মুন্নার নিস্তব্ধতায় মলিন সেই লাল বেনারসি শাড়ি।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১২ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৫৬:৪৭ সন্ধ্যা

সত্তরের দশকে জন্ম মুন্নার নবাবপুরে এক ব্যবসায়ি পরিবারে।মেয়েদের মধ্যে বড়।১ ভাই ও ৩ বোন।রুমা , রিতা ও শাহিন অন্য ভাই বোনদের মধ্যে। চন্চল মেয়েটির স্কুল জীবনের শেষ লগ্নেই বিয়ে হয়ে যায়।আমাদের দেশে অস্ংখ্য পরিবার রয়েছে যারা ইসলাম অনুসরনে সন্তান লালন পালন করেন না।অপরিনত বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে থাকেন।এমনকি অনেকে ফোর্স মেরিজ ও দিয়ে থাকেন।ইসলামে ফোর্স মেরিজ এব্ং ছেলে মেয়ের অনুমতি বিহিন বিয়ে প্রত্যাখান যোগ্য।আবশ্য মুন্না সে রকম নয়।তার কনসেন্টে বিয়ে হয়েছে।বলা যায় ফজলু সাহেবের সাথে পারিবারিক জানাশুনা ছিল।আশির দশকের মাঝামাঝি আমি তার মামার বাড়িতে দেখেছিলাম যখন ফজলু সাহেবের সাথে বিয়ে ফাইনালাইজ হওয়ার পথে।বয়স কম হলেও গড়নে ছিল সুঠাম ও স্মার্ট।গোলাপি চেহারার সাথে লাল বেনারসি যেন ওকে মানিয়ে ছিল চমৎকার।আজকে ইসলামের যে মেসেজ আমার কাছে এসেছে সেদিন তা ছিল না। ইসলাম ছিল কিন্তু ইসলামের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য তখনো আমার হৃদয়ে স্পর্শ করেনি বা পৌঁছেনি।আমাদের সমাজে ইসলামের এই অবস্হা সর্বএ বিরাজমান।এমনকি আমি প্রত্যক্ষ করেছি একশ্রেনির উলামা যারা শরিয়তের বিধান উপেক্ষা করে একজন পর স্ত্রির সাথে কথা বলেন পর্দা ছাড়া।সূরা নূর ও সূরা আহজাব পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন ইসলামি শরিয়ত কি কঠোর বানি উচ্চারন করেছে যা আমরা প্রায়শই ল্ংঘন করে থাকি। আমি প্রশ্ন করেছিলাম মেয়েটি কে? ওর এক আত্মিয়া বললেন আমার বোনের মেয়ে।মু্ক্তো ঝরতো মেয়েটির কথা থেকে। আজকে শহর আর গ্রামের ময়েদের তেমন একটা পার্থক্য নেই মিডিয়ার কারনে। তখনকার দিনে শহরের ছেলে মেয়েরা ছিল অধিকতর স্মার্ট।আশির দশকেই বিয়ে হয়েছিল ধূমধামে।২৫ বছরের দাম্পত্য জীবন পেরিয়ে এখন পৌড়ত্বের কাছাকাছি।আমাদের দেশের মত অনুন্নত দেশে যাদের গড় আয়ু ৩৫/৩৬ তাদের জন্য ২৫ বছরে দাম্পত্য জীবন অনেক।মানুষের তো আশার শেষ নেই। আমরা চাই যেন মৃত্যু পর্যন্ত এক সাথে থাকতে পারি।হয়ত পাঠকের মধ্যে মুন্নাও থাকতে পারে যে পড়ে হতবিহবল হয়ে যেতে পারে।কিন্তু লেখক লিখেন জাতির বৃহত্বর স্বার্থে। আমাদের দেশে লেখকদের মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করেছেন।আমি তার অস্ংখ্য রচনা পড়েছি।আমার অভ্যাস হলো সব কিছু টাচ্ করা। খারাপের মধ্যেও আপনি ভাল কিছু পেতে পারেন যদি নিতে সক্ষম হন।আল্লাহ সূরা শূয়ারার শেষের দিকে কবিদের ব্যাপারে বলেছেন, কবিদের অনুসরন করে পথভ্রষ্টরা আর তারা যা বলে তা করে না।আমি কখনো অনৈসলামিক কবিদের অনুসরন করিনা তবে তাদের ভাল কথাগুলো থেকে ধার করি।তিনি যদি ইসলামের উপর লিখতেন তার মেধা থেকে তাহলে ইসলাম বা্ংলাদেশে অনেক উপকৃত হতো।তবে যে কারনে আমি উনার কথা উল্লেখ করলাম সেটা হোলো, আশির দশকে উনার একটি জনপ্রিয় সিরিয়েল নাটক " এই সব দিন রা্ত্রি" প্রতিটি পর্ব এনজয় করেছিলাম। সমাজের প্রতিনিয়ত ঘটনাবলির বাস্তব রুপ নিয়ে তিনি রচনা করেছিলেন। সেখানেও বড় ছেলের মেয়েটি মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার বিমর্ষ হয়ে গিয়ে কেউ কেউ বলেছিল কেন একমাএ তাদের উপর এ ঘটনাটা ঘটলো।এমনকি বাবা ওদের মা'র মৃত্যুতে অসহায় হয়ে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতো। ইসলামে এমনটি নেই।ইসলামে সাধারন শোক হলো তিন দিন।কোন বিলাপ থাকবে না। তবে অশ্রু ঝরানো যেতে পারে।একজন মহিলার জন্য শোক হলো ৪ মাস দশ দিন।কোন বিলাপ নেই।এর পর কোন শোক নেই। বিলাপ করা হলো আল্লাহর বিরোধিতা করা।আমরা জেনে গেছি আমাদের মৃত্যু নির্ধারিত।কোরান বলেছে সমস্ত প্রানীই মৃত্যু বরন করবে। যদি বিয়ের বয়স থাকে বিয়ে করাটাই উত্তম। আর যদি চরম ছবরের মধ্যে থাকতে পারে তাও ভাল।তবে আমাদের সমাজে একজন বিধবা মহিলা স্বামী ছাড়া থাকা অনেকটাই আনসিকিউরড।যদি ভাল পাএ পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে করাটা্ই উত্তম। অনেকে আল্লাহকে ভয় না করে মান সম্মানের ভয়ে এ পথ থেকে দুরে থাকে এটা নিজের নফছের উপর একটা জুলুম।আবার অনেককে দেখেছি ৬০/৭০ বছর বয়সেও ঘরনিকে টর্চার করে পরকিয়ার সাথে কুকাজ করে। আপনারা যাকে উন্নত সোসাইটি বলে জানেন সে সোসাইটিতে এর আলামত দেখতে পাবেন।আমি এক সময় একটা ফ্রান্সাইজ ফাইভ ষ্টার হোটেল এর চিপ এ্যাকা্উন্টান্ট ছিলাম মাএ এক বছর।আমি দেখেছি সমাজের উঁচু শ্রেনির কার্যকলাপ।এক বছর পর ইস্তফা দিয়ে বর্তমান কোম্পানিতে কাজে নিযুক্ত আছি। বিয়ে হলো ইজ্জ্বতের সুরক্ষা।সমাজের ভয়ে নয় একমাএ আল্লাহকে ভয় করতে হবে।পৃথিবির সব দেশেই যাদের বড় বড় বক্তৃতা রাজপথে শুনেন তাদের অনেককেই পাবেন রাতে ফাইভ ষ্টার হোটেল গুলোতে এলকহল পান রত ও নারিদের সাথে অশ্লিল নৃত্যে রত। কারন তারা সুখি হতে চায় এভাবে।আসলে এটা সুখ নয়।তাদের জিবন ফ্রাসট্রেটেড।পারিবারিক জীবনে অশান্তি এর মূল কারন। আর জুলুমের অপরাধ হলো জাহান্নাম। একজনের ক্ষুধা আছে অথছ লজ্জ্বাবোধ করে ক্ষুধার্থ থাকে।এটা তার নফছের উপর জুলুম ছাড়া কিছুই নয়।

একজন সাহিত্যিকের কাজ হলো সমাজের সুখ দু:খের , ভাল মন্দের ও জীবনের কল্প কাহিনী বর্ননা করা যাতে পাঠকের অজান্তেই কথাগুলো তার হৃদয় স্পর্শ করে।প্রমথ চৌধুরি বলেছেন," সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য শুধুমাএ মানুষকে আনন্দ দেয়া,কারো মনরন্জন করা নয়।" আমি বলবো একজন মুসলিম সাহিত্যিক তার সাহিত্য রচনায় কোরান সূন্নাহর সমাবেশ ঘটাবেন যাতে মানুষের নৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেছেন, " তোমার আত্মা হতে যেমন তুমি বিছ্ছিন্ন হতে পার না ,সাহিত্যকেও তেমনি তুমি অস্বীকার করতে পারনা,উহাতে তোমার অসম্মান হয়।"

সেই চন্চলা মেয়েটির স্বামিবিয়োগ হয়েছে দু'বছর হলো।তার এক আত্মিয়ার সাথে ২৭ বছর পর আমার যোগাযোগ হয়।ওদের সবার কথা বলতেই বললেন মুন্নার কথা।স্বামিবিয়োগের পর অত্যন্ত ধার্মিকতা , নিস্তব্ধ জীবন যাপন করে চলছে। বয়সের কারনে অনেক আত্মীয় স্বজন বিয়ের প্রস্তাব দিছ্ছে কিন্তু সে মেনে নিছ্ছে না।কোন অসুবিধে নেই।তার মনের খবর তার কাছেই রয়েছে।যদি ইসলামি আইনের ভিতরে অবস্হান থাকে তাহলে আল্লাহ মর্যাদা বাড়াবেন আর যদি নাফ্স বিপর্যস্ত করে তাহলে কোরান হাদিসের আলোকে পথ বেছে নিতে হবে।

আমাদের ইসলাম সম্পর্কে ক্ষীন ধারনার কারনে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পরিনা।আল্লাহ মানুষের কল্যানের জন্য এমন কিছু বাকি রাখেন নি যা কোরান ও হাদিসে বর্নিত হয় নি।নিজের কল্যানের পথ নিজেকেই বেচে নিতে হবে।আর আল্লাহর ছেয়ে সত্য বলার কে আছে আসমান ও জমিনে।সমাজে এমন অনেক স্বামি তার ঘরনীকে হারিয়েছেন আবার অনেক ঘরনি ও স্বামিকে হারিয়েছেন আবার স্ংসার বেধেছেন।এটা সম্পুর্ন মনের ব্যাপার।যে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে সেই প্রকৃত সুখি।তবে মনের গন্ডিটা বড় হলেই ভাল।বিয়ে না করে অনেককে দেখছি সামাজিক কাজ করে জীবনকে উজাড় করে দিয়েছেন। আর জীবনের পৌড়ত্তের সময় যদি মানুষের কল্যানে কাজ করা যায় সেটা আরো মঙলজনক।তবে দেখতে হবে নফস্ আল্লাহর দিকে না দুনিয়ার দিকে।একটি বাস্তব উদাহরন টানছি আপনদের শরনার্থে। এক বাবার স্ত্রি বিয়োগ হয়েছিল অনেক আগে।ছেলে মেয়েরা খুব করে ধরলো বাবাকে বিয়ে করার জন্য কিন্তু বাবাকে রাজি করা গেল না।দীর্ধদিন পর ছেলে উপযুক্ত হলো ও ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে লাগলো। এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে একটি সুন্দরি মেয়ের প্রস্তাব এলো।বাবা কাউকে জানলেন না।বিয়ে অনেকটা পাকাপাকি করে ছেলেমেয়েকে ডাকলেন।এবার ছেলে মেয়ে তো বেঁকে বসলো।তারা বললো আপনাকেতো অনেক আগেই আমরা বলেছিলাম।এখন আমাদের মান সম্মানে বাধছে।বাবা বললেন এতদিন আমি সবল ছিলাম।এখন দুর্বল হয়ে পড়েছি। আমাকে দেখার কে আছে। ওরা বললো তাহলে আমরা যে মেয়ে ঠিক করেছি তাকেই বিয়ে করতে হবে।বাবা বললেন মেয়ের সাথে তোমরা ঘর করবা না আমি করব।ঘটনাটা বললাম এমন যেন আমাদের কারো জীবনে নেমে না আসে যাতে আত্মসম্মানে আঘাপ্রাপ্ত হয়।

গ্রাম বা্ংলায় অস্ংখ্য মানুষ হারানোর বেদনা লালন করে সারাজীবন কাটিয়ে দেন।হয়ত আপনার জুটি আরো ভাল মিলে যেতে পারে এব্ং আপনার নিস্তব্ধ ও মলিন জীবন হয়ে উঠতে পারে লাল বেনারসি শাড়ির ঝলমলে যেমন ঝলমল করে ভেসে আসে দূর থেকে সমুদ্রের অবিরাম ঢেউগুলো।

বিষয়: বিবিধ

১৯৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File