সন্তানের সাথে বাবার লুকোচুরি
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৩ মার্চ, ২০১৩, ০৯:২০:৩৯ রাত
জিন্নাহ ৬ ভাই বোনের মধ্যে বাবার মা'র বড় ছেলে।গ্রামের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম।ছোটবেলা থেকে টানা পোড়নের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেছে। অন্য ভাইদের তুলনায় পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান।পড়ালেখার পাশা পাশি টিউশন করে নিজে চলে আবার পরিবারকেও সাহায্য করে।উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ হতেই পরিবারের আরো সমস্যা বাড়তে থাকে।মা অসুস্হ আর অসুখের দীর্ঘতা বৃদ্ধি পেতে থাকলো।বাবার জমিজমার আয়ে সংসার চালানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়লো।এদিকে মা দু'মাস শয্যাশায়ি।ডাক্তারের খরচ চালানো যাছ্ছে না। জিন্নাহর এক ফুফাত ভাই মধ্যপ্রাচ্যে থাকে।অনেক অনুনয় বিনয় করে মা'র অসুখের ও পরিবারের অস্বছ্ছলতার কথা বলে চিঠি লিখলো। ফুফাত ভাই চিঠি পেয়ে কিছু টাকা পাঠাল আর বললো আমি আগামি মাসে আসব ইনশাআল্লাহ। ফুফাত ভাই ঠিকই আসলো কিন্তু মাকে বাঁচানো গেল না। আল্লাহর ইছ্ছায় তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।ফুফাত ভাই জানে তার মামার এমন কোন টাকা নেই যে ভিসার মুল্য দিবে। কোনভাবে টিকেটের টাকাটা যোগাড় করলো। জিন্নাহ মাস চারের মাথায় চলে আসলো।তার রোজগার দেড় থেকে দুই হাজার।একটানা ৫ বছর থাকলো।এর মধ্যে ভাই বোন পড়ালেখায় এগিয়ে গেল।বাবার নামে সব টাকা পাঠাতো।মাঝে মাঝে জিগ্গেস করলে বলতো খরচের পর বাকি টাকা দিয়ে তোমার নামে এখানে যায়গা রেখেছি ,ওখানে রেখেছি।যায়গা ঠিকই রেখেছে তবে সব নিজের নামে।৫ বছর পর বললো বাবা অনেকদিন হয়েছে এবার দেশে ঘুরে আসি আর মেয়ে দেখবেন পছন্দ হলে বিয়ে করে আসবো।বাবা চিঠি লিখলো , অনেকদিন কষ্ট করেছ আর ২/৩ বছর কষ্ট করলে তোমার ভাইদের পড়ালেখাটাও শেষ হবে আর তুমি আসলে তুমিও বিয়ে করলে তোমার বোনকেও বিয়ে দিতে পারলে।জিন্নাহ ভাবলো কথাটা নিতান্ত খারাপ নয়।আপন মনে
আরো ৩ বছর কাটিয়ে দিল। জিন্নাহ দেশে যাওয়ার মনস্হির করলো ও কিছু স্বর্ন গহনাও খরিদ করলো। বাবা এবার চিঠি লিখলো তোমার বোনের বিবাহ ঠিক হয়েছে ভাল ছেলে তবে তারা চায় বিদেশ নিয়ে যাবে বা ভিসার খরচ দিবে।জিন্নাহর মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। জিন্নাহ ভাবলো ভিসাতো ব্যাবস্হা করা যাবে না তবে যদি বোনের মঙল হয় তাহলে টাকাটা দিলেই ভাল।বাবাকে চিঠি লিখলো তারা কত টাকা চায়।বিবাহে কত খরচ হবে আর আপনার কাছে কত টাকা আছে।বাবা লিখে পাঠালো ওরা ভিসা বাবদ ৩ লাখ,১০০ জনের মেহমানদারি ও ঘর সাজানোর সরন্জাম চায়।আমার কাছে সামান্য কিছু টাকা আছে জমি কিনার পর।জিন্নাহর মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়লো।জিন্নাহ ধার কর্জ করে টাকা পাঠালো তবে কোন চিঠি লিখলো না।বাবা মেয়ের বিয়ে দিলেন।এদিকে জিন্নাহর এই টাকা শোধ করতে আরো ২ বছর সময় লেগে যায়।দশ বছর পর এবার জিন্নাহ ৩২ এর কোঠায় পা দেয়।জীবনের পিছনের দিন গুলোর তাকিয়ে দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলে।আরো এক বছর থেকে এবার কাউকে না বলে দেশে যায়।বিয়ের কিছু কেনা কাটা ও স্বজনদের জন্য ও কিছু খরিদ করে।বাড়িতে গিয়ে বিয়ের ব্যাপারে লোক লাগিয়ে দেয়।এবার বাবাকে নিয়ে ১১ বছরের হিসাব টানে।নিজের হিসাবের খাতা বের করে।কোথায় কোথায় জমি রেখেছে তার দলিল ও ভাই বোনদের পিছনে কত খরচ করেছে তার হিসাব চায়।এক বোনের তো ইতিমধ্যে বিয়ে হয়েছে।বাকি ভাইদের তিনজন চাকুরি করে ও দুইজন চাকুরির চেষ্টা করছে।যখন দলিল বের করলো দেখলো সব যায়গা বাবার নামে।করুন স্বরে জিজ্গেস করলো বাবা এই কি আপনার বিচার।দলিলগুলোর দিকে না তাকিয়ে বের হয়ে গেল।তিনমাসের ছুটি মেয়ে দেখতে দেখতে ১/২টা যা পছন্দ হলো পারিবারিক জটিলতার কারনে এগিয়ে এলো না।ছুটি কাটিয়ে চলে এলো।তবে বাবার খরচ পাঠানোতে জিন্নাহ ভুল করেনি কারন বাবা মা'র গুরত্ব সম্পর্কে ওয়াজ মাহফিলে শুনেছে বাবা মা'র ব্যাপারে আহ্ শব্দটিও করবেনা।জিন্নাহর একটা ভাল স্বভাব ছিল নিজে পড়ালেখা করতে না পারলেও ভাল মানুষদের সাথে চলতো।আর তার জীবনের এ ঘটনাটি অনেকে জানতো।দেশ থেকে ফিরে আসলে জুনিয়র ক্লার্ক হিসেবে পদন্নিত দেয়া হল। বছর খানেকের মধ্যে তার এক পরিচিত একটা প্রস্তাব আনলো।মেয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের যার শুধু দু'টিই মেয়ে আছে তবে থাকে সে যে শহরে কাজ করে একই শহরে।বাবাকে বললো দোয়া করবেন আল্লাহর ইছ্ছায় আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার কর্মক্ষেত্রের কাছে।বাবা বললো , বাবা আমাকে মাপ করে দিও তোমার প্রতি আমি অন্যায় করেছি।তোমার যে জমিগুলো আমার নামে কিনেছি কালই তোমার নামে রেজিষ্ট্রি করে দিব।বাবা অসুস্হ হয়ে পড়লেন আর সবাইকে ডেকে বললেন একজন দলিল লিখক নিয়ে আস। ছেলেরা দলিল লিখক নিয়ে আসলো। দলিল লিখা হলো ও বাবা দস্তখত করলেন কিন্তু পরের দিন পর্যন্ত বাবা বেঁচে থাকলেন না। ধৈর্য ও সততার মুল্য জীবনের মাঝে ও পাওয়া যায় আর আখরাতে তো বিরাট পুরস্কার।
বিষয়: বিবিধ
২০১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন