন স্কুলে পড়েছি তখনো প্রাইভেট পড়ার প্রচলন ছিল তবে বর্তমান সময়ের মত নয়।আমরা তখন জটিল বিষয় গুলো টিফিন পিরিয়ডে গিয়ে শ্রেনি শিক্ষকের কাছ থেকে সলভ করে নিতাম।আবার কেউ কেউ ঐ সময়ে প্রাইভেট ও পড়তো।তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জটিল বিষয় যেমন: ইংলিশ , ম্যাথমেটিক্স,বিজ্গান বিষয়গুলো পড়তো অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্ররা।খুব বেশি দুর্বল হলে স্যারদের বাড়িতে যেতে বলতেন।তখন শিক্ষকগন টিউশন নির্ভর ছিলেন না।খুবই আন্তরিক ছিলেন এবং দায়িত্ববোধের কারনে নিজের সন্তানের মত ছাত্র ছা্ত্রিদের পরিচর্যা করতেন।যেমন শাসন করতেন তেমনি আদরও করতেন।সে জন্য তাদের সুনাম ছিল আকাশচুম্বী।শত কষ্ট হলেও আমরা দেখা করতে যেতাম। আজকাল তা দেখা যায় না কারন হলো মান সম্মান ঢাকা পড়েছে টাকার কারনে।আজকাল সন্তানের পড়ালেখা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে যতটা উদ্বেগ দেখা যায়,আমাদের সময় এ রকম ছিল না।এখন দেখা যায় শহরের এমন কোন গলি নেই যেখানে কোচিং সেন্টার নেই।এমনকি গ্রামে গন্জে ও পৌঁছে গেছে।আকর্ষনীয় বিজ্গাপনে এখন কোচিং সেন্টারগুলো নামি দামি শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত।শিক্ষার্থিরা কোচিং না করলে অনেক ক্ষেত্রেই ভাল করতে পারে না।এর একমাত্র কারন হলো স্কুল চলাকালীন পাঠদানে নিষ্কৃয়তা।সে কারনে অভিভাবকগন অনোন্যপায় হয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ কামনায় ব্যায় করেন বিশাল অংক।যদি একটি সন্তান থাকে তা না হয় চালানো যায়।কিন্তু যার ৪বা ৫জন স্কুলগামি সন্তান আছে তার পক্ষে এ ব্যায়ভার বহন করা সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।তাছাড়া আমাদের দেশে একজন নাগরিক মাসিক কত টাকা আয় করেন যিনি তার পারিবারিক অন্যান্য খরচ মোকাবিলা করে শিক্ষকদের এই ব্যায়ভার বহন করেতে পারেন। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন এখন সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়েছে,নোট মুখস্ত করার সময় কোথায়? সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হলেও বাস্তবে থেমে নেই মুখস্ত করার প্রবনতা।এই পদ্ধতি অনুসরন করে বাজারে বের হয়েছে বহু নোট,গাইড।এক শ্রেনির অসাধু ব্যবসায়ি রয়েছে তারা অপেক্ষায় থাকে তাদের রমরমা ব্যাবসা করার জন্য।অনেক শিক্ষক ছাত্র ছাত্রিদের পরামর্শ দেন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার জন্য।শিক্ষকের আচরনে এই যে পরিবর্তন,এর ফলে মেধাবি ছাত্র ছাত্রি গড়ে তোলা সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।আর একটি কারন হলো , মেধাবি কিছু ছাত্র ছাত্রি শিক্ষকদের এই শিক্ষার কারনে ছাত্র অবস্হায় গড়ে তুলেছে অনেক কোচিং সেন্টার।যার ফলে স্কুল কলেজে শিক্ষকগন পাঠদানে শিথিলতা করেন।এভাবে পড়াশুনা চলতে থাকলে শিক্ষার মান যেমন কমবে তেমনি ব্যার্থ হবে উন্নয়নের পথ।অথচ কত চমৎকার ছিল তখনকার সময়ে, যে ছাত্রটি ক্লাসে মেধাবি সে কঠিন বিষয়গুলো শিক্ষকের উপস্হিতিতে বোর্ডে বুঝিয়ে দিত।আথবা শিক্ষক ছাত্রকে বোর্ডে ডেকে নিয়ে আসতেন।এতে করে ছাত্রদের পাঠে দৃড়তা বৃদ্ধি পেত।ছাত্রদের মধ্যে গ্রুপ ষ্টাডি করার প্রবনতা ছিল।প্রতিদিন বিকালে বা সপ্তাহের শেষে জটিল সমস্যাগুলো গ্রুপ ষ্টাডির মাধ্যমে সমাধান হয়ে যেত।আমাদের সে সমস্ত সহপাঠি নিম্নতম রেজাল্ট করেও আজ দক্ষতার সাথে বড় বড় দায়িত্ব পালন করছে।আজকের গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া এ সব ছাত্র ছাত্রিকে অলরাউন্ড বলা যায় না।এখনকার একজন ছাত্র পড়ালেখা ছাড়া আর তেমন কোন কাজই জানে না।তার ঘর গুছানো,পোষাক পরিস্কার,কেনাকাটা ,খাবার পরিবেশন এসব এখন মা বা কাজের লোকেকেই করতে হয়।আমাদের সময়ে এ কজাগুলো আমরাই করতাম এবং জীবনের বাস্তব ট্রেনিং আমরা তখনই অর্জন করেছিলাম।এমনকি আমাদের কেউ কেউ খাবার তৈরিতে নারিদেরও হারাতে পারতো।তাহলে আজকের যে ছাত্রটি জীবনের প্ররারম্ভেই হয়ে উঠেছে পরনির্ভর হয়ে , কর্মক্ষেত্রে গিয়েই নির্ভরতা জন্ম নেয় অনৈতিকতায়। তবে আশার কথা যে প্রতিটি অভিভাবক এখন সচেষ্ট সন্তানকে কিভাবে পড়ালেখা শিখাবে।অধিকাংশ মায়েরা এখন ব্যাস্ত থাকে ছেলে মেয়ের পড়াশুনার পিছনে।সরকার যদি নেগেটিভ বিষয় গুলোর দিকে দৃষ্টি দেয় তাহলে পাঠদান স্কুলেই সমাপ্ত হবে এবং পিতামাতাকে অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে হবে না।একজন শিক্ষক ছাত্র ছাত্রিকে অসময়ে ঘুরাঘুরি করতে দেখলে পূর্বের মতই শাসন করলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।
শিক্ষা ব্যবস্হার ভিতরে যে এক বিষাক্ত বাতাস বইছে তা দ্রুব সত্য।নিত্যদিনের নানা শিক্ষা কেলেংকারি প্রকাশিত হছ্ছে দৈনিক পত্রিকাগুলোতে।বলতে হবে কোন এক অদৃশ্য , অজ্গাত , অশুভ শক্তি থাবা বসিয়েছে শিক্ষা ব্যবাস্হার উপর।একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে শিক্ষক ,ছাত্র ও অভিভাবকের সাহায্যে।স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নিয়ম শৃংখলার মধ্যে না আসে তা হলে সেখান থেকে ভাল ছাত্র ছাত্রি বেরুনো অসম্ভব।শিক্ষা ব্যাবস্হাকে সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।নৈতিক মান গড়ে তুলতে হলে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি তথা ইসলামি শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে।যে রাসূলের আগমনে পৃথিবী ধন্য হয়েছে তার কোন জীবন কর্ম স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই।এমনকি ইসলামিক ষ্টাডিজ এর মত বিষয়ে কুরআন হাদিসের পর্যাপ্ত শিক্ষা সিলেবাসে নেই।জাতি গঠন করতে হলে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ইসলামের বেসিক দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঈমান , নামাজ, রোজা,যাকাত ,হজ্জের মত শরিয়তের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো কোমলমতি ছাত্র ছাত্রিদের পাঠদানে সংযুক্ত করা হলে তারা ইসলামি মূল্যবোধে বেড়ে উঠবে।এতে করে ধীরে ধীরে অপসংস্কৃতি বিদূরিত হবে।অর্থনীতিতে Money measurement পড়তে গিয়ে পড়েছিলাম 'Bad money drives good money out of circulation' অর্থাৎ বাজারে যখন মন্দ মুদ্রার আবির্ভাব হয় তখন ভাল মুদ্রা আপনিই বাজার থেকে উবে যায়।'আজ যে অবস্হা বিরাজ করছে তার সাথে এ রকমই তুলনা চলে।মানুষ এত বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে সমাজ ও জন গনের চিন্তাই কেউ করছেনা।শিক্ষা ব্যাবস্হার যদি আমুল পরিবর্তন করা না হয় তাহলে আগামি প্রজন্ম এক ভয়াবহ পরিস্হিতির শিকার হবে।
মানসম্মত শিক্ষা পদ্ধতি জ্গানের বিকাশ ঘটায়।মানুষের চেতনার মানকে উন্নত করে।সৃষ্টিশীল চিন্তাধারাকে ত্বরান্বিত করে। মানুষকে উদ্ভাবক হিসেবে তৈরি করতে সাহায্য করে।একটি দেশ অনেকগুলো বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত।যদি মানসম্মত উদ্ভাবক সংখ্যা না বাড়ে তাহলে সমাজ বা দেশের উন্নতি হবে কেমন করে?বৈজ্গানিক ব্যাবস্হার সাথে কুরআন হাদিসের অনুশীলন হলে মান সম্মত উদ্ভাবক তৈরি হবে।যিনি বৈজ্গানিক হবেন তিনি কুরআন হাদিসের পান্ডিত্ব অর্জন করবেন।যিনি অর্থনীতিবিদ হবেন তিনি ইসলামি অর্থনীতিতেও পন্ডিত হবেন।স্পেনে মুসলমানদের ৮০০ বছরের রাজত্বে মুসলমানরা এ রকম যোগ্যতার অধিকারি ছিল।বিশ্বমানের সাহিত্য চর্চা থাকতে হবে।ভাল সাহিত্য না পড়লে সৃষ্টিশীল চিন্তা বা উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ে না।মানবিক মুল্যবোধ ও নৈতিকতা বর্ধিত হয় গভীর জ্গানের কারনে।আর মানবিক মুল্যবোধ না বাড়লে কল্যানকর চিন্তাও আসবেনা।আত্মকেন্দ্রিক প্রবনতাই কেবল বাড়তে থাকবে।প্রশ্ন আসতে পারে আমাদের দেশে কি শিল্পি ,সাহিত্যিক , বৈজ্গানিক তৈরি হছ্ছে না? হাঁ হছ্ছে আর তা শুধুমাত্র পাশ্চাত্ব শিক্ষা নির্ভর যেখানে নৈতিক মান সম্পর্ন ব্যাক্তিত্ব খুবই কম।শিক্ষা ব্যবস্হার ত্রুটির কারনে মানুষের মুল্যবোধ কমে যায়।রাস্তায় একজন অসুস্হ মানুষকে পড়ে থাকতে দেখেও সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয় না।নেতিবাচক শিক্ষা কখনো মেরুদন্ড তৈরি করে না।বড় বড় ডিগ্রি হলেই সেটাকে শিক্ষা বলা যাবে না।শিক্ষার সাথে থাকতে হবে সংস্কৃতি ,রুচিবোধ ও মানবতাবোধ। তবেই সে শিক্ষা হয়ে উঠবে প্রকৃত শিক্ষা।শিক্ষার আলো সমাজ ও দেশের মঙল ঘটায় ও কল্যানসাধিত করে। বিজ্গানিরা নিজের কল্যানের কথা ভেবে কোন কিছু আবিষ্কার করে না।কোন সৃষ্টিশীল মানুষ নিজের জন্য কোন কিছু সৃষ্টি করেন না।বরং তা হয়ে থাকে গোটা মানবজাতির জন্য।শিক্ষা হবে নিজের জন্য ও মানবজাতির কল্যানের জন্য।শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ শিক্ষা হলো সংকীর্ন শিক্ষা।
তাই শিক্ষাই আমাদের একমাত্র বাহন হওয়া উচিত।আমাদের উদ্দেশ্য ঠিক করে নিয়ে ব্যাক্তিকেন্দ্রিকতাকে কমিয়ে সমাজকেন্দ্রিক কাজে অগ্রসর হতে হবে।তাহলেই আমরা সফল নাগরিক হতে পারবো।আমরা নিজেরাই নিজেদের নিয়নত্রক।কোনটা গ্রহন আর কোনটা বর্জন করতে হবে সেটা আমাদের দৃষ্টিভঙি ,চিন্তা ও মনের উপর নির্ভর করে।জীবন যাত্রার কোন কোন ব্যাপারগুলো বদলানো দরকার সেগুলো ঠিক করে নিতে হবে।আপনার সময় গুলোকে কাজে লাগাতে হবে।তিরমিজি শরিফে রাসূল সা: বলেন ক্কেয়ামতের দিন ৫টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া কেউ একা পা ও এগুতে পারবেনা।তার একটি হলো যতটুকু ইলম আছে তা প্রচার করেছে কিনা।প্রকৃত শিক্ষা হলো কল্যানের দিকে এগিয়ে যাওয়া।মানুষের সুখে দু:খে অংশ গ্রহন করা,অপরকে ভাল কাজে উৎসাহ দেয়া,অপরের সাফল্যে আনন্দিত হওয়া এবং সকল মানুষকে ভালবাসতে শিখা।আমি দীর্ঘ জীবন বেঁচে থাকলাম আর মৃত্যুর পর আমাকে আমার ভাল কাজের জন্য যদি স্মরন করা হয় সেটাই প্রকৃত পাওয়া।হতে পারে আমার ও আপনার ছোট কাজগুলোকে দেখে নতুন প্রজন্ম আরো বড় কাজে এগিয়ে যেতে পারে।সেজন্য আপনার কোন কাজকেই ছোট ভাবার কারন নেই।আমাদের মনে রাখতে হবে সঠিক শিক্ষাই মানুষকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।সংকির্ন মন ও সংকির্ন চিন্তাভাবনা নিচতার লক্ষন।আমরা যদি আত্মমর্যাদা চাই তাহলে আত্মবিশ্বাসের সাথে জাতির সামনে স্বাক্ষর রাখতে হবে।তাহলেই আমরা অর্জন করতে পারবো প্রকৃত সম্মান।
বিষয়: বিবিধ
২০১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন