সমাজ ধান্দাবাজ ,উৎকট কালচার ও ব্যাভিচারের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:০৭:৪৪ বিকাল
ধান্দা শব্দটির মুল অর্থ হলো - জীবিকার জন্য প্রচেষ্টা,রোজগারের ফিকির করা বা কষ্টে জীবিকার্জন।শব্দটির সরলরৈখিক অর্থ থাকলেও সমাজের এক শ্রেনীর মানুষের উদ্ভট আচরন ও মন্দ কাজ কর্মের কারনে শব্দটি তার সরলরৈখিক রুপ সুন্দর্য হারিয়ে আসছে। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব।একে অপরের উপর নির্ভরশীল।একে অন্যের সুখে দু:খে সদা সচেতন।প্রাচীন জাহেলিয়াত সমাজেও মানুষের মধ্যে পশুত্ব থাকলেও একে অন্যের দু:খে সে সমাজের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়তো।আজকের যে সমাজে আমরা বাস করছি,এ সমাজের তুলনায় ঐ সমাজটি ছিল চরিত্রের দিক থেকে উন্নত।জীবিকা নির্বাহের জন্য অপচেষ্টা নেই কোথায়? ব্যাবসা বানিজ্য,অফিস আদালত সহ সমাজের সর্বস্তরে এখন ধান্দাবাজ ও ব্যাভিচারের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।যে কোন কাজ করতে যাবেন আপানাকে ঘুষের টাকা গুনতে হবে।প্রতিদিন বাজারে যাবেন পড়তে হবে চোরা কারবারিদের খপ্পরে।শিশুদের শিক্ষার আলো জ্বালাতে আপনাকে গুনতে হবে বিপুল অন্কের টাকা। জমির নামজারি করতে , খতিয়ান তুলতে , খাসজমি বন্দোবস্ত নিতে আপনাকে পড়তে হবে দালালদের খপ্পরে।আপনি বিদেশ যাবেন,ট্রাভেল এজেন্ট আপনাকে বন্দি করবে এডভান্স টাকা নিয়ে।এর পর ঘুরবেন বছরের পর বছর।বিদ্যুতের লাইন সংযোগ করবেন বা মিটারটি আনবেন আপনাকে ঘুরাবে এ টেবিল থেকে ও টেবিলে।অবেশেষে দিতে হবে বাড়তি টাকা।সন্তানের পিছনে সময় ও অর্থব্যায় করে গড়ে তুললেন কিন্তু শুনা গেল পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে।সেজন্য এ বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়, প্রশ্ন যদি হয় ফাঁস, পড়ব কেন বারো মাস।এটি অবশ্যই তাদের যৌক্তিক কথা।আপনার সন্তানটি সারা বছর পড়াশুনা করে কোথায় ও সুযুগ পেল না বা চাকুরিতে ইন্টারভিউ দিয়ে এলো,ছেলে বা মেয়েটি ব্রিলিয়েন্ট হয়েও হেরে গেল।এগুলো হলো ক্ষমতার দাপট ও কুৎসিত আচরন।দুইশত বছর আগে ব্রিটিশশাসিত কলকাতায় নব্য ধনীদের এক কুৎসিত কালচার তৈরি হয়েছিল, যাকে বলা হয় বাবু কালচার।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এক নতুন জমিদার শ্রেণির জন্ম দিয়েছিল। আর ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির মুৎসুদ্দিগিরি করে হঠাৎ করে ধনী হয়ে উঠেছিলেন আরেক দল ধনী। তাঁদের নোংরা কালচার, অপচয়, সম্পদের প্রদর্শনবাদিতা, ভোগবাদিতা ও মনুষ্যত্বহীনতা ছিল সেই যুগের তথাকথিত রেনেসাঁর ঠিক বিপরীত চিত্র। সেই নোংরা কালচারের নিখুঁত ছবি পাওয়া যায় কালীপ্রসন্ন সিংহের ইতিহাস বিখ্যাত রচনা 'হুতোম প্যাঁচার নকশায়'। সেই কালচারকেই ব্যঙ্গ করে প্রহসন-নাটক লিখেছিলেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত 'একেই কি বলে সভ্যতা' এবং 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'। এত বছর পর মনে হয়, আজকের ডিজিটাল যুগেও যেন তেমনই নোংরা কালচার ফিরে আসছে। এই নতুন করে গড়ে ওঠা সংস্কৃতিরও জন্ম দিচ্ছেন এখনকার নব্য ধনীরা। তাঁরাও হঠাৎ করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। সঙ্গে রয়েছে শাসকবর্গের আশ্রয় ও প্রশ্রয়। টাকা ও ক্ষমতা, দুটিরই জোর কতটা সেটাও প্রদর্শন করা দরকার। সেই দুইশত বছর আগে ছিল প্রকাশ্যে গণিকালয়ে গমন, বাইজি নাচ ইত্যাদি, যা ছিল তখনকার ব্রিটিশ রাজ কর্তৃক অনুগ্রহপ্রাপ্ত নব্য ধনীদের নির্লজ্জ আনন্দ উপভোগের বিষয়। এখন যুগ পাল্টিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ধনী ও ক্ষমতাসীনদের সেই অতীতের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। তাঁরাও 'এনজয়' করেন 'ধর্ষণে' এবং তারপর খুনে।
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের এই ধনীর সন্তানরা বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষকে জখম করে উল্লাস করে, বিদঘুটে আনন্দ অনুভব করে। অথবা কেউ সরাসরি গুলি করে মানুষ মেরে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলে বোধ হয় এমন আনন্দ উপভোগ করতে কোনো বাধা নেই। সম্প্রতি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মাননীয় সংসদ সদস্য কর্তৃক বালকের পায়ে গুলি লাগানো অথবা সংসদ সদস্যপুত্র কর্তৃক জ্যামে আটকে থেকে বিরক্তির ফলে বেপরোয়া গুলি চালিয়ে দুজনকে হত্যা অথবা ক্ষমতাবান ব্যক্তির নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে গুলশানে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে পথচারীদের জখম করা- এসব ঘটনা ক্ষমতার দাপট এবং অর্থ ও ক্ষমতার প্রদর্শনবাদিতা এবং সব মিলিয়ে এক বীভৎস কালচারের কিছুটা পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।যে তিনটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো, সেগুলোর কোনোটাই কিন্তু বিচ্ছিন্ন নয়। কয়েক মাস আগে এক সংসদ সদস্যপুত্র ট্রাফিক জ্যামে পড়ে এতই বিরক্ত বোধ করেছিলেন যে তিনি তাঁর বৈধ পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। তাতে একজন রিকশাচালক ও জনকণ্ঠ পত্রিকার একজন কর্মচারী নিহত হন। সম্ভবত ছেলেটি মদ্যপ ছিলেন। এই ধরনের উগ্রতা হচ্ছে বয়সের ধর্ম। কিন্তু বৈধ পিস্তলটি তিনি পেলেন কিভাবে? কারণ তিনি ক্ষমতার কাছের লোক। আর বর্তমানের গণতন্ত্রহীন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ ধরনের যুবকের মনে মদ্যপ অবস্থায় অথবা স্বাভাবিক অবস্থায় এমন ইচ্ছা জাগ্রত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ক্ষমতা নিজেই এমন আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। টাকা ও ক্ষমতা যদি প্রদর্শনই করা না গেল, যদি ক্ষমতা প্রয়োগ করে দুই-চারটা মানুষকে স্বচ্ছন্দে মেরে ফেলাই না গেল, তাহলে কিসের ক্ষমতার দাপট।এরপর দেখলাম সংসদ সদস্যপুত্র নয়, স্বয়ং সংসদ সদস্যের কীর্তি। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। তিনি রাজপথ দিয়ে দামি গাড়ি করে যাচ্ছিলেন। একই পথে হেঁটে চলেছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শাহাদত হোসেন সৌরভ তার চাচা শাহজাহান আলীর সঙ্গে। মাননীয় সংসদ সদস্য গাড়ি থামিয়ে তাঁর চাচাকে ডাক দিলে যেকোনো কারণেই হোক, চাচা দৌড়ে পালিয়ে যান। সংসদ সদস্য ভাবলেন, এত বড় স্পর্ধা। তাঁর ডাকে সাড়া দিল না। তাহলে ক্ষমতার অর্থ কী? ক্ষমতা বোঝানোর জন্য তিনি গুলি ছোড়েন। বালক সৌরভ দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তাতে কী আসে যায়? ক্ষমতা প্রদর্শন করতে না পারলে কিসের সংসদ সদস্য। আর ২০১৪ সাল থেকে যে নির্বাচন পদ্ধতি শুরু হয়েছে, তাতে তো জনগণের প্রয়োজন নেই। কারণ জনগণের ভোট দেওয়ারও দরকার হয়নি। সম্প্রতি তিনটি মেয়র নির্বাচনে এটা আরো ভালো করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আজকাল আর ভোট লাগে না। সরকারের নমিনেশন পেলেই আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের কল্যাণে নির্বাচিত ঘোষিত হবেন। আর শাসক দল বুঝি বেছে বেছে এমন লোককেই নমিনেশন দেয়, যাঁরা প্রায়ই মদ্যপ থাকেন এবং নিরীহ মানুষকে গুলি করে আনন্দ অনুভব করেন।
রবীন্দ্রনাথের একটা ছোটগল্পেও লিখা হয়েছে বিদেশীদের কাহিনী। বিদেশি ইংরেজ শাসক স্টিমারের ডেকে বসে কৌতূহল বশে এক পাল তোলা নৌকায় গুলি করেছিলেন। নৌকাডুবি হয়েছিল। মানুষও মারা যায়। কোর্টে সাহেব সে কথা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু তাঁর কোনো শাস্তি হয়নি। কারণ শ্বেতাঙ্গ শাসকটির মনে অন্য কোনো ইচ্ছা ছিল না। একটা কৌতূহল ছিল, দেখার কৌতূহল, কেমন করে নৌকাটা ডুববে, হয়তো মানুষও মরবে।রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'ইংরেজ নন্দনের মনের ভাব আমরা বাঙালি হইয়া ঠিক বুঝিতে পারি না।...হয়তো একটা স্ফীত বিস্তীর্ণ পদার্থ বন্দুকের গুলির দ্বারা চক্ষের পলকে বিদীর্ণ করিবার একটা হিংস্র প্রলোভন আছে, হয়তো এই গর্বিত নৌকার বস্ত্রখণ্ডের মধ্যে গুটিকতক ফুটা করিয়া নিমেষের মধ্যে ইহার নৌকালীলা সমাপ্ত করিয়া দিবার একটা প্রবল পৈশাচিক হাস্যরস আছে...।'এখন বিদেশি শাসক নেই। কিন্তু স্বদেশি শাসকবর্গের মধ্যেও একই মনোভাব কাজ করে। বিশেষ করে, সেই শাসকরা যদি প্রকৃত অর্থে নির্বাচিত না হন, অর্থাৎ জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা না থাকে। সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্যই শুধু নন, অন্যান্য ক্ষমতাসীনের স্বজনরাও একইভাবে গাড়িচাপা দেওয়া, গুলি ছোড়ার মধ্যে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করে।
দুইশত বছর আগে ইংরেজ শাসকরা যে কালচার দেখিয়ে গেছেন অথবা ইংরেজদের অনুগ্রহপ্রাপ্ত কলকাতার বাবু অথবা গ্রামের জমিদাররা যে কালচার চর্চা করেছেন, আজকের নব্য ধনীরা একটু অন্যভাবে সেই একই কালচার সৃষ্টি করে চলেছেন। হয়তো ডিজিটাল পদ্ধতিতে। একবিংশ শতাব্দী তো!তা না হলে কিভাবে সম্ভব যে সরকারি দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ইকবালের ভাতিজা গুলশানের রাস্তায় উন্মত্তের মতো গাড়ি চালিয়ে ধাক্কা দিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে দুজন পথচারীকে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা যুবক যদি গাড়িতে গতি দেখাতে না পারে, তাহলে কিসের ক্ষমতা, কিসেরই বা আনন্দ-উল্লাস। আমি ঢাকায় প্রায়ই দেখি ধনীর সন্তানদের এভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে। এও এক ধরনের কালচার। এ দেশের নব্য ধনীরা এই কালচারই তৈরি করছেন। আর তাতে মদদ দিচ্ছে শাসক রাজনৈতিক দল। কারণ দুটি। প্রথমত, ইদানীং ভোটের ব্যাপারটা উঠেই গেছে; দ্বিতীয়ত, রাজনীতির জায়গাটা দখল করেছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি স্বয়ং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আক্ষেপ করে বলেছেন, 'আজকে রাজনীতির বেশির ভাগ চলে গেছে ব্যবসায়ীদের পকেটে। এটা আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় কলঙ্ক।' তিনি আরো বলেন, 'কেউ যদি অবৈধভাবে টাকা-পয়সার মালিক হতে চান, তাহলে আরো অনেক ব্যবসা আছে। এমন লোকের রাজনীতিতে না আসাই ভালো।'অর্থাৎ একসময় আদর্শের জন্য রাজনীতি করতেন যাঁরা, তাঁরা এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এখন নমিনেশন কেনাবেচা হয় আর নির্বাচিত হওয়ার জন্য ভোট লাগে না। রাজনীতির যখন এই হাল তখন সেই রাজনীতির প্রতিফলন তো ঘটবেই সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে ক্ষমতাবানদের সংস্কৃতিতে। দেমাগ দেখানো, অধস্তনকে চড়-থাপ্পড় মারা থেকে শুরু করে শখের বশে গুলি চালানো, মনের সুখে হাই স্পিডে গাড়ি চালানো- এসব তো হবেই। ক্ষমতাবানদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুবকরা পিস্তল নিয়ে খেলা করবে, পছন্দ হলে যেকোনো নারীকে তুলে নিয়ে আসবে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
অবশ্য এমন কাজ কেবল ক্ষমতাবানরাই করতে পারবে। সাধারণ মানুষ নয়। ধনীর দুলাল যখন হাই স্পিডে গাড়ি হাঁকিয়ে আসবে তখন সাধারণ পথচারীদের কর্তব্য হচ্ছে নিজ দায়িত্বে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়া। কারণ আনন্দ-ফুর্তির পথে বাধা সৃষ্টি করলে আশঙ্কা থাকে আরো বড় বিপদ ঘটার। শুধু গাড়িচাপা নয়, পিস্তলের গুলিও ছুটে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিচার চেয়েও প্রতিকার পাওয়া যাবে না। কালের কণ্ঠেরই রিপোর্ট ডা. ইকবালের ভাতিজার গাড়িচাপা খেয়েছেন যাঁরা, তাঁরাই এখন বরং ভয়ে আছেন। পুলিশের ভয়ে মামলা করছেন না আহতরা। (কালের কণ্ঠ, ১৭ অক্টোবর)কালের কণ্ঠের ১৫ অক্টোবরের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, 'ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবালের কিশোর ভাতিজার বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে গুলশানে চারজনকে আহত করার ঘটনায় এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বরং প্রভাবশালী পরিবারের ঘটনা হওয়ায় পুলিশের মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।...ঘটনার সময় পুলিশ সাবেক সংসদ সদস্যের ভাতিজা অভিযুক্ত ফারিজ রহমানকে আটক করলেও ছেড়ে দেয়।'পুলিশের এমন ভূমিকা নতুন নয়। এসব কারণেই ওই ঘটনা ঘটার আগেই সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান যথার্থই বলেছিলেন, 'রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকলে আইন তাকে স্পর্শ করে না।' (১৩ আগস্ট এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রদত্ত বক্তব্য)একের পর এক এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ অক্টোবর কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয়তে তাই বলা হয়েছে, 'খুনের মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়া যেকোনো সমাজের জন্যই অশনিসংকেত। প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে গেলে তার প্রভাব সমাজে আরো অনেক ক্ষেত্রে পড়ে। পুলিশ বিভাগ তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পারছে না বা করছে না বলেই তাদের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে।' একই সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, 'পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকাও মানুষ দেখছে না। অনেক ঘটনায় পুলিশ অর্থের লোভে কিংবা প্রভাবশালী মহলের চাপে উল্টো অপরাধীর পক্ষ নেয়।'সমাজে সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রহীনতা, আইনের শাসনের অভাব, টাকাওয়ালাদের দখলে রাজনীতি চলে যাওয়া- এ সব কিছুর পরিণতি হলো এক উৎকট কালচারের জন্ম নেওয়া, যেখানে ক্ষমতা ও অর্থের দাপটের কাছে আইন, ন্যায়নীতি, মানবিকতা পরাভূত। দামি গাড়ি হাঁকিয়ে মানুষ চাপা দেওয়া অথবা কৌতূহল বশে গুলি করে মানুষ মারা- সেই মধ্যযুগীয় শাসক শ্রেণির ঘৃণিত কালচারের কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা কি সেই বর্বর যুগে ফিরে যাচ্ছি?
আর ব্যাভিচারের কথাতো এখন বলে শেষ করা যায় না।শোবিজ জগত বা মিডিয়ার মাধ্যমে এখন উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠিয়ে এখন অনেক বাবা মা খবর রাখেন না।স্কুল,কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের একাংশ বা যারা মফস্বল শহর থেকে এসে বিভিন্ন প্রাইভেট হোষ্টেল গুলোতে থাকে তারা এখন প্রেম বিনিময়ের নামে টাকা অর্জন করছে।২১শে অক্টোবর অনলাইন ডেস্কে এ রকম একটি খবর পড়ে বিহ্বল হয়ে যেতে হয় আমাদের অনেককে যার কিছু বিবরন পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম।তুলে ধরার কারন হলো আমাদের সবাইকে সচেতন করা।আমরা সব কিছু চোখে দেখেও আমাদের ক্ষমতার প্রয়োগ করছি না।যার যতটুকু ক্ষমতা আছে অন্তত সেটুকু প্রয়োগ করে তো আল্লাহর কাছ থেকে বাঁচতে হবে। আমরা জানি ভাড়ায় বাড়ি গাড়ি বা এ রকম অনেক কিছু পাওয়া যায় কিন্তু ভাড়ায় এখন প্রেম বিনিময় হচ্ছে রাজধানীর অসংখ্য হোটেল,উদ্যান নীরব স্হান গুলোতে।আর এগুলো হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।কেউ কেউ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে খবর পৌঁছালেও তারা বলছে উল্টো খবর।অথচ সরজমিনে গিয়ে দেখলে তার ভুরি ভুরি প্রমান মিলে।শহরে লেকের পাড় বা উদ্যানগুলো তৈরি হয়েছে মানুষ যেন একটু স্বস্তির নি:শ্বাস নিতে পারে।কিন্তু আজকাল সেখানে গেলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।যার ঘরে উপযুক্ত ছেলে মেয়ে আছে,এ সমস্ত অনৈতিক যুবক যুবতীকে দেখে রীতিমত হার্টবিট শুরু হয়ে যায় নিজেদের সন্তানদের কথা চিন্তা করে।কি জানি কখন কার খপ্পরে পড়ে যায়।রাজধানীতে চলছে ভাড়ায় প্রেম।বিভিন্ন নাম যেমন- ক্যাটরিনা, মল্লিকা, বিপাশারা অপেক্ষায় থাকে ভাড়াটে প্রেমিকদের জন্য। ঘণ্টা চুক্তিতে চলে তাদের প্রেম। ৫০ টাকায় গল্প করা, ১০০ টাকায় হাত ধরা ও চুমুতে ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। টাকার পরিমাণ বাড়লে মিলবে অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগও।রাজধানীর রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে এমন প্রেমিকারা অপেক্ষায় থাকে প্রেমিকের জন্য। মিলে গেলেই কোন গাছের ফাঁকে, কিংবা আড়ালে প্রেমিক-জুটির চলে আড্ডা।এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে পুলিশ, নিরাপত্তাকর্মী। ভাড়াটে প্রেমিক-যুগল পার্কের প্রতিটি সিট দখল করে বসে থাকে। তারা আশপাশের লোকজনকেও তোয়াক্কা করে না। ঠিক থাকে না তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ। পার্কগুলো আরও বিব্রতকর হয়ে ওঠে। উদ্যানের ঘাস তখন তাদের বিছানায় রূপ নেয়। তাদের দেখাদেখি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও মেতে ওঠে উদ্দামতায়।ভাড়াটে প্রেমিকারা চলার পথে এক পলকেই যুবকদের টার্গেট করে। কাছে এসে নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করে। পরক্ষণেই বলে ওঠে, বসবেন নাকি? কতক্ষণ? টার্গেট করা যুবকের সম্মতি পেলে কম দামেই তারা বসে পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে রেট বাড়াতে থাকে।খবর সূত্রে জানা যায়, এরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিফট হিসেবে সময় দেয় উদ্যানে। যারা সকালে বা দিনে থাকে তারা রাতে আসে না।প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের মতে,ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন গেটের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে সারি সারি প্রেমিক যুগল বসে আছে। এদের মধ্যে স্কুলের ইউনিফর্ম পরা কমপক্ষে ৩০টি জুটি দেখা গেছে। এদের বেশির ভাগই স্কুল ফাঁকি দিয়ে এসেছে। আর অন্যরা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও ভাড়াটে বিনোদিনী।ভাড়াটে প্রেমিকা ক্যাটরিনা কাইফ বলেন, একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেড় ঘণ্টা উষ্ণ প্রেম নিবেদন করে তার ১৮০ টাকা কামাই হয়েছে। ক্যাটরিনা জানায়, তার মতো আরও অনেক সুন্দরী এ পেশার সঙ্গে জড়িত। এমন একজনের নাম মল্লিকা। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রেম ভাড়া দিই। অন্যের দুঃখকে আনন্দে ভরিয়ে দিই। এ কাজ এত্ত সহজ নয়। তাই কাজ বুঝে ভাড়াও নির্ধারণ করা আছে আমাদের।’ তপু নামের একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় এ রাস্তায় বাসায় ফিরি। প্রতিদিনই দেখি এদের।’সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পার্কে বিনোদিনীদের নিরাপত্তায় সহায়তা করে নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ। এজন্য তারা নির্ধারিত কমিশন পায়। এমন বিনোদনদানকারীদের কাছ থেকে রমনা ও শাহবাগ থানা পুলিশ নিয়মিত মাসোহারা নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।বিনোদিনীরাই বলেছে, মাসোহারা নেয়ার সময় অনেক পুলিশ সদস্য নিখরচায় উষ্ণ বিনোদনও গ্রহণ করে। পার্কে থেকেই চকলেট বিক্রি করেন এমন একজন মধ্যবয়সী মহিলা বলেন, ‘ওই মাইয়াডা প্রায় দিনই এদিকে আইয়া বন্ধুর লগে আড্ডা দেয়। মেয়েডা বালো না। একেক দিন একেক পোলা লইয়া আইয়ে। দ্যাকতে সুন্দরী। ওর নাম কইছে বিপাশা। যেয় যেইডা খোঁজে হেয় হেইডা পায়। তয় দিনে কম, রাইতে বেশি।’
রমনা পার্কে সবসময় পানি বিক্রি করে রতন। রোববার সন্ধ্যায় তার কাছে জানতে চাইলে বলে, ‘ইডা আর নতুন কি। যার ডারলিং নাই, হে ডারলিং ভাড়া নেয়।’ ভাড়াটে বিনোদিনী ও ইউনিফর্ম পরা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঘোরাঘুরির নামে আপত্তিকর আচরণে চরম বিব্রত হন পার্কে আসা স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা।সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তায়েজুল হাসান সস্ত্রীক পার্কে এসেছেন বৈকালিক ভ্রমণে। তিনি বলেন, পার্কের ভেতরের যা অবস্থা- তাতে এখানে আসাই বিপদ। এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে আপত্তিকর অবস্থায় কোন যুবক-যুবতী বসে নেই। লজ্জায় ১০ হাত জায়গার মধ্যেই হাঁটাহাঁটি করে ঘরে ফিরতে হয়।প্রশাসন এসব বিষয় মাথায়ই আনে না। রমনা পার্কের উত্তর গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী হানিফ মিয়া জানান, বাইরে থেকে কেউ কাউকে নিয়ে এসে ঘোরাঘুরি করলে তো আমাদের করার কিছু নেই।এটা তো ঘুরে বেড়ানোরই জায়গা। রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন বিষয় সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। পার্কের ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তায় ২০ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। ভাড়াটে প্রেমিক কিংবা বিনোদিনীদের থাকার সুযোগ নেই। আর পুলিশ মসোহারা নেয়- এমন অভিযোগও ঠিক নয়।
প্রাচীন জাহিলিয়াতে এ রকম অবস্হা হয়েছে বলে ইতিহাসে প্রমান নেই।আজকের অশ্লীলতা যেন হার মানিয়ে চলছে আদি যুগগুলোকে। ইসলাম পূর্ব সমাজের এক অনুপম দৃষ্টান্ত আমাদের দেখিয়ে দেয় একাকিত্বে কোন মহিলাকে পেলেও তারা যোগ্য সম্মান দিতে কার্পন্য করতো না।তার একটি উম্মে সালামার জীবন থেকে আমরা পেতে পারি।তাঁকে বলা হয় 'আইনাল আরব' বা আরবের দৃষ্টি।'তখনকার প্রখ্যাত 'মাখযুম বংশের'মেয়ে ছিলেন তিনি।উম্মে সালামা ও তার স্বামী আব্দুল্লাহ ইবনে আবদ আল আসাদ তারা দুজনেই প্রথম ইসলাম গ্রহনকারী গনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।এ সময়ে যারাই ইসলাম গ্রহন করেছে তাদের উপর কাফেরদের অত্যাচার চলছিল কিন্তু তাদের দৃঢ়তা তাদের ইসলাম থেকে বিচ্যুত করতে পারে নি।যখন কাফেরদের অত্যাচার চরমে উঠলো তখন আল্লাহর রসূল সা: নও মুসলিমদের হিযরত করার আনুমতি দিলেন এবং প্রথম একটি দল আবিসিনিয়ায় হিযরতর করলেন।উম্মে সালামা দম্পতিও সেই দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।কিন্তু আবিসিনিয়ায় হিযরত করলেও তাদের মন পড়ে রয়েছিল মক্কায়।তারা যখন শুনলো মক্কায় নও মুসলিমের সাংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে তখন তারা মক্কায় ফিরে এলেন।কিন্তু কাফেররা তাদের উপর আরো ব্যাপকভাবে নির্যাতন শুরু করলো।এমতাবস্হায় রসূল সা: সাহাবাদের মদিনায় হিযরত করার অনুমতি দিলেন।এই হিযরতটি যে কত কঠিন ছিল তা উম্মে সালামার কথা থেকে ফুটে উঠে।তিনি এভাবে বর্ননা করেন,'যখন আবু সালামা মদিনা হিযরত করার জন্য মনোস্হ করলো,আমার জন্য একটি উট ঠিক করে আমার সাথে আমার ছেলে সালামাকে আমার কোলে বসিয়ে দিল।তার পর আবু সালামা কোন দিকে দৃষ্টি না দিয়ে যাত্রা শুরু করলো।মক্কা ছাড়তে উদ্যত হলে আমাদের বংশের কিছু লোক আমাদের যাত্রার গতি থামিয়ে আবু সালামাকে বললো,'যেহেতু তুমি মুক্ত,তোমার ব্যাপারে যা ইচ্ছে তাই করতে পার কিন্তু তোমার কোন ক্ষমতা নেই আমাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে পার।তারা আমাকে আমার স্বামী থেকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেল।তারা আমার ছেলেটিকেও নিয়ে গেল।কিছুক্ষন পর আমি আমাকে একাকি পেলাম।আবু সালামা মদিনার উদ্দেশ্যে চলে গেল। আমার বংশের লোকরা আমাকে তাদের সাথে থাকতে বাধ্য করলো।যেদিন থেকে আমার স্বামী ও সন্তান আমার থেকে পৃথক হয়ে গেল,আমি প্রতিদিন মধ্যাহ্নে সে যায়গাটিতে গিয়ে বসে থাকতাম।আমি সেই মুহুর্তগুলোকে ভেবে চোখের পানি ফেলতাম যতক্ষন না সন্ধা আবির্ভূত হতো।এভাবে আমার এক বছর কাটলো।একদিন বনু ওমাইয়ার একজন লোক আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার অবস্হা দেখে আমার বংশের লোকদের নিকট গিয়ে বললো,'তোমরা কেন এই নির্যাতিত মহিলাটিকে মুক্ত করে দাও না? তোমরা তার স্বামীর কারনে তার ছেলেটিকে তার থেকে নিয়ে নিলে।লোকটি এভাবে তাদের মন নরম করে উম্মে সালামাকে মদিনায় যাওয়ার ব্যাবস্হা করলো।কিন্তু ছেলেকে নিয়ে একজন মহিলার পক্ষে মদিনায় যাওয়া ছিল কঠিন একটি কাজ।বিজন মরুভূমি তার পর ১৫ দিনের রাস্তা।কিন্তু তিনি তার উট ঠিক করে ছেলেকে বসিয়ে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।তিনি যখন 'তানিম' (মক্কা থেকে তিন মাইল দূর একটি যায়গা) পৌঁছলেন,দেখা হলো 'উথমান ইবনে তালহার'সাথে যিনি ইসলাম পূর্ব সময়ে কাবার রক্ষক ছিলেন।তিনি উম্মে সালামাকে বললেন,কোথায় যাচ্ছ 'যাদ আর রাকিবের'(উম্মে সালামার বংশের প্রতিকি নাম) মেয়ে? উম্মে সালামা বললেন,আমি আমার স্বামীর নিকট মদিনা যাচ্ছি।তোমার সাথে কি কেউ নেই? না,একমাত্র আল্লাহ ও আমার সন্তান ছাড়া।তিনি বললেন,আল্লাহ সাক্ষি আমি তোমাদের মদিনায় না ছেড়ে পরিত্যাগ করবো না।উম্মে সালামা বললেন,আল্লাহর শপথ আমি আরবে তার চেয়ে মহত আর কোন মানুষ দেখি নি।যখন কোন অবসর যাপনের সময় হতো তিনি আমার উটকে নিচু করে দিতেন ও আমি নেমে যেতাম একটি গাছের নিচে অবসর যাপনের জন্য আর তিনি অন্য গাছের নিছে চলে যেতেন।যখন অবসর যাপন শেষ হতো আমরা যাত্রা শুরু করতাম।এভাবে প্রতিদিন মদিনা পৌঁছা পর্যন্ত তিনি আমাদের সাথী ছিলেন।যখন আমরা কুবার কাছে একটি গ্রামে পৌঁছলাম তখন তিনি বললেন'আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি এখানে প্রবেশ কর।তোমার স্বামী এখানেই আছে।'উথমান ইবনে তালহা মক্কার দিকে চলে গেলেন। কি মহান উদারতা জাহেলিয়াত যুগের মানুষদের? আজ কি এরকম আমরা আশা করতে পারি।উম্মে সালামা স্বামীকে পেয়ে অতি আনন্দিত হলেন এবং আবু সালামাও স্ত্রী ও সন্তানকে কাছে পেয়ে অতি উচ্ছসিত হলেন।এর পর বদরের যুদ্ধ হলে মুসলিমরা বিজয় লাভ করলো।ওহুদের যুদ্ধে আবু সালামা গুরুতর আহত হলেন কিন্তু আর তিনি সেরে উঠলেন না।একদিন উম্মে সালামা যখন তাকে সেবা শুশ্রষা করছিলেন,আবু সালামা বললেন আমি রসূল সা:কে বলতে শুনেছি,'যখন কোন দুর্যুগ কোন মানুষের উপর পতিত হয় তখন সে বলে,'এটি নিশ্চিত আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।' তিনি আরো বলতেন,'হে আল্লাহ! এ থেকে ভাল কিছু তুমি আমাকে দাও এবং তুমিই একমাত্র শক্তিশালি।একদিন সকালে রসূল সা: আবু সালামাকে দেখতে এলেন।আগের তুলনায় দীর্ঘক্ষন বসলেন।রসূল সা: পাশে থাকা অবস্হায় আবু সালামা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন।তিন আবু সালামার চোখ দুটি বন্ধ করে দিলেন ও হাত তুলে দোয়া করলেন,'হে আল্লাহ! আবু সালামাকে ক্ষমা করে দাও।তাকে অন্ত্ভুক্ত কর যারা তোমার অতি নিকটে।তার পরিবারের তুমি সব সময়ের জন্য দায়িত্ব নাও।আমাদের ও তাকে ক্ষমা কর হে বিশ্বভ্রমান্ডের মালিক! তার কবরকে প্রশস্ত ও হাল্কা করে দাও।আবু সালামার অন্তর্ধানে মুসলিমরা অত্যন্ত দু:খিত হলো।মদিনায় উম্মে সালামার আপন কেউ ছিল না একমাত্র ছোট শিশুরা ছাড়া।মুহাজেরিন ও আনসাররা উম্মে সালামার দায়িত্ব নেয়ার জন্য এগিয়ে আসলো।যখন ইদ্দত( তিন মাস দশ দিন) পার হলো তখন আবু বকর রা: বিয়ের প্রস্তাব দিলেন কিন্তু তিনি প্রত্যাক্ষান করলেন।এর পর ওমর রা: আসলেন ,সেটিও প্রত্যাক্ষান করলেন।এর পর রসূল সা: এগিয়ে আসলেন এবং উম্মে সালামা বললেন,' হে আল্লাহর রসূল সা: আমার তিনটি চরিত্র আছে।আমি এমন একজন মহিলা যে বিশেষভাবে ঈর্ষান্নিত একজন মহিলা এবং আমি ভীত যে আপনি যদি এটি দেখেন রাগান্নিত হবেন এবং যার কারনে আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন।আমি একজন মহিলা যে বয়সের দিকে এগিয়ে এসেছি এবং যার আছে একটি পরিবার।'রসূল সা: উত্তর দিলেন,' যে ঈর্ষার কথা তুমি উল্লেখ করেছ আমি দোয়া করি আল্লাহ তা তোমা থেকে দূর করে দিবেন।বয়স সম্পর্কে তুমি যা বলেছ আমিও সেটিতে উপনীত হয়েছি।তুমি যে পরিবারের কথা বলেছ সেই পরিবারটি আমারই পরিবার।' রসূল সা: এর সাথে উম্মে সালামার বিয়ে হলো এবং আল্লাহ পাক আবুসালমার চেয়ে ভাল স্বামী তাকে দান করলেন।উম্মে সালামা হলেন বিশ্বাসীদের মাতা।
সমাজ পরিবর্তনের জন্য অসৎ ধান্দাবাজি,অশ্লীলতা ও সমস্ত অপরাধ গুলোকে যিরো টলারেন্সে নিয়ে আসার একমাত্র উপায় নৈতিক চরিত্রকে উন্নত করা।ধর্মের অনুষংগ নিয়ে আলোচনা করলে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা অনুশীলনের মাধ্যমে অপরাধ কমে যাওয়া সম্ভব।অনেকে হয়ত বলবে ইসলাম ধর্মের অনেকে তাহলে খারাপ কাজ করে কেন? এর জবাবে বলা যায়,যারা খারাপ কাজগুলো করে তারা ধর্মের নিয়মনীতি মেনে চলে না।এরা হলো ইসলামের কুলাংগার।এদের দেখে ইসলামকে অনুসরন করা নয় বরং ইসলামের দু'টি জীবন্ত নির্দেশনা -আলকুরআন ও ছহি সূন্নাহকে যথাযথ অনুসরনের মাধ্যমে মানুষ পাপমুক্ত হতে পারে ও সমাজ পরিবর্তন হতে পারে তার উদাহরন হলো মদিনায় ইসালমি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
বিষয়: বিবিধ
২৯৬৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন