হজের পর হাজি সাহেবানদের কেমন জীবন হওয়া উচিত?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৩ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৫৮:৩১ দুপুর

হজ ইসলামের পাঁচটি রোকনের একটি রোকন।অন্যান্য ইবাদতের সাথে এটির পার্থক্য হলো অন্যান্য ইবাদতে শারিরিক ইবাদত নেই কিন্তু হজে তা রয়েছে।হজে সেজন্য শারিরিক ও আর্থিক দুটো ইবাদত রয়েছে।যে ব্যক্তির এই পরিমাণ ধন-সম্পদ আছে যে, সে হজ্জের সফর (পথখরচ) বহন করতে সক্ষম এবং তার অনুপস্থিতিকালীন তার পরিবারবর্গের প্রয়োজন মেটানোর মতো খরচও রেখে যেতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির ওপর হজ্জ করা ফরজ। অথবা এমন ব্যক্তি যে হজের মৌসুমে অর্থাৎ শাওয়াল মাস শুরু হওয়া থেকে সৌদি আরবে অবস্থানরত ছিল বা জিলহজ মাস পর্যস্ত সৌদি আরবে অবস্থান করতে থাকে এবং তার ওপর যদি কোনো বিধিনিষেধ, ওজর ও অসুবিধা না থাকে, তাহলে তারও হজ্জ পালন করা ফরজ।সুরা বাক্কারার ১৯৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'হজ্জ হয় কয়েকটি সুবিখ্যাত মাসে,কাজেই যে কেউ এই সময় হজ্জ করার সংকল্প করে তার জন্য এ সবের মধ্যে স্ত্রী গমন বা দুষ্টামি থাকবেনা বা হজের মধ্যে তর্কাতর্কি চলবেনা।আর ভাল যা কিছু তোমরা কর আল্লাহ তা জানেন।আর পাথেয় সংগ্রহ কর,নি:সন্দেহে শ্রেষ্ঠ পাথেয় হচ্ছে ধর্মপরায়নতা।অতএব আমাকে ভয়শ্রদ্ধা কর হে! জ্ঞানীরা।'না।হজ প্রত্যকে মু'মিন মুসলমানের জন্য জীবনে একবার ফরয যার নেসাব পরিমান অর্থ থাকে।নবী সা: জীবনের শেষে একবারই হজ করেছেন এবং হজের বিধিবিধান সাহাবাদের শিখিয়েছেন এবং উম্মতের জন্য ক্কেয়ামত পর্যন্ত জারি রেখে গেছেন।তিনি সাহাবাদের বলেছেন,আমার কাছ থেকে হজ্জের বিধিবিধান শিখে নাও।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজি সাহেবানগন রসূল সা: এর শিখানো হজের নিয়মেই ইনশাআল্লাহ হজ করে ঘরে ফিরেছেন ও যারা এখনো যেতে পারেন নি তারা আল্লাহর নিয়ামত ভোগ করছেন।আবার আল্লাহ পাক যাদের তকদিরে মওত রেখেছেন এ পবিত্র ভূমিতে তারা পরলোকগমন করেছেন।আল্লাহ পাক ভাল জানেন তাদের তকদির সম্পর্কে তবে আমরা আশা করি এটি তাদের জন্য একটি খোশ নসীব।রসূল সা: থেকে এ ব্যাপারে হাদিস রয়েছে।যারা হজের মাঠে পরলোকগমন করবে রোজ কিয়ামতের মাঠে তারা তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে।আল্লাহ পাক যেন তাদের সেই খোশ নসীব করে দেন।হাজি সাহেবানরা যখন দেশে যান তখন অনেক গিফ্ট নিয়ে যান।কিন্তু আসল গিফ্ট টি নিতে অধিক সংখ্যক হাজি সাহেবগন ভুলে যান যা পরবর্তী জীবনের জন্য করনীয়।হজের মাধ্যমে হাজি সাহেবানদের ঈমান সুদৃঢ় হয়। একজন অমুসলিম যখন মুসলিম হয় তার আগের সকল গুনাহগুলো মুছে যায়। তেমনি একজন হাজি সাহেব যখন হজ করে ফিরে যান তখন আগের সব গুনাহ আল্লাহ পাক মুছে দেন যেমন একজন নবজাত শিশু সদ্য ভূমিষ্ট হয়।একটি বাচ্চা যখন ভূমিষ্ট হওয়ার পর মাথা কামিয়ে সদ্য আবির্ভূত হয় তেমনি একজন হাজি সাহেবও সমস্ত গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন শুরু করে।সেজন্য যারা হজ করেছেন তাদের উচিত হজের মুল্যবোধে জাগ্রত থাকা।হজের পরে একটি পরিবর্তন যেন সূচিত হয় তার প্রতি হাজি সাহেবদের খেয়াল রাখতে হবে।হজকে আমরা এভাবে তুলনা করতে পারি।যেমন একটি ফেক্টরিতে কিছু কাঁচামাল দেয়া হয় একটি প্রডাক্ট তৈরির জন্য।একদিকে কাঁচামাল দেয়া হয় আর অন্যদিকে ফিনিশড প্রডাক্ট বের হয়ে আসে।সেভাবে হজে একজন সাধারন মানুষ ঢুকে।অনেক গুলো পর্যায় অতিক্রম করে একজন হাজি সাহেব বের হন খাঁটি ঈমান ও আক্কিদা নিয়ে।একজন হাজির জীবনের বিভিন্ন দিকের পরিবর্তন হয়ে একটি পূর্নাংগ মানুষ তৈরি হয়।যদি এভাবে একজন হাজি বের হয় তখনি হজ হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।ইসলামি স্কলারগন বলেন,একজন ব্যাক্তি যিনি হজ করেছেন তার হজ কবুল হলো কিনা কিভাবে বুঝা যাবে? এ ব্যাপারে হাজি সাহেব নিজে অনুভব করবেন এবং তার চারপাশে যারা আছেন তারাও অনুভব করবেন।তার আচার ব্যাবহার,কথাবার্তা ও কাজে কর্মে তা প্রতিফলিত হয়ে উঠবে।মানুষের মনে হবে আগে যে ব্যাক্তি হজ করতে গেলেন ফিরে আসা ব্যাক্তি তো সে ব্যাক্তি নন।এ তো সম্পূর্ন আর এক ব্যাক্তি যার কথা বার্তা আচার আচরন অসম্ভব পরিবর্তীত হয়েছে।হজের মাধ্যমে হাজির যে বিশেষ পরিবর্তন হয় তাহলো পরকালীন জীবনের নির্দেশনা পায়।হজের প্রত্যেকটি কাজের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর সাথে সমর্পন করা ছাড়া আর কোন খেয়াল থাকে না।কেয়ামতের মাঠে যেমন কেউ কারো দিকে তাকাবেনা তেমনি হজের মন্জিলগুলো যখন হাজি অতিক্রম করে তখন তার আল্লাহর সান্নিধ্য ছাড়া কোন কিছু খেয়াল থাকে না।পাশেই অগনিত মহিলা হাটছে কিন্তু কস্মিনকালেও কোন পাহেসা কাজের কথা মনে আসে না এবং কখনো শুনা যায় নি মক্কায় কেউ কোন মহিলার আঁচল ধরে কেউ টেনে ধরেছে।এটিই এই শহরের নিরাপত্তা।আরাফাতের মাঠ,মুজদালিফা,মিনা ,তওয়াফ ,সাঈতে সেই অনুভূতি জাগ্রত হয়।আর একটি বিষয় বিশেষ করে মনে হয় আরাফাত,মুজদালেফা ও মিনায়।একজন মানুষের কবরের জন্য সাড়ে তিন হাত যায়গার দরকার।দু'টুকরো সাদা কাপড় পরিহিত হাজি।ঠিক এতটুকু যায়াগাই বরাদ্ধ থাকে তাঁবুগুলোতে একজন হাজি সাহেবের জন্য।এই মরনপন অবস্হা থেকে মুক্তি পেয়ে যখন একজন হাজি তার ঘরে ফিরে যায় তখন তিনি হন একজন নতুন মানুষ।তার কাজ হয়ে যায় আখেরাত মুখি।মানুষকে দ্বীনের দিকে ডাকা।মক্কা মদিনায় কিছুদিন থেকে যে সমস্ত নেয়ামত লাভ করলেন তা মানুষের মধ্যে প্রচার করা তার মুখ্য কাজ হয়ে দাঁড়ায়।দুনিয়ার লাভালাভ থেকে তিনি সরে পড়েন।মিনা ও মুজদালিফায় অবস্হানের কথা যদি হাজি সাহেবানরা চিন্তা করেন তাহলে অনুভব করবেন কবরেও সামান্য এতটুকুই যায়গা মিলবে।সেখানে যেমন ধনী দরিদ্রের জন্য সমানাধিকার ঠিক কবরেও ধনী দরিদ্রের জন্য সমানাধিকার।একজন ভিখারির মত বান্দাহ আল্লাহর রহমতের জন্য ছুটে বেড়াতে থাকে।কিন্তু হজের পর যদি এই অনুভূতি তৈরি না হয় তাহলে বুঝতে হবে হজ থেকে কোন কল্যান নিয়ে আসা হয় নি।যারা হজ থেকে ফিরে এসেছেন তাদের হজের মুল্যবোধের দিকেই নজর দিতে হবে। সমস্ত অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা।সমস্ত প্রকার গুনাহ ও ঝগড়া ঝাটি থেকে বিরত থাকা।মানুষের সাথে সুন্দর আচরনে কথা বলা।মানুষকে বেশি বেশি সালাম দেয়া ও গরীব মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। আত্মীয় প্রতিবেশির সাথে সৌহার্দপূর্ন সম্পর্ক তৈরি করা।রসূল সা: বিদায় হজে যে ১২টি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন তা নিজ নিজ এলাকায় প্রচার করা একটি মুখ্য বিষয়।কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হলো অনেকে বার বার হজ ও ওমরাহ করেন কিন্তু ইসলামি জীবন যাপনের কোন পরিবর্তন নেই।কারো সমালোচানার জন্য বলছিনা বরং মানুষের কল্যানের জন্য একটি কথা জানানো প্রয়োজন বোধ করছি। এবার একজন পরিচিত জনকে দেখলাম হজে এসেছেন।ওমরাহ করে জেদ্দাহ বেড়াতে এসেছেন।ষাটোর্ধ বয়সের মানুষ।সরকারি চাকুরি করে এখন অবসরপ্রাপ্ত।উনি দীর্ঘদিন থেকে গলায় একটি সোনার চেইন পরেন।হজের কারনে সেটি দেখা যায় নি।তবে বাম হাতের কনিষ্ঠ আংগুলটিতে একটি বড় নোখ রেখেছেন ফেশনের জন্য যা প্রায় একটি আংগুলের অর্ধেক লম্বা।আমি বললাম আপনি ফরয হজ করতে এসেছেন।একে তো হজ ফরয হয়েছিল অনেক আগে তা করেন নি।তার উপর বাহ্যিক দিক থেকে যে সৌন্দর্যবোধ আছে তা থেকে মাহরুম থাকছেন কেন? আমি বললাম এখুনি নখটি কেটে ফেলুন কিন্তু তিনি কিছুটা মনক্ষুন্ন ও অপ্রস্তুত হলেন।এ রকম হাজি সেহেবগন আসেন যারা শরিয়তের বিধিবিধান ও হালাল হারাম মেনে চলেন না।একজন মু'মিনের যদি সর্বঅবস্হায় আল্লাহর ভয় না থাকে তাহলে ইবাদত করে কি লাভ তা আমার জানা নেই।কয়েক বছর পূর্বে আর একজন নিকট আত্মীয় পুলিশের উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা এসেছিলেন।আমি বলেছিলাম ভাইজান ভাল একটি কাজ করতে এসেছেন বলে খুশি হলাম।তবে ইস্তেগফার করেছেন তো? তিনি বলেলেন ইস্তেগফারতো সব সময়ই করি।পুলিশদের বেশি বেশি ইস্তেগফার করা লাগে।বললাম ভাইজান এখন তো মিথ্যা বলার কোন উপায় নেই।বলুনতো বাড়িগুলো বানাতে গিয়ে যে কোটি কোটি টাকা ইনভেষ্ট করেছিলেন তাতে কি কোন হারাম টাকা আছে? তিনি বললেন বাংলাদেশে এমন কিছু ডিপার্টমেন্ট আছে ও সেখানকার কর্মকর্তা কর্মচারিরা হলফ করে বলতে পারবেনা তাদের সব টাকা হালাল।হালাল হারাম মিশ্রিত টাকা।হজ করার দরকার হজ করছি।আল্লাহ ক্ষমা করার মালিক।তিনি আর একটু খোলাশা করে বললেন।আমি সরকারি স্কেলে সব মিলে বেতন পাই ৮০ হাজার টাকা।২৮ বছর চাকুরি করছি।আমার সংসারে খরচ ও দুই ছেলে মেয়ের খরচ দিয়ে মাসের ১৫ দিন পর ধারদেনা করতে হয়।এর পর বাড়ি গাড়ি হয় কি করে? তবে অন্যে কি করে আমি জানি না,আমার দুটি ব্যাবসায় রয়েছে যেখান থেকে আয় আসে।সমাজের অধিকাংশ অফিসার যারা বিলাশবহুল বাড়ি ও ব্যাবসায়ের মালিক তারা কি সবাই হক পথে কামাই করেছেন? হক পথের টাকা হলে তো আল্লাহর কাছে জবাবদিহীতা সহজ হবে তবে সে টাকা পয়সা হক পথেও খরচ করতে হবে।কিন্তু যদি বিপরীত মুখী হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে রয়েছে বিরাট জবাবদিহীতা।আমাদের প্রতিটি ভাল বা মন্দ কাজের পর্যালোচনা করা দরকার।সঠিক পথ অবলম্বন করে ইবাদত করলে সেটিই আল্লাহর কাছে গ্রহনীয় আর জীবনকে অবৈধ ও মন্দ অর্থে লালিত ও বর্ধিত করে আল্লাহর সামনে ইবাদতে নিয়োজিত করা একজন ভন্ড তপস্যকের কাজ কারন আল্লাহ পবিত্র তিনি পবিত্র জিনিস গ্রহন করেন।

বিষয়: বিবিধ

১৬১০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345512
১৩ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৫৭
মোহাম্মদ মুজিবুল হক লিখেছেন : সমসাময়িক ও গুরত্বপূর্ণ পোষ্টের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File