একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আমাদের কাজগুলো করা উচিত।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৪৬:০৬ দুপুর

মু'মিনের সকল ইবাদত তথা দৈনন্দিন কাজ কর্ম একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই।সূরা আযযারিয়াতের ৫৬ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,আমি জীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য।' ইসলামে ৫টি মৌলিক কাজকে ( ঈমান,নামাজ ,যাকাত,রোজা ও বায়তুল্লাহর হজ্জ) সামনে রেখে শরিয়তের আন্যান্য বিধিবিধানের অনুবর্তী থেকে একজন মু'মিনকে তার জীবন অতিবাহিত করতে হয়।সন্তুষ্টির আবিধানিক অর্থ হলো-প্রীত,খুশি ও পরিতোষ।আল্লাহকে কেন আমরা খুশি করবো? আল্লাহ পাক সব কিছু থেকে পবিত্র ও তিনি স্বয়ংসম্পূর্ন।তিনি কারো কাছে জীবিকা চান না বরং তিনিই সৃষ্টির রিজিক সরবরাহ করেন।তিনি সবচেয়ে ক্ষমতাবান ,দাতা ও দয়ালু।মানুষ হলো শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আর ইসলাম হলো শ্রেষ্ঠ ধর্ম যা দ্বীন হিসেবে আল্লাহ পাক আমাদের দিয়েছেন যাতে আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে পারি। ইসলাম মানবতা, নিষ্ঠা ও একতার ধর্ম, পৃথিবীর সব আদর্শের মডেল, সৌন্দর্যের প্রতীক। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির বর্ণিল উষা। ঈমান আনার পর আল্লাহর একজন বান্দাহ লুটিয়ে পড়ে সেজদায় নামাজের মাধ্যমে।একমাত্র নামাজের মাধ্যমে মু'মিন আল্লাহর নিকটবর্তী হয়ে যায়।বিপদে আপদে,সুখে শান্তিতে মু'মিন আল্লাহর সামনে তার মস্তককে জমিনে পুতে দেয়।এই নামাজকে যারা দুনিয়া রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুগে যুগে তারাই সফলতা লাভ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে নবী আপনার পরিবার-পরিজনকে নামাজের হুকুম করুন ও আপনি নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হোন।পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহকে সিজদাহ করে। প্রশংসায় থাকে নতশির। পবিত্র কালামুল্লাহর সুরা রাআদ-এর ১৫নং আয়াতে বলা হয়েছে, “আল্লাহর প্রতি সিজদারত হয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলোও সকাল-সন্ধ্যায় সিজদাবনত হয়।” আর সূরা হজ এর ১৮নং আয়াতে বলা হয়েছে “তুমি কি দেখ না আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রম-লী, পর্বতমালা, বৃক্ষরাজি, জীবজন্তুও সিজদা করে, মানুষের মধ্যেও অনেকেই।”নামাজ একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য। সূরা কাউসারে বলা হয়েছে, “তুমি তোমার প্রভূর জন্যই নামাজ পড় এবং কোরবানি কর।” মানুষের আত্মার ভেতরে জমে থাকা খারাপ চিন্তার বিলুপ্তি সাধনে নামাজের ভূমিকা অপরিসিম। এ কারণে আল-কুরআনের অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।” “আজ তো আমরা নামাজে দাঁড়াই দুনিয়ার সব ব্যস্ততা মাথায় নিয়ে। নামাজে দাঁড়ালে আমাদের শুরু হয় নানা হিসাব-নিকাশ। ফলে নামাজও প্রাকারান্তরে ব্যবসা, চাকরি বা অন্যান্য কর্ম ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যায়। যদি আমরা প্রতিটি নামাজকে জীবনের শেষ নামাজ মনে করে আদায় করি তাহলে প্রতিটি নামাজ হবে যথার্থ ও পূর্ণাঙ্গ। যা ইহকাল ও পরকালে আমাদের কাজে আসবে। অন্যথায় আমাদের এই গতানুগতিক ও দায়সারা নামাজ হাশরের মহামসিবতের সময় ‘প্রজ্জলিত অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সময় থাকতেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।” মিরাজ রজনীতে রাসূল সা.-এর উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়েছিল পরে তা কমিয়ে শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়। এরপর বলা হয়, “হে মুহাম্মদ! আমার কথার কোনো রদ-বদল হয় না। আপনার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের ছওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই সমান।” ( তিরমিযী শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-৫১)।হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং জুমার মধ্যবর্তী সময়ে যে গুনাহ হয় তার জন্য কাফফারা স্বরূপ যতক্ষণ না সে ব্যক্তি কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হয়( তিরমিযী শরীফ প্রথম খন্ড-, পৃষ্ঠা-৫২)।আর যে আজান শুনে নামাজের জন্য সাড়া দেয় না, তার ব্যাপারে রাসূল সা. ইরশাদ করেন, “আমার ইচ্ছা হয় যুবকদের বলি তারা যেন জ্বালানি কাঠ জমা করে আর আমি নামাজের নির্দেশ দেই এবং তারা দাঁড়িয়ে যায়। পরে যারা নামাজে হাজির হয় না, সেই লোকদের আগুনে জ্বালিয়ে দেই।” যে ব্যক্তি গুরুত্ব দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে উলার সঙ্গে জামাতে আদায় করবে আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে ভূষিত করবেন। ১- রিযিকের অভাব দূর করবেন। ২- কবর আজাব দূর করবেন। ৩- ডান হাতে আমলনামা দিবেন। ৪- পুলসিরাত বিজলির আকারে পার করাবেন। ৫- বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে।” নামাজ বেহেস্তের চাবি। নামাজ মুনিনের মি'রাজ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের থিউরী অনুযায়ী নামাজ পড়ার দ্বারা শরীরের ৩৬০টি জোড়ার ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবস্থা সাধিত হয়। এছাড়াও রোগব্যাধি নিরাময়ে নামাজের ভূমিকা অপরিসীম। রাসূল সা. বলেন, “আমার চক্ষুর তৃপ্তি হলো নামাজ।” হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম সা. ইরশাদ করেন “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন যাবৎ প্রথম তাকবীরের সাথে জামাতে নামাজ পড়বে, তার জন্য দুটি পরওয়ানা লেখা হয়। একটা জাহান্নাম হতে রক্ষা অপরটি মুনাফেকী হতে মুক্ত থাকা।” তিরমিযী শরীফ,হযরত হুযায়ফা রা. বলেন, “নবী করীম সা. যখন কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন তৎক্ষণাৎ নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আর যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে গুরুত্বসহকারে আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যে ব্যক্তি নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হবে না আল্লাহ তার জিম্মাদারী নিবেন না।” মানুষ নামাজে দাঁড়ালে শয়তানের জ্বর এসে যায়। নামাজের জন্য মুয়াজ্জিনের আযান শয়তানকে লাঞ্ছিত করে। আর শয়তানের বন্ধু হলো যে ব্যক্তি নামাযের সময় হয়েছে জেনেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরি করে। ইশার নামাজের সময় কেউ শুয়ে থাকা শয়তানের ১৩টি প্রিয় কাজের মধ্যে একটির অন্তর্ভুক্ত। এক বেদুঈন রাসূল সা.-কে পরকালে জাহান্নামের আগুন নিভিয়ে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইল, রাসূল সা. তাকে বিপদে ধৈর্যধারণ ও নামাজ-রোজার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেন।বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত, কেয়ামতের দিন যে সাত শ্রেণীর লোক আল্লাহর রহমতের ছায়া পাবে তন্মধ্যে ঐ ব্যক্তিও আছে যে একবার নামাজ আদায় করে বের হলে পুনরায় নামাজের সময়ের অপেক্ষায় মসজিদের প্রতি মন পড়ে থাকে। এমনকি সে পুনরায় মসজিদে গমন করে।যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ ছেড়ে দেবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। জোহরের নামাজ ছাড়লে রুজির বরকত কমে যাবে, আসরের নামাজ ছাড়লে শরীরের শক্তি কমে যাবে, মাগরিবের নামাজ ছাড়লে ছেলে সন্তান কাজে আসবে না, এশার নামাজ ছাড়লে নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে।রাসূল সা. ইরশাদ করেন, যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াবে তখন এই ধ্যান করো যে, এটাই আমার জীবনের শেষ নামাজ। হয়তো আর কোনো নামাজ পড়ার সুযোগ আমি পাব না। তাই যতটুকু খোদাভীতি ও ইখলাসের প্রয়োজন তা এই নামাজেই করে নাও। (ইবনে মাজাহ) আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নামাজকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, “নামাজ পড় রোজা রাখ কলমা পড় ভাই, রোজ আখেরের কাজ করে নাও সময় যে আর নাই।” ইবাদতের মানসিকতা ও আগ্রহ একমাত্র নামাজের মাধ্যমে হয়ে থাকে আর এ জন্যই ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের ঈমান আমল নিঃশেষ করার জন্য নামাজ এবং নামাজের স্থান মসজিদকে অনেক আগ থেকেই টার্গেট করে নিয়েছে। মসজিদকে কোনো চক্রের আস্তানা রূপে যদি আখ্যায়িত করা যায় অথবা পৃথিবীর বুক থেকে মসজিদকে ধ্বংস করে দেয়া যায় তবে মুসলিম জাতি একদিকে যেমনি নামাজের মনোবল হারাবে অন্যদিকে বেঈমানী স্বভাবের প্রতি ধাবিত হবে। ফলে ক্রমে ক্রমে মুসলমানের নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ চরম অভিযুক্ততার রূপ নেবে। বিভাজন সৃষ্টি হবে নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে। এজন্য মসজিদ রক্ষার পূর্ব শর্ত হলো মসজিদ আবাদ। যতদিন নামাজের মাধ্যমে মুসলমান মসজিদ আবাদে এগিয়ে না আসবে ততদিন মসজিদ ধ্বংসের পাঁয়তারা বন্ধ হবে না। আর্তনাদ আর হাহাকার করে যাবে সমজিদের মিম্বার। অথচ কেউ শুনবে না মসজিদ এবং নামাজের নীরব আহাজারি।আমরা যে যত দূরেই থাকি না কেন,আজ মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা অতি নিকটে।আত্মীয় পরিজনদের ইসলামের বিষয়গুলো জানিয়ে দেয়া অনেক সহজ কাজ।আমরা অনেকে দুনিয়া নিয়েই ব্যাস্ত।নিজের সংসার ,চাকুরি বা ব্যাবসায় নিয়ে এত ব্যাস্ত যে নিজের সংসারেরও খোঁজ রাখতে পারি না।ফলে পরিবারে অশান্তি লেগেই আছে।কেউ কারো সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না।নিজের পকেটের একটি পয়সাও খরচ করতে চায় না।কিভাবে কার কাছ থেকে ফায়দা নিবে সে চেষ্টায় ব্যাস্ত থাকে।যাদের কাছে বেশি সুযোগ আছে তারা বেশি কাজ করবে ,যাদের কাছে কম সুযোগ আছে তারা কম করবে।কিন্তু একেবারে নিথর পাথরের মত এক কোনে বসে থেকে নিজেকে ইবাদতি মনে করলে তা হবে আত্মঘাতি।সেদিন এক বন্ধুকে বললাম বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য।তিনি অযুহাত দেখালেন সংসারের ঝামেলা।আজ মরে গেলে আগামিকাল সেই সংসারকে কে বাঁচিয়ে রাখবেন।আমাদের ঈমান এত দুর্বল যে কারনে মুসলমানরা আজ পদদলিত।মুসলমান কোন নিকৃষ্ট জাতি নয় কিন্তু মুসলমানরা তাদের ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে গিয়ে এতিম হয়ে যাচ্ছে।আজকের মুসলমানের দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের সব কাজকর্মই যেন আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে মানুষকে খুশি করা।মানুষের ভাল কাজের জন্য নিশ্চই শুকরিয়া আদায় করতে হবে।কিন্তু আল্লাহকে রাখতে হবে সবার উপর।আমার নামাজ ,আমার কুরবানি ,আমার হায়াত ও আমার মওত একমাত্র আল্লাহ পাকের জন্য।যতক্ষন একজন মু'মিনের অন্তরে এ চিন্তা চেতনা প্রতিষ্ঠিত না হয় সে ইবাদত কোন কার্যকরি ইবাদত নয়।সেজন্য আমাদের সবকাজগুলো যেন হয়ে যায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির, সে চেষ্টা তদবির করাই হবে আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।

বিষয়: বিবিধ

১৪২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File