আলকুরআন বুঝতে কষ্ট হলে লাইব্রেরিতে ভলিউম বই পড়তে ও বুঝতে কষ্ট হয় না কেন?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০২:০১:১২ দুপুর
আমরা এই শতাব্দির মুসলমানরা এক আশ্চর্য মুসলমান হিসেবে জীবনযাপন করছি।আরো আশ্চর্য হলো আমাদের কারো কারো নতুন প্রজন্ম ইসালমি জীবনবোধ সম্পর্কেও তেমন ধারনা রাখেনা।আমি মাঝে মাঝে উৎসুক হয়ে ছেলে মেয়ে দেখলে জিজ্গেস করি বাবা কুরআন পড়তে পার? আল্লাহ কোথায় জান কি? আমাদের নবিজি সা: সম্পর্কে তোমার ধারনা আছে? এ সমস্ত প্রশ্ন করি।কিছু ছেলে মেয়ে বলে পড়ার চেষ্টা করি আাবার কিছু সংখ্যক একেবারে আশ্চর্য হয়ে বলে আংকেল এগুলো প্রশ্ন হলো? আমরা তো এ সব প্রশ্ন কাউকে করতে শুনিনি।পাঠক বুঝতেই পারছেন এই যে সমাজে এক ধরনের মুসলমান মুসলমানদের সাথে অবস্হান করছে আসলেই কি তাদের মুসলমানিত্য আছে? আমার জানা অসংখ্য লার্নেড আছেন আমাদের পরিমন্ডলে এবং আমি অসংখ্যবার ভিজিট করেছি।বিশাল লাইব্রেরি বাসায়।দেশি বিদেশি লেখকের ভলিউম বই শোভা পাছ্ছে আলমিরাতে অথচ সেখানে একটিও কুরআন নেই বা হাদিসের বই নেই তাপছির নেই এমনকি ইসলামের উপর অনেক ভাল লেখক তাদেরও বই নেই।তিনি একজন মুসলমান।নামাজ কখনো পড়েন বা পড়েন না।এই ঘরে যে সন্তান বসবাস করবে তারা কোন পরিচয়ে মানুষ হবে।তিন বা সাড়ে তিন বছর হলেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পঠানো হয় যেখানে ইসলামের কোন পরিচয় নেই।কারো কারো বাসায় শুধুমা্ত্র এক ঘন্টার জন্য একজন কুরআনের শিক্ষক আসেন কোন রকম কুরআন শিখানোর জন্য।এটুকুর মধ্যেই তাদের মুসলমানিত্ত্য।কুরআন কি আসলে এজন্যই নাযিল হয়েছে?
কুরআন শব্দের অর্থই হছ্ছে যা অধিক পঠিত হয়।দুনিয়ায় আর দ্বিতীয় কোন কিতাব নেই যা প্রতিনিয়ত পঠিত হয়।আপনি পৃথিবির যেখানেই যান না কেন দেখবেন এই একটিই কিতাব।কেউ পড়ছে উচ্চ স্বরে, কেউ নিচু স্বরে,আবার কেউ পড়ছে আর অঝর ধারায় অশ্রু ঝরছে।কি আছে এর মধ্যে যে অন্তরকে ভারাক্রান্ত করে তোলে।এখানে একটি বিষয় পরিস্কার তা হলো যে বুঝে পড়ে তার হৃদয় রবের সাথে একাত্ম হয়ে যায়।প্রতিদিনই পড়ছি,একটি সূরা কয়েকবার পড়ছি, কোন অনিহা কি এসেছে? পৃথিবির অন্য লেখকদের গল্প উপন্যাস যদি এক বা দু'বার পড়া হয় তাহলে অনিহা চলে আসে।কিন্তু কুরআন পড়ছি গত চল্লিশ বছর ধরে কই একটিবারওতো মনে হয় নি ভাল লাগেনা।বরং মন বলছে আরো একটি সূরা পড়ে নেই তার পর অন্য কাজ করবো।তাহলে বুঝা গেল যার কাছ থেকে এই কিতাবটি নাযিল হয়েছে তিনি কত বড় মহত্বের অধিকারি।এর আগে যে ৩টি আসমানি কিতাব( তাওরাত ,ইন্জিল ,যবুর) নাযিল হয়েছিল তা সেই উম্মতগন পরবর্তিকালে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে।আর আলকুরআন সম্পর্কে আল্লাহ পাক সূরা হিজরের ৯ আয়াতে বলেন,'নিশ্চই আমি যিকর(আলকুরআন) নাযিল করেছি এবং এর হেফাযত করার দায়িত্ব ও আমার।' আল্লাহ পাক অন্য নবী রাসূলদের মোজেজা দিয়েছেন আর তাদের মৃত্যুর পর তা নিশ্বেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু নবিজি সা: এর মোজেজা রোজ কিয়ামত পর্যন্ত জমিনে স্হায়ি।পৃথিবীর আর কোন ধর্মগ্রন্হ নেই যার হাফিয আছে কিন্তু আলকুরআনের লক্ষ লক্ষ হাফিয পৃথিবির আনাছে কানাছে ছড়িয়ে আছে।এটা আলকুরআনের মোজেজা।কুরআন বুঝে পাঠ করলে অন্তরে প্রশান্তি আসে ও চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে এটাও আলকুরআনের আর একটি মোজেজা।সূরা আল আলাক্ক এর ১ আয়াতে আল্লাহপাক বলেন,' পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।' ওহি নাযিলের প্রথম কথাটিই ছিল "পড়" অর্থাৎ জ্গান অর্জন কর।যা বর্তমান পৃথিবির মুসলমানদের কাছে নেই।মানুষ এবং পশুর পার্থক্য হলো, পশুর আত্মিক পরিচর্যার প্রয়োজন নেই।সে চলে সৃষ্টির দয়ায়।মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা করে তাই তার আত্মিক পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে এবং মানুষের এ জীবনের কর্মকান্ডের হিসাব নিকাশ রয়েছে।পশুর জীবন এ জীবনেই শেষ তার আখরাতে কোন হিসাব নিকাশ নেই।
আল্লাহপাক আলকুরআনে সূরা আজ জুমারের ৯ আয়াতে বলেন,' যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান?' আলকুরআনকে যদি জেনে বুঝে পড়া হয় তাহলে এর আচর জীবনের উপর পড়ে।একজন অন্ধ যদি পথ চলে তাহলে সে কোথায় যাছ্ছে যেমন বুঝতে পারেনা।তেমনি আর একজন চক্ষুবিশিষ্ট লোক পথ চললে সে তার গন্তব্যে পৌঁছে যেতে সক্ষম।কুরআন তেলাওয়াত ধীরে ও বুঝে করলে আমল করা সহজ হয়।সূরা মুয্যাম্মিলের ৪ আয়াতে আল্লাহপাক বলেন,'কুরআন আবৃত্তি কর ধীরস্হির ভাবে শান্ত সুন্দর আবৃত্তিতে।' আত তিরমিযিতে রাসূল সা: বলেছেন,'একহাজার মূর্খ ইবাদাতকারির চেয়ে একজন জ্গানী ব্যাক্তিকে ধোঁকা দেয়া শয়তানের পক্ষে কঠিন।' কুরআন পড়লে প্রতি হরফে ১০ নেকি সত্য কিন্তু কুরআন তো শুধু এ জন্য নাযিল হয়নি।এলাকার মসজিদগুলোতে দেখেছি কুরআনকে লাল গিলাপ দিয়ে বেঁধে এমন এক কোঠরে রাখা হয়েছে, পড়ার ইছ্ছা থাকলেও সেখান থেকে নিয়ে আসতে অনেক সময়ের প্রয়োজন।আবার কেউ কেউ শুধু চুমু খায় , বুকে জড়ায়।এগুলো কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য নয়।কুরআন নযিলের উদ্দেশ্য হলো নিজেকে কুরআনের আলোকে আলোকিত করা,পরিবারকে আলোকিত করা,সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করা ও কুরআনের পথে জীবনকে চালিত করা আল্লাহর দেয়া হালাল ও হারাম মেনে চলার মাধ্যমে।কুরআন হলো হেদায়াতের গ্রন্হ যা সূরা বাক্কারার প্রথমে ২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' এতে কোন সন্দহ নেই , মুত্তাকিদের জন্য পথ প্রদর্শক।' সূরা আলইমরানের ১৩৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'এই হছ্ছে মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট ঘোষনা ও পথ নির্দেশ ও উপদেশ ধর্মপরায়নদের জন্য।' এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায় যে মানব জাতির জন্য একমাত্র পথ হলো কুরানের পথ।তবে নিশ্চয়ই সেটা কোন মানবরচিত বিধানের অধিনস্ত পথে নয় যা আজকের পৃথিবিতে ইসলামিক মডার্নিজমে অনেকে বিশ্বাসী।যে রাতে এ কুরআন নাযিল হয়েছে সে রাতকে বলা হয়েছে হাজার রাত হতেও উত্তম।সূরা ক্কদরের ১-৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'নিশ্চয়ই এ কুরআন নাযিল হয়েছে লাইলাতুল ক্কদরে, তুমি কি জান লাইলাতুল ক্কদর কি? লাইলাতুল ক্কদর হলো এমন রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।' এই কুরআন না মানার কারনে আজ পৃথিবির মুসলিম দেশগুলোতে অশান্তির আগুনে ছারখার হয়ে যাছ্ছে।আর আখেরাতের আযাবতো কঠিন।অসংখ্য মুসলিমের সাথে আজ এ কোরআনের সম্পর্ক নেই।কুরআন হাদিস চর্চার মাধ্যমে আত্মার পরিচর্যা হয় আবার গুনাহ ও মাপ হতে থাকে।আমরা দৈনন্দিন জীবনে তো গুনাহ করেই চলছি কিন্তু মাপ নেয়ার চেষ্টা তো করছিনা। কি করে মাপ পাব যদি কুরআন ও হাদিসের কাছে না যাই। আমাদের আদি পিতা মাতা আদম ও হাওয়া (আ) মাত্র একটি কথা অমান্য করে সেজদায় পড়ে রয়েছিলেন আর বলেছিলেন,' হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের উপর অন্যায় করেছি,তুমি যদি দয়া না কর ,ক্ষমা না কর তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।' আল্লাহপাক তাদের ক্ষমা করেছিলেন।কিন্তু আমরা হাজারো পাপ করে আল্লাহর বিধানকে উপেক্ষা করে চলছি এর পরিনতি কি হবে আল্লাহ ভাল জানেন।সূরা আল বাক্কারার ৩৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'যারা আমার দেয়া হেদায়েত মেনে চলবে তাদের কোন ভয় নেই কোন চিন্তাও নেই।' আবার অনেকের ধারনা কুরআন হাদিস তো আলেমরা পড়বে কারন তারা মসজিদ মাদ্রাসায় চাকুরি করেন।তারা কি ভেবে দেখেছেন কবরে প্রতিটি মানুষ একাই প্রবেশ করে আর ৩ টি প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়।যদি রবের কাজ না করা হয়,যদি দ্বীনের পথে না চলা হয় ,যদি নবী সা: এর সূন্নাতের তাবেদারি না করা হয় তাহলে কি করে জবাব দিবে।সূরা ফোরকানের ৩০ আয়াতে বলা হয়েছে ক্কিয়ামতের দিন রাসূল সা: অভিযোগ করবেন এভাবে,'হে প্রভু! আমার লোকেরা এ কুরআনকে পরিত্যাক্ত বস্তুতে পরিনত করছিল।' যারা বলে এ কুরআন কঠিন তাদের সূরা আদ,দুখানের ৫৮ আয়াত পড়ার অনুরোধ করছি যাতে আল্লাহপাক বলেন,' আমি এ কিতাবকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি যাতে ওরা উপদেশ মনে রাখে।'
আসলে এ কথাগুলো বলে কুরআন থেকে দূরে সরে যাওয়া।এ কুরআনকে মেনে চলতে হবে নিজেরই স্বার্থে।কবর আজাব ও আখেরাতের বিচারের কথা চিন্তা যার মধ্যে থাকবে তার মুখ দিয়ে এ কথাগুলো আসবেনা।কুরআন যেমন দুনিয়ার জীবনে মানুষকে মুক্তি দেয় তেমনি মুক্তি দিবে আখরাতের ভয়াবহ আযাব থেকে।সঠিক ঈমান লালন ,নামাজ কায়েম ,যাকাত দান,রোজা পালন ও বায়তুল্লাহর হ্জ্জ সমাপন ,ভাল কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বারন, সমাজে একে অন্যের কল্যানে সহঅবস্হান করে জীবনের নির্দিষ্ট ক'টি দিন পালন করাই প্রতিটি মানুষের ব্রত হোওয়া উচিত।যদি আমরা তা করতে পারি তাহলেই আমরা কামিয়াবি হব দুনিয়া ও আখেরাতে।
বিষয়: বিবিধ
২১৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন