সমাজে মুল্যবোধের অবদমন আমাদের ব্যাথিত করে তুলছে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৩ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:৩২:৩২ দুপুর
মহান স্রষ্টা আল্লাহর আনুগত্যই একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। বিশ্বজগৎ তথা মানুষসহ সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ। মানুষের লক্ষ্যই হওয়া উচিত স্রষ্টাতে সমর্পিত হওয়া। অন্য সব লক্ষ্যকে এই মূল লক্ষ্যের উপজাত বা মূল লক্ষ্য অর্জনের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সূরা শূরার ১১নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, স্রষ্টার মতো কিংবা তার সমকক্ষ কেউ নেই।’ আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার এবাদত বা উপাসনা করার জন্য যা সূরা জারিয়াতে ৫৬ আয়াতে বলা হয়েছে। মানুষকে আল্লাহর এবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হলেও তাকে একই সঙ্গে স্বাধীনভাবে ভালোমন্দ বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা দাহরের ৩নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘আমি মানুষকে পথ দেখিয়েছি হয় সে কৃতজ্ঞ হবে বা অকৃতজ্ঞ হবে।’ স্বভাবতই মানুষের দায়িত্ব সঠিক পথটি বেছে নেওয়া। আল্লাহ যেহেতু মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন, বিবেক দিয়েছেন সেহেতু যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া মানুষের কর্তব্য।
আল্লাহ হলেন এমন এক সত্তা কোরআনের ভাষায় যিনি সর্বোত্তম গুণের অধিকারী। সূরা নাহলের ৬০নং আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তাদের গুনবত্তা নিকৃষ্ট আর আল্লাহর হচ্ছে সর্বোচ্চ গুনাবলী’। আল্লাহ এমনই এক সত্তা যার বিধান অলঙ্ঘনীয়। তিনি যে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন তা ধারাবাহিক অপরিবর্তনীয় নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। পবিত্র কোরআনের সূরা সাবার ৪৩নং আয়াতে বলা হয়েছে, আপনি কখনো স্রষ্টার নিয়মে পরিবর্তন পাবেন না। স্রষ্টার সৃষ্ট জীব হিসেবে তৃপ্ত হতে হলে আল্লাহতে সমর্পিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।' সূরা রাদ-এর ২৪নং আয়াতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, যাদের বিশ্বাস আছে এবং স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়, তারা জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়’। তাহলে সৃষ্ট যে মানুষগুলো অপরাধ ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তারা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী নয় এমনকি কোন ধর্মও তাদের নেই।কারন কোন ধর্মেই বলে না মানুষ হত্যা কর।হত্যাকারিরা যদি মানবিক দিকটিও পর্যালোচনা করতো তাহলে সমাজে এ রকম সমস্যা সংগঠিত হতো না।তবে সামাজিক অস্হিরতার তো কিছু কারন রয়েছে।আমাদের সমাজটি এখন বিভক্ত হয়ে আছে বিভিন্ন ভাবে।দেশটি স্বাধীন হয়েছিল কতগুলো মুলনীতিকে ধারন করে।গত চুয়াল্লিশ বছরে কোন শাসক সে মুলনীতিগুলোর বাস্তবায়ন করতে পারে নি।সমাজে বেড়েছে শ্রেনীবৈষম্য।উচ্চবিত্ত নামের একশ্রেনীর হাতে এখন সম্পদের পাহাড়।আর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এখন নিষ্পেষিত।শিক্ষা ব্যাবস্হায়ও রয়েছে বৈষম্য।এই বৈষম্যই হতাশাগ্রস্ত করেছে আজকের নবীনদের।সারা দেশে যে হত্যাকান্ডগুলো ঘটছে তা বিশ্লেষন করলে দেখা যায় কিছু কারনে হত্যাগুলো সংঘঠিত হচ্ছে।ব্যাক্তি ও পারিবারিক ধন সম্পদের লোভে হিংসা মনোবৃত্ত হয়ে,ধর্মীয় মুল্যবোধ লোপ পেয়ে,চারিত্রিক পদস্খলন,রাজনৈতিক কারন এবং হতাশা জনিত কারন ইত্যাদি।
প্রকাশক ও ব্লগারসহ যারা মুক্তচিন্তার চর্চাকারী ব্যক্তিদের একের পর এক হত্যা করছে, এরা সমাজের একটি অশুভ শক্তি।এ সমাজটি যেহেতু বিভিন্ন ধর্ম বর্নের মানুষেরা বাস করে সেহেতু তাদের প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে যার যার ধর্ম পালন করার।কিন্তু কারো উচিত নয় অন্য ধর্মকে কটাক্ষ করা।প্রত্যেকে যার যার ধর্ম প্রচার করতে পারে।মুক্তচিন্তার প্রকাশ ঘটাবে আবার অন্যেরা সুন্দর সাবলীল ভাষায় তার জবাব দিবে।এতে একে অন্যের সাথে ভ্রাতৃত্তবোধ জন্মাবে।যারা হত্যা করেছে, এই হত্যাকারীদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ এবং তারা বিভ্রান্ত। হত্যাকারীরা যে শুধু হত্যা করছে তাই নয়, তারা রাষ্ট্রের ভিত্তির ওপরও আঘাত করছে। আমাদের বুঝতে হবে এটা শুধু কয়েকজন ব্যক্তি খুনের ঘটনা নয়, হত্যাকারীরা রাষ্ট্রের ভিত্তির ওপর হামলা করছে। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্য এবং তথাকথিত ধর্মবিরোধীদের ওপর হামলা করার জন্য তরুণদের মানসিকভাবে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এই তরুণ হত্যাকারীরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলে তারা শহীদ হবেন বা বেহেস্তে যাবেন এসব বলে তাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য এই উগ্র ধর্মান্ধদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই তরুণরা না বুঝেই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে। কিন্তু এটি কোনো ধর্মীয় আচরন নয়, কারণ কোনো ধর্মেই এভাবে মানুষ হত্যার কথা বলা হয়নি। আর ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। এই বিভ্রান্তির পেছনে রয়েছে সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ। দেশের পরিবেশ ক্রমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠছে।এখন দেশে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। কোনো জলাশয়ের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে যেমন কীটপতঙ্গ জন্মায়, অসুখ হয় তেমনি আসছে দিনগুলোতে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু কর্মসংস্থান নেই। তরুণরা জীবিকার জন্য কাজ পাচ্ছে না। তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। যারা ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের সবাই হয়তো মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নয়। এদের অনেকেই হয়তো আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তারা নিজেদের সহপাঠীদের দেশে বিদেশে গিয়ে ভালো জীবনযাপন করতে দেখে আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া দেশে আইনের শাসন নেই সেজন্য অপরাধীরা হত্যাকাণ্ডের জন্য শাস্তি পাচ্ছে না।মানুষের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,'সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারি।ধর্ম,গোষ্ঠী,বর্ন,নারীপুরুষভেদে বা জন্মস্হানের কারনে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।' কিন্তু গত চুয়াল্লিশ বছরে দেশে চাকুরি,ব্যাবসায়, শিক্ষা ও জীবনবোধের সব যায়গায় বিরাট বৈষম্য তৈরি হয়েছে।আমাদের কৃষক শ্রমিক, জেলে ,তাঁতি,আমাদের নারি শ্রমিক,আমাদের বিদেশ শ্রমিক যারা রেমিটেন্স পাঠায়,আমাদের প্রাইভেট সেক্টর তারাই তো নিজেদের চেষ্টায় এদেশের জিডিপি কে উন্নীত করছে।আমাদের রাজনৈতিক স্হিতিশীলতা ও সাংসদ সহ অন্যান্য যারা আপরাধের সহিত জড়িত তারা যদি তাদের অপরাধকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হতো এদেশ অনেক আগেই উন্নীত হতে পারতো।মুল্যবোধের অবক্ষয় যে সমাজকে অন্ধগলির দিকে ধাবিত করছে তা আমরা অনুমান করতে পারি।মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে গিয়ে প্রথমেই উল্লেখ করা যেতে পারে যে মধ্যবিত্তের ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের সামর্থ্য ও প্রবণতা যতই বাড়ছে ততই অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে তার অতি উচ্চমানের চিরায়ত মূল্যবোধগুলোও। আর অর্জন ও অবক্ষয়ের এ দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি তার প্রচলিত মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে শুধু উচ্চতর প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে, নাকি রাষ্ট্রের নৈতিক সমর্থন আদায় ও সচেতন জনগণের দৃঢ় ও প্রত্যয়ী অবস্থান ধরে রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ঐতিহ্যের সমৃদ্ধতর অংশকে টিকিয়ে রাখতেও সমর্থ হবে, সেটির ওপরই মূলত নির্ভর করছে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভবিষ্যৎ চরিত্র ও রূপকাঠামো। আশা করা অন্যায় হবে না যে এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের সমন্বিত রূপই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে। কিন্তু কিভাবে?এই সেদিনও বাঙালি মধ্যবিত্তের নানামাত্রিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম ছিল শিক্ষা ও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার প্রতি অনুরাগ, কল্যাণ, সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দান, অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপন, যৌথ পরিবারে বসবাসে আগ্রহ এবং সর্বোপরি একটি উন্নততর জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু জনগণের মাথাপিছু আয় (১৯৭২ ছিল ১২৯ মার্কিন ডলার, যা বর্তমান বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে) যতই বাড়ছে মধ্যবিত্তের এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রায় প্রতিটির ক্ষেত্রে ততই ঘটছে অতিদ্রুত হারে গুণগত অবনমন।শিক্ষার প্রতি আকাঙ্ক্ষার কথাই ধরা যাক। ইংরেজরা বণিকবৃত্তি নিয়ে এ দেশে এসে শেষ পর্যন্ত রাজদণ্ড হাতে নিলেও শিক্ষাকে তারা কখনোই পণ্য করে তোলার চেষ্টা করেনি (ঔপনিবেশিক শাসনের গুণকীর্তন করা হচ্ছে না)। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও শিক্ষার যাত্রা সর্বজনীন অধিকারের অংশরূপেই শুরু হয়েছিল। আর এ ধারাবাহিকতায় শিক্ষা গ্রহণ করে সে যোগ্যতা ব্যবহারের মাধ্যমে আয়ের পথ উন্মোচিত হলেও বাঙালি মধ্যবিত্তের মানসিকতাতে শিক্ষা ছিল মূলত জ্ঞান আহরণের মাধ্যম।কিন্তু আশির দশকের শেষ প্রান্ত থেকেই ক্রমান্বয়ে শুরু হয় ভিন্নপথে যাত্রা। সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই বিজ্ঞান বা অন্য মৌলিক বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে আগ্রহী হয়ে ওঠে অধিক উপার্জন-সহায়ক শিক্ষার প্রতি। ফলে জীবনের জন্য শিক্ষার প্রকৃত আবেদনটিই যে শুধু ক্ষুণ্ন হতে থাকে তা-ই নয়, নয়া জ্ঞান সৃষ্টি ও আবিষ্কার-উদ্ভাবনের সৃজনশীল ধারায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা থেকেও নতুন প্রজন্ম বঞ্চিত হতে থাকে। এ অধঃগামিতা বাঙালিকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে ঠেকাবে বা নিজেদের শুধুই ভোক্তার জাতিতে পরিণত করবে কি না, সে আশঙ্কা থেকেই যায়।নিজস্ব শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার প্রতি বাঙালি মধ্যবিত্তের যে অসীম আগ্রহ ছিল,স্বাধীনতা উত্তর সে চর্চা থেকে সরে গিয়ে বাঙালি মধ্যবিত্ত ক্রমেই বিনোদনের আশ্রয় খুঁজতে থাকে টেলিভিশন বা কম্পিউটারের মধ্যে।
আত্মস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সামাজিক কল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার মানসিকতা, অন্যের বিপদ, কষ্ট ও সমস্যায় এগিয়ে গিয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর সহমর্মিতা ইত্যাদির মতো মানবিক মূল্যবোধগুলো এ দেশের জনজীবন থেকে ক্রমেই তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের কল্যাণ সমিতি বা শহরের পাড়াভিত্তিক তরুণ সংঘ- এগুলো এখন প্রায় উঠেই যাচ্ছে। রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা বা ঝগড়া-বিবাদ ঘটলে, কেউ কাউকে অহেতুক অপদস্থ করলে কিংবা প্রকাশ্যে কোথাও অন্যায় দেখলে একসময় মধ্যবিত্ত নাগরিক সেখানে এগিয়ে গিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করত। আর এখন এগিয়ে গিয়ে সাহায্য বা প্রতিকার করার বদলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে কেটে পড়াটাকেই মানুষ সর্বোত্তম উপায় বলে মনে করে। এবং অধিকতর উদ্বেগের বিষয় এই যে মধ্যবিত্তের এ পলায়নপর মনোবৃত্তি ও প্রতিবাদবিমুখ মানসিকতা ক্রমেই আরো প্রবল হয়ে উঠছে।
খুব স্বাভাবিক কারণেই দেশে নগরবাসী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশের প্রায় ২৪ শতাংশ মানুষ এখন শহরে বসবাস করে। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে নগরায়ণ বা নগরবাসী মানুষের সংখ্যা যতই বাড়ছে ততই ভেঙে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক প্রথার বন্ধন ও কাঠামোটি। ক্রমেই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে পড়া নতুন আঙ্গিকের এ পরিবার প্রথা যতই ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণার অনুগামী হোক না কেন, এসব পরিবারের সন্তানরা বস্তুত এক ধরনের বিচ্ছিন্নতার বোধ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। সমাজে মাদক, পর্নোগ্রাফি, কিশোর অপরাধ, জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের প্রতি আসক্তি ও এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে উল্লিখিত বিচ্ছিন্নতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলেই সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা।আর রাষ্ট্রের চরিত্র কী হবে, সেখানে গণতন্ত্র ও জবাবদিহি কিভাবে নিশ্চিত হবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ কিভাবে বাড়ানো যাবে ইত্যাদি বিষয়েও সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্রমেই এক ধরনের নির্লিপ্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপাতদৃষ্টে এটিকে দোষের বলে মনে না হলেও এর দীর্ঘমেয়াদি কুফল খুবই মারাত্মক হতে পারে। কারণ এ ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনয় মেধাবী মানুষদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা দেওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। আর দেশ ও জনগণ উভয়ের স্বার্থেই এটি ক্ষতিকর হতে বাধ্য।সব মিলিয়ে এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দেশে সাধারণ মানুষ তথা মধ্যবিত্তের আয়-উপার্জন ও আর্থিক সক্ষমতা যতই বাড়ছে ততই ক্ষয়িষ্ণুতার দিকে যাচ্ছে তার চিন্তাচেতনা ও মূল্যবোধের স্তর। আর এতে একদিকে যেমন সমাজের গঠন-কাঠামোর গুণগত ও অবনমন ঘটছে, অন্যদিকে তেমনি বাড়ছে সমাজ বিনির্মাণে মেধাবী মানুষদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার ঝুঁকিও। এ অবস্থায় মধ্যবিত্তের বর্ধিত আর্থিক সামর্থ্য যাতে শুধু ভোগের পেছনে ব্যয় না হয়ে চিন্তামুখী কাজেও ব্যয় হয় সে ব্যাপারে সচেতন মধ্যবিত্তের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করি। স্মরণ করা যেতে পারে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে সর্বস্তরের জনগণের ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ থাকলেও এ ক্ষেত্রে চিন্তার সূত্রপাত, সংগ্রামকে সংগঠিত করা ও সফল নেতৃত্বদানের কাজটি কিন্তু এ দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির অগ্রসর চিন্তা ও মূল্যবোধের ফসল।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন