দেশে সুস্হ ধারার রাজনীতি দেখে যেতে পারবো কি?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪০:১০ রাত
দীর্ঘ প্রবাস জীবনে নিজেকে অস্হির মনে হয়।নিজ দেশে মুক্ত বাতাসে চলা ফেরার যে আনন্দ তা ভীন দেশে নেই যদিও সেখানে ভরপুর রয়েছে জীবন চলার সব সামগ্রী।এই জন্যই আমরা দেশের মাটিতে পা দিয়ে উচ্ছাসের সাথে বলে থাকি 'ইনহাস্ত ওয়াতানম' অর্থাৎ এইতো আমার জন্মভূমি।অনেকে স্হায়ী রেসিডেন্ট পারমিট নিয়ে ভীন দেশে জীবন কাটিয়ে দেয়।মাতৃভূমি সম্পর্কে তাদের কোন ভাবনা নেই।এটি একটি মানসিক বিকলাংগতা ও স্বার্থপর জীবনের পরিচায়ক।গত বাইশ বছর মরু দেশে বসবাস করলেও প্রান কাঁদে দেশের জন্য।দেশের আর্থসামাজিক অবস্হা প্রবাসীদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে পারছেনা।যারা তাদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশকে উর্বর করছে তাদের জন্য তেমন কিছুই করেনি সরকার।বিশ বা ত্রিশ বছর রেমিটেন্স পাঠানো এমন অনেক নাগরিককে জীবনের শেষে দেশে গিয়ে পথে বসতে হয়েছে।বিদেশে বসে দেশের কথা ভাবা বা ভাবের প্রকাশ করা কঠিন।পড়াশুনার জন্য প্রয়োজনীয় লাইব্রেরি নেই বাংলা মাধ্যমে।ইংরেজী ভাষায় বই পড়ে লেখালেখি করতে হয় অনেককে।সে রকম চেষ্টা করে যাচ্ছি।তবুও নিজেকে স্বার্থক মনে করছি কিছু করতে পেরে।বিদেশ বিভুঁয়ে নানা জাতি,নানা বর্নের মানুষের সাথে সখ্যতা করে চলতে হয়।এর ভীতরে বাস করে মাতৃভাষার উৎকর্ষতা মনের গহীনে স্হান করে দেয়া যে কত কঠিন তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।তবুও পাঠকদের ও দেশের কথা মনে করে হৃদয় উজাড় করে লিখে যেতে চাই।লিখতে গেলে একটি জিনিস হৃদয় ক্ষরন করে তা হলো-দুর্নীতি, খুন, জখম, অপহরণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নেতা নেতৃদের ভাগাড়ম্বর বক্তৃতা,দু্র্বিত্তদের শাসন শোষনের যাঁতাকলে দেশের মানুষ যখন অতিষ্ঠ তখন কেমন যেন কলমের গতি স্হবির হয়ে যায়।বাংলাদেশের সবাই কল্যান চায় ও কল্যানের জন্য সৃষ্টি হয়ে চলছে দলের পর দল কিন্তু মানুষ কল্যানের মুখ দেখতে পায় না।তেমনি আমাদের দুই বড় দল গনতন্ত্র নিয়ে তাদের উচ্ছাস প্রকাশ করছে।একদল ক্ষমতায় গেলে বলে গনতন্ত্র রক্ষা হয়েছে আর এক দল ক্ষমতার বাইরে থেকে বলে গনতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে।মুসলিম একটি জনগোষ্ঠী যারা বলে ইসলামে গনতন্ত্র নাযায়েয তাদের ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। ইসলামে গনতন্ত্র নাযায়েয নয় তবে তথাকথিত গনতন্ত্র ইসলামের জন্য নয়।ইসলামের ইতিহাসে শাসক নির্বাচিত হয়েছে গনতন্ত্রের মাধ্যমে।ইসলামের শাসনের মুল সংবিধান হলো আলকুরআন ও ছহি সুন্নাহ।মানব রচিত বিধান দিয়ে ইসলামি শাসনতন্ত্র চলে না।ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা অন্য ধর্মের উপর বিজয় লাভ করেছে এবং রোজ কেয়ামত পর্যন্ত করবে।তবে মুল সমস্যাটি দাঁড়িয়েছে যে, পৃথিবী ব্যাপী মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামের খালেস(আলকুরআন ও ছহি সুন্নাহের) কোন নেতৃত্ব নেই।যারা ইসলামের কথা বলছে কিন্তু ইসলামের সঠিক কাজটি করছে না ব্যাক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে।সেজন্য ইসলামের সৌন্দর্য মানুষ দেখতে পাচ্ছে না।পাশ্চাত্যে যে গনতন্ত্রের লালন হচ্ছে এবং যা আমরা অনুসরন করছি সেখানেও যদি গনতান্ত্রিক শক্তিগুলো সহনশীল ও সৎ হতো এবং মানবতাকে সামনে নিয়ে আসতো তাহলে সমাজে যে বিশৃংখলা আজকে দেখা যাচ্ছে তা অনেক কম হতো।যেখানে ক্ষমতার লড়াই চলে সেখানে মানবতার মৃত্যু হয়।এ ক্ষমতার লড়াই হলো পেশী শক্তি প্রয়োগ এবং একটি শ্রেনীর ভাগ্যন্যুয়ন।ক্ষমতা হাতে পেলে জীবনের চাকা ঘুরে যায় আলাদীনের চেরাগের মত।কোটি কোটি টাকা ও বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে যায়।এটি যখন গনতন্ত্রের মুল হয়ে যায় তখন সমাজে নৈরাজ্য বৃদ্ধি পায় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এরই প্রতিফলন হয়েছে বার বার।যারাই গনতন্ত্রের কথা বলেছেন তারাই আবার সামরিক শাসকদের পদতলে নিজেদের সমর্পন করেছেন নিজের স্বার্থচরিতার্থ করার জন্য। ইনারাই সামরিক শাসন বা স্বৈরাচারী শাসনের সহযোগী হওয়াকে গণতন্ত্রের খেলাপ মনে করেন না, আবার সুযুগমত সেখান থেকে বিচ্যুত হয়ে গনতান্ত্রিক দলগুলোর সাথে ভীঁড়ে যেতেও তাদের সময় লাগে না।রূপকথার সেই চড়ুইপাখির গল্পটি অনেকের জানা। রাজার দাবি তিনি এমন নারীকে বিয়ে করে রানী করবেন, যার গল্পের কোনো শেষ নেই। দেশের কোনো নারী রাজার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে রাজি হলেন না। কিন্তু এক তরুণী এগিয়ে এলেন। বিয়ের পর বাসর ঘরে তিনি রাজাকে গল্প শোনাতে বসলেন। বললেন, এক কৃষকের ছিল একটি ধানের গোলা। গোলাটির চারদিক এমনভাবে ঢাকা যে একটি পিঁপড়েও তাতে ঢুকতে পারে না। কিন্তু তাতে একটি ছিদ্র ছিল। সেই ছিদ্রপথে একটি চড়ুই এসে একটি ধান ঠোঁটে নিয়ে উড়ে গেল। তারপর এলো আরেকটি। তারপর আরেকটি। রাজা অধৈর্য হয়ে বললেন, তারপর কী হল বলো? নতুন রানী বললেন, তারপর আরেকটি চড়ুই এলো। রাজা বললেন, তারপর? রানী বললেন, আরেকটি চড়ুই এলো। রাজা যতবার বলেন, তারপর- রানীর জবাব আরেকটি চড়ুই এলো। এই চড়ুই আসার আর শেষ নেই। গল্পেরও শেষ নেই।বাংলাদেশের গল্পও চড়ুইপাখির গল্পটির মতই যা শেষ হবার নয়।প্রতিটি সরকারের কাজ যদি উন্নয়ন হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমতায় গিয়ে তো তা-ই হওয়ার কথা।আইনের শাসন থাকার কথা,বিচারবিভাগের স্বাধীনতা থাকার কথা,মানুষের জান মাল রক্ষা করার কথা,গুম খুন ও অকাতরে মানুষ হত্বা না হওয়ার কথা,ঘুষ দুর্নীতি না থাকার কথা,সন্ত্রাস চাঁদাবাজি না হওয়ার কথা ইত্যাদি --।বহির্বিশ্বের দেশগুলোতে কোথাও গনতন্ত্র,কোথাও রাজতন্ত্র,কোথাও সামরিকতন্ত্র চলছে।এ দেশগুলোর রাজনীতিতে বৈচিত্র্য এবং নতুনত্ব আছে কিন্তু বাংলাদেশে তা নেই।দেশের মানুষের মধ্যে সব সময় হতাশা কাজ করছে।দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে না আছে গতিশীলতা, না আছে নতুন রক্তের সঞ্চালন।কারন একটিই মানবতার জন্য কাজ না করা।রাজনৈতিক শক্তিগুলো ক্ষমতা পেয়ে যখন অনৈতিকতায় মেতে উঠে তখন এই দুর্বল গনতন্ত্রের ভীতর ঢুকে পড়ে অপশক্তি।অপশক্তিকে হাতে নিয়ে এই দুর্বল গনতন্ত্র তখন জগদ্দল পাথরের মত বসে শাসন ও শোষন চালাতে থাকে।আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না দেশের রাজনৈতিক স্হিতিশীলতা আসবে।এটি সময় নিবে তবে রাজনীতির গতি সন্চার করার জন্য যেটি দরকার তা হলো-নিজেদের দুর্বলতাগুলো চিহৃিত করা,সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠা ও নেতা কর্মীর জীবনে সততাকে ঠাঁই করে দেয়া।রাজনৈতিক জীবনে যদি সততা না থাকে তাহলে ক্ষমতা পেয়েই বৈরি হয়ে উঠতে পারে।কারন তখন হাতের কাছে ঘুরতে থাকে অর্থবৈভব বিত্ত বানানোর চাকা।রাজনীতিবিদ যদি সে সম্পদের রক্ষনাবেক্ষন করেন মানুষের কল্যানে তখনি মানুষের কল্যান হয়।শরীরে রক্তের সন্চালন যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন সে দেহটি স্হবির হয়ে পড়ে।ব্যাক্তি জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে যদি সততা ঘূর্নীত না হয় সেখানে বাসা বাঁধে অনৈতিকতায়।আজকের সমাজের যে ধস তা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মেরফল।আমাদের ভরসা করতে হবে আল্লাহর উপর আর কাজ করতে হবে আমানত রক্ষার সাথে।রাজনৈতিক দলগুলো যদি হিংসা বিদ্বেষ বন্ধ করে দেশ মাতৃকার জন্য একে অন্যের সাহায্য সহযুগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলেই সম্ভব দেশের উন্নয়ন।পারিবারিক দ্বন্দ সংঘাত যদি হয় রাজনীতির কৌশল তাহলে অনাদিকাল পর্যন্ত চলবে এই সংঘাত।সুস্হ মানুষ ও সমাজ গঠনের একমাত্র হাতিয়ার হলো আলকুরআনের পথে চলা।সে পথটি চিনতে হবে কুরআন ও ছহি হাদিস অনুশীলন করে।কুরআনের আলোকে যে মানুষটি তৈরি হবে,সে যখন পথ চলবে মনে হবে কুরআন হাঁটছে।যে মানুষটির পার্থিব কোন সম্পদের লোভ থাকবে না।সে শুধু মানুষের কল্যানের জন্যই চরে বেড়াবে।এমন মানুষ তৈরি করার পথ এখনো আমরা তৈরি করতে পারিনি।তাহলে সুস্হ ধারার রাজনীতি কল্পনা করি কিভাবে?রাজনীতির জন্য দরকার নৈতিকতা সম্পন্ন একদল মানুষ।সে মানুষ কোন্ দলে কয় জন আছে তা গননার সময় কি আমাদের এখনো আসে নি? অনৈতিকতা যেখানে প্রবল শ্রোতের মত বয়ে চলছে সেখানে আমরা রাজনীতির হাঁক ডাক করছি এ সত্যিই নিজের সাথে নিজের প্রহসনের নামান্তর বৈ কিছু নয়।
বিষয়: বিবিধ
২০৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন