মুসলমান এখন থার্ডক্লাস ঈমানদারও নয়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৬:১৯ সন্ধ্যা

আমরা মুসলমানরা জেনে এসেছি ঈমানের অর্থ হলো প্রশান্তি।সাগর বা নদীতে যখন কোন তরংগ থাকে না অর্থাৎ নীরব ও শান্ত থাকে তেমনি ঈমানদারগন বিপদে আপদে শান্ত থাকবে ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে।জীবনে বেঁচে থাকার জন্য হালাল উপায়ে চেষ্টা সাধনা করবে।ঈমানদারের জন্য যদি বিপদ না আসে তাহলে সে ঈমানের মর্যাদা বুঝবে কি করে? কিন্তু এ কি রকম মুসলমান? যারা নামাজ পড়ে আবার ফুস ফাস,হাস্যালাপ করে অন্যের বিপদে।তারা খুশি হয় অন্য মুসলিমের বিপদ দেখে।এগুলো কুফরি কাজ ও তারা কাফেরের ভাই।টাকা পয়সা দ্বারা কোনকালে মানুষের জীবনের মুল্যায়ন হয় নি।এ পৃথিবীতে যারা ছড়িয়েছেন তারা কেউ টাকা কড়ির মালিক ছিলেন না।কষ্টসষহিষ্নু জ্ঞানী মানুষ ভর করে আল্লাহর উপর।তারা কখনো থার্ডক্লাস ঈমানদার নয়।তাদের কথাবার্তা আচার আচরন অত্যন্ত সাবলীল।তারা গুছ গুছ ফুস ফাস করে না।চাকুরি না থাকলে কি হবে? চাকুরি চলে যাবে কিনা? এগুলো চিন্তা করার চেয়ে নিজের কর্মকে সামনে এগিয়ে নেয়।যা হওয়ার তা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে সামনে কি করতে হবে তার পরিকল্পনা করলেই সব সহজ হয়ে যায়।এটি নিরেট একটি পরীক্ষার যায়গা।বায়জিদ বোস্তামীর জীবন আলেখ্য পড়ার কিছুটা সুযোগ হয়েছিল।কি বিশাল মানব ও তার কর্ম।আমরাতো তাদেরই মত মানুষ।পার্থক্য হলো তারা তাদের রবকে পাওয়ার চেষ্টা করেছে, আমরা সে রাস্তাটিতে নেই।আমরা প্রতিনিয়ত খুঁজছি সমাজে আমার স্টেটাস ঠিক আছে তো? তার জন্য যতপ্রকার অপকর্ম আছে তা করবো,আবার ইসলামের কাজও করবো।এরাই হলো পৃথিবীর অধম ও অস্পৃষ্য নর ও নারী।

এ দুনিয়া স্থায়ী আবাসন বা প্রকৃত বাড়ি নয়। এমন কি সব সময় থাকার জায়গাও নয়। আমরাই শুধু এ নশ্বর পৃথিবীতে আগমন করিনি, আমাদের আগে কোটি কোটি মানুষ এ দুনিয়ায় আগমন করেছিল এবং চিরবিদায় নিয়ে চলেও গেছে। দুনিয়ার বদ অভ্যাস হলো, সে মানুষকে উদাসীন বানিয়ে দেয়। মানুষ ভাবতে থাকে যে, ব্যস! দুনিয়াই আমাদের সবকিছু, দুনিয়ার জীবনই স্থায়ী জীবন। এরপর আর কোনো জীবন নেই, হিসাব-নিকাশ নেই, মরণের পর পুনর্জীবনের বিশ্বাসও তার নেই, ইত্যাদি ভ্রান্ত ধারণা সে পোষণ করতে থাকে। এ ছাড়া আর কোনো চিন্তাই সে করে না। পরকালের জন্য কোনো ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ না করে সে উদাসীন থাকে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন কি কেউ এ দুনিয়ায় আগমন করেছে যাকে এ পৃথিবী হতে বিদায় নিতে হয়নি বা বিদায় নিতে হবে না? বা সে এ দুনিয়ায়ই সর্বদা অবস্থান করছে কিংবা অবস্থান করবে? আল্লাহর বড় বড় নাফরমান যেমন : নমরুদ, হামান, কারুন, ফেরাউন, আবু জাহেল, উৎবা এবং শাইবা- তাদের কেউ কি এ দুনিয়ায় স্থায়ীভাবে জীবন ধারণ করে অবস্থান করছে? ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায় তারা দুনিয়াকে স্থায়ী আবাসন বানিয়েছিল, আল্লাহকে ভুলে তাঁর বান্দাদের সঙ্গে হঠকারিতায় লিপ্ত হয়েছিল। ফলে আজাবে আলিম দ্বারা সমূলে ধ্বংস হয়ে গেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, অতঃপর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করেছে; এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (সূরা নাজিআত : ৩৭, ৩৮, ৩৯) অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রসুলের আনুগত্য ছেড়ে দিয়ে ইবলিসের আনুগত্যে লিপ্ত হয় এবং সে পার্থিব জীবনকে পরকালের ওপর প্রাধান্য দেয়, সে দুনিয়ার খেল-তামাশায় নিজেকে লিপ্ত রাখে পরকাল সম্পর্কে একেবারে গাফেল থাকে। তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, জাহান্নামই একমাত্র তার ঠিকানা। কারণ মানুষ মরণশীল। তাকে অবশ্যই একদিন তার খালেকের (স্রষ্টা) সামনে দাঁড়াতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। এ দুনিয়ায় এমন কোনো পদ্ধতি আজ পর্যন্ত কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি, যা দ্বারা এ পৃথিবীতে আগমনের পর চিরদিনের জন্য সে বসবাস করতে সক্ষম হবে বা দুনিয়ার আরাম-আয়েশকে চিরদিনের জন্য সে ধরে রাখতে পারবে। অবশ্যই মানুষকে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। কোনোভাবেই সর্বদা দুনিয়ায় থাকতে পারবে না। দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি নেই যে, কোনো মানুষকে এ পৃথিবীতে সর্বদার জন্য বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। যত ইচ্ছা তুমি দুনিয়া কামাও, কোটিপতি, লাখপতি আর রাজা-বাদশাহ হয়ে যাও কিন্তু মনে রাখতে হবে একদিন খালি হাতে সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ দুনিয়ার কোনো জিনিসই আমাদের নয়, সবকিছু দুনিয়ায় থেকে যাবে। বিশ্ববরেণ্য কবি আল্লামা শেখ সা’দী (রহ.) গুলিস্তা নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, ফরিদুন বাদশাহর রাজপ্রাসাদের ওপর লেখা ছিল নিম্নের কয়েকটি পঙ্ক্তি। ‘হে ভাই, এ দুনিয়া কারও কাছে স্থায়ীভাবে থাকে না। সুতরাং দুনিয়ার প্রতি মনোযোগী না হয়ে দুনিয়ার স্রষ্টা এক আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ কর। এ দুনিয়া তোমার মতো অনেককে লালন-পালন করেছে এবং ধ্বংস করেছে। সুতরাং এ দুনিয়ার ওপর ভরসা কর না। যখন পবিত্র আত্মা চলে যায়, তখন সে চাই সিংহাসনের ওপর মৃত্যুবরণ করুক বা মাটির ওপর মৃত্যুবরণ করুক উভয় সমান।’ অর্থাৎ রাজা-প্রজার মাঝে কোনো ধরনের পার্থক্য থাকে না। আমরা আজ এক আল্লাহকে ভুলে গিয়ে, দিন-রাত পাগলের মতো দুনিয়ার পণ্যসামগ্রী একটু একটু করে জমা করছি, দুনিয়া কামাইয়ের উদ্দেশ্যে বিশ্বের আনাচে-কানাচে বিচরণ করে বেড়াচ্ছি, এ দুনিয়া বা দুনিয়ার ক্ষমতা পাওয়ার জন্য কত কিছুই না করছি, আত্মীয়তার বন্ধন অস্বীকার করছি, পিতা-মাতাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি, দীন-ইসলামের বিধানাবলীর কোনো পরোয়াই করছি না। এতকিছুর পরও কি এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় থাকা যাবে? কবরের জীবন বড় কঠিন জীবন। হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কবর হয়তোবা জান্নাতের বাগান হবে অথবা সাপ-বিচ্ছুর গর্ত হবে। যদি মানুষ ইখলাসের সঙ্গে নেক আমল করে তার জন্য কবর জান্নাতের বাগান হবে, আর যদি কেউ ইবলিসের কথা শুনে জীবন পরিচালনা করে তার জন্য কবর জাহান্নামের সাপ-বিচ্ছুর গর্ত হবে। সেই জগতে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই নিজের নেকির সুফল পাবে এবং বদ আমলের বোঝা নিজেই বহন করবে।

বিষয়: বিবিধ

২০১৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

349833
১৫ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪২
শেখের পোলা লিখেছেন : আমরা ঘটনা চক্রে মুসলীম, মুসলীম ঘরে জন্মেছি তাই মুসলীম৷ ইসলাম তো অর্জন করতে হয়নি বরং ফ্রী পেয়েছি। তাই এর মর্যাদা বুঝব কেমন করে? আল্লাহ আমাদের সেই বুঝ দিক৷ ধন্যবাদ৷
349853
১৫ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:২৭
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কবর হয়তোবা জান্নাতের বাগান হবে অথবা সাপ-বিচ্ছুর গর্ত হবে।
Sad Sad

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File