মানুষ ও তার কাজের আনন্দ ।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:২৭:৫৪ বিকাল

মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং সমস্ত সৃষ্টির অন্যতম।প্রতিটি মানুষ আশার উপর নির্ভর করে এবং থাকে একটি স্বপ্ন।সে স্বপ্নটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য সারা জীবন তার পিছনে ছুটে চলে।একটি প্রচন্ড ভালবাসা ও বিশ্বাস থাকে জীবন চলার পথে।মানুষ যা আশা করে তা যদি তার বিশ্বাসে রুপান্তরিত করতে পারে তাহলে সে স্বার্থক হয়।প্রতিটি মানুষ স্বার্থক হতে পারে না।সফল হতে পারে অনেক মানুষ।স্বার্থকতা হলো - মানুষ যা নিয়ে জন্মায়, তা তার চারপাশে বিতরন করে দেয়।একটি প্রদীপ থেকে কোটি প্রদীপকে যেমন আলোকিত করা যায় তেমনি একটি মহত্ত থেকে কোটি মহত্তে ছড়িয়ে দেয়া যায় কিন্তু মহত্তের কোন কমতি হয় না।গ্রীক দার্শনিক এরিস্টোটল বলেছিলেন মানুষ একটি সামাজিক প্রানী।'মানুষ বেঁচে থাকে মানুষের জন্য।সকলের মিলিত জীবন হলো মানুষ।পরস্পরকে দিতে জানলে মানুষ বড় হয়।গৌতম বুদ্ধ বলেছেন মানুষ যন্ত্রনায় জ্বলছে।প্রতিটি মানুষ যেন আগুন লাগা প্রাসাদ।দাউ দাউ করে সব জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।'লোভ কমিয়ে ফেললে এ আগুন থেমে যায়।কবি রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,'আমার সব দিতে হবে সেতো আমি জানি,আমার যত বিত্ত ,আমার যত বানী প্রভু! সব দিতে হবে।'মানুষের জীবন একটি কর্মময় জীবনের নাম।জীবনটি গড়ে উঠতে হবে সততার সাথে।একজন ভাল মানুষ বলতে বুঝায় নৈতিক মানসম্পন্ন মানুষ।যার থাকবে অনেক গুন।উঁচু মানের ব্যাক্তিত্ব হতে হয় তাকে।জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে মেপে মেপে চালানো।কোন আপরাধের সাথে যুক্ত না থাকা।মানুষের কল্যানে কাজ করা।জীবনে সরলতার পথটি বেচে নেয়া।জীবনকে তীলে তীলে নি:শেষ করে দিয়ে সমাজ ও মানুষের কল্যানে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া।জীবনে স্বার্থক হওয়া খুব একটি কঠিন কাজ কিন্তু অবিরাম চেষ্টা সাধনা থাকলে তা লাভ করা যায়।জীবনে সফল হতে গিয়ে অনেকে ব্যার্থ হয়ে যান কিন্তু সে ব্যার্থতা আবার অনেককে সফলতার মুল চাবিকাঠিতে পরিনত করে।

একজন মানুষের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব তা অনেকে জানে না।ছোট কোন কাজ থেকে বড় কাজে পরিনত হয়েছে এমন ঘটনা আমাদের সামনে কম নয়।আমাদের ব্যার্থতার অনেক কারন থাকতে পারে কিন্তু সেগুলোকে অজুহাত হিসেবে না ধরে একটু চেষ্টা সাধনা করলেই সফল হওয়া যায়।মানুষ জীবন চলার পথে শিখে যদি বিচক্ষন হয়।আমার পাশেই হাজার মানুষের মধ্যে কতেক মানুষ রয়েছে যারা কীর্তি রেখে চলছে কিন্তু ভাবছিনা সে মানুষটি আমারই মত।আমার যদি চেষ্টা সাধনা থাকতো আমি সে রকম হতে না পারলেও এগিয়ে যেতে পারতাম।সমাজ বিশ্লেষন করলে দেখা যায় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেকে উঠে এসেছেন,যাদের ছিল না বিত্ত বৈভব।পরবর্তীকালে তারা সমাজকে আলোকিত করেন বা তাদের মাধ্যমে বহু মানুষের বৈষয়িক উন্নতি হয়।স্বার্থক ও সফল হওয়ার জন্য প্রথম কাজটি হলো জানা।সক্রেটিস বলেছিলেন,নিজেকে জান।' জানার কাজটি হয় ভাল বই পড়ার মাধ্যমে।একজন মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু হলো বই।ভাল বই যেমন একজন পাঠককে জ্ঞানের উঁচু শিখরে আরোহন করাতে পারে তেমনি কুরুচিসম্পন্ন বই একজন পাঠককে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে পারে।বই পড়ে শিহরন জাগবে,বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে,বড় মাপের মানুষদের কাছাকাছি যাওয়া যাবে।জন্মগতভাবে আমরা প্রতিটি মানুষই প্রতিযোগিতা করে আসছি।একটি ভ্রুন মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠার আগে বাবার শরীর থেকে একসংগে পন্চাশ কোটি প্রতিযোগী(শুক্রানু) বেরিয়ে আসে।এর মধ্যে মাত্র একটি জিতে যায়।বাকীরা হয় পরাজিত।সমাজ বিশ্লেষন করলেও দেখা যায় কোটি কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র কিছু সংখ্যক মানুষ দাঁড়িয়ে যায় অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে।কাজের শুরুটিতে ঘটে সমস্ত বিভ্রাট।আমি এ কাজটি করতে পারবো কি পারবো না,এ রকম ভাবনা চিন্তা না করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে।কোন কাজটি আমার ভাল লাগে বা কোন কাজে আমার কিছুটা দক্ষতা আছে তা নিজেকে বিচার করে নিতে হবে।সব কাজ সবার পক্ষে সম্ভব হবে না এটিই স্বাভাবিক।কোন কাজ করতে গেলে যার মধ্যে নেগেটিভ চিন্তা থাকে সে কখনো সফল হতে পারে না।একবার সফল হয়ে গেলে আর পিছনে তাকিয়ে থাকতে হয় না।রবার্ট ব্রুসের কথাই ধরুন।তিনি যুদ্ধে ছয়বার হেরে যখন একটি গাছের নিছে বিশ্রাম নিচ্ছেন,তখন দেখলেন একটি মাকড়সা উপরে উঠতে গিয়ে ছয় বার পড়ে গেল।সাতবারে সে উত্তীর্ন হলো।তার মনে আলোড়ন সৃষ্টি হলো।একটি মাকড়সার পক্ষে যদি বিজয় লাভ সম্ভব হয় তাহলে আমার পক্ষে নয় কেন? তিনি সপ্তমবারে যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন।

বিজয় ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একজন মানুষের মধ্যে কাজের আনন্দ থাকতে হবে।আমাদের দেশেও কিছুকাল আগে বা এখনও অনেকে সমাজে দাঁড়িয়েছেন তাদের অনেকের অবস্হা শিশুকালে ছিল করুন কিন্তু তারা উঠে এসেছেন অদম্য সাহসিকতা ও প্রজ্ঞার গুনে।বাংলাদেশ ব্যান্কের বর্তমান গভর্নর ডক্টর আতিউর রহমান।তার ছেলে বেলা কেটেছে গরু ছাগল চরিয়ে।অনেক সংগ্রাম করে তাকে উঠে আসতে হয়েছে।জামাল পুরে তার জন্ম।তার বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক।খাবার নেই,পরার মত কাপড় নেই এমন এক দু:সহ অবস্হায় বেড়ে উঠেছিলেন।মা সামান্য পড়শুনা জানতেন এবং তার হাতেই পড়ালেখার হাতেখড়ি।গ্রামের স্কুলে পড়েছেন আবার কখনো পড়ালেখা ছেড়ে রোজগারও করতে হয়েছে।মাঠে গাভি ও ছাগল চরাতেন।দুধ বিক্রয় করে একটি পান বিড়ির দোকান দিয়ে পড়ার খরচ চলতো।জামা কাপড়,বই না থাকলেও অদম্য এই ব্যাক্তিত্ব তার এক বন্ধু যে তখন ক্লাসে ফার্স্ট বয় মোজাম্মেলের বাড়িতে গিয়ে তার মাকে তার দারিদ্রতার কথা খুলে বললো।মোজাম্মেলের মা তাকে থাকা খাওয়ার সব ব্যাবস্হা করে দিবেন বলে সম্মতি দিলেন।নতুন উদ্যমে পড়শুনা করে পরীক্ষায় প্রথম হলেন।পরিবারে যেন এখন ঝড় উঠেছে।ঘরে একটি খাশি ছিল তা বিক্রয় করে সে টাকা দিয়ে নতুন বই ক্রয় করা হলো।এভাবেই স্কুলের জীবন যাত্রা শুরু হলো।স্কুলের শিক্ষকদের নজরে আসলেন।সপ্তম শ্রেনি অতিক্রম করে যখন অষ্টম শ্রেনীতে যাবেন এমন সময় তার চাচা মফিজুদ্দিন ক্যাডেট কলেজে ভর্তীর একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে এসে ফর্ম ফিলাপ করে দিলেন।পরীক্ষা দেয়া হলো এবং দুই মাস পর চিঠি এলো যে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য কেন্টনমেন্ট যেতে হবে।ধার করা জামা কাপড় ও একটি সেন্ডেল পরে সাক্ষাৎকার দিতে গেলেন।চূড়ান্ত পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়ে ১৫০ টাকা বৃত্তিতে পড়াশুনা শুরু করলেন।এসএসসি পরীক্ষায় বোর্ডে পন্চম হন ।এর পর আর পিছনে তাকাতে হয় নি।পাঠক! আমাদের সামনেই একটি জ্বলন্ত প্রমান জীবনে স্বপ্ন থাকলে থামিয়ে রাখা যায় না।এভাবে দেখুন শেখ আকিজউদ্দিন(আকিজ গ্রুফের প্রতিষ্ঠাতা) ফেরিওয়ালা থেকে শিল্পপতি।কেয়া কসমেটিক্সের এর স্বত্বাধিকারি আব্দুল খালেক পাঠান একজন ট্রাক ড্রাইভার থেকে শিল্পপতি।মোজাম্মেল হক চুয়াডাংগা -২ আসনের এমপি একজন শ্রমিক থেকে শিল্পপতি।দেশে বিদেশে এ রকম হাজার মানুষ রয়েছেন যাদের আজকে দেখা যায় সফল ব্যাক্তিত্ব।আমি বলছিনা সবাইকে শিল্পপতি হতে হবে কারন আমাদের দেশে অসংখ্য শিল্পপতি রয়েছে যারা দেশের মানুষের পকেট কেটে বড় হয়েছেন।যারা শুন্য থেকে বড় হয়েছেন তাদের উদাহরন হিসেবে টেনেছি এজন্য যে,হতাশ মানুষদের বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞান দেয়ার জন্য।আমরা আজ যে উড়ো জাহাজে উড়ে যাচ্ছি দেশ দেশান্তরে সেই যন্ত্রটি আবিষ্কার করার জন্য স্বপ্ন দেখতেন রাইট ভ্রাতৃদ্বয়।অবশেষে তারা নিজেদের জয় করলেন।মার্কনি এক সময় দাবি করলেন তিনি তারের সাহায্য ছাড়াই বাতাসের মধ্য দিয়ে সংবাদ প্রেরনের পদ্ধতি আবিস্কার করবেন।বেতার ও টেলিভিশন আবিষ্কার করে তিনি দেখালেন।বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মাত্র তিনমাস স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন,অতিমাত্রায় অপদার্থের অপবাদ দিয়ে তাকে স্কুল থেকে বহিস্কৃত করা হয়েছিল।কালিদাসকে মূর্খ বলে আখ্যায়িত করা হতো কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি মহাকবি হয়েছিলেন।একজন স্কুল শিক্ষক অংকে মনযোগী না হওয়ায় এবং ছোট্ট একটি অংক কষতে না পারায় একটি বালককে বলেছিলেন,তুমি জীবনে কিছুই করতে পারবে না।সেই বালক পরবর্তী কালে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন।আফ্রিকার প্রত্যন্ত অন্চলের জীর্ন একটি স্কুলের শিক্ষক একটি সাদা কাগজের মাঝখানে ছোট্ট একটি কালো ভরাট বৃত্ত দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ? সবাই জবাব দিল সাদার মাঝে কালো বৃত্ত দেখতে পাচ্ছি।একটি ছেলে বলে উঠলো,আমি কালোর চারদিকে সাদা অংশটিকে দেখতে পাচ্ছি।তিনিই পরবর্তীকালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান।বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।একজন বহুমুখি ব্যাক্তিত্ব।নিজে স্বপ্ন দেখেন ও মানুষকে স্বপ্ন দেখান।অধ্যাপক হিসেবে খ্যাতি রয়েছে দেশ ব্যাপী।জাতীয় জীবনকে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়ে গড়ে উঠে এই সাহিত্য কেন্দ্র।দেশে মানসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার জন্য,জাতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য পাঠক যেমন সৃষ্টি করেছেন তেমনি বই পৌঁছে দিয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি,কেন্দ্র লাইব্রেরি,আলোর ইস্কুল ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের তরুনদের উজ্জিবিত করে আসছেন।বিশ্বসাহিত্য সেজন্য এখন দেশব্যাপী একটি অন্দোলনে পরিনত হয়েছে।একজন ব্যাক্তির নিরলস প্রচেষ্টা প্রমান করছে স্বপ্ন থাকলে সব কিছুই সম্ভব।আজ থেকে আড়াই বছর আগে গ্রিসে পেরিক্লিসের সময়ে এথেন্সের যুবকদের আঠারো বছরে পদার্পন উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে একটি শপথবাক্য উচ্চারন করা হতো।সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলা হতো,আমি সারা জীবন এমন কিছু করে যাব যাতে জন্মের সময় যে-এথেন্সকে আমি পেয়েছিলাম মৃত্যুর সময় তার চেয়ে উন্নততর এথেন্সকে পৃথিবীর বুকে দেখে যেতে পারি।

প্রতিটি মানুষের উচিত নিজেদের একটি প্রশ্ন করা-আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য কিছু রেখে যাচ্ছি কি? নিশ্চই জ্ঞান-ই হলো সবচেয়ে মুল্যবান বস্তু যা মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে সহায়ক।মানুষের মস্তিষ্ক হলো একটি কম্পিউটার।যেভাবে প্রোগ্রাম করা হবে সেভাবে তার উৎপাদন পাওয়া যাবে।যিনি হতাশ হয়ে নিজেকে বলবেন,তার দ্বারা কিছুই হবে না ,তিনিই জীবনে একটি ব্যার্থ মানুষ।জীবনের পথে হাজারো প্রতিকূলতা থাকবে কিন্তু স্বপ্ন দেখে যেতে হবে।হয়ত ঐশ্বর্যের প্রভাব প্রতিপত্তি থাকবে না,তাতে কি যায় আসে।এদের পৃথিবীতে কেউ মনে রাখেনি সামান্য ক'জন ছাড়া যারা প্রকৃত বিশ্বাসী।মানুষ তার আশার সমান সুন্দর আর বিশ্বাসের সমান বড়।মানুষ যা আশা করে তা যদি বিশ্বাসে রুপান্তরিত করতে পারে তাহলে সত্যিই সে পেতে পারে।এটিই জীবনের ধর্ম।আমি তা বিশ্বাস করি আমার সমস্ত প্রত্যয় দিয়ে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৪১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348480
০৪ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৪
আফরা লিখেছেন : খুব সুন্দর লিখা । যে কাজে আনন্দ আসে না সে কাজে সফলতা আশা করা যায় না । আমি যে কাজে আনন্দ পাই না সেটা আমি কখনো করি না ।

অনেক ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File