স্বপ্নেই জয়ী হয় একটি জীবন।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৪৪:১৫ দুপুর
জীবন - কতগুলো সময়ের সমাহার,কতগুলো ছোট বড় যুদ্ধের নাম,একটি দুরন্ত ডানপিটে তোলপাড় করা তারুন্যের ব্যাপ্তি।জীবনে জয়ী হওয়া খুব একটি কঠিন বা সহজ কাজ ও নয়।প্রতিটি মানুষ হয়ত সফল হয় কিন্তু স্বার্থক হওয়া মানুষের সংখ্যা নিতান্ত ক্ষীন।একটি জীবনে স্বার্থকতারই প্রয়োজন।স্বার্থকতার পিছনে থাকতে হয় ব্যার্থতা।একটি ব্যার্থতা একজন মানুষকে সফল করে যার কাছে জীবনের সংজ্ঞা রয়েছে।আবার একটি ব্যার্থতা একজনকে হাজার বছর পিছিয়ে দেয়।মানুষ কেবল সফলতার পিছনে ঘুরাফিরা করে।একটি ডিগ্রি,কিছু সম্পদ,একজন সুন্দরি স্ত্রী ও কয়েকটি সন্তান।এটিই অধিকাংশ মানুষের জীবনের সফলতা।বস্তুত হীনমন্য মানুষেরই এই চিন্তাধারা। যদি বলা হয় কারা পৃথিবীতে স্বার্থক? এর উত্তর সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।এদের সংখ্যা ৭০০ শত কোটি মানুষের মধ্যে অতি সামান্য।অথচ এরাই বাঁচিয়ে রেখেছে পৃথিবীকে।সমৃদ্ধ ও মার্জিত পৃথিবীর রুপ সৌন্দর্যকে এরাই কারুকার্য করে রেখেছে।আর সফল মানুষেরা এদের মস্তিষ্কের নির্যাস থেকে যা বের হয় তা ব্যাবহার করে ভোগ বিলাসে মত্ত রয়েছে।একজন মানুষের গৌরব গাঁথা জীবন হলো এ পৃথিবীকে কিছু দিয়ে যাওয়া।সংকীর্ন মন ও সংকীর্ন জীবন কখনো মুল্যায়িত হয় নি কোন কালে।অসংখ্য প্রতিযোগীর মধ্যে জিতে যায় একজন।তিনিই বিজয়ের বীর।তার নাম লিখা থাকে যুগ যুগ ধরে।তার কথা ও কাজ নিয়ে আলোচনা হয়,পরিশিলীত হয় লাখো মানুষ।কি অবিশ্বাস্য কিন্তু তা পুরোপুরি সত্য।মৃত থেকে জীবিত,আবার মৃত ও আবার জীবিত হওয়া এই মানুষের বিশাল কৃত্তি দেখে হতবিহ্বল হতে হয়।একটি ভ্রুন মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠার আগে বাবার শরীর থেকে একসংগে পন্চাশ কোটি প্রতিযোগী(শুক্রানু)বেরিয়ে আসে।পন্চাশ কোটি প্রতিযোগীর মধ্যে মাত্র একটি শুক্রানু মায়ের ডিম্বানুতে প্রবেশ করে দীর্ঘ নয় মাস মায়ের শরীরে বেড়ে উঠার সুযোগ পায়।তারপর পূর্ন শিশুর রুপ নিয়ে পৃথিবীতে আসে।মানুষের জীবনের তীব্র প্রতিযোগিতা শুধু জন্মের পরই নয় বরং এটি সৃষ্টির আগেই তার নিয়তিতে লিখা হয়েছে।যেমন সূরা ইসরার ১১ আয়াতে মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে 'ব্যাস্ত সমস্ত'বলে।প্রতিটি শিশুর জন্মের দিকটি এক হলেও পরিবেশের পার্থক্য তাদের সফল ও বিফলে পরিনত করে।তার সফলতা ও স্বার্থকতার পিছনে রয়েছে পরিবেশের প্রভাব।কোন শিশু সুস্হ সুন্দর পরিবেশ পেয়ে হয় বড় কিছু আবার কোন শিশু বড় হয় সামাজিক বিপত্তিতে।ধরুন কবি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কথা।সোনার চামুচ মুখে দিয়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম নিলেন রবীন্দ্রনাথ আর সময়ের আবর্তনে তিনি জিতে নিলেন নবেল প্রাইজ।আর কবি কাজি নজরুল ইসলাম ছিলেন দু:খু মিয়া নামে।তিনি কখনো অর্থের পিছনেও ছুটেন নি যদিও তিনি অর্থকষ্টেও থেকেছেন।তিনি রেডিওতে, হিজ মাস্টারস ভয়েস গ্রামোফোন কোম্পানিতে, গানের পর গান লিখে সুর করে নিজে গেয়েছেন এবং অপরকে দিয়েও গাইয়েছেন। কে অর্ঘ্য দিলো, কে দিলো না- সেটা দেখার সময় ছিল না তার। সাহিত্যের জন্য এমন ভালোবাসার মানুষ বাংলা সাহিত্যে বিরল।কোন কিছু বড় হওয়ার পিছনে থাকা চাই একটি সুস্হ সুন্দর পরিবেশ ও নির্মল জীবন যাপনের কর্মপ্রনালী।যাই হোক,এমনি একটি তীব্র প্রতিযোগিতায় মানুষকে প্রতিযোগী হতে হয়।তবে জয় পরাজয় অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।কেউ উত্তীর্ন হয় আবার কেউ হয় না।আমি বলছি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনাচারনের কথা।সম্পদ ও টাকা উপার্জনকারী সফল মানুষের সংখ্যা কোটি কোটি।এদের বেশীর ভাগই ঠক ও ফ্রড।এদের ভাল কাজে নিজেদেরই সন্তুষ্ট করে না।ধরুন-একজন কন্ট্রাক্টর বা চোরাকারবারি।তাদের অর্জনের মধ্যেই রয়েছে ভেজালের নির্ভরতা।সুতরাং সমাজে তার কন্ট্রিবিউশনে কিছু যায় আসে না কারন সে সফল কিন্তু স্বার্থক নয়।আর দেখুন রসূল সা: এর জীবন।প্রচন্ড কষ্ট ও ধৈর্যের পরাকাস্ঠা দেখিয়েছেন আর কেয়ামত পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছেন আলো।স্বার্থক জীবন গড়ে তোলার জন্য দরকার সঠিক কাজে মনোনিবেশ করা।একটি মোটর বাইক চালাতে গেলে পড়ে পা ভাংগার ভয় থাকতে পারে কিন্তু যদি পা ভাংগার ভয়ে মোটর বাইকের কাছে না যাওয়া হয় তাহলে আর শিখা হবে না।জীবন চলার প্রতিটি পদক্ষেপে শিক্ষনীয় কিছু রয়েছে।তবে শিখার জন্য মৌলিক হাতিয়ারটি প্রতিভা ও মেধাকে কাজে লাগানো।নিজ ঘর,বিদ্যালয় ,সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে আলোক ও তার সাথে অন্ধকার।অন্ধকারকে পিছে ফেলে আলোকের সন্ধান করা হলো জ্ঞানীর কাজ।প্রায় প্রতিদিন আমরা হাজার কাজ করি।নানা ঘটনার উদ্ভব হয়।প্রতিটি সময়ের সুচিন্তাগুলো আমরা যদি কোথাও জমা করতে পারি তাহলে তা জন্ম দিতে পারে একটি মহাকাব্য।মানুষের মস্তিষ্ক একটি অতি সূক্ষ কম্পিউটার।এই জীবন্ত কম্পিউটারের সাথে যান্ত্রিক কম্পিউটারের কোন তুলনা করা চলে না।মানুষের এই জীবন্ত কম্পিটারটির সঠিক ব্যাবহার করে এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প।এটিকে দৈত্যের সাথে তুলনা করা যায়।আমাদের প্রতিটি মানুষের মধ্যে ঐ রকম শক্তিশালি অন্ত-হীন ক্ষমতা সম্পন্ন ,অমিত শক্তি সম্পন্ন একটি দৈত্য রয়েছে।কিন্তু সেটি কোথায় আছে? সেটি আছে আমাদের মস্তিষ্ক নামক এই যন্ত্রে আটকানো।অন্ধকারের মধ্যে বন্ধ হয়ে আছে।আমাদের জীবন চলার ভয়-ভীতি ,আমাদের দ্বিধা- দ্বন্দ,আমাদের লোভ -লালসা,আমাদের সংকোচ,আমাদের বুদ্ধি বিচার বিবেচনা,আমার টাকা না থাকলে আমি বাঁচবো তো,আমি সবকিছু পাব তো-এই সব দিয়ে আটকানো। কোটি কোটি মানুষ এ অবস্হায় অচেতন হয়ে আছে।কিন্তু কোন কারনে যদি এই মস্তিষ্কের এই ঢাকনাটা খুলে যায় তাহলে তার ভীতর থেকে শক্তিশালী বিষয় বেরিয়ে আসতে পারে।মানুষ যখন জন্ম নেয় তার মস্তিষ্ক থাকে একেবারে ফাঁকা।জন্মের পর থেকে সে তার স্পর্শ দিয়ে,চোখে দেখে,কানে শুনে,পরিবার ও সমাজের সাথে মেলামেশা করে, গন্ধ শুঁকে,জিভে স্বাধ নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে।পরিবেশ ও সমাজ এই মস্তিষ্ক নামক কম্পিউটারটিকে বদলে দেয়।জন্মের পর যখন শিশুটি দেখে দারিদ্রের কষাঘাত তখন অন্কুরে বিনষ্ট হয় তার প্রতিভা ও মেধা।হয়ত তার অবস্হান হয় একজন মোটে,খামার কর্মী,শিল্প কারখানার কর্মী বা ক্ষুধে ব্যাবসায়ি।তার মেধা প্রতিভা থাকলেও বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন থেকে সে ঝরে পড়ে।আর যে শিশুটি বেড়ে উঠে সৃষ্টিশীল পরিবেশ নিয়ে যেখানে থাকে না পার্থিব কোন অভাব অভিযোগ সে অভিজ্ঞতা অর্জন করে রচনা করে কোন সৃষ্টিতত্ত।মস্তিষ্কের এই কম্পিউটারে যা-ই ইনপুট হবে তা-ই আউটপুট হিসেবে বেরিয়ে আসবে।মানুষের মস্তিষ্কে যে লক্ষ কোটি নিউরন বা কোষ রয়েছে আর প্রতিটি কোষের সংগে যে সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে তার মাত্র শতকরা তিন থেকে চার ভাগ মানুষ সারা জীবনে ব্যাবহার করে।এর সামান্য কিছু ব্যাবহার করতে পারলে মানুষ 'জিনিয়াস' হয়ে যেতে পারে।সকল মানুষের মস্তিষ্কে কোষের সংখ্যা ও শক্তি সমান।তবে কেউ কেউ অসাধারন স্বার্থক জীবন পেয়ে যায়, এই মস্তিষ্ক নামক যন্ত্রটিকে কৌশলে ব্যাবহারের মাধ্যমে।এটিই সহজে প্রতীয়মান হয় আমাদের কাছে যে,একই যায়গায় বসবাসকারী মস্তিষ্ক নামক হাজার কম্পিউটার থাকলেও মাত্র কয়েকজন স্বনামধন্য বিজ্ঞানী,ডাক্তার,প্রকৌশলী,লেখক ও কবি সাহিত্য বিশারদ,ধর্মবিশারদ বেরিয়ে আসেন।আর সিংহভাগ তেজস্ক্রীয়তা ছড়িয়ে দেয় সমাজে।স্বপ্নের সাথে থাকতে হয় বাস্তবতা।রাইট ভ্রাতৃদ্বয় স্বপ্ন দেখতেন এমন যন্ত্র বানাবেন যাতে আকশে ওড়া সম্ভব।মার্কনি স্বপ্ন দেখতেন স্রষ্টার শক্তিকে জয় করে কাজে লাগাবেন,আর আবিষ্কার করলেন বেতার ও টেলিভিশন।শৈশবে মূর্খ বলে পরিচিত কালিদাস পরবর্তী জীবনে মহাকবি কালিদাশে পরিনত হলেন।টমাস আলভা এডিসনকে অতিমাত্রায় অপদার্থের অপবাদ নিয়ে স্কুল থেকে বহিস্কৃত হতে হয়েছিল।দারিদ্রতার মাঝে জন্ম নেয়া লিন্কন পরাজয়ের শিকার হয়েছিলেন বার বার কিন্তু দীর্ঘ পরে ১৮৬০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন যিনি গনতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন,'Government of the people,by the people & for the people.মাত্র কিছুদিন আগে প্রয়াত, যে ছিল একটি ছোট বালক গরীব বাবা মা'র সাত ছেলে মেয়ের মধ্যে পন্চম,সংবাদপত্র বিক্রয় করে জীবন নির্বাহ করতো।পরবর্তীকালে তিনি সর্বপ্রথম যে রকেট টি তৈরি করেন তা বিধ্বস্ত হয়।যে মিসাইল তৈরি করেন তাও বিধ্বস্ত হয় এবং তিনি উপহাসের পাত্রে পরিনত হন।তিনিই ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর এ পি জে আবুল কালাম।সংবাদ পাঠক পদের জন্য এক আবেদন প্রার্থীকে প্রত্যাক্ষান করা হয় কারন তার কন্ঠস্বর যথার্থ ছিল না তিনিই পরবর্তী কালের অমিতাববচ্চন।১৯৪০ সালে একজন তরুন উদ্ভাবক 'চেষ্টার কালসন' তার পরিকল্পনা নিয়ে কমপক্ষে বিশটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেন।সবাই তাকে ফিরিয়ে দেয়।দীর্ঘ সাত বছর পর ১৯৪৭ সালে ছোট্ট একটি কম্পানি তার পরিকল্পনা ক্রয় করতে সম্মত হয়।সেটি ছিল ফটোকপি করার যন্ত্র যা আজকের 'জিরক্স কর্পোরেশন।
হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেও বড় কিছু হয়ে যেতে পারে যদি সাধনা থাকে।বাস্তব কখনো কখনো কল্পনার চেয়ে অবিশ্বাস্য।ব্যার্থ মানুষগুলোর কাজ হলো কোথাও জড়ো হয়ে আড্ডা দেয়া আর একে অন্যের সমালোচনা করা।ব্যার্থ মানুষ অতি ভীত এবং হতশার অন্ধকারে নিমজ্জিত।তারা গভীর অরন্য বা বিপদসন্কুল সাগরের তলদেশে যাওয়াকে কঠিন মনে করে।কিন্তু সাগরের তলদেশে যে রয়েছে মনিমুক্তা তা তারা আহরন করার চেষ্টা করে না।কিন্তু যে তার মস্তিষ্ক নামক যন্ত্রটিকে প্রোগ্রামিং করে নেয়,তার শরীর ও মনে প্রফুল্লতা ছড়িয়ে পড়ে,সাফল্য ও স্বার্থকতা তার কাছে ধরা দেয় স্বতস্ফুর্ত ও অনিবার্যভাবে।মানুষ আশা করে কিন্তু বিশ্বাসে পরিনত করার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।আর যখন একবার উপরে উঠার সিঁড়ি পাওয়া যায় নিছে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না।প্রতিটি স্বপ্নই জীবনের একটি সিঁড়ি ও বিজয়ের একটি পতাকা আর স্বপ্নেই জয়ী হয় একটি জীবন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন