শত প্রতিকূলতায় কেউ কেউ পদে সমাসীন থাকেন কেন?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৫০:২৭ রাত

আমাদের দেশে যে কোনো পদে সমাসীন হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্যতা ও অক্ষমতার ঘাটতিটুকু ক্ষমতাবানদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগ, দলীয় আনুগত্য এবং সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মহলে তদবির তাগাদার মাধ্যমে পুষিয়ে নেওয়া হয়। তাই সব অপমান সয়ে, যাবতীয় দুর্নীতি ও অযোগ্যতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের সর্বনাশ করে হলেও শুধু ব্যক্তিগত লাভালাভের জন্য এসব অযোগ্য লোক পদ আঁকড়ে বসে থাকেন।সমাসীন ব্যাক্তি যদি জানেন তাঁর ওপরে ক্ষমতাবানদের আশীর্বাদ রয়েছে, তাহলে সহকর্মীদের অসহযোগিতা ও ঘৃণা তাঁরা গায়ে মাখেন না। প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতিও তাঁদের বিচার্য বিষয় নয়। অন্যদিকে যোগ্য, দক্ষ ও প্রজ্ঞাবান মানুষ একটি পদ দখলের জন্য যেমন জনসংযোগ বা সুপারিশের আশায় ক্ষমতাবানদের দরজায় ঘোরাঘুরি করেন না, তেমনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তাঁর ভেতরে কোনো দ্বিধা কাজ করে না। যোগ্য মানুষ জানেন তাঁর অধিকার করে রাখা পদের চেয়ে বাইরের পৃথিবী অনেক বড়। তিনি চাইলে সেখানে নিশ্চয়ই কাজের পাশাপাশি সম্মান ও মর্যাদার কোনো অভাব হবে না।যোগ্য মানুষদের সততার ভাবমূর্তি ফুটে উঠে তাদের প্রত্যেকটি কর্মে।তারা যা বলে সত্য বলে।কোন কমিটমেন্ট করলে সত্য কমিটমেন্ট করে।কমিটমেন্টের দিন পুরিয়ে আসার আগে যোগাযোগ করে নিজের সততাকে ধরে রাখার জন্য।আর অযোগ্য লোকরা তা করে না।তাদের চোখে মুখে অসত্য কথা বলে।তারা মিথ্যা কমিটমেন্ট করে।এদের মধ্যে মোনাপেকের চরিত্রের বৈশিষ্টগুলো ফুটে উঠে তাদের কথায় ও কাজে।উন্নত বিশ্বের অমুসলিমদের আমরা অনেকে দোষ দেই।তাদের অনেকে ধর্মের বিরুদ্ধে লড়ে যায় কিন্তু তাদের ব্যাক্তি চরিত্র মানবতার পক্ষে।কাউকে তারা ঠকাতে চেষ্টা করে না।কারো অর্থ সম্পদ মেরে দেয়ার চিন্তা করে না।পরের হক নষ্ট করার ভাগটি করে বর্তমান ফাসেক মুসলিমরা।এরা আসলে মুসলিম নয়।মুসলিমদের ছত্রছায়ায় থেকে এরা ইসলামের ক্ষতি করে থাকে।আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও দেখি উন্নত দেশের কোন মন্ত্রীকে,তার ডিপার্টমেন্টে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এর নৈতিক দায়দায়িত্ব স্বীকার করে পদত্যাগ করেন। আমাদের দেশে দুর্ঘটনা ঘটানো ড্রাইভারকেও তাঁর চালকের আসন থেকে নামানো যায় না। তিনি জানেন তাঁকে সাহস জোগানোর জন্য পেছনে আছে পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন, তাঁকে শক্তি জোগানোর জন্য আছে রাজনৈতিক দল এবং সর্বোপরি তাঁকে বাঁচানোর জন্য আছে আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। অতএব পদ আঁকড়ে বসে থাকাটাই তাঁর জন্য সর্বোত্তম পন্থা।পদটি যদি অর্থ-বিত্ত ও প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকে লাভজনক হয়, সে ক্ষেত্রে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা মাঝেমধ্যেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, প্রত্যেকেই তাদের এই দখলদারি চরিত্রকে জনসেবার মহান উদ্দেশ্যে নিবেদিত বলে প্রচার করে থাকে।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা ব্যাংক বীমা-জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা মহাপরিচালক পদে নিঃসন্দেহে অসংখ্য যোগ্য ও মেধাবী মানুষ নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। কিন্তু তার পাশাপাশি তদবির ও চাটুকারিতার শক্তিতে যাঁরা তাঁদের যোগ্যতার চেয়ে বড় আসনটি দখল করে বসেন, তাঁরা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট করেন। যোগ্য ও দেশপ্রেমিক মানুষের কর্মস্পৃহা এতে ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত হয় এবং সামগ্রিক বিচারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই তাঁরা ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে অযোগ্য লোকটিও নানা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তিনিই সেই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে কর্মঠ, কুশলী, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি। তাঁর অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি যে রসাতলে যাবে সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য দৌড়ঝাঁপ করার কাজে তিনি সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকেন।নিয়োজিত থাকেন দলবাজি করে চলতে।তাদের এই কর্মের ফিরিস্তি যে অন্যদের কাছে পরিষ্কার তা তারা অযোগ্যতা ও পড়াশুনার অভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।বরং নিজেদের সত্যবাদি করে তোলার জন্য ভুল রিপোর্ট ও ব্যাখ্যা দাঁড় করান। ফলে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজকর্ম যেমন ব্যাহত হয় তেমনি মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। আরো ওপরের পদ দখলের আশায় তাঁরা তাঁদের ওপরের ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে বিষোদ্গার করতেও ছাড়েন না।অবশ্য অযোগ্য লোক শেষ পর্যন্ত পদ আঁকড়ে বসে থাকলে তাঁকে টেনে নামানোর কাহিনীও আমাদের দেশে কম নেই। ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনে স্বৈরাচারী এরশাদের পদচ্যুতি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সে সময়ের একটি ঘটনা থেকে আমাদের পদ ও পরিচিতি লাভের নির্লজ্জ আকাঙ্ক্ষার সামান্য পরিচয় পাওয়া যেতে পারে।মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন একজন উঠতি বুদ্ধিজীবী সে বছর নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে প্রচারের জন্য একটি পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছিলেন। পাণ্ডুলিপিতে এরশাদকে মানবাধিকারের একজন মহান প্রবক্তা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রচুর গুণকীর্তন করা হয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন হলে দুই দিন পরে 'বিশ্ব মানবাধিকার দিবস' অনুষ্ঠানের পরিকল্পক বুদ্ধিজীবীটি যথানিয়মে এসে উপস্থিত।একজন উর্ধতন কর্মকর্তা রসিকতা করে তাঁকে বলেছিলেন, 'আপনার মানবাধিকারের ঝাণ্ডাধারী এরশাদ সাহেব তো চিৎপটাং- এখন অনুষ্ঠানের কী হবে?' তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে নতুন একটি পাণ্ডুলিপি হাতে দিয়ে বললেন, 'স্ক্রিপ্ট থেকে এরশাদের নাম বাদ দিয়ে সব জায়গায় বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের নাম বসিয়ে দিয়েছি।' কোনো ধরনের নীতিজ্ঞানবিবর্জিত এই চাটুকার চামচা শ্রেণির সুযোগসন্ধানী লোকের ভোল পাল্টানোর ক্ষমতা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। এসব করিতকর্মা মানুষ তাঁদের পদ ও পদবির লোভে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার প্রয়োজনে যেকোনো ধরনের কৌশল অবলম্বনে দ্বিধা করেন না। বিশেষ করে যাঁরা একবার একটি পদ অধিকার করে চর্ব্য-চূষ্য-লেহ্য-পেয়সহ ক্ষমতার সব আস্বাদ গ্রহণ করেছেন, তাঁরা পদবঞ্চিত হলে সেই পদ পুনরুদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। ফলে তাঁরা তাঁদের পরিচয়ে রাজনৈতিক দলের আইকন ও স্লোগান নির্বিচারে ব্যবহার করেন, পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে নেতানেত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কের প্রমাণ হাজির করেন, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তোলা পুরনো ছবি ছাপিয়ে নতুন করে পদ দখলের পাঁয়তারা করেন।যার যা প্রাপ্য, তার চেয়ে বড়মাপের চেয়ারে বসার জন্য নির্লজ্জ চাটুকারিতা এবং এই দুরাকাঙ্ক্ষায় ক্ষমতাবানদের নীতিহীন প্রশ্রয় যদি তার জন্য সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, তবে তা আমাদের দ্রুত অগ্রসরমাণ সমাজ প্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে প্রবল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তাতে সন্দেহ নেই। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজে তদবির ও চাটুকারিতা কখনো যোগ্যতা ও নিষ্ঠার বিকল্প হতে পারে না।যারা ভাল ব্যাক্তিত্ব শত প্রতিকূলতায়ও প্রতিষ্ঠানে তাদের সমালোচনা থাকে না।আর নিতান্ত-ই যদি তিনি সমালোচিত হন,ইস্তফা দিতে কুন্ঠাবোধ করেন না।যাদের কর্মে ক্রুটি আছে তাদের শত অপবাদ দিলেও তারা তাঁ আঁকড়ে ধরে থাকতে চায় কারন এর কোন বিকল্প তার হাতে নেই।

বিষয়: বিবিধ

১১৮১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344934
০৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:০৬
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। আসলেই নৈতিকতা না থাকলে এমনই হয়, অযোগ্য লোক পদ দখল করে বসে থাকে।


আপনার লেখার নিয়মিত পাঠক আমি, আপনার লেখা গুলো খুবই ভালো লাগে তাই আপনার কাছে একটি অনুরোধ করব!!!

আজকের লেখাটি কতই যুক্তি পুূর্ণ তার পরও পাঠক কম। কারন আপনি এখানে আপরিচিত!!! আপনাকে পরিচিত হবার জন্য অনুরোধ করছি।

আপনি কি আগ্রহী?
344990
০৮ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৯:৫৬
হতভাগা লিখেছেন : উনারা পদে আসীন থাকেন কারণ , উনারা চান উনাদের রঁসুই ঘরে যত রসদ আছে বা উনাদের তূনে যত তীর আছে সব ব্যবহার করে জনগনের সেবা করতে ।

অথবা, ইলেকশনের জন্য যে খরচ করতে হয়েছে সেটার ১০০০ গুন উসুল এখনও করা হয় নি তাই ।
344996
০৮ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:০৪
ঝরাপাতা লিখেছেন : সত্যি লিখলেন ভাই। দারুন!!! অসাধারন
345408
১২ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
মহিউডীন লিখেছেন : ধন্যবাদ নুর আয়শা আপনাকে।আপনি লিখেছেন আমি অপরিচিত কথাটি বুঝলাম না।তবে আমি কাজ করতে চাই ও অপরিচিত থাকতে চাই।একজন সাহিত্যিক বলেছেন,'Thus let me live unseen & unknown and thus unlamented let me die.'এমন একটি জীবনই কামনা করি।আল্লাহর হুকুমগুলো পালন ও মানুষের কল্যান করে যাওয়াই আমার ব্রত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File