জীবনে সফলতার জন্য সফল বন্ধুর আশ্রয়ই কাম্য হওয়া উচিত।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ মার্চ, ২০১৩, ০১:২৭:৫২ দুপুর

সমাজের বাস্তবতায় আর দৈনন্দিন চলাফেরায় কোথাও ভাল বন্ধুর পদচারনা দেখছিনা।আতীত তুলনা করলে বর্তমান জীবন শুন্যের কোঠায় দেখতে পাই।খুব বেশি দিন নয় মাএ ৩০ বছর আগেও দেখেছি পারিবারিক বন্ধুদের কদর ছিলো।পারবারিক পরামর্শ করা হতো।সততার কোন অভাব ছিল না।কোন বন্ধু বিপদে পড়লে শুনা মাএ দৌড়ে আসতো।সেটি এখন আর নেই।একটি টেলিফোন করে খবর নেয়ারও কারো সময় নেই।সাকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ছুটে চলছে ঘড়ির কাঁটার সাথে।রাস্তায় কখনো দেখা হলেও ফুরসত নেই একটু কুশল বিনিময় করার।যে মানুষগুলো ছিলাম আমরা তাই আছি,যে ভূখন্ডে বাস করতাম সেখানেই আছি।তবে পরিবর্তন হয়েছে আমাদের মানুষিকতা,আমাদের ষ্টেটাস,আমাদের সংস্কৃতি,সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন অভাব।এই নতুন অভাবগুলো মেটাতে গিয়ে জীবন হয়ে উঠেছে মেশিন নামক যন্ত্র।যন্ত্রদানবের সাথে পাল্লা দিয়ে জীবনের মূল্যবান অনেকগুলো দিক হারিয়ে গেছে।

আমার যে কলেজ পড়ুয়া ছেলেটি তাকে লক্ষ্য করলে নিজের জীবনের সাথে অতিতের কম্পারিজন খুঁজে পাই।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পড়া নিয়ে ব্যাস্ত।কখনো কলেজ , কখনো কোচিং,কখনো উদ্ভট বন্ধুদের সাথে চলাফেরা।কখনো বাসায় না বলে দীর্ঘ সময় পার করে ঘরে আসা।আবার অনেকের কাছে শুনেছি এ সব ছেলেরা এলকোহল পান করে ঘরে আসে।সিগারেটের কথা বাদ দিলাম যেখানে অনেক পিতাই ঘরে বাচ্চাদের সামনে পান করেন।বাবা মা'র সাথে খারাপ আছরন।এমনকি জিজ্গেস করা যাবে না কোথায় ছিল।আসলে যে জিনিস খুঁজে পাই তা হলো ভাল বন্ধুর সহযোগিতা আজ আর নেই।ছাএ জীবনে একবার পড়েছিলাম বই হলো তোমার ভাল বন্ধু।আবার শিক্ষকরা বলতেন বাব মা তোমাদের বড় বন্ধু।আজকের ছেলেমেয়েরা যখন বন্ধুহারা তাহলে তারা সফল হবে কি করে।আর এটি একটি বড় কারন সফল না হওয়ার পিছনে।কবি নজরুল ইসলাম বলেছিলেন,'বন্ধু আমি পয়েছি যার সাক্ষাৎ আমি নিজেই করতে পারবোনা।এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু ,গানের বন্ধু ,ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা।এরা সবাই আমার আ্ত্মীয় হয়ে উঠেছে, বন্ধু হয়ে উঠেনি কেউ।' এক সময় বন্ধুর পরিচর্যা ছিল।এক বন্ধু খারাপ কোন কাজ করতে দেখলে ভাল বন্ধু বাধা হয়ে দাঁড়াতো।বন্ধুকে পারিবারিক ভাবে লালন করা হতো।এতে পরিবারগুলো ও সহযোগিতা পেত।কোন উদ্বেগ থাকতোনা।আজ বাবা মা একজন বন্ধু দেখলে আঁতকে উঠেন কি জানি কখন ছেলে মাদকাসক্ত না হয়ে উঠে , গুম হয়ে না যায়, না ব্যাবিচারিদের সাথে মিশে যায় এ রকম আরো অনেক।আমাদের এ অবাস্হা থেকে পরিএান পাওয়া দরকার।আমরা উদ্ভিগ্ন সবাই।

বন্ধুত্ব তৈরি হতে হয় পারিবারিক বন্ধনের মাধ্যমে।দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরের প্রতি আস্হা , বিশ্বাস ও ভালবাসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তৈরি হয় বন্ধুত্ব।বন্ধুত্বের সুফল যেমন আছে এর কুফলও আছে।বন্ধুত্বের চর্চা না থাকলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।বর্তমান মেশিনের যুগে কত বন্ধুত্ব যে নষ্ট হয়েছে লেনদেনের মাধ্যমে তার কোন ইয়ত্বা নেই।তবে কিছু বৈশিষ্ট্য যদি লালন করা যায় তাহলে বন্ধুত্ব টিকে থাকে দীর্ঘদিন।যেমন- পরস্পরের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও আস্হা রাখা , বিপদে আপদে পরস্পরকে সহযোগিতার বন্ধনে আবদ্ধ করা, আনন্দ ও বেদনার বিষয়গুলো ভাগাভাগি করে নেয়া, কোন জটিল বিষয়ে মাশোয়ারা করে সমাধানের পথ খোজা,কোন ভুল বুঝাবুঝি হলে সহনশীলতার সাথে তা নিরসনের চেষ্টা করা।এ ছাড়াও অনেক ব্যাপার আছে যা লালন করলে দীর্ঘকাল বন্ধুত্ব টিকে থাকে।আজকাল অনেকের মধ্যে "Friend Politics" এর প্রভাব লক্ষ্য করে থাকি।একজন বন্ধু পলিটিশিয়ান হলেও পলিটি্ক্সের আকারে ভালবাসা ঠিক নয়। আস্হা ও বিশ্বাস মানুষের একটি মহৎ গুন।একে শক্তশালি করার প্রয়োজন।ভাল বন্ধু , স্বামি স্ত্রি সবার ক্ষেত্রে এ প্রযোজ্য।মনে রাখবেন আপনি যদি সৎ হন আর সততার সাথে অন্যকে ভালবাসেন সে ভালবাসা অবশ্যই টিকে থাকবে। যদি আপনার মধ্যে কপটতা থাকে অচিরেই আপনার বন্ধুত্ব হারিয়ে যাবে।আপনার বনধুর গুরুত্বপূর্ন সময়গুলোতে সময় দেয়ার চেষ্টা করুন যেমন- কারো অন্তর্ধান হলে, কোন বিপদ হলে ইত্যাদি।আপনি যেতে পারছেন না তবে আজকাল তো যোগাযোগের বাহন অনেক সহজ।টেলিফোন,ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক,টুইটার ইত্যাদিতে।তবে মনে রাখবেন এ সমস্ত বিষয়গুলো আজকাল কুইনিনের মত।কুইনিন জ্বর সারাবে বটে কিন্তু কুইনিন সারাবে কে? মোবাইল ও ফেসবুকের মাধ্যমে "মিলিয়ন ওফ টিন এজার" তাদের জীবন ধংশ করছে।আর বহু দাম্পত্য জীবনের ইতিমধ্যে অবসান হয়েছে।আজকাল আর একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়।এক বন্ধুকে আল্লাহ সম্পদশালী করলে আর এক বন্ধু ওটা দেখে অসুস্হ প্রতিযোগিতা শুরু করে।আল্লাহ পাক কোরানে বলেছেন আমি কাউকে দেই আবার কাউকে মেপেযোখে দেই।সুতরাং যাকে প্রাচুর্য দেন নি হতে পারে এ তার জন্য পরিক্ষা আবার যাকে দিয়েছেন তার জন্যও পরিক্ষা।এ নিয়ে বন্ধুত্বের অবসান যেন না হয় সে খেয়াল রাখতে হবে।আবার যে বন্ধু ধনবান হলেন তিনি যেন অন্য বন্ধুকে হেয় করে না দেখেন।বন্ধুর লেনদেনে কমিটমেন্ট ঠিক রাখুন।দিতে দেরি হলে আগেই সততার সাথে যোগাযোগ করে কারন গুলো বলুন।এতে বন্ধুত্ব আরো গভীর হবে।

আমাদের পিতামাতাদের অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিত বর্তমান এই সামাজিক অবক্ষয় রোধ করার জন্য। পাড়ায় পাড়ায় সুস্হ ইসলামিক বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলুন যাতে এলাকার মা বোনেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ছুটির দিন গুলোতে অবকাশ যাপন করতে পারে।এতে সুস্হ সামাজিকতা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বৃদ্ধি পাবে একে অন্যের সাথে দৃড় বন্ধন।সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে আপনি আমি আমাদের ঐতিয্য হারাবো আর হারাবো আমাদের মুল্যবান সম্পদ সন্তানদের।শুধু আমরাই হারাবো না জাতি হবে কান্ডারিবিহিন এক নৌকা যা নির্দেশনাহিনভাবে চলতে থাকবে।

বিষয়: বিবিধ

২০৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File