পশ্চিমা মিডিয়ার প্রচারনা,সৌদি কতৃপক্ষের দুর্বলতা না হাজি নামের হাজিদের ধৈর্যচ্যুতি।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:১৪:৫৯ বিকাল

এবারের হজে দু:খ জনক দু'টি ঘটনা ঘটে গেল।যেদিন ক্রেন ভেঙ্গে মোট ১১১ জন হাজী নিহত ও ২৩৮ জন আহত হলেন(আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদের আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে) সেদিন ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ।সরকার তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরনের ও প্রতিশ্রুতি দিলেন।পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা আছে।কথায় বলে, ব্যাবসায় ভাল হলে আমার আর মন্দ হলে তোমার।সৌদি বিনলাদিন গ্রুফ বিগত দশকের পর দশক সরকারের সহযুগিতায় মক্কা ও মদিনা হারামের সম্প্রসারন, সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও লাখ লাখ মানুষের হজ ও ওমরাহ পালনে কাজ করে আসছে।২৪ ঘন্টা কাজ করেও কাজ শেষ করা যায় না।এর মধ্যে আবার মিনায় ঘটলো আরো একটি দুর্ঘটনা।মিনায় পদদলনে ৭৬৯ জন হাজির মৃত্যুর ঘটনায় এবার ইরানকে দায়ী করেছে সৌদি গণমাধ্যম। ইরানের ৩০০ হাজি নির্দেশনা না মানায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আশরাক আল আওসাত নামে দেশটির একটি দৈনিক।আবার গুরুত্বপূর্ন ওয়েস্টার্ন মিডিয়া সৌদী প্রিন্সের লোকবহরকে রাস্তা ক্লিয়ার করার কারনে দূর্ঘটনা হয়েছে বলে জানাচ্ছে।ঠিক কি কারনে দূর্ঘটনাটি ঘটেছিল তা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে।মক্কায় এটিই প্রথম দুর্ঘটনা নয়।২০ বা ৩০ লাখ মানুষ এতটুকু যাগায়, যেখানে থাকে লোকে লোকারন্য।২০০৬ সালে ৩০৬ জন হাজি নিহত হয়েছিল মিনায়।আমি ও আমার পরিবার ছিলাম প্রত্যক্ষ সাক্ষি।তখন মিনায় এমন সম্প্রসারিত রাস্তা ছিল না।রাস্তায় ধীরে ধীরে চলা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।একই রাস্তায় এক গ্রুফ আসতো অন্য গ্রুফ যেতো।লক্ষ লক্ষ হাজিদের প্রশাসন থেকে নিয়ন্ত্রন করা খুবই কঠিন কাজ।আমরা ফিরে আসছিলাম জামারাত থেকে পাথর মেরে।ঠিক যখনি হাজি সাহেবানরা রাস্তার মোড় নিচ্ছিল, লাগলো জটলা।আফ্রিকান হাজিরা শক্তিশালী ও দেহদারি হওয়ায় তারা ভীড় ঠেলে পদদলিত করে বুড়ো ও শীর্নকায়দের।এভাবেই মারা গিয়েছিল ৩০৬ জন হাজি।আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা দম্পতি কিশোর ছেলে মেয়ে ও এক শিশু কন্যা নিয়ে রাষ্তার একপাশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্হায় এসে বেঁচে গেলাম।সে সময় দেখেছি হাজিদের যে সহনশীলতা থাকার দরকার তা নেই।লাখ লাখ হাজি একটু সংকীর্ন যায়গায় চলার জন্য যে সহনশীলতা দরকার তা থাকে না।কে কার আগে যাবে এবং একজন হাজি পিপাসার্ত দেখেও সহমর্মিতা যাদের থাকে না,এটি তাদের কোন পর্যায়ের ইবাদত কল্পনা করা যায় না। এমনকি জামারাতে পাথর মারবে সেখানেও একে অন্যকে সম্মান করে না।বিশৃংখলার প্রথম দায়টি নিতে হবে হাজিদের।দ্বিতীয়ত সৌদ সরকারকে এই বিপুল সংখ্যক হাজিদের নিয়ে ভাবতে হবে উন্নততর আর কি ব্যাবস্হা করা যায়।এই ৫ কিলোমিটার যায়গায় প্রতিটি সড়কে ওভারব্রিজ করার পরিকল্পনা এবং আরো রেল যোগাযোগের ব্যাবস্হা করা যায় কিনা।এ সময়ে ভিআইপি দুই চারজনের জন্য রাস্তা বন্ধ করে লাখ লাখ হাজিদের কষ্ট দেয়া আল্লাহর দেয়া আইনে পড়ে কিনা সেটাও ভাবতে হবে। ইরানের হাজিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা তাওয়াফা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে মুজদালিফা থেকে জামারতে আসার আগেই ইরানি হাজিরা নির্দেশনা অমান্য করতে শুরু করেন। এসব হাজিকে মুজদালিফা থেকে সোজা তাদের তাবুতে গিয়ে বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছিল। সময় হলেই তাদের জামারতে শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছুড়তে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই নির্দেশনা অমান্য করে তাবু থেকে বের হয়ে হাজিদের জামারত থেকে বের হয়ে আসার ২০৪ নম্বর সড়ক দিয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। পরস্পর বিপরীতমুখী জনস্রোতের কারণে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায় এবং এই পদদলনের ঘটনা ঘটে।এই রকম মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল ২০০৬ সালে। ওই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, জামারতে যাওয়ার জন্য যে টানেলটি রয়েছে সেখানে ক্যামেরা বসানো আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখলেই ইরানি হাজিদের নিয়মভঙ্গের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।কিন্তু কিছুদিন পূর্বে মক্কা হারামে দুর্ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর কিছু মন্তব্য পড়ে আমার মনে হয়েছে,মানুষের মৃত্যুতে কেউ কেউ খুশি হয়েছেন।নিশ্চই তারা অমুসলিম বা মুসলমান নামের মুনাফেক।মুসলিম বা অমুসলিম যেকেউ হতাহত হোক না কেন,কারো কি উচিত মানুষের মৃত্যুতে খুশি হওয়া? সৌদি রাজতন্ত্র অনেকেই পছন্দ না করতে পারেন কিন্তু তারা ইসলামের জন্য যে মৌলিক কাজগুলো করছেন তাতো অস্বীকার করার উপায় নেই।পৃথিবীর কোন মুসলিম দেশগুলোতে মুসলিম শাসক দ্বারা ইসলামের এত বেশী খেদমত হয় কি কেউ বলতে পারে? যারা বলে 'হজ' একটি ব্যাবসায় তাদের ভেবে দেখা ও তথ্য উপাত্ত খুঁজে দেখা উচিত বলে মনে করি। তাদেরকে সবিনয়ে বলতে চাই, কোন বিষয়ে খোঁজ খবর না নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীদের সুরে সুর মেলানোটা একটা নিরেট মূর্খতা। সৌদি আরব হাজ্ব থেকে সাধারণত ১৫-২০ বিলিয়ন ডলার আয় (প্রফিট না, ইনকাম) করে থাকে। কিন্তু হাজীদের পেছনে যে খরচ তারা করে, সেটাও কম নয়। শুধুমাত্র মক্কার সম্প্রসারনেই তারা ১২৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে । এছাড়া আরো অনেক খরচ তো করেই চলছে। বাংলাদেশ থেকে একজন হাজী এতদিনের লম্বা একটা ট্যুরের জন্য কত খরচ করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। সেই খরচে বিমান ভাড়া থেকে শুরু করে মক্কার স্বাভাবিক বাড়ি ভাড়া দেয়ার পর কত থাকার কথা তাও ক্যালকুলেট করে দেখুন। তাহলে বুঝতে পারবেন, এখানে সৌদি আরবের কতটুকু প্রফিট থাকে। তারচাইতেও বড় কথা, মক্কায় যাওয়া মানুষদের থেকে যা আয় হয় সেটা সৌদিআরব নিজেদের ভোগের জন্য ব্যবহার করে কি করে না জানা প্রয়োজন।তৈল উত্তোলন করে সৌদি আরব যা লাভ করে, হাজ্বের প্রফিট সেই তুলনায় হাস্যকর রকমের ছোট। ইসলাম বিদ্বেষীদের 'সৌদি আরব হাজ্বের নামে বিরাট ব্যবসা ফেঁদে বসেছে' টাইপ বক্তব্যে বিভ্রান্ত হওয়ার আগে একটু মাথা খাটিয়ে দেখতে হবে।সুতরাং পশ্চিমা মিডিয়ার প্রচারনা,সৌদি কতৃপক্ষের দুর্বলতা না হাজি নামের হাজিদের ধৈর্যচ্যুতি এগুলো ক্ষতিয়ে দেখে আমাদের মন্তব্য করা উচিত।কারো প্রতি অন্যায় আচরন না করে সু-পরামর্শ দেয়াই হলো উত্তম চরিত্রের কাজ।

বিষয়: বিবিধ

১০৭৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343526
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:২২
হতভাগা লিখেছেন : সৌদি সরকারকে হাজিদের ব্যাপারে আরও বেশী সতর্ক ও যত্নশীল হতে হবে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File