ধর্ম ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১০ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:২৮:১০ দুপুর
ধর্ম সম্পর্কে ধর্মপালনকারী অধিকাংশ মানুষের বোধ নেই।অধিকাংশ মানুষ ধর্ম পালন করে তাদের বাপ দাদাদের দেখে।ধর্মগ্রন্হ পড়ে ও শিখে তা পালন করে না।অধুনা শিক্ষিত সমাজ ঘুম থেকে উঠেন সূর্য উঠলে।ইসলামের মৌলিক বিধানের প্রধান ও অন্যতম হলো নামাজ।তা তাদের পালন করতে দেখা যায় না।ফযরের নামাজে মসজিদে গেলে বুঝা যায় নিয়মিত মুসল্লী কারা? যারা আমাদের প্রতিবেশী,যাদের সাথে আমাদের প্রতিনিয়ত দেখা হয় তাদের ৮০% কেই দেখা যায় না নামাজের জামাতে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রাতভ্রমনে এরা বেরিয়ে পড়েন।যে মুসলিম নামাজ কায়েম করলো না সে কি করে মুসলিম থাকে? আর তার অন্যান্য ভাল কাজেরই বা মুল্য কি?আল্লাহকে যারা সেজদা করে না তারা সৃষ্টির নিকৃষ্ট প্রানী।কারন আল্লাহ পাক কুরআনে অনেক আয়াতে বলেছেন,আসমান ও জমিনে যা আছে সবাই আল্লাহর তাছবিহ করে।সমস্ত সৃষ্টিই আল্লাহর তাছবিহ করে তবে তাদের তাছবিহার ধরন আমরা জানি না। ধর্ম আর ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা এক জিনিস নয়। প্রাচ্যের অনগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোর বদনাম বেশি। অথচ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা পশ্চিমের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে কিছু ঘটলে তা নিয়ে পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম আকাশ-বাতাস মাতিয়ে তোলে।তাদের দেশে যে খুন খারাবি হয় তাতে কিছু যায় আসে না।তাদের সমাজে মিলিয়ন মিলিয়ন ড্রান্কার্ড আছে তাতে কোন অসুবিধে নেই।তাদের দেশে ব্যাভিচার ও সমকামিতা প্লাবিত হয়ে আছে তাতে কোন সমস্যা নেই। তাদের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কথা, খ্রিষ্টান মৌলবাদীদের কথা ধামাচাপা দেয়া তাদের কাজ। বাংলাদেশের বা ভারতের কোনো মুসলমান পাঁচজন হিন্দুকে অথবা কোনো হিন্দু বা বৌদ্ধ পাঁচজন মুসলমানকে গুলি করে হত্যা করলে তা মাসের পর মাস ধরে পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম প্রচার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ। ২০১১ সালের ২২ জুলাই পৃথিবীর ইতিহাসের এক জঘন্য সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী হত্যাকাণ্ড ঘটে নরওয়েতে। আন্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিক নামক এক খ্রিষ্টান মৌলবাদী একটি সামার ক্যাম্পের ৪১ জন যুবক-যুবতীকে বোমা মেরে ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে গুলি করে হত্যা করে। সে অতি সুস্থ এবং স্বীকার করে যে এশিয়ার কালোদের বিশেষ করে মুসলমান অভিবাসী নীতির বিরুদ্ধেই তার হত্যা অভিযান। ইউরোপ খ্রিষ্টানদের জন্য—হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধদের জন্য নয়। তার দেশের অতি প্রগতিশীল সরকার তাকে ‘পাগলাটে’ বা ‘অপ্রকৃতিস্থ’ বলে প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত বিচারের এজলাসে তাঁকে দাঁড় করিয়েছিলেন বটে, কিন্তু ওই খ্রিষ্টান মৌলবাদী ও বর্ণবাদীকে ‘সাইকোটিক প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিক’ বলে হত্যাকাণ্ডটিকে হালকাভাবে দেখা হয়।তবে ইউরোপে একটি ভালো গণতান্ত্রিক সিস্টেম দাঁড়িয়ে গেছে সন্দেহ নেই, আমরা তা করতে পারিনি বা করতে চাইনি ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে।আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও দ্বন্দের কারনে আমরা সবাই এক মননশীলতা গড়ে তুলতে পারিনি। কিন্তু সেখানে যে বর্ণবাদী চেতনা ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হিংসা-বিদ্বেষ, তা দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের চেয়ে অনেক গভীরে। উদার মানবতাবাদের কথা তাঁরা বলেন এবং তা প্রচারের শক্তিশালী মাধ্যমও তাঁদের আছে; কিন্তু তাঁরা জানেন না প্রাচ্যের হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান মানবতাবাদীদের কথা। আমাদের মহামানবেরা সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁদের নিজেদের জীবনাচরণে, তা পশ্চিমে বিরল। আমাদের দুর্বলতা হলো আমরা আমাদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলিনা ও আমাদের সংস্কৃতিকে লালন করি না।ধর্ম যদি মানব প্রগতির বাধা হতো, তাহলে আজ বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি হতো না। পাঁচ-ছয় শ মানুষ ও হাজার হাজার কিলোগ্রাম মালপত্র নিয়ে বিমান আকাশে উড়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেত না। মানুষ চলাফেরা করত নৌকা বা ঠেলাগাড়িতে। চাঁদে বা মহাকাশে মানুষকে যেতে বাধা দেওয়া হতো।
ধর্ম মহত্তম সভ্যতা সৃষ্টিতে কোনো অঞ্চলে কোনো কালেই কিছুমাত্র বাধা হয়নি। তা-ই যদি হতো, তাহলে ভারতীয় উপমহাদেশে মহান বৈদিক হিন্দু সভ্যতা বা বৌদ্ধ সভ্যতা আমরা পেতাম না। শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে স্পেন পর্যন্ত মহান ইসলামি সভ্যতা গড়ে উঠত না প্রাক-মধ্যযুগে। বৌদ্ধধর্ম অধ্যুষিত চীন, মঙ্গোলিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কায় সভ্যতার সৃষ্টি হতো না। সব ধর্মাবলম্বীর ভেতরেই কিছু মানুষের মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও নোংরামি আগেও ছিল, এখনো আছে। স্রোতস্বিনী নদীতে মানুষ ও পশুর মৃতদেহ ভেসে যায়, তাতে নদীর পানি নষ্ট হয়ে যায় না। মানুষ নদীর পানিই পান করে। নদীর নির্মল পানিই আসল। অল্প-স্বল্প নোংরা সেই পানিকে অপবিত্র করতে পারে না। পবিত্র ধর্মকেও কিছু নোংরামি অপবিত্র করতে পারে না।ধর্ম এক জিনিস। ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও অন্ধত্ব আরেক জিনিস এবং ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বা ধর্মীয় রাজনীতি আরেক বস্তু। ধর্ম মানুষকে হিংসা ওকলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে, অন্তরে নির্মল হয়ে সুন্দর জীবনযাপনে সহায়তা করে। ধর্মীয় সংকীর্ণতা মানুষকে ছোট করে। ধর্মীয় রাজনীতি মানুষকে অসহিষ্ণু ও হিংস্র করে তোলে।এই পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর ধরে ধর্ম ছিল। ভবিষ্যতেও ধর্ম স্বমহিমায় থাকবে। আধুনিক রাষ্ট্রে ও রাজনীতি থাকবে। সমাজে সব ধর্মের মানুষ বসবাস ও যার যার ধর্ম পালন করবে।তাদের মধ্যে সাধারন ভ্রাতৃত্ববোধ থাকবে। কেউ কারও সঙ্গে সাংঘর্ষে লিপ্ত হবে। কেউ কারও জন্য বাধা নয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ, ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ সহাবস্থান অতীতে যেমন করেছে, এই পৃথিবীতে ভবিষ্যতেও তেমনিভাবে করবে।তাহলে সমাজ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে কেন? সমাজ ক্ষিপ্ত হয়,যখন সমাজের মানুষ একে অন্যের দ্বারা শোষিত হয়।ধনী গরীব আল্লাহর সৃষ্টি।এটি প্রত্যেকের জন্য পরীক্ষা।যার যা আছে তা নিয়ে নিজেকে সন্তুষ্ট থাকা ও অন্যের প্রাচুর্যের দিকে না তাকানো।কারন আল্লাহ যখন অন্যকে প্রাচুর্য দিয়েছেন সেটি তার জন্য পরীক্ষা আবার যাকে দেন নি সেটিও তার জন্য পরীক্ষা।সুতরাং এই দুই অবস্হায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। কিন্তু সামাজিক বৈষম্য সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, মানবিক দিকগুলোকে সমাজে প্রসারিত করার মাধ্যমে।আমরা যদি একে অন্যের প্রতি শুভাকাংখী হয়ে যাই,একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসি,কল্যানের পথগুলো বেচে নেই,মন থেকে সমস্ত অশুভ শক্তিকে পরিহার করি,অন্যায় ,অবিচার,হিংসা,ঘৃনা,হত্যা,জুলুম নির্যাতন না করি তাহলে সমাজটি হয়ে উঠে ফুলের বাগানে।যে কোন বিরোধ দেখা দিলে আমরা যদি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কর্তব্য পালন করি ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে তার মীমাংসা করার জন্য এগিয়ে যাই সেটিই হবে মহত্তম।এটি করা হলে কোন ধর্মের সাথে কারো কোন বিরোধ থাকবে না এবং কোন সাম্প্রদায়িকতা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে না।আমাদের সমস্যা হলো আমরা কথা বলি,আমরা স্বপ্ন দেখি কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য কাজ করি না।
বিষয়: বিবিধ
১০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন