ইসলামে সামাজিক নিরাপত্তা।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৭ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৩৪:০৪ সন্ধ্যা

সামাজিক নিরাপত্তা মানুষের একটি মৌলিক প্রয়োজন।হঠাৎ অসুস্হ হওয়া,মৃত্যু,কর্মহীনতা,রোগব্যাধি,আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ততা,বন্যা,প্রাকৃতিক বিপর্যয়,অর্থনৈতিক ক্ষতি এসবের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়।এ সমস্ত সাহায্যের তাদেরই প্রয়োজন হয় যারা দুর্দশাগ্রস্ত ও আর্থিকভাবে দুর্বল।পৃথিবি জুড়ে একে মানবতার মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।আধুনিক সামাজিক নিরাপত্তায় একে কিছু ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়।বয়স্ক ভাতা, কর্মহীন ভাতা,অসুস্হতাজনিত ভাতা,মৃত্যু জনিত ভাতা, পারিবারিক ভাতা,ইত্যাদি।ইউরোপিও দেশগুলোতে বিংশ শতাব্দির প্রারম্ভে এ আইন প্রনীত হয়।১৯০৮ সালে এ্যামেরিকায় ওয়ার্কম্যান কমপেনজেশন এ্যাকট চালু হলেও ১৯৩৫ এর আগে কোন আইন বাস্তবায়িত হয়নি।এ্যামেরিকায় ন্যুনতম সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করা হয়, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিদের এবং তাদের পরিবারকে যারা আয় করতে অসমর্থ ও অভিভাবকের মৃত্যুজনিত কারন হয়ে দাঁড়ায়।সামাজিক নিরপত্তা মানুষকে অনির্ভরশীল ও সামাজিক মর্যাদা দান করে। এ দেশে ১৫০ মিলিয়নের মত কর্মজীবি সামাজিক নিরাপত্তা লাভ করে এবং ৪৪ মিলিয়ন অবসরপ্রাপ্ত লোকজন তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করার মত ভাতা পেয়ে থাকে।এ প্রতিছ্ছবি হলো অমুসলিম দেশগুলোর একটি দেশ যা আমি উল্লেখ করলাম। আজকের দুনিয়ায় মুসলিমদের যে হিজরত করতে দেখছেন এটা অন্যতম কারন।এ নিরাপত্তা দিয়েছিল ইসলাম যা এখন অনুশীলন করছে অমুসলিম দেশগুলো।মধ্যযুগে যখন মুসলিমরা জ্গান বিজ্গানে উন্নত ছিল তখন বৃটেন কাপড় পরিধান করতে জানতোনা।বারাক ওবামার ২০০৯ সালে মিশরের বক্তৃতায় পাবেন, তিনি বলেছিলেন আজকে আমাদের যে সভ্যতা তা মুসলিমদের থেকে পাওয়া।তাহলে মুসলিম হেরে গেল কেন? এর একটি প্রধান কারন ছিল মুসলিমরা যখন ঐষ্যর্যের লোভে ও আরাম আয়েশে নিপতিত হয়েছিল তাদের জ্গান চর্চার পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।আর এ সুবাদে অমুসলিমরা আমাদের ঐতিহ্য চিনে নিয়েছিল জ্গান চর্চার মাধ্যমে।

ইসলামের প্রথম থেকে যাকাতের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া হতো।যাকাতই ছিল প্রথম প্রতিষ্ঠান।মুসলিমরা জমাকৃত সম্পদের উপর ২।৫% যাকাত দিয়ে থাকে।মুসলিম রাষ্ট্র যাকাত নিয়ে তা সূরা তাওবায় বর্নিত ৮টি খাতে বন্টন করে থাকে।আবু বকর রা: এর সময়ে যারা যাকাত না দেয়ার কথা বলেছিল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন।পশ্চিমা দেশগুলোতে যে সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া হয় তা তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত আর ইসলামে সামাজিক নিরাপত্তা হলো কুরাআন ও সূন্নাহ মোতাবেক।আল্লাহ পাক সূরা বাক্কারার ১৭৭ আয়াতে বলেন,'ধার্মিকতা তাতে নয় যে তোমাদের মুখ পুর্ব ও পশ্চিমে ফেরাও,তবে ধর্মনিষ্ঠা হছ্ছে যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে,আখেরাতের প্রতি,ফিরেশতাদের প্রতি,গ্রন্হখানিতে,নবীদের প্রতি,তাঁর প্রতি মহব্বত বশত: মাল দান করে আত্মীয়স্বজনদের,এতিমদের, মিসকিনদের,পথচারিদের,ভিখারিদের,দাসদের মুক্তিপন বাবদ,যে নামাজ কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে,যারা প্রতিজ্গা করার পর ওয়াদা রক্ষা করে,অভাব অনটনে ও আতন্কের সময় ধৈর্যশীল।এরাই তারা যারা সত্যনিষ্ঠ আর এরা নিজেরাই ধর্মপরায়ন।' রাসূল সা: তিনবার বলেন,সেই ব্যাক্তি ঈমানদার নয় যে নিজে খেয়ে ঘুমায় আর তার পাশে কেউ অভুক্ত থাকে।যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও গরিবের বৈষম্য দূর হয়।একজন মুসলিম কখনো মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না যদি দেখে তার একজন মুসলিম ভাই অভাবগ্রস্ত। রাসূল সা: আরো বলেন,'তোমরা প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল।ইসলামিক অর্থনৈতিক সিস্টেমে জনসাধারনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা একটি অবশ্য করনীয় কর্তব্য।যাকাতের তহবিল এ জন্যই রাখা হয়েছে যাতে করে জনসাধানের যে কোন সমস্যা সমাধান করা যায়।ওমর বিন খাত্তাব রা: এর সময় মুসলিম ত্রিপলি থেকে আফগানিস্তান , আর্মেনিয়া থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত শাসন করেছিল।তাঁর সময় ছিল ইসলামের চরম উৎকর্ষতার সময়, যখন যাকাত নেয়ার মত মানুষ পাওয়া যেত না। ওমর বিন খাত্তাব রা: বলতেন ,'খলিফা হলো তার সাফোর্টার যার কোন সাফোর্ট নেই। প্রত্যেক মুসলিমের অধিকার রয়েছে রাষ্ট্রিয় কোষাগারের প্রতি যদিও সে নেয় বা না নেয়।আমি সব সময় উদ্বিগ্ন থাকি যখন আমি জানতে পারি কারো কোন কিছুর প্রয়োজন আর আমি তখনি তার চাহিদা পুরন করি।আমরা ব্যাক্তিগতভাবে একে অন্যকে সাহায্য করি যদি তা না হয় সবাই মিলে সাহায্য করি যতক্ষন না সবাই সমান হয়ে যায়।আমি তোমাদের শাসক নই,আমি তোমাদের একজন ভৃত্য। খলিফা হলো সে যে আল্লাহর কাছে বিশ্বাসি।আমার কাজ হলো তোমাদের সার্ভিস দেয়া যতক্ষন না তোমরা নিদ্রা যাও তোমাদের বাড়িতে খাবারবর্তিপেটে।এভাবেই আমি কৃ্তজ্গ হতে চাই তোমাদের কাজে।'

ওমর বিন খাত্তাব রা: নিম্নবর্নিত উপায়ে সামাজিক নিরাপত্তা দিতেন:

ক-দূর্ভিক্ষের সময় পুরো পরিবারকে খাবার দিতেন

খ-গরিব ও অসমর্থদের সাহায্য করতেন

গ-পরিবারের ছেলেময়েদের পড়ালেখার খরচ দিতেন

ঙ-গরীবদের বিবাহের খরচ দিতেন

চ-বৃদ্ধদের ভাতা দিতেন

ছ-অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য ঋন দিতেন

জ-সূদ ছাড়া ঋন অনুমোদন করতেন

ঝ-ঋন গ্রস্তদের ঋন পরিশোধ করতেন।

ঞ-সোসাল ইনসুরেন্সের মত রক্ত ঋন পরিশোধ করতেন

ট-ষ্টাইফেন্ড দিতেন বিধবাদের,বিবাহিত ও অবিবাহিত মহিলাদের,যুবক ও ইমিগ্রেন্টদের।

তাঁর সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা এমন শক্তিশালি হয়েছিল যে,লোকেরা যাকাত দেয়ার মত লোক খুঁজে পেত না।নতুন জন্মগ্রহন করা বাচ্চার সেবা, দুগ্ধসেবা, অভিবাবকদের ভাতা ও দিতেন ট্রেজারি থেকে এবং প্রথমে তার পরিমান ছিল বছরে ১০০ দেরহাম । একমাত্র সৌদিআরব ছাড়া পৃথিবির কোথাও ইসলামি আইন কানুনের বাস্তবায়ন নেই।যে সমস্ত মুসলিম দেশ যাদের কাছ থেকে গনতনত্র ধার করেছে তাদের নীতি ও যদি অনুসরন করতো তাহলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতো অন্তত তাদের দেশে মুসলিমরা ছুটে যেত না।মুসলিমরা অধপতিত হতে থাকবে যতক্ষন না কুরআন ও সূন্নাহর কাছে না আসবে।আল্লাহ মুসলিম শাসকদের বুঝার তাওফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

২৬৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File