মোল্লা ভাইদের স্বপ্নের ধর্ম ও দাওয়াত।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:২৭:২৯ বিকাল
বর্তমান বিশ্বে তাবলিগ ও দাওয়াতের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা দেখা যায়।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যার যার মত করে দ্বীনের কাজ করছে।ভারত উপমহাদেশেও রয়েছে সেকুলার ,জাতীয়তাবাদ ও ইসলামের ভিত্তিতে দলসমূহ।বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে ৪১টি দল রয়েছে।মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ৯০% ই মুসলমান এবং দলগুলোকে এই মুসলমানরাই বিভক্ত করে রেখেছে নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। সেকুলার ও জাতীয়তাবাদের দলগুলো ছাড়া ইসলামের দলগুলো ইসলামের প্রাধান্য দেয় ও ইসলামেরই কথা বলে যদিও তাদের সমঝোতা করতে দেখা যায় সেকুলার বা জাতীয়তাবাদের সাথে।এর কারন হলো ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রবেশ করা যা নবী রসূলদের সূন্নত নয়।তাবলিগ ও দাওয়াতের ক্ষেত্রে আর একটি বিশেষ দল রয়েছে যাদের বলা হয় 'ইলিয়াসি তাবলিগ'। যেহেতু মাওলানা ইলিয়াস সাহেব এই তাবলিগের প্রনেতা এবং এটি প্রায় আশি বছর ধরে উপমহাদেশে প্রচলিত আছে।আল্লাহ পাক সূরা মায়েদার ৬৭ আয়াতে বলেন,'হে প্রিয় রাসূল! তোমার প্রভুর কাছ থেকে যা অবতীর্ন হয়েছে তা প্রচার কর।আর যদি তুমি তা না কর তাঁর বানী তুমি প্রচার করলে না।' তাহলে উম্মতের তাবলিগ ও দাওয়াতের কাজ হলো আলকুরআন ও রসূল সা: এর সূন্নাহের প্রচার করা।কিন্তু ইলিয়াসি তাবলিগ সম্পর্কে পড়াশুনা করে আমার যতটুকু জানা হয়েছে তারা নির্ভর করছে তাদের 'ফাযায়েলের কিতাব' সমূহের উপর। একটু বলে রাখা ভাল যে,উপমহাদেশে ইসলামের বিভিন্ন দল ও উপদলের যে সৃষ্টি হয়েছে তার সবই ভারত থেকে।এ দলগুলো সম্পর্কে কুরআন ও সূন্নাহের উলামাদের ফিখহ্ (মতামত) রয়েছে।
বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে আকান্খিত বিষয় হলো শান্তি।অতীতেও এই শান্তির-ই জন্য কাফের-মুশরিকদের সাথে লড়াই হয়েছিল।রসুল সা: নিজে থেকে কোন যুদ্ধ করতে যান নি।তিনি সবগুলো যুদ্ধ প্রতিহত করেছিলেন।আজকের পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাফের মুশরিক রুপী চরিত্রধারি মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করছেন তারা হলো বিভক্ত ইসলামের কর্নধাররা, যারা ইসলামকে পূঁজি করে তাদের নিজস্ব মতবাদ তৈরি করেছে রসুল সা: এর নির্দেশিত পথকে ছেড়ে দিয়ে।এখানে তারা একদিকে ইসলামকে বিভক্ত করে ইসলামের শক্তিকে বিনষ্ট করেছে অন্যদিকে ইসলামের একটি উম্মাহ গঠন করার জন্য যে চরিত্র দরকার তা গঠন করতে ব্যার্থ হয়েছে।রসূল সা: মক্কায় তেরটি বছর তৌহিদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করতে গিয়ে অত্যাচার ও অবিচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন কিন্তু দ্বীনের মানুষ তৈরি করতে পিছপা হন নি।মক্কার কাফেরগন তাঁকে ক্ষমতা দেয়া, এমন কি যুগের সুন্দরিদের দেয়ার কথাও বলেছিল কিন্তু তিনি বলেছিলেন আমার এক হাতে সূর্য আর অন্য হাতে চন্দ্র এনে দিলেও তিনি তার কর্তব্য কাজ থেকে পিছু হঠবেন না।আজকের ইসলামের দলগুলোর এখানেই সমস্যা।কেউ পশ্চিমা গনতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে ইসলাম বিজয়ী করতে চায় আবার কেউ ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে নিজেদের ধর্মীয় গুরুদের মতবাদকে দ্বীনের নামে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।এ বক্রপথগুলো অবলম্বন করার কারনে ইসলামের সরল পথ থেকে তারা বিচ্যুত হয়েছে। আজ শান্তির অন্বেষনে হন্য হয়ে ফিরছে বিশ্বের সব জাতিগোষ্ঠী। প্রযুক্তির বদান্যতায় জীবনযাত্রা সহজ হলেও মানুষের জীবনে শান্তি ক্রমেই অধরা হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত ও ধনী দেশগুলোর সামপ্রতিক অগ্রাধিকারের বিষয়ও শান্তি-নিরাপত্তা। সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি এখন উন্নত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার বিষয়। মানুষ এখন ঘরে-বাইরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। সর্বাধুনিক অস্ত্র ও প্রশিক্ষিত-সুশিক্ষিত বাহিনী থাকতেও মানুষের নিরাপত্তা নেই। বৈষয়িক ঐশ্বর্য এবং অঢেল প্রাচুর্য স্বত্ত্বেও শান্তি নেই পরিবার ও সমাজে।শান্তি নেই রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।কয়েক বছর আগেও আমেরিকায় অকারনে নির্বিচার গুলিবর্ষণে স্কুলের ফুটফুটে কতগুলো শিশুর প্রাণ ঝরে গেল।সভ্য দুনিয়ার আরেক মোড়ল অস্ট্রেলিয়ায় পিতা কর্তৃক একটি মেয়েকে ছয় বছর ধরে লাগাতার ধর্ষণের সংবাদেও বিশ্ববিবেক বিস্মিত হয়েছিল।বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র ভারতে নারী ও মেয়ে শিশুদের জীবন-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নেই। ভারতের দিল্লি খ্যাতি পেয়েছে ধর্ষণ তথা নারী নির্যাতনের রাজধানী হিসেবে। প্রায়ই পত্রিকায় খবর ছাপা হয়, ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাহিলী যুগের মতো কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে।২০১২ সালের ডিসেম্বরে ভারতে দামিনী নামের এক তরুণী চলন্ত যানবাহনে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় সারা বিশ্ব কেঁপে উঠেছিল।আমাদের দেশেও পর পর অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছিল এবং পত্রিকার পাতা খুললে এখন ধর্ষনের দৃশ্য প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে। শিশু থেকে নিয়ে বিদেশি পর্যটক পর্যন্ত ধর্ষণ আর গণধর্ষণের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে চলছে ভারত উপমহাদেশের কিছু কিছু দেশে।
বলতে দ্বিধা নেই, এ অধরা শান্তির সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ ঠিকানা ইসলাম। বিশ্বের ইতিহাস সাক্ষী, অশান্তির অনলে দগ্ধ পৃথিবীকে ইসলাম যেভাবে শান্তি ও নিরাপত্তা উপহার দিয়েছে আর কোনো ইজম-ব্যবস্থাই তা দিতে পারেনি। বর্তমানে ইসলামের শান্তিময় বাণী প্রচারের জন্য যে দলটিকে বিশ্বে প্রচলিত তাবলীগ জামাত বলে চিনে তাদের কার্যক্রম একটি প্রথমিক স্কুলের কার্যক্রমের মত।একথা নি:সন্দেহে বলা যায় তারা বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করছে, সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এ জামাতে তাবলিগ নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার এক নীরব বিপ্লবে বলে তারা দাবি করছে।তবে, দেশ যে পাপ পংকিলে ভরে যাচ্ছে, দেশের গনতান্ত্রিক সরকারগুলো দেশে বিজাতীয় সভ্যতার আমদানি করছে,সাধারন মুসলমানরা ইসলামের কাজকর্ম করতে পারছে না, কোথাও কোথাও মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে, সমাজে অনৈতিক কাজ চলছে, কবর পূজা ও বিদা'আত ছড়িয়ে পড়ছে,পিরতন্ত্রের আওতায় হাজারো আখড়া গড়ে তুলে অজ্ঞ মানুষগুলোকে শির্ক ও বিদা'আতি ইবাদত করাচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে এই তাবলিগে জামাত ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেনা।এ দাওয়াত পেশ প্রাথমিক কাজ মাত্র।রসুল সা: সমাজ থেকে সমস্ত পংকিলতা দূর করে একটা পূর্নাংগ ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ইসলামের কাজ ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকের নির্দেশনা দিবে কিন্তু প্রচলিত তাবলিগ শুধু ইতিবাচক দিকেই নির্দেশনা করে।সামাজিক অশান্তির যত উৎস আছে, সমাজের যত দুষ্টক্ষত রয়েছে, তা নির্মূলে সর্বপ্রথম দরকার মানুষের ভেতর পরকালে জবাবদিহিতার ভয় এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়াবার চেতনা জাগ্রত করা। মানুষের ভেতর ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আল্লাহভীতি তথা তাকওয়া সৃষ্টি করা। সোজা কথায়, পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা আর রসুলের আদর্শে আলোকিত জীবন গড়া। ভেতরের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির উন্মেষ ঘটানো। নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা ও একক নিয়ন্তা আল্লাহর কোরআনি নির্দেশনামাফিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আত্মশুদ্ধির শুভ্র পাঠ নিয়ে ব্যক্তি ও সমাজকে শ্বেত-শূচি বানানো। তাবলিগের মেহনতের ফলে সমাজে এমন বৈশিষ্ট্যের মানুষই তৈরি হচ্ছে। সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা আজও যতটুকু আছে, তার পেছনে শান্তির ধর্মের এবং তা প্রচারের জামাত তাবলিগের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই।সে তাবলিগ হলো রাসূল সা: এর পথে তাবলিগ।দাওয়াত সম্পর্কে সূরা মায়দার ৬৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'হে প্রিয় রাসূল! তোমার প্রভুর কাছ থেকে যা তোমার কাছে অবতীর্ন হয়েছে তা প্রচার কর।আর যদি তুমি তা না কর তবে তার বানি তুমি প্রচার করলে না।'রসুল সা: বলেছেন,'তোমরা আমার পক্ষ থেকে যদি একটি আয়াত ও জান তা প্রচার কর।' এ তাবলিগের মাধ্যমে হাজার হাজার অধঃপতিত তরুণ, উচ্ছন্নে যাওয়া শত শত যুবক ফিরে আসছে শান্তির মোহনায়। যে মাদকাসক্তি নিয়ে দেশ-সমাজ উদ্বিগ্ন, তার ছোবল থেকে হাজারো যুবক রেহাই পাচ্ছে। যে যৌতুকের অভিশাপ নিয়ে বলি হচ্ছে শত শত নিরীহ মা-বোন, ঘুম হারাম হচ্ছে হাজারো অভিভাবকের, তা নির্মূলেও নিঃশব্দে কাজ করছে তাবলিগ। কত ভাঙা সংসার জোড়া লাগছে, কত চোর-গুণ্ডা সুপথে আসছে, তার ইয়ত্তা নেই। যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব সোচ্চার হয়েও ফল হচ্ছে না, দাওয়াতের ও তাবলিগের মাধ্যমে তার সমাধান হচ্ছে ।তাক্কওয়ার জীবনের পাঠ নিয়ে কত ব্যবসায়ী সৎ হচ্ছেন, কত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হচ্ছেন, নিজের বেতন হালাল করা এবং হালাল উপার্জনের দরকারি শিক্ষা নিচ্ছেন, তার হিসাব একমাত্র আল্লাহ- মাবুদই জানেন।
সূরা আল ইমরানের ১০৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমাদের মধ্যে একটি দল হওয়া চাই যারা আহ্বান করবে কল্যানের প্রতি আর নির্দেশ দিবে ন্যায় পথের আর নিষেধ করবে অন্যায় থেকে।এরা নিজেরাই হছ্ছে সফলকাম।' অধিকাংশ ইসলামের দলগুলো কুরআনের এ ধরনের আয়াতগুলোকে বিকৃত করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে।অথচ ইসলামে ক্কেয়ামত পর্যন্ত একটি দল ও একটি উম্মতের কথাই কুরআন ও হাদিসে বিবৃত হয়েছে।কোন দাওয়াত পৌঁছাতে হলে দেখতে হবে তা কুরআন ও হাদিসে আছে কিনা? তাবলিগ সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে আমরা কোন তাবলিগ পৌঁছাবো।তাবলিগ করার জন্য কুরআন ও হাদিসের ইলম থাকতে হবে। অধিকাংশ মানুষ তাদের জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গাফেল।উদাহরন স্বরুপ বলা যায়, আপনি যদি কোন কোম্পানির এজেন্ট হয়ে থাকেন এবং যে পন্যটির সেবা জন গনকে দিবেন সে পন্য ও কোম্পানি সম্পর্কে আপনার গভীর জ্ঞান থাকতে হবে।যদি আপনি ভোক্তাদের সন্তুষ্ট করতে চান তাহলে এর ব্যাবহারিক দিক সহজভাবে বর্ননা করতে হবে যেন তারা বুঝতে পারে।তাহলে বুঝা গেল এটা নির্ভর করছে আপনার কোম্পানির পন্যটির গুনাগুন এবং আপনার দক্ষতার উপর।আল্লাহপাক এই কুরআন নাজিল করেছেন আর দ্ব্যার্থভাষায় বলে দিয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নেই।শুধু তাই নয় তার সাথে একজন প্রশিক্ষিত রসূল পাঠিয়েছেন যিনি এ বিষয়টি মানবজাতিকে সুচারুরুপে বুঝিয়ে দিবেন আর সুধীর্ঘ ২৩ বছর ব্যাপী তিনি প্রচার করে পৃথিবীতে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।ইসলাম প্রচারে আমাদের সেই তাবলীগই করতে হবে যা রসুল সা: তার জীবদ্দশায় করেছিলেন।প্রচলিত তাবলিগ জামাত যাকে ইলিয়াছি তাবলিগ বলা হয় এর সূচনা করেছিলেন মাউলানা ইলিয়াছ সাহেব।তিনি একজন দেওবন্দি আলেম।তাবলিগ জামাত প্রথমে শুরু হয় ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের মেওয়া গ্রাম থেকে।এটা ছিল একটা অশিক্ষিত গ্রাম। ইলিয়াছ সাহেবের জন্ম ১৩০৩ হি: ও মৃত্যু ১৩৬৩ হি.।'এই হিসেবে ধরে নেওয়া যায় প্রায় ৮০ বছর এ জামাতটির বয়স।তাবলিগের প্রথম মার্কাজ হচ্ছে দিল্লি নিজামুদ্দিন।এটি ৫ তলা মসজিদ।মসজিদের বারান্দায় ৬টি কবর রয়েছে এবং সেখানে মুসুল্লিরা নামাজ পড়ে অথচ যে মসজিদে কবর থাকে সে মসজিদে নামাজ পড়া হারাম।সেখান থেকে ৪০০ বা ৫০০ মিটার দূরে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার যেখানে অসংখ্য হিন্দু,শিখ,তথাকথিত মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বিরা কবর পূজায় লিপ্ত।এর পর এ জামাতটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বিস্তৃতিলাভ করেছে।বাংলাদেশে কাকরাইল মসজিদ তাদের কেন্দ্র ও ইজতেমা হয় টঙির তুরাগ নদীর পাড়ে।তাদের কিছু জাহেল বা মুর্খ অনুসারি রয়েছে যারা মনে করে কখনো মক্কা যাওয়াতো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়,যদি তারা এই ইজতেমায় আসে তাহলে হজ্ব বা ওমরার সওয়াব পাবে।এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে লিখা হয়েছে যাতে করে এই অজ্ঞ ভাইরা বুঝতে পরে যে হজ্জ ও বিশ্ব-ইজতেমা এক নয়।হজ্জ ইসলামের একটি রোকন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে ধনী ব্যাক্তিদের জন্য জীবনে একবার পালন করার মত বিধান। তাদের কিতাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাজায়েলের কিতাব যা খন্ডে খন্ডে লিখা হয়েছে এবং পরে বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে।বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাউলানা শাখায়েতুল্লাহ।আর একটি অনুবাদ রয়েছে আম্বরআলীর।
ফাজায়েলে যে বিষয় রয়েছে তা হলো-ফাজায়েলে তাবলিগ,নামাজ,কুরআন,জিকির,রমজান ও হেদায়েতে সাহাবা।কুরআন ও সুন্নাহের কিতাব ছেড়ে কেন ফাযায়েল বের করা হলো? আর কেনই বা এর ভীতর কিচ্ছা কাহিনী লিখা হলো যার কোন ভিত্তি নেই আলকুরআন ও হাদিসে।সেখানে আশ্রিত হয়েছে শির্ক ও বিদাআত।দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্য হলো মানুষের সংস্কার করা।লাখো সাহাবি ও মুহাদ্দেছিন গন কুরআন ও ছহি হাদিস ছাড়া দ্বীনের জন্য অন্য কিছুকে তালাশ করেন নি।কুরআন ও সুন্নাহের উপর যারা কিতাব লিখেছেন সে সমস্ত কিতাব আজ পর্যন্ত হক্কানি উলামাগন প্রচার করছেন।আমাদের মনে রাখতে ইসলামের সরল পথের দলটি সব সময়ই ছোট ছিল।ইসলামের বড় দল হলেই মনে করার কোন কারন নেই যে এটিই সুন্নাহের দল।আমাদের পর্যবেক্ষন করে দেখতে হবে তারা দৈনন্দিন জীবনে দ্বীনের কি কাজ কর্ম করছেন আর এর মাপকাঠি হলো আলকুরআন ও রসুল সা: এর সুন্নত। কিন্তু দ্বীন প্রচার করতে গিয়ে যদি অদ্বীন ঢুকে যায় তাহলে হক্কানী আলেমদের উচিত তাদের এই কর্মগুলোকে ধরিয়ে দেয়া।আমি অনুরোধ করছি, যারা আজ দ্বীন কায়েমের জন্য কাজ করছে তাদের পর্যবেক্ষন করুন ও তাদের কিতাবগুলো পড়ুন তাহলে বুঝতে পারবেন সেখানে ইসলামের নামে অসংলগ্ন কিছু কাজ রয়েছে যা রসুল সা: বা পরবর্তীতে সাহাবাগন করেননি।অধিকাংশ মানুষ তাদের বাইরের রুপটিই দেখে ভিতরে কি আছে তা পড়াশুনা না করার কারনে দেখেনা।এই শির্ক ও বিদা'আত নিয়ে অন্ধ অনুসারিরা দ্বীন প্রচার করছে।ফাযায়েলের দ্বিতীয় খন্ডে রয়েছে-ফাজায়েলে সদাকা ,দুরুদ শরিফ,হজ্ব ও জাজাউল আমল।ফাজায়েলে দুরুদ ও ফাজায়েলে হজ্ব এই দু'টোতে সবছেয়ে বেশি শির্ক ও বিদা'আত রয়েছে।যারা চিল্লা দিয়ে অন্ধ ভক্ত হয়ে গিয়েছে তাদের এই কিতাবগুলো দেয়া হয়।আর রসূল সা: এর জীবনে এই চিল্লা দেয়ার কোন হাদিস থেকে থাকলে সম্মানিত পাঠকদের অনুরোধ করছি যেন আমাকে জানিয়ে দেন।যেটি দ্বীন হিসেবে পালন করবো সেটি কুরআন ও ছহি হাদিসে থাকতে হবে। ফাজায়েলের ভূমিকায় একটি বিষয় পড়লে পাঠকগন বুঝতে পারবেন এর ভিতরে কি আছে।আল্লাহর প্রশংসা ও দুরুদ পাঠ করার পর লিখেছেন,'একটা সংক্ষিপ্ত বই লিখি।এত বড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার পরকালের নাজাতের ওসিলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই।' মু'মিনের যে কোন কাজ হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।আর এখানে বইটি লিখা হয়েছে বুজুর্গের সন্তুষ্টির জন্য যা একটি শির্কীয় কাজ।এই কিতাবগুলো এক একটি ৮০০ পৃষ্ঠা সম্বলিত।আর একটি কথা লিখেছেন অনেকেই শির্ক ও বিদা'আতে লিপ্ত রয়েছে তারা শির্ক কে শির্কই মনে করে না।আমি বলছি ভূমিকা লিখে শির্ক করেছেন তিনি বুঝতে পারলেন না নিজেই শির্ক ও বিদা'আতে হাবুডুবু খাচ্ছেন।সূরা রা'দ এর ২২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তাদের হেদায়েত করার দায়িত্ত তোমার উপর নয়।আল্লাহ হেদায়েত করেন যাদের ইচ্ছা করেন।ভাল জিনিসের যা তোমরা খরচ কর তা তোমাদের জন্য।আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া খরচ করবে না।ছহি বোখারি ও মুসলিমে রসুল সা: বলেন,'আল্লাহপাক জাহান্নামের উপর ঐ ব্যাক্তিকে হারাম করেছেন যে ব্যাক্তি লা ইলহা ইল্লাল্লাহ বলবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।'প্রচলিত তাবলিগ জামাত সম্পর্কে একবিংশ শতাব্দির কুরআন ও সূন্নাহর বিশিষ্ট উলামাদের কিছু ফিকহ(মতামত) পেশ করছি পাঠকদের জানার জন্য।তাদের কিতাবগুলো প্রমান করে এটা তারা স্বপ্নের ধর্ম প্রচার করছে।অসংখ্য কিচ্ছা কাহিনী রয়েছে যার সাথে কুরআন হাদিসের কোন সম্পর্ক নেই।আপনাদের অবগতির জন্য কিছু রেফারেন্স দিচ্ছি যেন পাঠকবৃন্দ গভীরে যেতে পারেন। ফাজায়েলে দুরুদ ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ১১৩ কিস্সা নং ৩৫। ২য় খন্ড কিস্সা চিশতি মাশায়েখের ইতিহাস পৃষ্ঠা নং ২৩২ দেখুন। এ রকম অনেক কিস্সা কাহিনী রয়েছে।আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি যারা ওখানে যায় অধিকাংশই অজ্ঞ যারা কথাগুলো খতিয়ে দেখে না।আর এক শ্রেনী আছে যারা মনে করে বয়স হয়েছে জীবনে অনেক গুনাহ করেছি যদি চিল্লা দিয়ে গুনাহ মাপ হয়ে যায় তাহলে বেঁচে যাব।তাদের বুঝা দরকার এ চিল্লা রসুল সা: দিয়েছেন কিনা।স্ত্রী ও লায়েক মেয়েদের হেফাযত করা ফরয।তারা এ না করে দীর্ঘদিন বাইরে পড়ে থাকে ও বিদা'আতি ইবাদাত করে।কয়েকমাস পূর্বে একজন বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যাবসায়ি যিনি ইলিয়াসি তাবলিগ করেন, সৌদি আরবে এসেছেন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে।দেখতে একজন ভাল মুসুল্লী।সূন্নতের সবকিছুই আপাদমস্তকে পরিলক্ষিত হয়।আতর মাখান কিছুক্ষন পর আবার অন্যদেরও হাদিয়া দেন ছোট ছোট শিশি।একটি বাসায় দাওয়াত খেতে এসেছেন ও স্ত্রীকে হোটেলে রেখে এসেছেন।যিনি দাওয়াত দিয়েছেন তিনি বললেন,আপনার পরিবারকে নিয়ে আসলেন না।তিনি বললেন,বাইরে বেরুলে পর্দার খেলাপ হয়।পরে যিনি দাওয়াত করলেন উনার স্ত্রী ফোনে কথা বললেন।ভদ্র মহিলার ভাষ্যনুযায়ী,দেশেও কোথাও যেতে দেন না।তিনি যখন চিল্লায় যায় প্রতিজ্ঞা করিয়ে যান যেন বাইরে না যান।রাস্তায় বেরুলে হাত ধরা যাবে না।রিক্সায় বসলে হাসিমুখে কোন কথা বলা যাবে না।বাসায় কেউ আসলে দেখা করা যাবে না।এ রকম অনেক কথা।মাসাআল্লাহ! কোথায় পেলেন তিনি এসব? যিনি এত সুন্দর জীবন যাপন করেন, উনাকে আমি ব্যাবসায়িক কারনে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম যে আপনার কোটি কোটি টাকার ব্যাবসাটি কিভাবে চলে? উনার বিভিন্ন সুদি ব্যাংকে হিসাব রয়েছে।দ্রব্য সামগ্রী আমদানি ও রপ্তানী করতে হয়।যেহেতু আমার বন্ধুদের এ সব ব্যাবসা রয়েছে এবং আমার জানা আছে ঘুষ ও সুদ ছাড়া কোন ব্যাবসা-ই চলে না।আমি বললাম ভাইজান,আপনি যে ব্যাবসাটি করছেন এখানে ঘুষের কারবার রয়েছে।তিনি বললেন,এটি আমাদের সরকারি ব্যাবস্হার একটি দৈন্যতা।আর আপনি কাজ করতে গেলে তো কিছুটা কম্প্রোমাইজ করতে হবে।আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম ইসলামে কোন অন্যায় কাজে কম্প্রোমাইজ করার সুযুগ আছে কি? তিনি বললেন তাহলেতো কোন ব্যাবসায়ই করা যাবে না। এ মানুষগুলো ঘরে এক রকম বাইরে অন্য রকম।পর্দা ইসলামের একটি বিধান যা মানুষকে অশ্লিলতা থেকে দূরে রাখবে।পর্দার সাথে সব কাজই করা যাবে তবে কোন অশ্লীলতা করা যাবে না।স্ত্রীটির মতে তিনি যেন একটি কারাগারে থাকেন। ইসলামের নামে তারা নতুন কিছু জিনিস তৈরি করে নিয়েছে আবার নিজের ইচ্ছেমত সমাজে নিজের অবস্হান তৈরি করারও কিছু নিয়মনীতি পালন করে থাকেন।তিনি ব্যাবসার কাজে পশ্চিমা দেশগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন যেখানে অশ্লিলতা চোখে পড়বে কিন্তু স্ত্রী তা পারবে না।আর একজন মোল্লা ভাই বাংলাদেশ বিমানে চাকুরি করেন।তাঁর সাথে দেখা হয়েছিল আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে।তাবলিগে বসেন বিভিন্ন যায়গায়।ডেপুটেশন গুলোতে যখন বিভিন্ন দেশে যান তখন তদবির করে অন্যদের হারিয়ে দেন।বিমানের আয়ের একটি বিশেষ অংশ চলে যায় কর্মচারিদের অনৈতিক খাতে যার কারনে লস গুনতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।তিনি এখন আছেন জেদ্দায়।তিনি খেয়ানতের ব্যাখ্যা জানেন কিনা আমার জানা নেই।ইসলাম মন্দের সাথে কখনো কম্প্রোমাইজ করে না। এ দলটির কার্যক্রম জানার জন্য জেদ্দার শরাফিয়ায় কয়েকদিন আমার বসার সুযুগ হয়েছিল।সেখানে ইন্ডিয়া ,পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ভাইরা বসে।একদিন একজন পাকিস্তানি মুয়াল্লেম আসলেন।তিনি বয়ান করলেন হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে কিন্তু কোন রেফারেন্স দিলেন না। আমি শরিয়ত সম্মত কিছু প্রশ্ন করায় সাথীরা মনোক্ষুন্ন হয়েছে বলে আমার মনে হলো।ওখানে বসা আর একজন পাকিস্তানি তার বক্তৃতায় আমভাবে বললো জাহিলি প্রশ্ন করা ঠিক নয়।তবে কুরআন ও সূন্নাহের বিশেষজ্ঞদের মতে ,তাহারা আহলে সূন্নাহ আল জামাতের আক্কিদায় পুরোপুরি বিশ্বাসি নয়।ইলম শিখতে আগ্রহি নয় ও বাধা প্রদান করে।তারা নিজের স্বার্থে কোরআনকে বিকৃত করে ও জাল হাদিস বয়ান করে।বিদা'আতকে এবাদাত মনে করে।তাদের মধ্যে অনেক বিদা'আতি কাজ আছে যেমন-যখন তারা দাওয়াতে বের হয় একজনকে আমির,একজনকে মুতাকাল্লিম এবং একজনকে রাহবার নিয়োগ করে।এই ত্বরিকাগুলো বিদা'আতি ত্বরিকা।তারা কখনো নেতিবাচক কথা বলবে না।শির্ক ও বিদা'আত কে উপড়ানোর কথা বলে না বরং ওর মধ্যেই ইবাদাত করে।তারা যদি ১/২ টা চিল্লা দেয় তাহলে অহংকার করে ও অন্যকে তুচ্ছ মনে করে।তাদের কাছে চিল্লায় বের হওয়া উত্তম কাজ।ফতোয়া তাফছির ও হাদিসের ক্ষেত্রে তাদের দু;সাহসিকতা বেশি।তাদের অনেকেই স্ত্রী সন্তানের খবর রাখে না। পরিবারের উপর ধর্মের নামে নির্যাতন করে।সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, এ বিষয়গুলো যা আমি উল্লেখ করলাম তা আমার দীর্ঘ দিনের তাদের বই পড়া ও কোরআন ও সূন্নাহের আলেমদের কথা থেকে সংগৃহিত তথ্য উপস্হাপন মাত্র। কাউকে হেয় করার জন্য নয় বরং এক মুসলিম আর এক মুসলিমের আয়না স্বরুপ কল্পনা করেই জানাতে বাধ্য হলাম যা কোরআন ও সূন্নাহর সাথে সংঘাতপূর্ন।আপনারাও রেফারেন্স গুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করুন (যেমন- শেখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ (র) এর ফিখহ,আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি,আব্দুল্লাহ ইবনে হুদায়্যান,শাইখ ফুযান আল ফুযান ও আব্দুল্লাহ আলি শেখ প্রমুখের ফিখহ সমূহ) ইনশাআল্লাহ তাদের আবিষ্কার করতে পারবেন ও তাদের সংশোধন করার চেষ্টা করতে পারবেন।আমি আবারো বলছি তাবলিগের ভাইরা যদি রসুল সা: এর দাওয়াত ও তাবলিগ করে থাকেন তাহলে কুরআন ও সূন্নাহকে ধরে নিতে হবে ফাযায়েলকে বাদ দিয়ে।কারন এগুলোতে রয়েছে কিস্সা কাহিনি,শির্ক ও বিদাআত যা ইবাদত নয়।প্রকৃত দ্বীন হলো মানুষ তৈরি করা ও সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে আল্লাহর জমীনে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা।তাবলীগ জামাত সেই নেতৃত্ব তৈরি করার মত সংগঠন নয় তবে ইসলামের সহায়ক শক্তি।কোরআন ও ছহি সূন্নাহ বিবর্জিত যে সমস্ত কিতাবের তারা আমল করে তা নিশ্চই সাংঘর্ষিক।এ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্য হক্কানি উলামাদের আরো এগিয়ে আসতে হবে তাদের সংশোধনের জন্য। আজকের দুনিয়ায় ইসলামকে ক্ষতবিক্ষত যতটুকু করছে বিধর্মিরা তার চেয়ে বেশী করছে মুসলিমদের ভিতর এক ধরনের বিভক্ত মুসলিমরা।সে জন্য আমাদের উচিত সবারই ইসলামের সঠিক তথ্যগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৬২৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর রসুল সঃ বলেছেন পথ চলতে যদি তোমরা তিনজন এক সাথে থাক তবে একজনকে আমির বানাও৷ ধন্যবাদ আপনাকে৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন