গনত্ন্ত্র!গনত্ন্ত্র!!গনত্ন্ত্র!!!
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৪৭:২২ রাত
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ যেখানে রয়েছে শতকরা ৯০% মুসলিমের বসবাস।এখানে সাম্প্রদায়িক কোন সংঘাত নেই।অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকরা একসাথে বাস করে আসছে হাজার বছর ধরে।কৃষিপ্রধান একটি দেশ।গনতান্ত্রিক মুল্যবোধে জাগ্রত এখানকার মানুষ বুঝে হোক বা না বুঝে।আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতির ১১ অনুচ্ছেদে গনতন্ত্র ও মানবাধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে,'প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গনতন্ত্র,যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে,মানসত্তার মর্যাদা ও মুল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগনের কার্যকর অংশগ্রহন নিশ্চিত হইবে।'এই অনুচ্ছেদে কতগুলো কথা যেমন-গনতন্ত্র ,মানবাধিকার,মানবসত্তার মর্যাদা,স্বাধীনতার নিশ্চয়তা,মুল্যবোধ ও জনপ্রতিনিধির কথা বলা হয়েছে।রাষ্ট্র পরিচালনার এটি একটি গুরুত্বপূর্ন অনুচ্ছেদ বলে আমি মনে করি।কিন্তু বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার আজ স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পরও কোন সরকার এগুলোকে সমাজে সফল রুপদান করতে পারে নি।রাষ্ট্টের তিনটি বিভাগ নির্বাহি বিভাগ,আইনসভা ও বিচার বিভাগ।এই তিনটি বিভাগের এমনভাবে সমন্বয় হওয়া দরকার যেন কারো হাতেই স্বৈরতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা পর্যবসিত না হয়।ক্ষমতা যখন কোথাও কেন্দ্রিভূত হয়ে পড়ে ঠিক তখনি নাগরিক জীবনে নেমে আসে সর্বনাশা।১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটি সংবিধান রচিত হয়েছে।সময়ের প্রয়োজনে তড়িঘড়ি করে তৈরি হলেও সেটি ছিল জাতির জন্য প্রয়োজন।কিন্তু এটিতো কোন ধর্মগ্রন্হ ছিল না যে এটির পরিবর্তন করা যাবে না।বিভিন্ন সরকারের সময়ে যে সংশোধনী গুলো আনা হয়েছে তা ছিল তাদের পার্টিগত কারনে।জনগনের প্রতিনিধিত্ব এখানে ছিল না। মুল মালিককে অন্ধকারে রেখে এ পরিবর্তন গুলো করলেও আজ পর্যন্ত সামাজিক উন্নয়নে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখেনি।আর সংবিধানটিতে যে সব অনুচ্ছেদ রয়েছে তাও চর্চা করা হয় নি।একটি সংসদ হলো জনগনের প্রতিনিধি দ্বারা নির্বাচিত।রাষ্ট্রের জন্য যে পদ্ধতিই আমরা নির্ধারন করি না কেন সেটির ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন।একটি মৌলিক জিনিস যা আমরা কখনো আলোচনা করতে দেখি না,তা হলো-সংসদে যারা যাবে তাদের নিরন্কুশভাবে হতে হবে সৎ ও যোগ্য।সৎ ও যোগ্য নেতা যদি নির্বাচিত না হয় তাহলে যত প্রতিষ্ঠানই করা হোক বা বিকেন্দ্রিকরনই করা হোক কোন কাজে আসবে না।এটি একটি সহজ জিনিস যে,জনগনের মধ্য থেকে জনগনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সংবিধান অনুসরনে নির্দিষ্ট একটি সময়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে এবং সেটি হবে স্বতস্ফুর্তভাবে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে।জনপ্রতিনিধি যখন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে তার দায়িত্ব গ্রহন করবে তখন তার দায়িত্বের জন্য জবাব দিহীতা থাকবে।দায়িত্ব পালনে গাফলতি হলে বিচারবিভাগ আইনের শাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দায়িত্ব লংঘন কারিদের বিচার করবে।সংবিধানে সবই আছে কিন্তু কার্যকারিতা নেই অসৎ পথ অবলম্বন , দলীয়করন ও স্বজনপ্রীতির কারনে।আমাদের আইন গুলো যদি সমাজের নিম্নস্তর থেকে উপরের স্তর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামো গুলোতে সততার সাথে ব্যাবহৃত হতো ও আইনের শাসন বলবত করা হতো তাহলে অপরাধিরা আর কোন অপরাধ করার সুযুগ পেতো না।অপরাধ সংগঠিত হয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়।অপরাধিকে আইনের আওতায় না এনে যদি প্রশ্রয় দেয়া হয় তাহলে সমাজে অপরাধ ক্রমে ক্রমে বেড়ে যেতে থাকে।আমাদের মৌলিক সমস্যা হলো আমরা ব্যাক্তিগতভাবে নিজেরা অপরাধি আর অপরাধ করার পর তার বিচার না হওয়া।ধরুন- আমরা যদি যে কোন ধর্মের কথা বলি সেখানে দেখবো রয়েছে একটি ধর্মগ্রন্হ। সব ধর্মই বলছে মানব হত্যা মহাপাপ।তাহলে প্রতিদিন পৃথিবীতে হত্যা হচ্ছে কেন? ধর্মের অজুহাত দিয়ে যারা উগ্রবাদি হয়ে উঠেছে তারা ধর্মগ্রন্হকে মেনে চলছে না।ঠিক সেভাবে একটি দেশে আছে একটি গঠনতন্ত্র বা সংবিধান।সেটি যত ভালই হোক,জনগন যদি সেটিকে মেনে না চলে বা চর্চা না করে তাহলে সুফল আসা সম্ভব নয়।আমরা অনেক সময় আমাদের অধিকার চর্চা করতে গিয়ে অন্যের অধিকার যে লংঘন করে থাকি তা ভুলেও স্মরন করি না।সাংসদদের কাজ হলো জনগনের মতামতকে সংবিধানের মাধ্যমে চর্চা করা।সাংসদদের কাজ হলো জনগনকে সেবা প্রদান করা।কিন্তু আমরা দেখতে পাই যারা জনগনের পক্ষ থেকে ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে আসে তখন তারা তখন নিজেরা স্বৈরাচারি হয়ে উঠে।এর কারন হলো যারা নির্বাচিত হয়ে আসেন তাদের অধিকাংশই আসেন পার্টি লেভেল থেকে যারা ভাল শিক্ষিত নয়।আবার যাদের আমরা শিক্ষিত মনে করি তারা পার্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও অনৈতিক।গনতন্ত্রকে যদি ফলপ্রসূ করতে হয় সেখানে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে সংবিধানকে,সাংসদকে হতে হবে আইনজ্ঞ ও সৎ।আমরা গত চুয়াল্লিশ বছরে এগিয়ে না যাওয়ার কারন হলো গনতন্ত্রের মুলভীতটিকে রুটলেভেল থেকে গড়ে তুলতে পারিনি।গনতন্ত্রে একাধিক দল থাকবে এটি স্বাভাবিক।কিন্তু আমাদের দেশে পার্টিলেভেল থেকে যে সমস্ত কর্মী গড়ে উঠে তারা পড়াশুনায় ভাল নয়,পার্টিলেভেলে কোন প্রশিক্ষন নেই আর সর্বোপরি তারা সেন্ট্রাল লিডারদের লেজুড়বৃত্তি করে।এরাই এক সময়ে পার্টি ক্ষমতায় গেলে পদ পেয়ে যায়।সেজন্য যে যেখানে বসে,নৈতিকতা না থাকার কারনে তারা জনগনের উপর খড়গ চালায়।ধরুন একজন লোককে যদি আপনি লেটেস্ট মডেলের মার্সিডিজ চালাতে দেন, আর সে চালাতে না পারে তাহলে সেটি তাকে দেয়া না দেয়া সমান।আমাদের যত সুন্দর সংবিধান থাকুক না কেন যদি সংসদে যোগ্য সাংসদ না থাকে তাহলে ঐ সংবিধান দিয়ে কোন লাভ হবে না।জনগনকে শক্তিশালি না করা হলে বা রুট লেভেলটিকে ক্ষমতায়ন না করতে পারলে গুটিকয়েক লোকের মধ্যেই ক্ষমতার ভাগাভাগি হবে।এমন একটি সিসটেম তৈরি করতে হবে যাতে থাকবে প্রত্যেকের কাজের জবাবদিহীতা এবং তা সরাসরি জনগনের সাথে সম্পৃক্ত হবে।দেশের বিভিন্ন বিভাগগুলোতে জনগন যখন জনপ্রতিনিধিদের সাথে সরাসরি কাজ করেন তখন তাদের কাজগুলো সহজে হচ্ছে কিনা? বলা হয় আজ ডিজিটাল যুগ।মানুষের কাজগুলোকে সহজ করার জন্য প্রতিটি অফিস যদি ভোক্তাদের কাজগুলোকে সমন্বয় করেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে যেখানে থাকবে না কোন ঘুষ বা উপরিআয়ের ব্যাবস্হা তখনি ভোক্তারা আসল সেবা পাবেন।সিম্ফল ফর্মেট যদি অনলাইনে স্হাপন করা হয় তখন ভোক্তারা ঘরে বসেই তাদের কাজগুলো করে নিতে সক্ষম হবে।কত কম সময়ে ও কম খরচে ভোক্তাদের কাজগুলো করা যায় তার জন্য সরকারের বিভাগগুলোকে যত্নবান হতে হবে।আজকে যারা সেবা দানের দায়িত্ব নিয়ে জনগনের কাছ থেকে মেন্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আরোহন করেছেন তারা কি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন? যারা বিভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামোতে দায়িত্ব পালন করছেন তারা কি সততা ও যোগ্যতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন?জনগন যদি পাঁচ বছরের জন্য ভোট দিয়ে একজন সাংসদকে নির্বাচিত করে ঘুমিয়ে পড়ে আর সাংসদ পাঁচ বছর তার কমিটমেন্ট রক্ষা না করে রাষ্ট্রের সম্পদ হাতিয়ে নেয় তাহলে দু-পক্ষই অপরাধে অপরাধি।প্রথম পক্ষ যদি ক্ষমতায় গিয়ে তার কাজ না করে তাহলে দ্বিতীয় পক্ষ তার জবাবদিহীতা আদায়ে বাধ্য করবে।আর এটি প্রতিদিনের একটি কাজ।যদি জনগন তা না করে তাহলে ক্ষমতায় যাওয়া ব্যাক্তি ধরা ছোঁয়ার বাইরে গিয়ে আরো বেশি ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে।আর সংবিধানের সত্তর অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতাকে যদি কমিয়ে আনা না যায় তাহলে গনতন্ত্রের সুখকর অবস্হা ফিরে আসবে না। সেজন্য তৃনমুল থেকে অংশগ্রহন মুলক গনতন্ত্রায়নের মাধ্যমে স্হানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রিকরন করে সরকার ব্যাবস্হাকে শক্তিশালি করা প্রয়োজন।যদি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পরিষদ,উপজেলা পরিষদ,জেলা পরিষদ,পৌর পরিষদ ও সিটি কর্পোরেশনকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে বাজেটের একটি বিশেষ অংশ বরাদ্ধ করা হয় ও এর সাথে জনগনকে সরাসরি অবহিত করা হয় তাহলে জনগন তাদের নজরদারি করে এলাকার উন্নয়ন করে নিতে সক্ষম হবে।প্রতিটি পরিষদ তাদের বরাদ্ধ অর্থ কোন খাতে কত খরচ করলো তার হিসেব নিকাশ ইউনিয়ন এসেম্বলিতে দিতে বাধ্য থাকবে।এতে কাজের স্বচ্ছতা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি অপরাধ প্রবনতা কমে যাবে।তবে আইনের শাসন কঠোর হলে সিংহভাগ অপরাধ কমে যাবে বলে আমরা ধারনা করতে পারি।স্হানীয় সরকার কথাটির অর্থ হলো জনগনের হাতের মুঠোয় সরকার।এর উদ্দেশ্য হলো জনগন যেন সরাসরি সরকারের কাজে অংশ গ্রহন করতে পারে।গনতন্ত্রকে কার্যকর করার জন্য জনগনকে সৎ হতে হবে,জনপ্রতিনিধিদের সৎ ও যোগ্য হতে হবে এবং সরকারকে সততার সাথে দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে।এখন যা হচ্ছে তার উল্টো।জনগনের ক্ষমতাকে কেন্দ্রিকরন করে জনগনকে আষ্টেপিষ্ঠে বেঁধে ফেলা হচ্ছে।সিদ্ধান্ত যখন এক হাতের মুঠোয় থাকে তখন ক্ষমতার অপব্যাবহার ও স্বৈরাচারি মনোভাব ফুটে উঠে আর তখন গনতন্ত্র বলে কিছু থাকে না।
বিষয়: বিবিধ
১০৯০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সনাতন, বৌদ্ধ ইত্যাদি লৌকিক ধর্মের পর ডিভাইন বই ভিত্তিক ধর্ম তথা ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও মুসলিম এর পর, অধুনা স্রষ্টাদ্রোহী মানুষের সৃষ্ট ধর্মের নাম গনতন্ত্র।
পৃথিবীময় এ ধর্মের বিস্তারে সার্বজনীন, সর্বাংগীন, এ্যাবসুলুট, প্রতারনার পাশাপাশি কোন ভূখন্ডের মানুষের মাথা কেনা, মিডিয়া কেনার পাশাপাশি, সাবোটেজ, অবরোধ, পেশীশক্তি, ডিপ্লোমেসী এবং ইদানিং কালে সরাসরি সরকার উচ্ছেদ ও সরকারপ্রধান খুনের মত কৌশল অবলম্ভন করা হয়েছে।
আমাদের দূর্ভাগ্য এই যে, আমাদের আলেম ওলামা ও নেতৃবৃন্দ তাদের চেষ্টা সাধনা স্বত্তেও এই ধর্মে আসক্তি মানুষকে ফেরাতে পারেন নি। অন্যভাবে বললে - তারা যথাযথ প্রতিরোধ করতে অক্ষম হয়েছেন। স্বভাবতঃই আজ লিটারেলী এ টু জেড (কিছু পারসেন্টেইজ বাদে) নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই প্রতারনার খপ্পরে পড়ে নিজের ধর্ম ও বিশ্বাস কে কম্প্রোমাইজ করে বসে আছেন এবং গনতন্ত্র নিয়ে এমন বুদ হয়ে আছেন যে - সারা দিনে যতঘন্টা গনতন্ত্র নামক এমন ধর্মের চর্চা করছেন - তত ঘন্টার একটা ফ্রাকশান ও নিজের রবকে স্মরন করার সময় পান না, স্বভাবতঃই মানুষ আজ না পারছেন নিজের ধর্ম দিয়ে গনতন্ত্রকে একটু পুনঃ এ্যানালাইসিস করতে, না পারছেন এর থেকে বের হয়ে আসতে।
আল্লাহ মুসলমানদের পরিপূর্ন সেন্স দিক - যাতে তারা প্রতারকের প্রতারনা বুঝতে পারেন, শিরক হতে বের হয়ে আসতে পারেন এবং নিজের ঈমানকে পরিপূর্ন করতে পারেন।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন