নারি মুক্তি দিয়েছে ইসলাম যা আজকের নারি প্রগতিবাদিদের অধিকাংশের জানা নেই।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৫১:৫০ বিকাল
আবহমান কাল থেকে নারি জাতি অবহেলিত ,নির্যাতিত,উপেক্ষিত ও বন্চিত এটা অনেকেরই জানা।এমনকি বর্তমানযুগের তথাকথিত "নারি মুক্তির" প্রবক্তাদের সংগ্রাম স্বত্বেও সে করুন দুর্দশার উন্নয়ন সাধিত হয়নি।বরং বেড়েই চলছে ধর্ষনের মত, এ্যাসিড নিক্ষেপের মত,হত্মার মত বিভৎস কাহিনী।ইসলামের আবির্ভাবের আগেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে , বিভিন্ন জাতির মধ্যে নারিকে মর্যাদা দেয়া হয়নি।নারিকে ভাবা হয়েছিল ভোগের বস্তু হিসেবে।খুব আশ্চর্য ও মর্মাহত হতে হয় শুনে ও পত্রিকা পড়ে যে , যারা নারি মুক্তির প্রবক্তা হিসেবে উল্লেখ করেন কেট মিলে ,নূরাকিন,বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত,উইলোষ্টোনক্রাফট,মার্গারেট স্যাঙার প্রমুখকে।আমরাও শ্রদ্ধা করি এ সমস্ত মহান ব্যাক্তিত্বকে।কিন্তু যে ১৪০০ বছর আগে যে আলো উদ্ভাসিত করেছিল একটি অন্ধকার পৃথিবিকে, যাকে মানবতার দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল অমুসলিমরাও, আজ এক শ্রেনীর মুসলমানের কলমে তার নাম শোভা পায় না।এ এক বড় অকৃতজ্গতা।যে যুগে একজন মেয়েশিশুকে পিতারা সহ্য করতে পারতো না ,নিক্ষেপ করতো ও জীবন্ত কবর দেয়া হতো, এমনকি পরবর্তিতে নারিকে বলা হতো "সয়তানের অঙ" সেন্ট পলের মত পুরহিতরা, এগুলোর অবসান ঘটিয়ে নারিকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন মানবতার দূত হযরত মোহাম্মদ মুস্তফা সা: ইসলাম কোন ভ্রান্ত ধারনায় বিশ্বাসি নয়।আমাদের আদি পিতা মাতা আদম ও হাওয়া (আ) কে শয়তান প্ররোচিত করেছিল সূরা আরাফের ১১-২৫ আায়াত পর্যন্ত বর্নিত হয়েছে।অপরাধ করার পর আল্লাহ পাক শিখিয়ে দিয়েছিলেন এবং তারা বললো, 'হে আমাদের প্রতিপালক ! আমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি।যদি তুমি ক্ষমা ও দয়া না কর তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।' আল্লাহ পাক তাদের ক্ষমা করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথিবিতে অবকাশ দিলেন ও বললেন, যারা আমার আদেশ নিষেধ মেনে চলবে তাদের কোন ভয় নেই।
পাপ পুর্ন প্রত্যেক নারি পুরুষের অর্জিত বস্তু।যখন মানুষের বিশ্বাস ছিল নারিকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের ভোগের জন্য,তখনই নবী সা: ঘোষনা করলেন, স্ত্রী হছ্ছে পুরুষের অর্ধাঙিনী।সূরা বাক্কারার ২২৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'নারিদের তেমনি ন্যায় সংগত অধিকার রয়েছে যেমন আছে তাহাদের ওপর পুরুষদের।' নারি হলো 'মুহসানাহ' অর্থাৎ শয়তানের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত প্রাচীর।সূরা বাক্কারার ১৮৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তারা তোমাদের পোষাক,তোমরাও তাদের পোষাক।' রাসূল সা: বলেছেন,'তোমাদের মধ্যে উত্তম তারাই যারা তাদের সত্রীদের দৃষ্টিতে উত্তম।(তিরমিযি) সূরা নূরের ৪ আয়াতে নারির মর্যাদাকে আরো প্রস্ফুতিত করা হয়েছে,'যারা সতি সাধ্বি নারির প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং ৪ জন সাক্ষি উপস্হিত করে না তাদের ৮০টি বেত্রাঘাত করবে এবং তাদের কখনো সাক্ষ্য গ্রহন করবেনা।এরাই সত্যত্যাগী।' ইসলাম নারিকে মর্যাদা দিয়েছে মা ,সত্রী ও কন্যা হিসেবে। তাহলে যে পাপিষ্ঠরা তাদের সম্পদ লুন্ঠন করতে যায় তারা কেন ভাবে না, এ মহিলাটি আমার মা, আমার সত্রী ও মেয়েটি আমারই মেয়ে বা বোন।যদি ভাবনার তিরটি নিজের দিকে আসে তাহলে ঝলসানোর অবকাশ কোথায়।ইসলামে পর্দা বলতে নারির পর্দাই বুঝায় না।নারি পুরুষ উভয়কেই সংযত হওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।সূরা নিসার ৩০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,বিশ্বাসি পুরুষদের বল তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত করুক ও গোপন অঙের হেফাজত করুক।ইহাই তাদের জন্য পবিত্রতা।' নারির পর্দা তার আবরনে আর পুরুষের পর্দা চোখের আবরনীতে। রাসূল সা: আলি রা: কে বলেন,'হে আলি! তুমি যদি কোন মহিলাকে দেখ প্রথম দৃষ্টি তোমার আর দ্বিতীয় দৃষ্টি সয়তানের।'
বর্তমান পৃথিবিতে যে নারি জাগরন বা নারি স্বাধিনতার কথা বলা হয়, এমনকি যে সব সভা সেমিনারে নারি অধিকারের ব্যাপারে ইসলামকে কটাক্ষ করা হয় তা ইসলামকে না জানার কারনে , না বুঝার কারনে ও ইসলাম বিদ্ধেষের কারনেই করা হয়।যারা এ কথাগুলো বলেন তাদের সাথে কুরআন ও হাদিসের সম্পর্ক নেই।এরা এক ধরনের প্রকৃতির পন্য হিসেবে নিজেদের বিবেচিত করেন।কথা বলেন না জেনে। অন্তত: এতটুকু সাধারন জ্গান তো থাকা দরকার যে,আমরা যে কথাগুলো বলছি তা মিডিয়ার কারনে মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এবং আমরা সমালোচিত হব।আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার স্বভাব ধর্মের ওপর।একজন পুরুষের কি প্রয়োজন বা একজন মহিলার কি প্রয়োজন তা সৃষ্টিগতভাবে নির্ধারন করেছেন।আজকাল ইসলামের বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন করা হয় এটা নতুন নয়। পাকিস্তানে ১৯৬০ সালে তৎকালীন শাসনতন্ত্র কমিশন থেকে এ রকম ৪০ টি প্রশ্ন করা হয়েছিল।পুরো পাকিস্তানের উলামারা কেউ সাহস করেননি।একমাএ আল্লামা আব্দুল্লাহিল কাফি সাহেব কলম ধরেছিলেন এবং ৩৮টি প্রশ্নের উত্তর যখন শেষ করেছিলেন তখন কলম হাতেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ফজরের নামাজের কিছুক্ষন আগে।যারা বলে ইসলাম নারিকে ঠকিয়েছে তারা কি ভেবে দেখেনা একজন নারির অস্তিত্ব সম্পর্কে।শুধু পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা।পুরুষ ৪টা বিয়ে করে নারি পারবেনা কেন? পুরুষ ৭২টা হুর পাবে নারি কি পাবে? সম্পত্তির অংশ নারি পুরুষের অর্ধেক পাবে। এগুলোকে নারিরা বৈষম্য হিসেবে দেখে।দায়িত্ববোধ থেকে উনারা চিন্তা করেন না যে , আল্লাহ কেন এভাবে নির্ধারন করলেন? একজন পুরুষের পক্ষে ৪ জন নারিকে বিয়ে করা সম্ভব এবং বিচার করা সম্ভব।আর সমাজে খুব কম মানুষই একের অধিক বিয়ে করেন, কোন রিজনেবল কারন থাকে যারাই করে থাকেন।একজন নারিকে যদি ৪জন পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়া হয় আর ৪জন পুরুষ যদি একই সময়ে ষে নারির কাছে সে্ক্সুয়েল মিটিকেশনের জন্য আসে তাহলে কি সেই মহিলার পক্ষে সম্ভব ৪জন পুরুষকে সময় দেয়া ও সন্তুষ্ট করা।তাছাড়া একজন মহিলার দেহের সাথে অনেক আইন কানুন জড়িত আছে।একজন পবিত্রা নারি জান্নাতে হুরদের নেতৃত্ব দিবেন যদি জানতেন তাহলে এই নারিরা পর্দার ভিতরে অবস্হান করতেন।সূরা নিসার ১১ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,' সম্পত্তির মেয়ে ছেলে পাবে বেটা ছেলের অর্ধেক।' কারন হলো বেটা ছেলের মাধ্যমে বংশ রক্ষা হয়।বাবা বৃদ্ধ হলে দেখাশুনা করে ছেলে ,বাবার কোন ঋন থাকলে পরিশোধ করে ছেলে, বাবা যদি কোন মেয়ে রেখে যায় ছেলেই দায়িত্ব পালন করে এ রকম আরো অনেক।আাবার কোন কারনে বোনকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে ভাই ই সে দায়িত্ব পালন করে।তাহলে পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা কেন?
লক্ষ্য অর্জনে নারি হলো পুরুষের অংশিদার। এটা্ই হলো চিরন্তন সত্য।সহাবস্হানের মাধ্যমে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ,সম্মান ,প্রীতি বিনিময়,শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি, এতেই রয়েছে কল্যান ও নারি স্বাধিনতা এবং ইসলাম এটাই বিশ্বাস করে।ইসলামে নারিরা সম্মানিয় দূরত্ব বজায় রেখে আত্মমর্যাদা ,ইজ্জত-আব্রু বজায় রেখে প্রভুত অবদান রেখেছে।নারি বির বেশে যুদ্ধ করেছে ,বিজ্গান চর্চা করছে,রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে।মানব জাতির ইতিহাসে মুসলিম নারির অবদান অনস্বীকার্য।ওমর বিন খাত্তাব (রা) এর শাসনকালে বক্তৃতার এক পর্যায়ে প্রশ্ন ছু্ড়ে দিয়েছিলেন মুসলিম নারি দেন মোহর প্রসঙে আর ওমর বিন খাত্তাব (রা) তার ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।আর আজ কুসংস্কার ,অন্ধকার ও ধর্মিয় গোঁড়ামির কারনে নারিদের গৃহবন্দিনি করা হয়েছে।সমাজ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নারিকে তাদের প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে হবে আর সেটা হবে ইসলামের আইন কানুন মেনে চলার মাধ্যমে।কবি নজরুল ইসলামের ভাষায় ,'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যানকর ,অর্ধেক তার করিয়াছে নারি ,অর্ধেক তার নর।'
বিষয়: বিবিধ
১৫০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন