ইসলামের আলোচনায় মহিলাগনের অংশগ্রহন আবশ্যক কিনা?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:১৮:৫৯ দুপুর
মহিলাদের জন্য ইলম চর্চা করা অতীব গুরুত্বপূর্ন কাজ।শুধু মহিলাদের জন্যই নয়,পুরুষ ও মহিলা সবারই ইসলামের জ্ঞান অন্নেষন করা অতীব গুরুত্বপূর্ন। রসূল সা: বলেছেন,'জ্ঞান অর্জন প্রতিটি নরনারীর জন্য ফরয।' ইসলামের ইলম অর্জন করা শুধুমাত্র পুরুষের জন্যই নয়,সমান ভাবে নারীর জন্যও গুরুত্বপূর্ন।আমরা যদি আল্ল্লাহর রসূল সা: এর যুগকে দেখি তাহলে দেখবো,মহিলা সাহাবিয়াতরা শরিয়তের বিভিন্ন রকম প্রশ্ন জানার জন্য রসূল সা: এর কাছে এসেছেন।তারা আলোচনা ও খুতবাগুলো শুনতেন এমনকি আল্লাহর রসূল সা: এর কাছে বিশেষভাবে দাবি করতেন যে,ইয়া রসূলুল্লাহ পুরুষরা সামনে থাকে তাদের জন্য অনেক প্রশ্ন আমরা করতে পারি না।আমাদের জন্য পৃথক একটি দিন করুন যাতে মহিলাদের আপনি বয়ান করবেন।বোখারি শরীফে প্রশ্নবোধক প্রশ্ন করা হয়েছে যে,মহিলাদের জন্য কি পৃথক কোন দিন নির্ধারন করা যায় তাদের শিক্ষার জন্য? কারন মহিলারা পিছনে থাকার কারনে প্রশ্ন করতে পারেন না।আল্লাহর রসূল সা: মহিলাদের এই প্রস্তাবটিকে গ্রহন করেছেন ও পৃথক দিনে বয়ান করেছেন এবং মহিলারা প্রশ্নও করেছেন।এ থেকে বুঝা যায় মহিলাদের দ্বীন শিক্ষার জন্য পৃথক ব্যাবস্হা করা যায় যা থেকে তারা দ্বীন শিখতে পারে।আবার মহিলা সাহাবিয়াতরা ব্যাক্তিগতভাবেও আল্লাহর রসূল সা: এর স্ত্রীদের কাছে আসতেন মাসলা মাসায়েল জানার জন্য।আল্লাহর রসূলকে আল্লাহ পাক এতগুলো বিবাহ করতে বলেছেন এই জন্য যে,রসূল সা: থেকে জ্ঞান যেন অন্য মহিলাদের মধ্যে বিস্তার করতে পারেন।পাঠক বৃন্দ দেখুন,আল্লাহর রসূল সা: যে বিবাহগুলো করেছেন পন্চাশের পরেই করেছেন।তিনি যখন যুবক ছিলেন হযরত খাদিজা রা: কে নিয়ে সময় কাটিয়েছেন।আল্লাহর নির্দেশেই বিভিন্ন বয়সের মেয়েদেরকে বিবাহ করেছেন এজন্য যে,প্রত্যেক বয়সের মহিলাদের জন্য ইসলামের যে বিধান গুলো রয়েছে সেগুলো রসূল সা: থেকে স্ত্রীদের মাধ্যমে যেন মহিলা জগতে প্রচারিত হয়।ইসলামিক স্কলাররা বলেন,আল্লাহর রসূলের বিবিগনের এক একটি ঘর ছিল এক একটি মহিলা মাদ্রাসা।আমরা দেখতে পাই হযরত আয়েশা রা: একজন বিদগ্ধ ইসলামি চিন্তাবিদ ছিলেন।তার সম্পর্কে শুধুমাত্র পুরুষ সাহাবিরাই বলেছেন,তিনি সে সময়ের সকল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জ্ঞানি ছিলেন।আল্লাহর রসূল সা: মসজিদে নববীর পিছনে একটি দরজাই রেখেছিলেন মহিলাদের জন্য 'বাবুন্নিসা' বলে আর এখনো সে নামটি দেখা যায়।আজকাল অনেক মসজিদের পিছনে 'বাবুন্নিসা'বা মহিলাদের দরজা দেখা যায় যেখানে মহিলাদের নামাজের ব্যাবস্হা রয়েছে।অনেকের ধারনা মহিলাদের মসজিদে প্রবেশাধিকার নিষেধ।বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশে মসজিদগুলোতে এ ব্যাবস্হা রাখা হয় না।কিন্তু আরব দেশ গুলোতে এ সূন্নতটি লক্ষ্য করার মত।এ সব দেশগুলোতে অধিকাংশ মসজিদে মহিলাদের জন্য একটি দরজা থাকে যেখানে মহিলারা নামাজ পড়তে পারে।মহিলাদের কোন ইসলামি আলোচনায় বা তাপছির মাহফিলে যাওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা নেই তবে জ্ঞান চর্চার জন্য যে জড়ো হওয়া তা আল্লাহর রসূল সা: এর সময়ে হয়েছে।যেখানে কুরআন ও হাদিসের আলোচনা হয় সেখানে মহিলাদের অংশগ্রহন করা অত্যন্ত জরুরি।কারন একজন মা যখন দ্বীনদার হবেন,জ্ঞানের আলোক পাবেন তখন তার সন্তানরা আলোকিত হবে,পরিবারগুলো সুন্দর হবে আর পরিনতিতে সমাজ সুন্দর ও আলোকিত হয়ে উঠবে।আমাদের সমাজে অজ্ঞতা,শির্ক ও বিদাআতের কারনে মহিলাদের পিছনে ফেলে রাখা হয়।আজকের পৃথিবীতে ইসলামকে বিভক্ত করে অসংখ্য ইসলামের দল গঠিত যেমন হয়েছে তেমনি ছুপিবাদের মাধ্যমে কবরপূজারি বিভিন্ন মাজার ও খানকা তৈরি হয়েছে।এ সমস্ত অনেক প্রতিষ্ঠানে ইসলামের নামে অনৈসলামিক কাজ হচ্ছে।সে কারনে হক্কানি ওলামাগন শুধু মহিলাদেরই নয় পুরুষদেরও সে সমস্ত যায়গাগুলোতে যেতে নিষেধ করেছেন ,যেখানে গেলে ঈমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তবে যেখানে শুধুমাত্র কুরআন ও হাদিসের মাহফিল হয় ও পর্দার বিশেষ ব্যাবস্হা রয়েছে সেখানে অবশ্যই মহিলাদের অংশ গ্রহন করা উচিত।মা বোনরা যারা কুরআনের মাহফিলে যাবেন তাদের উচিত হবে স্বামিদের অনুমতি নিয়ে যাওয়া।অনেক মা বোনদের নিয়ে শুনা যায় তারা কোন না কোন সংগঠন করেন,স্বামির অনুমতি না নিয়ে করেন বা অসুস্হ স্বামি বা সন্তানকে রেখেই চলে যান দ্বীনের মাহফিলগুলোতে।সেক্ষেত্রে তাদের উচিত হবে আগে স্বামির সংসারের হক আদায় করা ও স্বামির অনুমতি নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া।এটি তার জন্য ফরয কাজ।কারন সংসারের মুল দায়িত্বগুলোকে অবজ্ঞা করে যদি কোন তাপছির মাহফিলে একজন মহিলা যান তখন পরিবারে একটি কন্ফ্লিক্ট তৈরি হতে পারে।ভাল একটি কাজ করতে গিয়ে শান্তির যায়গায় যেন অশান্তি সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।মা বোনদের বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে,তারা যখন তাপছির মাহফিলে যাবেন তারা যেন কোন বেগানা পুরুষের সাথে বের না হন এবং তাপছির শেষ হলে সরাসরি নিজের ঘরে চলে যান।মাহফিলে এসে যেন পারিবারিক আলোচনা,গল্প গুজব,গীবত ও চোগলখুরিতে পর্যবসিত না হন।সমাজে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যে,মহিলারা কোন মাহফিলে যখন যান তখন কেউ আগে বা পরে সেখানে বিভিন্ন পারিবারিক কথা বলেন।অহরহ গীবত ও চোগলখুরির মত কথা বলতে শুনা যায়।একে অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা হয়।কয়েক বছর পূর্বে এ রকম ঘটনা সমাজে রটিত হয়েছে যে,একজন ইসলামের কর্মীর সাথে তার একজন প্রতিবেশীর স্ত্রী মাহফিলে আসা যাওয়া করতো।কিছুদিন পর তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক হয়েছে বলে পারিবারিক দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ে অন্যরা।সুতরাং এ ক্ষেত্রে দ্বীনের চর্চাটি মুখ্য নয় বরং নিজের স্বামির সংসারকে রক্ষা করা ও নিজের ঘরে ইবাদত করাই সেই মহিলার জন্য উত্তম কাজ।আর নিজের স্বামির সাথে গিয়ে যদি ভাল কোন অনুষ্ঠানে পর্দার সাথে কুরআন ও হাদিসের তালিম নেয়া যায় সেটি করতে হবে।আজকাল অহরহ শুনা যায় মহিলারা বিভিন্ন যায়গায় একত্রিত হওয়ার কারনে এক পরিবারের কথা অন্য পরিবার জানছে।অনেকে নিজেদের স্বামি স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের গোপনীয় কথা,অন্য স্বামী-স্ত্রীর জানা কথাগুলো বলে খোশগল্প করেন। এতে ইসলামি উম্মাহর ভ্রাতৃত্ববোধে কলহের সৃষ্টি হয়, ইসলামের প্রসার না হয়ে মনবিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।তাপছিরের মাহফিলে যেখানে সৌহার্দ প্রচারের কথা ছিল সেখানে একটি বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়।এই ব্লেমগেম যেন না হয় সে শিক্ষাই আগে পরিবারকে দিতে হবে কোথাও যাওয়ার আগে। ইসলামের অনেক সংগঠন রয়েছে যেখানে কর্মীরা বসেন কিন্তু সেখানে নেই বিশুদ্ধ ঈমাম বা তাপছিরবিদ।এমন অবস্হায় তাপছির করেন এমন কর্মী যার কুরআন ছহি শুদ্ধ নয়।এই ক্রুটিযুক্ত কুরআনিক শিক্ষা নিয়ে যখন অসংখ্য কর্মী সমাজে বেড়ে উঠে তখন সমাজ আলোকিত না হয়ে অন্ধকারের দিকে যায়।এইজন্য সংগঠন গুলোকে প্রারম্ভেই রসূল সা: এর সূন্নতের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। সংগঠন গুলোর কর্মীদের প্রথমেই কুরআনের ছহি শিক্ষা দিতে হবে।শরিয়তের বিধিবিধান শিক্ষা দিতে হবে।দ্বীনের জলছা যেখানেই হবে একজন কুরআনের বিশেষায়িত পন্ডিত সেখানে উপস্হিত থাকবেন দিক নির্দেশনার জন্য।ইসলামের মুলনীতিগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে মহিলারা কুরআন শিক্ষার আসরে যেতে পারেন,তাপছির মাহফিলে যেতে পারেন,তাজবিদ শিক্ষার প্রোগ্রামে যেতে পারেন।এটি খুবই প্রয়োজন এ জন্য যে,ঈমানের আলোচনা ছাড়া ঈমান পূর্ন হয় না।আমলের আলোচনা ছাড়া আমলের প্রেকটিস আসবে না।ঈমানের আলোচনাকে অনেকে চায়ের কাপের সাথে তুলনা করেছেন।ধরুন আপনি চায়ের কাপে পানি রাখলেন,চিনি দিলেন ,চা পাতা দিলেন কিন্তু নাড়াছাড়া না করে চা পান করলেন।আপনি চায়ের স্বাদ পাবেন না।ঠিক ঈমানের ব্যাপারটি হলো আপনাকে কুরআন হাদিস অধ্যয়ন করতে হবে,প্রচার করতে হবে,হক্কানি উলামাদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।এভাবে ঈমান বৃদ্ধি পাবে।ঈমানের স্বাধ যখন আমরা পেয়ে যাব তখন আমাদের দৈনন্দিন সব কাজই সুন্দর হবে।সেজন্য আমাদের ভাল প্রোগ্রামগুলোতে নিশ্চই অংশগ্রহন করতে তবে শুধুমাত্র আল্লাহ ও রসূল সা: এর নির্দেশিত পথে প্রোগ্রামগুলোতে।প্রোগ্রামে গিয়ে যদি অসামন্চজস্য কোন কিছু চোখে পড়ে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আপনাকে ব্যাক্তির দোষ দেখলে ব্যাক্তিগত ভাবে বা আমভাবে প্রচার করে দিতে হবে যাতে দোষে দুষ্ট ব্যাক্তি বর্গ সংশোধিত হতে পারে। পৃথিবীতে আজ ইসলামের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সয়লাভ হয়ে গিয়েছে।কোনটি ইসলামের কাজ আর কোনটি ইসলামের কাজ নয় তা ঈমানদারদের আলকুরআান ও রসূল সা: এর জীবনের আলোকে খতিয়ে দেখে অনুসরন করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করে সে অনুযায়ী প্রাপ্য পেয়ে মহিলারা কি স্বামীর সাথে শরিয়ত মোতাবেক সংসার চালায় ?
ভাল ভাল কথা বলা যত সহজ করা কি তত সহজ ?
ব্লগের আদিব্লগারদের মধ্যে আপনি আন্যতম । পোস্টও করেছেন ৪০০ এর উপরে ।
একটাও প্রতি মন্তব্য নেই !!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন