ইসলাম ধর্মে পা ছুঁয়ে সালাম করার কোন রীতি আছে কি?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:০৫:৪৪ দুপুর
পা ছুঁয়ে সালাম করার রীতি ভারত ,পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত একটি রীতি।ইসলাম ধর্মে পা ছুঁয়ে সালাম করা নিষেধ।কেননা পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেলে আরেকজনের সামনে মাথা নত করতে হয়।কিন্তু ইসলাম ধর্মে একমাত্র আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কারো সামনে মাথা নত করা যায় না।তাই পা ছুঁয়ে সালাম করা যাবে না।অনেকে না জেনে অতিভক্তি করার জন্য এ কাজটি করে।ভারত উপমহাদেশে এ কাজটি হয়ে এসেছে দীর্ঘকাল থেকে হিন্দু রীতি অবলম্বন করে।হিন্দু সমাজে বেদের শিক্ষক তথা পুরোহিত থেকে শুরু করে গুরুজনেরা মূলত ব্রাম্মন সম্প্রদায়ের হয়।আর হিন্দু ধর্ম মতে ব্রাম্মন পুরোহিতরা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতিনিধি।ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে তারা সাধারন হিন্দুদের কাছে প্রায় পূজনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।মনুসংহিতাতে বেদের ছাত্রদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে,বেদ শিক্ষার প্রতিটি পাঠের শুরুতে ও শেষে একজন ছাত্র অবশ্যই তার গুরুর দুই পা ছুঁয়ে আলিংগন করবে।এই পা ছুঁয়ে আলিংগন করাকে ব্রম্মন্জলী বলা হয়।তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,মুসলিম কালচারে এ রকম অনেক কিছুই ঢুকে পড়েছে হিন্দুদের থেকে।হিন্দুরা যে দুর্গা পূজা করে তার অনুকরনে এক শ্রেনীর মুসলমানরা এখন দর্গা ও কবর পূজা করছে।এদের সাথে মুশরিকদের কোন পার্থক্য নেই।ইসলামে একজন মুসলিম আর একজন মুসলিমকে দেখলে বলবে,'আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওায়াবারাকাতুহ।' আর অপর মুসলিম সালামের জবা দিবে,' অ-আলাইকুমুচ্ছালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।একে অন্যের সাথে হাত মিলাবে।আরব দেশগুলোতে কপালে চুম্বনের একটি রীতি রয়েছে।রসূল সা: যখন ইন্তেকাল করলেন তখন আবুবকর রা: তাঁর কপালে চুম্বন করেছিলেন।সে হিসেবে এটি সাহাবাদের একটি সূন্নত যা পালন করা যায়। মানুষ মানুষের প্রতি ভালবাসতে গিয়ে অতিরন্জিত করে ফেলে।প্রতিটি ইবাদত হতে হবে আল্লাহর নির্দেশিত ও রসূল সা: এর অনুসরনে।রসূল সা: যা করেছেন ও করতে বলেছেন সেভাবেই হবে উম্মতের ইবাদত।সুরা তাওবার ২৪ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,' বলে দাও, 'তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হয়ে ওঠে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, ভাই, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যার মন্দায় পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাড়িঘর, যা তোমরা পছন্দ করো, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর নির্দেশ (যুদ্ধের আদেশ) আসা পর্যন্ত। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেন না।' এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে যে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, অর্থ-সম্পদ, ঘরবাড়ি, জায়গাজমি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য-সবই আল্লাহর নিয়ামত। তাই এগুলো যেন আল্লাহর হুকুম পালনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। একজন খাঁটি মুমিনকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের হুকুমকে সব সময় প্রাধান্য দিতে হবে।হিজরতের আদেশ হওয়ার পর যাঁরা হিজরত করতে ব্যর্থ হন তাঁদের উদ্দেশে এই আয়াতটি নাজিল হয়। তবে এই বিধান সব যুগের সব মুসলমানের জন্য প্রযোজ্য। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, 'এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিয়ামত কখন হবে? উত্তরে আল্লাহর রসূল সা:পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি নিয়েছ? লোকটি বলল, এর জন্য আমি তেমন কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি; তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি। এবার হুজুর (সা.) বললেন, তুমি যাঁকে ভালোবাসো কিয়ামত দিবসে তুমি তাঁর সঙ্গেই থাকবে' (ছহি বুখারি)। প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে রসূল সা; এর প্রতি ভালবাসা থাকা ইমানের দাবি। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।' (ছহি বুখারি)অন্য হাদিসে এসেছে, 'তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে পিতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।' (ছহি বুখারি)।সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে মহান আল্লাহকে। আর আল্লাহকে ভালোবাসা ও তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য আল্লাহ নিজেই একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া ভালোবাসার দাবি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সুরা আলে ইমরানের ৩১ আয়াতে বলেন, "বলে দাও, 'তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু'।" এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা পোষণের জন্য মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণকে শর্ত করা হয়েছে। সুতরাং রসূল সা: এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা যথেষ্ট নয়। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য অপরিহার্য হলো রসূল সা: এর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা। ধন-সম্পদ ও দুনিয়ার সব বস্তুর চেয়ে অধিক মহব্বত।রসূল সা: এর ভালবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কেরামের জীবন। রসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরাম মহানবী (সা.)-এর প্রতি যে ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা কেবল বিস্ময়করই নয়, নজিরবিহীনও। তাঁর একটু সান্নিধ্য-পরশ পাওয়ার জন্য তাঁরা সর্বদা অধীর আগ্রহী ও ব্যাকুল হয়ে থাকতেন। তাঁর ইশারায় তাঁরা মুহূর্তেই প্রাণ উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকতেন। আমাদের উচিত সাহাবায়ে কেরামের মতো মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা।সুতরাং ইসলামি প্রতিটি কাজ করার সময় আমাদের দেখে নিতে হবে,আমরা যা করছি তা আলকুরআন ও ছহি হাদিস থেকে অনুমোদিত কিনা।আর আলকুরআন ও হাদিসের কাছে না যেতে পারলে হক্কানি ওলামাদের থেকে জেনে নিতে হবে।আমরা দুনিয়ার জীবন যাপনের ক্ষেত্রে যে কোন সমস্যা সমাধান করার জন্য একে অন্যের কাছে দৌড়ে যাই কিন্তু দ্বীনের ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ শির্ক ও বিদআতি ইবাদত করি কিন্তু কখনো আমাদের ভাবনায় আসে না, আমি যে ইবাদতগুলো করছি তা আলকুরআন ও ছহি হাদিস মোতাবেক কিনা।আল্লাহ পাক আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন