গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নষ্ট হলে দেশে অস্থিতিশীলতা বেড়েই চলবে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:২৯:০৫ রাত
মনে হচ্ছে সবাই পথভোলা; দিকভ্রান্তিতে আক্রান্ত। নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠিত সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ় প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গায় আনার বদলে যেন আরো দিকভ্রান্ত করছে। সবাই যেন ক্রমেই মহাদুর্যোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ক্ষমতালিপ্সার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংঘাত। প্রতিনিয়ত বাড়ছে রাজনৈতিক সংকট। জাতির মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ আর বিভক্তি স্পষ্ট। অথচ সংসদীয় গণতন্ত্র হচ্ছে আধুনিক যুগে একটি দেশের জন্য সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা। বাংলাদেশ অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থার সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই সংসদীয় গণতন্ত্র আজ দিকভ্রান্ত। বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি যখন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিবর্জিত হয় তখন সংসদীয় গণতন্ত্র রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। সুতরাং বলা যায় সংসদীয় গণতন্ত্র ভয়াবহ এক দুর্যোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যে দুর্যোগের হাত ধরে আর্থ-সামাজিক নানা অঙ্গনেও আসছে বহুবিধ সমস্যা। বিগত বছর গুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা যায়, বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা এখন বহুমুখী সংকটে রূপ পরিগ্রহ করেছে। এক সংকট থেকে আরেক সংকটে পড়েছি আমরা। রাজনৈতিক সংকট দিয়ে শুরু হলেও এ সংকট এখন সর্বগ্রাসী হয়েছে। এই রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির পেছনে মূলত দায়ী কারা, সেটা সবাই জানেন। ক্ষমতালিপ্সা ও ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রবণতার কারণে সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক হানাহানি যেন থামবেই না।বন্য প্রানীর ও একটি বিবেক আছে ,সহানুভূতি আছে একে অন্যের জন্য কিন্তু মানুষের সেটি নেই।রাজনীতির কারণে অর্থনীতিতে ধস নেমে এসেছে, যা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।রাষ্ট্রযন্ত্র উন্নয়নের কথা বললেও আমি একজন নাগরিক হিসেবে আমার উন্নতি দেখছি না। চলমান বিভেদ ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি জাতির জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে। এর সর্বগ্রাসী প্রভাব সমাজের সর্বক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় স্বার্থান্বেষী মহল ফায়দা লুটার চেষ্টা চালাচ্ছে।সংসদ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে নীতি নির্ধারিত হয়।মানুষের কল্যানের জন্য ছক আঁকা হয়।প্রতি মিনিটে একজন সাংসদের পিছনে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয় যা আসে প্রান্তিক কৃষকের ঘাম ঝরা পরিশ্রম থেকে।সেখানে উন্নয়নের কথা না হয়ে হয় অশ্লীল কথাবার্তা যা শুনে এ প্রজন্মের শিশুরা সমালোচনা করে। মনে রাখা ভালো, ঐতিহাসিকভাবেই বাঙালি একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে অসহনশীল জাতি। এই জাতির ইতিহাসে নিজেরা বেশির ভাগ সময়ই শাসিত হয়েছে। যদিও ঔপনিবেশিক শাসন থেকে আমরা মুক্ত তারপরও শোষণ-বঞ্চনার সেই হীনম্মন্যতা এখনও আমাদের মননে বিরাজ করছে। ভিন্ন মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রবণতা অর্জন করার যে মানসিকতা তা এখনও সৃষ্টি হয়নি। আর ক্ষমতার সব কাঠামোতে কিছু রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিতা প্রতিষ্ঠা হওয়ায় ভিন্নমত সহজে সংঘাতের দিকে চলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আধুনিক যুগের গণতান্ত্রিক সময়ে এসেও ভিন্নমতের প্রতি যদি আমরা শ্রদ্ধাশীল না হই, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে লালন না করি, তাহলে দুঃসহ পরিণতি অপেক্ষমাণ। এরই মাঝে টের পাওয়া যাচ্ছে যে, চলমান অস্থিতিশীলতার পরিণতি ভয়াবহ হচ্ছে। সবাই জিরো টলারেন্সে। একইসঙ্গে শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত নিরসনের কোন চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। ভায়োলেন্স আরও বেশি ভায়োলেন্সের জন্ম দেয়। এরপর সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য। সহিংসতা, নৈরাজ্য ও অর্থনৈতিক মন্দা একটি দেশকে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।এই সংকটের মাধ্যমে আবার গণতন্ত্র বিপদে নিপতিত হয়। স্বৈরশাসন জেঁকে বসে। স্থায়ী সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নষ্ট হলে দেশে অস্থিতিশীলতা বেড়েই চলবে। তাই চলমান অস্থিতিশীলতা বন্ধে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বহাল রাখার বিকল্প যেমন নেই; তেমনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সঙ্কট মোচনেরও কোন বিকল্প নেই। সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সব রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসে উপর্যুক্ত করণীয় ঠিক করতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে সংঘাতের পথ পরিহার করতে হবে। জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সরকারকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নির্যাতন-নিপীড়নসহ হত্যা-গুম-খুন বন্ধ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এই মুহূর্তে প্রধান কর্তব্য।শুধু নির্বাচনই নয়,আমাদের সংবিধানের যেখানে যেখানে সংশোধন দরকার তা করে নিতে হবে।আমরা আমাদের মত একটি গনতান্ত্রিক ব্যাবস্হা চাই যেখানে থাকবে একে অন্যের সাথে সম্প্রীতি। প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার মাস সামনে আমরা স্মরণ করতে পারি, বাংলাদেশ যে উদ্দেশে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছিল সে আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম একটি সমৃদ্ধ ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। যেখানে স্বৈরশাসন থাকবে না, থাকবে না নিপীড়ন-নির্যাতন, শোষণ ও বঞ্চনা।আমরা একটু সহনশীল হলে মাত্র দশ বছরে অনেক এগিয়ে যেতে পারি।আজ যে উন্নত বিশ্বের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি তারাও আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে।আমাদের মানুষগুলোকে যেভাবে গড়ে তোলা দরকার সেভাবে আমরা গড়ে তুলতে পারিনি।আমাদের নৈতিকতার মান সর্বনিম্নে হলেও আমরা আর্থিক কাঠামোতে খুব খারাপ নই।সৎ ও যোগ্য মানুষের উর্বরতা যদি বাড়িয়ে তোলা যায় আমরা পৃথিবীকে জয় করে নিতে পারবো তাতে কোন সন্দেহ নেই।জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে- সময়,অংগীকার ও সম্ভাবনা।আমরা হারাতে শিখবো না- শান্তি ,আশা ও সততাকে।তিনটি জিনিসকে মুল্যবান ভাবতে শিখবো-ভালবাসা,আত্মবিশ্বাস ও বন্ধুত্বকে।আমরা জানি তিনটি জিনিসের কোন নিশ্চয়তা নেই-স্বপ্ন ,সফলতা ও ঐশ্বর্য।তিনটি জিনিস যা আমাদের মহৎ করবে তা আঁকড়ে ধরতে পারি-কঠোর পরিশ্রম,সততা ও অংগীকারকে।তিনিটি জিনিস যা মানুষকে ধ্বংস করে তা পরিহার করতে হবে-মাদক ,অহংকার ও রাগ।তিনটি জিনিস যা একবার হারালে আর পাওয়া যায় না সেগুলোকে আগলে রাখতে হবে-সম্মান ,বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব।অবশেষে আর ক'টি জিনিস যা আমার আর আপনার জীবনকে পাল্টে দিতে পারে-খাঁটি ভালবাসা,দৃঢ় সংকল্প,বিশ্বাস সদাচার ও সু-চিন্তা ভাবনা। আজ ৪৪ বছরে যদি আমরা হিসাব-নিকাশে বসি তাহলে দেখতে পাবো অনেক কিছুই অপূর্ণ রয়ে গেছে। আশাবাদী মানুষ আশা করেন, আমরা ও আশাবাদি স্বাধীনতার স্বপ্ন নিশ্চই একদিন পূরণ হবে।
বিষয়: বিবিধ
৯৫৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন