ইসলামের মুল কথা।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৪৩:৪৮ দুপুর

ইসলাম নিয়ে আজকের জগতে যত সভা সেমিনার হচ্ছে তা ছিলনা ইসলামের প্রাথমিক যুগে।কুরআনের আয়াত নাজিল হতো,রসূল সা: সাহাবাদের আয়াত পড়ে শুনাতেন , পরিশুদ্ধ করতেন ও হেক্কমত শিক্ষা দিতেন।সাহাবায়েকরাম কুরআনকে শুধু মুখস্তই করতেন না,কুরআনের আয়াতগুলোকে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতেন।রসূল সা: এর কাছ থেকে যা শুনতেন তা-ই ফরয বলে আমল করতেন।কোন অযথা প্রশ্ন বা বাড়াবাড়ি করতেন না।কেউ ঈমান আনলে ইসলামের জন্য জীবন দিয়ে দিতে কার্পন্য করতেন না।এটি ছিল ইসলামের ভিত্তি।কালের পরিক্রমায় ইসলামকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে এক ধরনের দুষ্টু আলেমগন।ইবাদতের মুলকে ছেড়ে দিয়ে ইসলামের ধারক ও বাহকদের কথাগুলো আমল করা শুরু করেছে সুন্নাহকে বাদ দিয়ে।এভাবে শির্ক ও বিদাআতের খাদেম তৈরি হয়েছে পৃথিবি ব্যাপী।ইসলাম একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হলো - নিজের ইচ্ছাকে সম্পূর্নভাবে আল্লাহর কাছে সমর্পন করা।এর মুল শব্দ হলো 'সালাম' যার অর্থ শান্তি।ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় আত্মার শান্তি ও মনের শান্তি যেন স্হাপিত হয় আল্লাহ কতৃক আইন পালনের মাধ্যমে ও রসূল সা: এর প্রদর্শিত পথে।মানবজাতি যেন সত্যবাদিতার সাথে আল্লাহর আইনকে বাস্তবায়িত করে নিজেদের জীবনে,সমাজ জীবনে ও রাষ্ট্রীয় জীবনে।এই কাজটি শুরু হয় একটি পরিবারের সমৃদ্ধির মাধ্যমে।একটি পরিবারের কর্তা নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করবেন,পরিবার ও সন্তানকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের এই এককটিকে সাজাবেন।আমরা অনকে বৃহৎ কাজের দিকে ধাবিত হই কিন্তু নিজের ও পরিবারের জীবনে ইসলামের মৌলিক দিকটি থাকে অপূর্ন।সেজন্য সমাজে যেমন এর প্রতিফলন ঘটে না,তেমনি ঘটে না রাষ্ট্রে। মুসলিম শব্দটির অর্থ হলো - যে ইসলামের পদতলে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে।জাতি ধর্ম ও বর্ন নির্বিশেষে পৃথিবীর যে কোন যায়গা থেকে এক আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উপর যারা ঈমান আনবে তারাই মুসলিম ও একে অন্যের ভাই।কেউ কেউ এমন ধারনা পোষন করেন যে,এটি শুধু আরবদেরই ধর্ম অথচ ৮০% এর উপর মুসলিম যারা আরব নয়।এটি একটি ভুল ধারনা।বহু নবী রসূলের আগমন হয়েছে পৃথিবিতে।আলকুরআনে মাত্র ২৫ জন নবী ও রসূলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।তাদের কাজ ছিল আল্লাহর বিধানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা একমাত্র আল্লাহর আইনের মাধ্যমে।তারা সমকালীন শক্তির সাথে আপোষ করেন নি বরং একটি মেসেজ প্রচার করেছেন,'হে আমার স্বজাতি! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর যিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন উপাস্য নেই।' ইন্দোনেশিয়ায় মুসলিমের যে সংখ্যা রয়েছে তা নেই আরব জগতে।যেহেতু রসূল সা: এর আগমন হয়েছে মক্কা নগরীতে এবং তাঁর উপর আলকুরআন নাজিল হয়েছে আরবী ভাষায় সেহেতু মুসলমানদের আলকুরআন ও ছহি হাদিসের উপর নির্ভর করে জীবন পরিচালিত করতে হবে।কোন দেশকে অনুসরন বা মানুষকে অনুসরন নয় বরং মুল দুটি বস্তু আলকুরআন ও ছহি হাদিসকে অনুসরন করতে হবে মুসলমানদের।সেজন্য তিনিই হবেন একজন খাঁটি মুসলিম যিনি পরিপূর্নভাবে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর নিকট সমর্পন করেন।ইসলাম কোন নতুন ধর্ম নয় বরং এটি চৌদ্দশত বছর পূর্বে আবির্ভূত একটি ধর্ম যা এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলাম রুপে।সূরা আলইমরানের ১৯ আয়াতে বলা হয়েছে,'ইন্নাদ্দিনা এনদাল্লাহিল ইসলাম।' আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবন বিধান হিসেবে এসেছে ইসলাম।এটিই একমাত্র সত্যিকার ধর্ম যা প্রভুত্ত করবে অন্য ধর্মগুলোর উপর। প্রতিটি মুসলমানকে বিশ্বাস স্হাপন করতে হবে ছয়টি জিনিসের উপর।আল্লাহর উপর ঈমান আনা,অগনিত ফেরেতাদের উপর ঈমান আনা, আসমানি কিতাব সমূহের উপর ঈমান আনা,নবি ও রসূলদের প্রতি ঈমান আনা,কেয়ামত দিবসের উপর ঈমান আনা ও কপালের ভালমন্দ আল্লাহর হাতে।একজন মুসলিম যেমন বিশ্বাস করবে পূর্ববর্তী নবি রসূলদের যেমন(ইব্রাহিম,নুহ,মুসা,ঈসা আWinking তেমনি বিশ্বাস স্হাপন করবে সর্বশেষ রসূল মোহাম্মদ সা: এর উপর।তিনি কোন নতুন ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেন নি বরং তিনি হলেন ইসলামের সর্বশেষ বার্তাবাহক।তিনি যে বার্তা নিয়ে এসেছেন তা শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নয় বরং এ বার্তা সমস্ত মানজাতির জন্য।তারা যেহেতু এক আল্লাহর ইবাদত করেছেন,মানবজাতির কাজও একই আল্লাহর ইবাদত করা।আল্লাহ চান তার বান্দাহ তাদের খাঁটি ইবাদত তাঁকে প্রদান করুক।কিন্তু বান্দাহরা পৃথিবীর রুপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে আল্লাহর চাওয়াটিকে ভুলে যায়।আল্লাহর পথ ছেড়ে দিয়ে যার যার মত করে তারা ইবাদত

করে।ইসলামের মুল মেসেজটি বুঝা খুবই সহজ।এটি একটি সরল পথ।সরল পথটি রেখে আঁকা বাঁকা রাস্তা ধরার কোন প্রয়োজন আছে কি? ইসলামের পথ অনুসারে সর্বশক্তিমান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়।এটির সাথে কখনো কাউকে সমকক্ষ করে দাঁড় করাতে পারবে না,তাঁর ইবাদতে কাউকে সামিল করা যাবে না বিশ্বাস ও কাজে।এই ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের সাথে আল্লাহর সরাসরি।কোন মাধ্যমের প্রয়োজন নেই আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের।বান্দাহ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন বান্দাহ আর আল্লাহর সাথে পর্দা থাকে না।কিন্তু মানুষ তাদের অজ্ঞতার কারনে আল্লাহকে পেতে ঘুরে বেড়ায় আর একটি সৃষ্টির কাছে।তারা এতই অজ্ঞ যে,সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির পার্থক্য করতে পারে না।তারা যাদের ইবাদত করে তাদের উপর কোন প্রানী আত্যাচার করলেও তারা প্রতিবাদ করতে পারে না।আফসুস! কেমন স্রষ্টা আর কেমন তাদের অনুসারি।মুসলিমদের উচিত এক আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্ক করা ও অন্যদের এড়িয়ে চলা যারা কোন উপকারও করতে পারে না বা ক্ষতিও করতে পারে না।আল্লাহর জ্ঞান অনুসন্ধানের জন্য আল্লাহর আয়াত ও যে সমস্ত প্রমান তিনি রেখেছেন তার পর্যালোচনা করতে হবে।কিন্তু মুসলমানদের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ কুরআন নিয়ে নাড়াচাড়া করে।আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,তারা কুরআন নিয়ে পর্যালোচনা করে না কেন,তাদের অন্তরে কি তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে? তিনি একমাত্র প্রভু যিনি বান্দাহের জন্য অবারিত করে রেখেছেন তার সৃষ্টিসমূহ।তিনি পরম দাতা ও দয়ালু।আলকুরআন সবচেয়ে বেশি পঠিত একটি কিতাব।পৃথিবীর এমন কোন প্রান্ত নেই যে এ কিতাব পঠিত হয় না।এমন কোন সময় নেই যে শেষ রসূল সা: এর নাম উচ্চারিত হয় না।এটি পৃথিবির মানবাজাতির জন্য একটি জীবন্ত মোজেজা।কুরআনের পাঠক যখন কোন মসজিদের কোনে বা তার বাসস্হানে নিভৃতে কুরআন পাঠ করে আর চোখের পানি ঝরাতে থাকে তখন কি অনুধাবন করতে কষ্ট হয় যে এর কারনটি কি? এটিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া ও তার ভয় মনে জাগ্রত করার বাসনা মাত্র যা বান্দাহকে কামিয়াব করে দিবে আখেরাতে।মাত্র ২৩ বছর সময়ে এটি পৃথিবীকে আলোকিত করেছে আর এ আলোক জ্বলতে থাকবে কেয়ামত আসার আগ পর্যন্ত।আজ আমরা মুল জিনিসগুলোকে ছেড়ে দিয়ে পথ খুঁজছি বিভিন্নভাবে।রসূল সা: এর প্রতিদিনের জীবন অভ্যাস আমাদের ক'জন মুসলিম লালন করি।এমন একটি অনুকরনীয় চরিত্র যা অবলম্বন করলে কালো পাথর সোনায় পরিনত হয়।তার প্রতিটি নির্দেশনাই আমাদের ইবাদত।তিনি যা শিখিয়েছেন তা-ই আমাদের করতে হবে।নিজের ইচ্ছামত কোন কিছু করা যাবে না।তিনি ছিলেন মানবজাতির একজন খাঁটি বন্ধু, একজন খাঁটি স্বামী ও অভিভাবক,একজন খাঁটি বিচারক,একজন যোদ্ধা ,একজন খাঁটি ধৈর্যধারনকারী,শক্রুদের প্রতি সুবিচারক ও আল্লাহর একজন খাঁটি আনুগত্যকারী।এই অনেকগুলো গুনের কারনে তাঁর মিশন সফল হয়েছিল। আমরা প্রতিনিয়ত ইসলামের কথা শুনি কিন্তু আমলে নেই না।আমরা ডুবে আছি সম্পদ আহরনে।সব কাজ কর্ম সেরে যখন সময় হয় তখন আল্লাহর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি।ঈমান আনার পরে যে মহান কাজটি মুসলিমের করা উচিত তা হলো নামাজ কায়েম করা।কিন্তু মুসলিমদের নামাজ কায়েম নেই।পাঁচওয়াক্ত নামাজের একটি সময় নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে আলকুরআনে।কিন্তু বেশির ভাগ সংখ্যক মুসলিম নিজের ইচ্ছামত নামাজ পড়ে।ইসলামের মুল কাজগুলো যে মুসলিম পালন করে না তার আর ভাল কি কাজ আছে।ইসলামের বার্তাবাহক যিনি হবেন,তিনি যদি মৌলিক বিষয়গুলো তার জীবনে প্রতিফলিত না করেন আর ঘুরে বেড়ান অন্যদের দ্বীনের দিকে ডাকার জন্য,তিনি নিজের সাথে একটা প্রহসন করেন।এ মানুষের দ্বারা ইসলামের কাজ সম্প্রসারিত হয় না।সহজ ভাবে ইসলামকে বুঝতে হবে।খাঁটি ঈমান নিয়ে আসতে হবে।সত্যবাদিতা থাকবে জীবনের প্রতি মুহূর্তের ইবাদতে।ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলো মেনে চলতে হবে।হারামকে হারাম ও হালালকে হালাল মনে করতে হবে।এই প্রেকটিস যদি মুসলিমের প্রাত্যহিক জীবনে না আসে তাহলে সে মুসলিম ভাল মুসলিম নয় আর এ সমস্ত মুসলিম দিয়ে মুসলিম উম্মাহের কোন কল্যান নেই যদিও সে দ্বীন প্রচার করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখে।ইসলামি জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উম্মাহকে একে অন্যের সাথে ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ করতে হবে।মুসলিমদের প্রতিটি কাজ একমাত্র আল্লাহর জন্য।মানবতার প্রতি দরদ প্রদর্শন ও ধৈর্যের মাধ্যমে ইসলামের কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে হবে।একমাত্র আল্লাহ পাক আমাদের কাজের মুল্যায়ক।আমাদের কিছু চাওয়া ও পাওনা সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসবে,এই চিন্তা চেতনা মাথায় রেখে আমাদের নিরলসভাবে ইসলামি উম্মার জন্য কাজ করে যেতে হবে।যৌথ ও সঠিক কাজের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের মর্যাদাকে উন্নীত করতে পারবে বলে আমি ধারনা পোষন করতে পারি।

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347774
৩০ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৩:০৪
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

প্যারা আকারে দিলে পড়তে সুবিধা হয়। লিখাটি ভালো লেগেছে। শুকরিয়া।

সহজ ভাবে ইসলামকে বুঝতে হবে।খাঁটি ঈমান নিয়ে আসতে হবে।সত্যবাদিতা থাকবে জীবনের প্রতি মুহূর্তের ইবাদতে।ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলো মেনে চলতে হবে।হারামকে হারাম ও হালালকে হালাল মনে করতে হবে।এই প্রেকটিস যদি মুসলিমের প্রাত্যহিক জীবনে না আসে তাহলে সে মুসলিম ভাল মুসলিম নয় আর এ সমস্ত মুসলিম দিয়ে মুসলিম উম্মাহের কোন কল্যান নেই যদিও সে দ্বীন প্রচার করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখে Thumbs Up

শুকরিয়া Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File