জীবন তার বিপন্ন, আলসে যে জন কাটায় মুহুর্ত।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:২১:০৫ রাত
একটি মানুষের জীবন কতগুলো সময়ের সমষ্টি।জীবনকে শৈশব,কৈশোর,যৌবন ও বৃদ্ধের মাপকাঠিতে যদি ফেলা যায় তাহোলে শৈশব ও কৈশোরকে ইনোসেন্ট বললে অত্যুক্তি হয় না।কারন এ সময়টি বেড়ে উঠে অন্য একটি জীবনের উপর ভর করে।কোন কলন্ক মনকে কলন্কিত করতে পারে না। একটি ছোট চারা গাছ যেমন পত্র পল্লব নিয়ে বেড়ে উঠে যার পরিচর্যা করে একজন মালি।একটি মানুষকে ও বেড়ে উঠেতে হয় তার বাবা মা'র স্পর্শে।এ সময়টি সে মানুষটির নিজের কর্ম বলে কিছু থাকে না।সে নির্দেশিত হয় তার পরিবেশ দ্বারা।বাবা মা যে পরিবেশ দেন সেভাবে সে বেড়ে উঠে।যে আলোকিত পরিবেশে থাকে সে আলোক পেয়ে বড় হয়ে উঠে আর যে আলোক পায় না সে কৃষ্নপক্ষের আঁধারে নিমজ্জিত হয়।পৃথিবীর মহা মনিষীদের জীবন দেখলে আমাদের মনে হয় সব শিক্ষক ছিলেন বিশাল জ্ঞানের অধিকারি।সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মদ সা: ছিলেন অন্ধকার যুগে একজন আলোকিত মানুষ।যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আলোক বিচ্ছুরন করে এ পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন।এর পর যুগে যুগে আরো আলোকিত মানুষ তাঁকে অনুসরন করে সমাজকে আলোকদান করেছেন যারা ছিলেন মানব জাতির আলোর দিশারি।অতি প্রাচীনকাল থেকে অনেক মানুষের মধ্যে শিক্ষকদেরই দেখা গেছে আলোক ছড়িয়ে দিতে যা আজো চলে আসছে।শিক্ষরা ভাল বই পড়তে বলতেন।বই মানুষের প্রকৃত বন্ধু বলে অভিহীত করতেন।সাহিত্য সাধনার কথা বলতেন।এ সব কর্মের মাধ্যমে নিজের স্বত্তা যেমন জাগরিত হয় তেমনি আলোক ছড়িয়ে পড়ে সমাজের অন্যদের মধ্যে।এমনই একজন স্বনামধন্য শিক্ষক বলতেন,জীবন যার বিপন্ন আলসে যে জন কাটায় মুহূর্ত। সময় মানব জীবনের একটি অমুল্য সম্পদ বলে বলা হলেও আমার বুঝতে অনেক দেরি হয়েছিল।শিশুর কান্নার মত শব্দটি এক সময় আমার কানে বেজে উঠেছিল।আমাকে ভাবতে শিখিয়েছিল হৃদয়ের ছোট ছোট কল্পনা এঁকে দিতে।বিশ্বসাহিত্যের শিক্ষকদের উপর যদি আলোকপাত করা যায় তাহলে দেখতে পাই তাদের একটু সময় ও তারা অবহেলা করেন নি।শিক্ষকের কাজ হলো একটি বিশাল স্বপ্ন দেখা ও তা তার চারপাশে বিস্তার ঘটানো।অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে জাতিসত্তাকে পরিপূর্ন করে গড়ে তোলাই তাদের কাজ।আমরা যদি মুসলিমজাতির শিক্ষকদের(নবী ও রসূল) দেখি তাহলে দেখতে পাব অবিরাম তাঁরা কাজ করেছেন মানব জাতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য।তাঁরা কেউ অলসতা করেন নি।নবী নুহ আ: অবিরাম দাওয়াত পেশ করেছেন দীর্ঘ সাড়ে ন;শ বছর।কোন অলসতা কাজ করেনি তার জীবন চলার পথে।এ সমস্ত সমাজ সচেতন মানুষগুলো এসেছিলেন তাঁদের রবের আজ্ঞা পালন করার জন্য।পার্থিব জীবনের সংকীর্ন চাওয়া পাওয়ার কোন বাসনাই তাদের ছিল না।ভবিষ্যৎ বলতে জ্ঞানীরা বুঝতেন একটি অনন্ত জীবনের কথা।আমরা ধর্ম বর্ন নির্বিশেষেও পৃথিবীর মনিষীদের দেখি তাহলে দেখবো, তারা সময়ের মর্যাদা দিতেন প্রচন্ড রকম।তাদের সাহিত্য রচনাবলীর দিকে যদি আমরা দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখবো, জীবনের এই ক্ষুদ্র পরিসরে এত কাব্য সাহিত্য কিভাবে রচনা করলেন।কবি নজরুল ইসলাম মাত্র চল্লিশ বছরের মধ্যে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন কিন্তু তার কাব্য ও সাহিত্যিক জীবনের পটভূমি আমাদের ভাবিয়ে তোলে যে অল্প সময়ে তিনি কিভাবে এগুলো রচনা করলেন।কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যিক জীবনের অধ্যায়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি কোন বাজে কাজে সময়ক্ষেপন করেননি।মুসলমানরা যে সময় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে উঠেন এ রকম সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উঠে লিখতেন।আরো একটি আশ্চর্য ব্যাপার হলো তার কাছে অসংখ্য চিঠি আসতো আর সেগুলোর জবাব দিতেন সকালে এক ঘন্টা লিখে। এ রকম চিঠিও রয়েছে যা ত্রিশের পাতা ছড়িয়ে গেছে।এ রকম ঘটনা থেকে বুঝা যায় তারা সময়ের প্রাধান্য দিয়েছেন জীবনে।আমরা যদি প্রতিটি মানুষ জীবনের সময় গুলোকে কাজে লাগাতে পারতাম,প্রতিটি স্বপ্নকে এঁকে দিতে পারতাম তাহলে অসম্ভব ছিল না একটি বড় কিছু হওয়া।জীবনের মুল্যবোধ ও প্রতিটি মুহূর্তের কথা যারা ভেবেছেন তারাই মানবকল্যানে এগিয়ে আসতে পেরেছেন।একটি মানুষ যদি ৭০ বছর বেঁচে থাকে প্রায় ২২ বছর কেটে যায় নিদ্রায়।২৫ বছর কেটে যায় শিক্ষাগ্রহনে।বাকি ২৩ বছরের একটি অংশ যায় সংসার জীবনে।এর মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশ মেধা বিকাশে কাজে লাগায়।কিন্তু একজন মানব হিতৈশি তার জীবনের একটি বিরাট অংশ কাজে লাগান মানব জীবনের কল্যানে।সৃজনশীল কাজে উজ্জিবিত মানুষের সংখ্যা খুবই কম এবং তাদের দ্বারাই সমাজ টিকে আছে।মানুষ মরনশীল এবং প্রতিটি প্রানীকে মরে যেতে হবে।তবে কিছু মানুষের দীর্ঘায়ু হওয়ার কারনও রয়েছে।মানুষ যখন ভাল কাজের সাথে সমপৃক্ত থাকে,উঁচুমানের চিন্তা চেতনায় নিজেকে সমৃদ্ধ করে,হৃদয়ের পরিসরটিকে ভয়ভীতি,হিংসাবিদ্দেষ থেকে পরিশীলিত করে রাখে তখন মনের প্রফুল্লতা বৃদ্ধি পায়।জীবনের পরিসরে এমন মানুষদের পরিসংখ্যান নিলে দেখা যায় দীর্ঘায়ু হয়ে ও তারা যেন তরুন।যেমন- আমাদের কবি কাজি নজরুল ইসলাম তার যৌবনের গানে লিখেছেন,'বহু যুবককে দেখেছি যাদের যৌবনের উর্দির নিছে বার্ধক্যের কন্কালমূর্তি আবার বহু বৃদ্ধকে দেখেছি যাদের বার্ধক্যের জীর্নাবরনের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মত প্রদীপ্ত যৌবন।' পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একটি গুন সমৃদ্ধ জীবনের প্রয়োজন।আমাদের মধ্যে সেগুলোর প্রচন্ড অভাব বলে অশান্তির আগুনে জ্বলছে পরিবার, সমাজ ও দেশ।একটু শিক্ষা,কিছু সম্পদ ও একটি পরিবারের মধ্যে ঘূর্নিপাক খাচ্ছে জীবন।জীবনের পরিসরে বৈধতার পরিবর্তে তৈরি হয়েছে অবৈধ সব কাজ কর্ম।এই অবিকশিত ও অনালোকিত আত্মা যখন সমাজে নেতৃত্ব দেয় তখন পন্ড হয় সমাজ।এ রকম একটি পরিস্হিতি বিরাজ করছে প্রতিটি দেশে।আজকের পৃথিবী প্রচন্ড আবেদন রাখছে বিকশিত মানুষ তৈরি করার পরিকল্পনা নেয়ার।এই বিকশিত মানুষ তৈরি হয় বই পড়ার মাধ্যমে।কাজের ফাঁকে যে অলস সময় গুলো রয়েছে তা ব্যাবহার করছে না আজকের যুব সমাজ।তারা এখন নিজের পাঠ্যাভ্যাসের পরিবর্তে বসে থাকে ফেসবুক,ফোন,টুইটার ও পন্যগ্রাফিতে।ছোটবেলা দেখতাম উপহার আসতো বিভিন্ন ছড়ার বই, গল্পের বই বা ভাল কোন উপন্যাস যা আমরা পড়তাম রাত জেগে।দূরে ট্রেনে বেড়াতে গেলে হাতে থাকতো একটি বই।নৌকোতে বেড়াতে গেলেও একটি বই হতো সাথি।কম্পিউটারে কাজের ফাঁকে অনেক কিছুই শেখা যায়। জ্ঞানার্জনের জন্য এখন আর শুধু লাইব্রেরীতে দৌড়াতে হয় না। হাতের মুঠোয়ই জ্ঞানের সমুদ্র। কীবোর্ডের বাটুন টিপলেই জ্ঞান।কিন্তু সেটি করছে হাতে গুনা কতেক,বাকি সব অশ্লীলতায় জীবনের মুল্যবান সময়গুলো নষ্ট করছে।একটি মোমবাতি যেমন আলো দিতে দিতে নি:শ্বেষ হয়ে যায়,সে ক্ষনটি মোমবাতিটির পূর্নতার সময়।একটি মানুষের জীবনের সময়গুলো যখন সুন্দরভাবে ব্যাবহৃত হতে হতে নি:শ্বেষ হয়ে যায় তখনি সে মানুষটি পূর্ন।মৃত্যুর ভয়ে ভীত সে,যে তার আত্মাকে ক্ষতি করেছে।আল্লাহর কাছে জীবনের অতিরিক্ত সময় চাওয়ার চাইতে যে সময়টি দিয়েছেন তার পরিচর্যা করাই হলো জ্ঞানীর কাজ।জীবনের পূর্নতায় অলসতা নয় বরং সময়ের সদ্ব্যাবহার করাই প্রতিটি মানুষের ব্রত হওয়া উচিত।
বিষয়: বিবিধ
১১৫১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন