একাকিত্বে একজন স্হপতি।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৫ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৫৩:৩৭ দুপুর
আব্দুল বারি(কল্পিত নাম) সাহেব ছিলেন একজন স্হপতি।সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রনালয়ের একজন উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। দুই ছেলে এক মেয়ে।বিয়ে করেছিলেন একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে।তার মেয়েটি ছিল বড় এবং ঢাকা মেডিকেলে পড়তো।ছাত্রী হিসেবে ছিল মেধাবী।ছেলে দু'টো ছিল হাবা গোবা।পড়ালেখায় মোটা মুটি।ছেলেদের জন্য বিষয় ওয়ারী শিক্ষক ছিল।তার পরও তাদের ভাল রেজাল্ট করানো যেতো না।গুলশানে বিশাল একটি বাড়ি যা ভাড়া দেয়া হয়েছে।কলাবাগানে ছিল বিশাল একটি বাগান বাড়ি।সেখানে তিনি থাকতেন।চাকুরি জীবনে উপরি আয় কামিয়েছেন মনের মত।শেষ বয়সে একবার খুলনায় ছোট অন্কের ঘুষের টাকা নিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে চাকুরি খুয়েছেন।এর পর বিভিন্ন প্রাইভেট কম্পানীতে চাকুরি করেছেন।দাম্পত্য জীবনে খুব একটা সুখ ভোগ করতে পারেন নি।বিয়ের দশ বছরের মাথায় তার স্ত্রী মানুষিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েন।সারাদিন বিড় বিড় করে বকতেন।ছেলেরা বড় কিছু হতে না পারলেও স্বচ্ছল জীবন যাপন করছে।ডাক্তার মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন ডাক্তারের সাথে।স্ত্রী বিয়োগ হয়ে যাওয়ার পর অত্যন্ত একাকি হয়ে পড়লেন।অ-চতুর ছেলে দু'টো বাবার তৈরি সম্পদের ভাড়া উঠিয়ে তাদের জীবন পরিচালনা করছে।বাবার পরিচর্যা করার মত অনুভূতি তাদের তেমন ছিল না।স্ত্রী বিয়োগের পর একাকিত্ব পেয়ে বসলো। মেয়েটি দূরে থেকে খোঁজ খবর নিলেও সব সময় আসতে পারছে না।আব্দুল বারি সাহেবের টাকার অভাব না থাকলেও তাকে দেখাশুনার তেমন কেউ ছিলনা একজন পরিচারক ছাড়া।তার বাড়ীর কাছেই ছিল তার দূর সম্পর্কীয় একজন আত্মীয় যিনি ধর্মপ্রান ব্যাক্তি।আব্দুল বারি সাহেবের ব্যাক্তিগত জীবনের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানেন বলে তেমন মেলামেশা করতেন না।একটি অফিসের জুনিয়র অফিসার।তার ছিল এক ছেলে ও দুই মেয়ে।বড় মেয়েটি কলেজে পড়তো।পড়াশুনায় যেমন ভাল তেমনি ধর্মপ্রান।এই মেয়েটির দাদুর মৃত্যু হয়েছে বছর কয়েক হলো।দাদু তাকে বেশ আদর করতো।একদিন আব্দুল বারি সাহেবের বাড়িতে ওরা বেড়াতে আসে।মেয়েটি বুড়ো মানুষটিকে বারান্দায় বসতে দেখে তার দাদার কথা মনে পড়ে যায়।কথা বলে আব্দুল বারি সাহেবের সাথে।তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে।তার কোন সহযুগিতা লাগবে কিনা তাও বলে।নিজের নাতি নাতনী হাতের কাছে থাকলেও তারা তেমন খোজ খবর রাখে না।মেয়েটির আচরনে বারি সাহেব যেন নতুন কিছুর সন্ধান পেলেন।মেয়েটিকে বললেন তোমার যখন ছুটি হয় আমার কাছে এসো।তোমার সাথে কথা বলে আমি বেশ শান্তি পাই।এর পর থেকে সময় পেলেই মেয়েটি এসে খোঁজ খবর নেয়।কিছুদিনের মধ্যেই মেয়েটির কাছে ইসলামের তথ্যভিত্তিক কথা শুনে আরো বেশী অভিভূত হয়ে পড়ে।ধীরে ধীরে নিজের জীবনের অনেক অপকর্মের কথা মনে করে মেয়েটিকে বলে।মাঝে মাঝে ভয়াভহ স্বপ্ন দেখে তাও জানায়।একদিন মেয়েটিকে বলে আচ্ছা দাদু,আমি যে অন্যায় গুলো করেছি কিভাবে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাবো? মেয়েটি বললো দাদু আপনাকে তওবা করতে হবে।বারি সাহেব বললেন আমি তো রোজ তওবা করছি।মেয়েটি বললো এভাবে তওবা করলে হবে না।আপনার কি মনে আছে কোন কোন বান্দার ক্ষতি করেছেন? আব্দুল বারি সাহেব বলেন কত মানুষ এসেছে,গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া আর কাউকে মনে করতে পারছি না।মেয়েটি বললো তাহলে যাদের মনে করতে পারছেন তাদের টাকাটা ফেরত দিন আর বাকি সম্পদ যদি অনৈতিক হয় তা গরীবদের মধ্যে সওয়াবের উদ্দেশ্য ছাড়া বিলিয়ে দিন।আর হালাল অর্থ আপনার পরিবারের জন্য।আব্দুল বারি সাহেব বললেন, দাদু তুমি আমাকে একটি জটিল সমস্যায় ফেলে দিলে।আমি আমার হালাল টাকার সাথে হারাম মিশিয়ে এ সমস্ত সম্পদ করেছি।এখন ছেলে মেয়েদের ভাগ করে দিয়েছি।তিন ভাগের একভাগ রেখেছি আমার কাছে যা দান করবো বলে ভাবছি।বারি সাহেব ছেলে মেয়েকে ডেকে পাঠালো।ছেলে মেয়ে যখন আসলো তখন আত্মীয় মেয়েটিকে ও ডাকলেন।যখন বিষয়টি আলোচনা হলো তখন বারি সাহেবের ছেলে মেয়ে কানাঘুষা করতে থাকলো এই মেয়েটিই আমাদের সর্বনাশ করেছে। তারা মেয়েটিকে বললো আমাদের বিষয় আমরা দেখবো তুমি চলে যাও।বারি সাহেবের ছেলে মেয়ে রাজি হলো না।তারা বললো আপনি কিভাবে টাকা কামিয়েছেন সেটা আপনার ব্যাপার।এখন আমরা এগুলো ফেরত দিতে পারবো না।এক পর্যায়ে বারি সাহেবের দেখাশুনাও বন্ধ করে দিল।আত্মীয় মেয়েটি তার বাবার সাথে আলোচনা করে বললো,বাবা আমার দাদু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমরা তাকে দেখাশুনা করতাম না? কিন্তু দেখুন ঐ বাড়ির দাদু এত সম্পদ কামিয়েও আজ তার ছেলে মেয়ে তাকে দেখছে না।বুড়ো বয়সে অসহায় জীবন যাপন করছে। মেয়েটির বাবা বললো এখন তুমি কি করতে চাও।মেয়েটি বললো যদি উনি আমাদের এখানে আসেন তাহলে আমরা তার দেখাশুনা করবো।একদিন মেয়েটির বাবা গিয়ে বললো আপনার শেষ দিনগুলো আমাদের সাথে থাকুন।তাছাড়া আপনার এখন দেখাশুনার কেউ নেই।বারি সাহেব অশ্রুপাত করে বললো,তোমরা আমার পাশে এতকাল ছিলে আমি তোমাদের একটু খোঁজ খবর নেই নি।তোমরাই আজ আমাকে আপন করে নিলে।আমি তোমাদের কাছেই যাব।বারি সাহেব চলে গেলেন আত্মীয়ের বাড়িতে।তার আত্মীয়ের ছেলে ময়েরা তাকে দাদার মতই সেবা শুশ্রষা করে।আব্দুল বারি সাহেব একদিন মেয়েটিকে ডেকে বলে দাদু, আমার কাছে যে তিনভাগের এক ভাগ সম্পদ আছে আমি তোমাকে লিখে দিতে চাই।মেয়েটি বললো এ সম্পদ আমাকে দিবেন কেন? এগুলো মানুষের হক।আপনি গরীবদের দিয়ে দিন।বাকি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন আর তওবা করুন।আল্লাহ হয়ত আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন।আব্দুল বারি সাহেব বললেন আচ্ছা দাদু আমার একটি কথা তুমি রাখ।তোমার দিদুর জন্য এই সিন্দুকে যে গহনাগুলো আমি কিনেছি তা আমার কোন হারাম টাকা থেকে নয়,তুমি তা গ্রহন কর আমার আত্মা শান্তি পাবে।মেয়েটি তার বাবার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলো।বাবা তার মেয়েকে বললো আচ্ছা গ্রহন কর।গহনা গুলোর কিছু অংশ বিক্রয় করলেন তার খরচের জন্য।এভাবে চলছে কয়েক বছর।মেয়েটি এমবিএ তে খুবই ভাল রেজাল্ট করলো।একটি মাল্টিনেশনাল কোম্পানী থেকে দুই লাখ টাকা বেতনে অফার আসলো।চাকুরির বছরখানেকের মধ্যেই তাদের পরিবারের সমৃদ্ধি আসলো।ছোট ভাই বোন ও ভাল শিক্ষিত হয়ে উঠলো।মেয়েটির বাবার অবসরে যাওয়ার আর মাত্র এক বছর বাকী।মেয়েটি বললো বাবা তুমি অবসর নিয়ে নাও।কিন্তু মেয়েটির মা বললো আর এক বছরইতো,সময় মতই অবসর নিবে।ইতমধ্যে মেয়েটির একটি বিয়ের প্রস্তাব আসে একটি বড় পরিবার থেকে যে ছেলেটি বিদেশ থেকে এমবিএ করা ও বাইরেই চাকুরি করছে।মেয়েটি বললো বিয়েতে আমার মত আছে তবে আমি বাইরে যাব না।আমার বাবা মা আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন।তাদের পাশে যেমন থাকতে চাই তেমনি থাকতে চাই আমার শশুর শাশুড়ি আম্মার সাথে।ছেলেটি বললো আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছি দেশে চাকুরি করবো।মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল বেশ ধূমধামে।বিয়ের পর অবকাশ যাপন করে মেয়েটি অফিসে যাথারীতি যোগদান করলো।কয়েকদিন পরই একদিন বিকেলে মেয়েটির বাসা থেকে ফোন এলো তোমার দাদু আর নেই।বিমর্ষ চিত্তে ঘরে এসে মেয়েটি বললো দাদু তোমার একাকিত্বের অবশান হয়েছে।নিশ্চই,'আমরা আল্লাহর জন্য ,আমাদের আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।'
বিষয়: বিবিধ
১৯৪০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন