সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মত বিনিময় ও শিক্ষা সম্প্রসারনের এক অনন্য মাধ্যম।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৪১:৪৩ দুপুর
বর্তমান বৈজ্ঞানিক সভ্যতার যুগে তথ্যসংগ্রহ , সামাজিক যোগাযোগ ও ভাবের আদান প্রদান অতি সহজে , কম সময়ে ও কম মুল্যে ইন্টারনেট ,ফেসবুক ,টুইটার,ইমেইল ,মোবাইল, আডিও , ভিডিও ,টিভি চ্যানেল মাধ্যমগুলোর সাহায্যে করা যায়।আমাদের বিজ্ঞান প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে মিডিয়াও সেইসাথে ততই উন্নত হচ্ছে।বর্তমানে জন গনের কাছে প্রচারের মাধ্যমকে আমরা চারভাগে ভাগ করতে পারি।প্রাথমিক মিডিয়া-প্রিন্ট মিডিয়া।একেও আমরা দু'ভাগে ভাগ করতে পারি- ননপিরিয়ডিকাল ও পিরিয়ডিকাল মিডিয়া। ননপিরিয়ডিকাল প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে আছে সাহিত্য-যেমন প্রবন্ধ ,বুকলেট ইত্যাদি।পিরিয়ডিকাল প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে আছে,নিউজ পেপার,মেগাজিন যেগুলো ছাপানো হয় প্রতিদিন,প্রতিসপ্তাহে , প্রতিপক্ষে, প্রতিমাসে,তিনমাসে,ছ'মাসে বা বছরে।দ্বিতীয় টাইপের মিডিয়া হলো- অডিও মিডিয়া।এই অডিও মিডিয়া বিভিন্নভাবে পেয়ে থাকি যেমন-অডিও টেপ যা এখনকার দিনে সেকেলে।এছাড়াও আছে অডিও সিডি,ডিজিটাল অডিও টেপ ও ডেক।এই ডিজিটাল অডিও মিডিয়ার শ্রোতা হতে পারে শুধু একজন মানুষ যা নিজের বাড়িতে,নিজের অফিসে বা গাড়িতে শুনতে পারে একটি অডিও প্লেয়ার।অনেকে হাঁটতে হাঁটতে ও শুনে থাকেন ওয়াকম্যানের সাহায্যে।অডিও মিডিয়ার শ্রোতা হতে পারে বেশ কয়েকজন মানুষ,পার্টিতে,কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে ও বভিন্ন অনুষ্ঠানে অথবা শ্রোতা হতে পারে রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।তৃতীয় টাইপের মিডিয়া হলো- ভিডিও মিডিয়া।এটিও বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়।যেমন-ভিডিও হোম সিসটেম ক্যাসেট যা আজকাল সেকেলে হয়ে গেছে।এছাড়াও আছে ভিসিডি যা এখন সেকেলে হয়ে যাচ্ছে।বর্তমান ভিডিও মিডিয়ায় সংযোজিত হয়েছে ডিজিটাল ভিডিও ডিস্ক।আর একটি নতুন প্রযুক্তি এসেছে এইচ ডি ডিভিডি(হাই ডেফিনিশন ডিজিটাল ভিডিও ডিস্ক)।এগুলো হলো ভিডিও মিডিয়ার বিভিন্ন টাইপ।এগুলোতেও দর্শক হতে পারে ঘরে ,অফিসে বা অন্য কোন যায়গায়।দর্শক হতে পারে কয়েকজন বা অনেক মানুষ যেমন বিভিন্ন টিভি ষ্টেশন,স্যাটেলাইট ছ্যানেল ইত্যদি। মিডিয়ার সর্বশেষ টাইপটি কম্পিউটার মিডিয়া( ইন্টারনেট ইনফরমেশন টেকনোলোজি)।এখানেও ব্যাবহার কারি হতে পারে একজন অথবা অনেক বেশি মানুষ।ইন্টারনেট ব্যাবহারকারি এখন মিলিয়ন মিলিয়ন।এই প্রত্যেক মিডিয়াতে কিছু বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয়।প্রত্যেক মিডিয়ার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।যেমন-প্রিন্ট মিডিয়ার কাজগুলো অতি সহজে করা যায়।অডিও ও ভিডিও মিডিয়ায় কাজ গুলো বেশী তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে কাজগুলো সহজ হয়ে যাচ্ছে।বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষনায় বলে যে,বিভিন্ন মিডিয়ায় মানুষের মনে রাখার ক্ষমতা বিভিন্ন রকম।যখন সাধারন একজন মানুষ প্রিন্ট মিডিয়ার কোন কিছু পড়ে সে তার গড়পড়তা ১০% মনে রাখতে পারে।যখন কেউ অডিও মিডিয়া শুনে একজন সাধারন মানুষ তার গড়পড়তা ২০% মনে রাখতে পারে।যখন একজন লোক নিজের চোখে কোন ছবি বা অন্য কিছু দেখেছে সে তার ৩০% মনে রাখতে পারে।তবে যখন একজন মানুষ একই সাথে দেখে ও শুনে তার আনুমানিক ৫০% মনে রাখতে পারে।তাহলে মনে রাখার দিক থেকে সবচেয়ে ভাল হলো ভিডিও মিডিয়া।আজকের দিনে আমরা প্রত্যেক বিবেকবান মুসলিম উপলব্ধি করছি, আন্তর্জাতিক মিডিয়া হোক বা যে কোন মিডিয়া,তারা অনেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে বানিয়ে কথা বলছে বা ছোট খাট কিছু হলে সেটাকে বড় করে দেখাচ্ছে।তারা ইসলামের বিরুদ্ধে মিডিয়ার নামে বোমা বর্ষন করছে।এছাড়া ও ইসলাম সম্পর্কে তারা অনেক ভুল ধারনা পোষন করে।আন্তর্জাতিক মিডিয়া যে কথা বলছে তারা যুদ্ধ করছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তা পুরোপুরি সত্য নয়।আবার কিছু আন্তর্জাতিক ছ্যানেল রয়েছে তারা বলছে শান্তির জন্য যুদ্ধ করছে।তারা এখানে যা করছে তা শান্তির জন্য যুদ্ধ করছে না ,তারা শান্তির সাথে যুদ্ধ করছে।একটু যদি পরিষ্কার করে বলি তা হলো তারা শান্তির ধর্মের সাথে যুদ্ধ করছে।বর্তমানে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সামগ্রিকভাবে ইসলামকে এমনভাবে তুলে ধরেছে যেন এটি একটি সন্ত্রাসের ধর্ম।দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিমরা খুব কমই তাদের মিথ্যা প্রচারের প্রতিবাদ করতে পারছে।এই আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাদের বিভিন্ন রকম কলাকৌশলের মাধ্যমে সম্পুর্ন ভুলভাবে তুলে ধরছে।মিডিয়া যেভাবে ইসলামকে অপবাদ দেয়, প্রায়ই দেখা যায় তারা মুসলিম নামের তাদের তৈরি করা কিছু কুলান্গারকে তুলে ধরে।তারা তাদের মাধ্যমে ইসলামের কাজকর্মকে এভাবে তুলে ধরে যে,তাদের কৃতকর্মগুলো-ই ইসলামের কাজ।আমাদের মেনে নিতে কোন অসুবিধা নেই যে আজকাল ইসলামের নামে ইসলামের অনেক শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে যার সাথে ইসলামের সামান্যই সম্পর্ক রয়েছে।কিছু মুসলিম আছে যারা অন্যায় কাজ করে,মিডিয়া এই সব মুসলিমদের কাজকর্ম তুলে ধরে যা মানবতার বিরুদ্ধে এবং বলে এগুলো-ই ইসলামের কাজ।তারা এ কথাও বলে ইসলামি মাদ্রাসাগুলো নিষিদ্ধ করে দেয়া উচিত কারন তারা এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সন্ত্রাসি তৈরি করে এবং তাদের দ্বারা এ পৃথিবীর শান্তি নষ্ট হয়।আমরা যদি পরিসংখ্যান নেই তাহলে দেখবো মাদ্রাসা থেকে যুগ যুগ ধরে যারা বেরিয়ে আসছে তারাই ইসলামের নেতৃত্ব দিচ্ছে।ইসলামের মৌলিক কাজগুলোর সমাধান তারাই দিচ্ছে।এদের মধ্যে যে %টি বিভ্রান্ত হচ্ছে তারা মুসলিম পাছেক সরকার বা রাজনৈতিক দল দ্বারা বিভ্রান্ত।আমরা যদি আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্হাকে দেখি,সেখানে দেখতে পাই বিভিন্ন ধরনের কারিকুলাম।আমাদের সমাজ ব্যাবস্হা বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত।উচ্চবিত্ত,উচ্চ মধ্যবিত্ত,মধ্যবিত্ত,নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন বিত্ত।এর মধ্যে মধ্য বিত্ত থেকে নিম্ন বিত্ত পর্যন্ত তাদের বেশীর ভাগ ছেলে মেয়ে এই মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে।আর এই প্রতিষ্ঠান গুলো চলে মানুষের দান দক্ষিনায়।সরকারগুলো যুগের পর যুগ অবহেলা করে আসছে এদের নিয়ে।যে মন্ত্রী ,এমপি ও আমলাদের ছেলে মেয়ে পড়ে বিদেশে আর তারা যখন এমপি বা মন্ত্রী হয় তখন প্রথমে তারা ভোট ব্যাংকের জন্য স্হাপন করে একটি মাদ্রাসা ,এতিমখানা বা খানকা। সমাজের এই একটি শ্রেনীর জীবন গড়ে উঠে নেতিবাচক শিক্ষায়।আর আন্তর্জাতিক একটি শক্তি ইসলামের নামে বা এনজিওর নামে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করতে গিয়ে তাদের গড়ে তোলে জংগিতে।এই বন্ছিত মানুষদের জাগিয়ে তোলার জন্য দরকার ছিল একটি মুলধারার শিক্ষা ব্যাবস্হা যাতে থাকবে ছহি কোরান হাদিসের অনুশীলন ও তার সাথে আধুনিক শিক্ষা ব্যাবস্হার ছোঁয়া।শুধুমাত্র সরকারকে দোষ দিলে হবে না। ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে যুগ যুগ ধরে যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছে তারাও একধরনের শির্ক ও বিদাআতের খাদেমে পরিনত হয়ে আসছে যারা চায় এ প্রতিষ্ঠান গুলো সমাজের দান দক্ষিনায় চলুক।যাই হোক মোটকথা হলো ইসলামের যে মৈলিক জ্ঞান তা এই মাদ্রাসা গুলো থেকেই মুসলমানরা পেয়ে থাকে আর ইসলামের খেদমত এদের দিয়েই হয়।আর বেশীর ভাগ আলেমদের আমরা ভালই দেখে থাকি আর খুব কমই অশান্তি কামনা করে।আবার তার মানে এই নয় যে, যারা মাদ্রাসা থেকে পাস করে বেরিয়ে আসে তারা অন্যায় করে না।এমন কিছু লোক প্রতিষ্ঠানকে ফাঁকি দিয়ে সন্ত্রাসী হয়ে যেতে পারে কারন অন্তর্জাতিক ডনরা তাদের কালো টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে এমন কিছু মানুষ সমাজে তৈরি করার জন্য।সবমিলে এরা ২%ও হবে বলে আমার সন্দেহ রয়েছে।কিন্তু মিডিয়া প্রচার করে এই কুলাংগাররাই মুসলিমদের দৃষ্টান্ত।পৃথিবীতে যে লোকটি মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্বা করেছে সে হলো হিটলার, যে ৬০ লক্ষ ইহুদিদের হত্বা করেছিল।সে কোন মাদ্রাসা থেকে পাস করেছিল? সে ছিল একজন খৃষ্টান।মুসলিনি হাজার হাজার মানুষকে হত্বা করেছিল আর সেও ছিল একজন খৃষ্টান।মাফিয়া যারা কুখ্যাত ড্রাগ ব্যাবসার সাথে জড়িত তারা কোথা দেখে পড়াশুনা করে এসেছে? দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুলো বড় বড় সন্ত্রাসিদের কথা বলছেনা,তাদের কোন লিষ্ট তৈরি করে মানুষকে জানাচ্ছে না, যারা নাকি আসল অপরাধি।যারা হাজার হাজার মানুষকে হত্বা করছে,লাখ লাখ তরুন প্রজন্মকে ড্রাগ সেবনের মাধ্যমে তাদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।এ সমস্ত অনৈতিকতার লোকগুলো বেড়ে উঠেছে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর কর্মজীবনে তারা এক একজন ডন ও সামজপতি যারা সমাজকে নৃতৃত্ব দিচ্ছে।অথচ দুর্ভাগ্যের চাকায় নিষ্পেষিত হচ্ছে একটা শ্রেনী যারা মাদ্রাসায় পড়ুয়া।যদি কেউ ইসলাম ধর্মকে বিচার করতে চায় তাহলে মুসলিম সমাজ কি করে তা দিয়ে বিচার করা যাবে না।ইসলামকে বিচার করতে হবে মুল ধর্মগ্রন্থ দিয়ে আর তা হলো পবিত্র আলকুরআন ও রাসূল সা: এর ছহি হাদিস।এই দুটো থেকে মানবজাতির কোন ক্ষমতা নেই যে ইসলামের কোন দোষক্রটি বের করতে পারে।ধরুন একটি লেটেষ্ট মডেলের গাড়ি যে নাকি চালাচ্ছে একজন অদক্ষ চালক।পথিমধ্যে সে একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিল।হয়ত গাড়িতে ছিল আরো যাত্রি তারাও প্রান দিল।এখন আমরা কি গাড়ির দোষ দিব, না অদক্ষ চালকের।আমরা নিশ্চই চালককে দোষ দিব।যদি পরীক্ষা করতে হয় তাহলে গাড়ির বৈশিষ্ট খুঁজতে হবে আর গাড়ি চালানোর জন্য বসাতে হবে একজন প্রশিক্ষিত চালককে।ঠিক একই ভাবে ইসলামকে বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে আল কুরআনকে ও এর প্রথম ব্যাবহার কারি নবী মোহাম্মদ সা;কে। ইসলামকে বুঝতে যদি কেউ বেচে নেয় কোন দা-ঈকে,বা কোন দল বা সংগঠনকে যাদের কাছে নেই ইসলামের সঠিক নির্দেশনা সেখানেই বড় ভুল।তবে যারা ঈমান ও সৎ আমলের নির্দেশনা দেয় তারাই কল্যানকামি।ধর্মের কথা বলবেন বলুন না, কে নিষেধ করেছে? ধর্ম নিজেই বলে জানতে-শিখতে-বুঝতে, এমনকি ভাবতে। ইসলামে জ্ঞানকে আলোর সাথে তুলনা করা হয়েছে। জ্ঞানীকে চক্ষুষ্মান আর অশিক্ষিতকে অন্ধের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কাজেই শিখুন, জানুন, আলোচনা করুন। তবে অর্ধেক জেনে বা অন্যের কাছে শুনে দয়া করে লাফ দিয়ে উঠবেন না। আগে নিজে থেকে জানুন-বুঝুন তারপরে অন্যের কাছে নিজের মত প্রকাশ করুন।
সেই সাথে এটাও মাথায় রাখুন; আলোচনা, জ্ঞানার্জন কিংবা জানতে চাওয়া কোনটাই কাউকে ব্যঙ্গ করা, কারো উপরে মিথ্যা আরোপ করা বা অন্য কাউকে আঘাত করা বা কষ্ট দেয়া নয়।
যা আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়, আমার কাছে তাই পরম সত্য বলে মনে হতে পারে। আপনি আমায় বোকা ভাবতে পারেন কিন্তু বোকা বলতে পারেন না। পারেন না এই জন্য কেননা একইভাবে আমিও আপনাকে বোকাই ভাবব। বলতে গেলে তো বিবাদ লেগে যাবে।কিন্তু শিক্ষিত মেধাবী মানুষদের তো বিবাদে জড়ানো সমিচীন নয়।আপনি গোলটেবিলে বসুন,যুক্তি তর্ক করুন এতে জ্ঞানের পরিধি বাড়বে ও অন্যের পক্ষে বুঝতে সহজ হবে।আপনি ধার্মিক হন কিংবা অধার্মিক অশান্তিপ্রিয় নিশ্চয়ই নন। কাজেই বিশ্বাস যার যাই হোক তা তার একান্তই নিজস্ব বিষয়। সেটা নিয়ে কাউকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করা কোন সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়।আপনাকে মুক্ত মনের হতে হলে সবার আগে হিংসা, বিদ্বেষ পরিহার করতে হবে। আগে প্রত্যেককে সম্মান করতে শিখুন। প্রত্যেকের কথা মূল্যায়ন করতে জানুন। তবেই না আপনি মুক্ত চিন্তার অধিকারী হতে পারবেন।যে পর্যায়ে নিজেকে দেখাতে চান আগে সে পর্যায়ে উন্নীত তো হন। নয়ত আপনিও হোঁচট খেয়ে পড়বেন অন্যরাও বিভ্রান্ত হবে। ব্লগারদের লেখার বিষয় শুধুমাত্র ধর্মের সমালোচনা নয়। সত্যি বলতে কি আমি নিরেট ব্লগারদের কখনোই ধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসিত সমালোচনা করতে দেখিও না। ফেসবুকে দুই লাইন মতামত ব্যক্ত করা বা অন্য কারো লেখা কোড করা আর ব্লগিং কি এক?একজন ব্লগারের সামনে থাকে তার দেশ, দেশের মানুষ এমনকি গোটা বিশ্ব। তার সামনে থাকে সহস্র অসংগতি, হাজারটা বঞ্চনার উপাখ্যান। সেই সাথে বিশ্ব ব্যাপী ধর্মকে ব্যবহার করে যে অধর্ম হচ্ছে এ সবই তার আলোচ্য। হতে পারে আমার ক্ষুদ্রতা, তবে আমি কিন্তু সত্যিকারের ব্লগারদের এমন সব বিষয় নিয়েই লিখতে দেখি। অনাহুত কাউকে আঘাত করে, কষ্ট দিয়ে যারা লিখেন তারা মুক্ত চিন্তা থেকে তা লেখেন না। বরং নিম্ন মানসিকতা থেকেই লেখেন। সাময়িক কোন ফায়দা হয়ত তারা হাসিলও করেন। তবে আখেরে তা তাদের খুব একটা কাজে আসে বলে মনে করিনা। অথচ এইসব লেখার কারণে আজ পুরো ব্লগার সমাজই প্রশ্নবিদ্ধ! এটা কেমন কথা। ক্ষেত্র বিশেষে অনেকেই নিরাপত্তা হীনও। তাই স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ ব্লগিং এবং সুস্থ ব্লগ প্ল্যাটফর্ম এটা এখন সময়ের দাবী। তা যে নেই তা নয়। তবে সেখানে যেন কোন অসুস্থতা প্রবেশ করতে না পারে সেটাও লক্ষ রাখা জরুরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর ব্লগকে এক করে ফেলাটা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না। আর তাই আমার দাবী ফেসবুক একাউন্ট থেকে করা স্ট্যাটাসের উপর ভিত্তি করে দয়া করে কাউকে ব্লগার ট্যাগ লাগিয়ে দেবেন না। বিভিন্ন ব্লগ সাইটে যিনি নিয়মিত লেখেন। নিজের লেখার দায়ভার নেয়ার সৎসাহস রাখেন কেবল তাদেরকেই ব্লগার বলুন। বেনামী/ ছদ্মনামী একাউন্ট থেকে মতামত প্রদানকারীকে আর স্বনামে লেখা ব্লগারকে এক কাতারে ফেলাটা যৌক্তিক বলে মনে করি না। কাজেই উভয় দলকে আলাদা করে দেখা উচিৎ। এতে করে ব্লগাররা কিছুটা হলেও নিরাপদ হবে। যার যা অন্যায় তা তার। একজনের অপরাধের বোঝা সকলের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া অনুচিত, অন্যায়।একজন ব্লগার মুক্ত চিন্তা করবে সেটিই স্বাভাবিক।মানসম্মত ব্লগারদের কারনেই আজ তরুন সমাজ অনেক এগিয়েছে।এক সময় একজন ভাল লেখক বই প্রকাশনা করতে যে হিমসিম খেত এখন একজন ব্লগার সহজেই তার বই প্রকাশনা করে চলছে।এ সাহস যুগিয়েছে সামাজিক যোহাযোগ মাধ্যম।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যদি সুস্হ জীবনের লক্ষ্যে ব্যাবহার করা যায় তাহলে অতি তাড়াতাড়ি সমাজ পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।কিন্তু এর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে লক্ষ লক্ষ মিডিয়া গ্রুপ।ইউএসএ ,বৃটেনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারিরা আনুমানিক ৪০% ফর্নোগ্রাফী ইন্টারনেট ব্রাউজ করে।এ্যামেরিকাকে যে সভ্যতার দেশ বলা হয় একমাত্র লস এন্জেলসে বছরে প্রায় ১০,০০০ ফর্নোগ্রাফিক ফিল্ম তৈরি হয় যেখানে হলিউডে ৪০০টি চলচ্চিত্র তৈরি হয়।অনলাইনে অশ্লিল ছবির ভয়াভহ দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই বুঝা যায় মানবজাতি এক ভয়ংকর জীবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।রয়টার থেকে জানা যায় প্রায় ৫ বছরে যৌন সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের আয় এক বিলিয়ন থেকে তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নিত হয়।এভাবে ওয়েবসাইট কোম্পানিগুলো ফুলে ফেঁফে উঠেছে।কোন কোন নেট কেবলমাত্র বয়স্কদের জন্য আনন্দদায়ক অশ্লিল পর্নো ছবি নেটের মাধ্যমে প্রকাশ করে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রচুর অর্থ।স্টিফেন কোহেনের ওয়েভসাইট এদের মধ্যে অন্যতম। তিনি জানিয়েছেন যে,বছরে তিনি পর্নোওয়েভবের মাধ্যমে প্রায় ২২৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেন।এক পরিসংখ্যানে এসেছে ৭০% নারী পর্নো অনলাইনের ব্যাপার গোপন রাখে।পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নারিরা পুরুষের চেয়ে বেশি চারিত্রিক স্খলনের স্বীকার হয়।এ কারনে তারা বহু পুরুষগামি হয়ে পড়ে।যার ফলে তাদের অনেকে সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনলাইনের অশ্লিলতায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।এই পর্নো ব্যবসাকে ধর্মীয় দিক থেকে দানবীয় ব্যবসা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।ভিক্টর ক্লিন নামের একজন স্পেশালিস্ট ডাক্তার জানান যে,পর্নোগ্রাফির প্রভাব বয়স্ক পুরুষ ও ছেলেময়েদের উপর বেশি পড়ে। ৩০০ জনের মধ্যে ৯৬% পুরুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে যৌনসংক্রান্ত ব্যাপারে অসুস্হ হয়ে পড়ে।বর্তমানে যে চলচ্চিত্রগুলো তৈরি হছ্ছে তার ৯৫% কোন না কোন ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফিতে সমৃদ্ধ।ভারতীয় চলচ্চিত্র এখন জটিল রোগের মত সমাজকে আবদ্ধ করেছে।এখন যে আইটেম গান গুলো গাওয়া হয় তা পরিবার নি্যে তো দেখা সম্ভব নয় বরং সে্ক্সুয়েল রিপ্লে্ক্সন সমৃদ্ধ এ সব গানে তরুনদের দ্বারা সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে।তাদের অনেক প্রডিউসার যে ডার্টি পিকচার গুলো তৈরি করেছে তা সমাজের শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত জন গনকে সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করছে। ইন্টারনেট এখন মোবাইলে চলে আসায় টিন এজারদের অবস্হান চরম আকারে পৌঁছেছে।এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক স্কুল ছাত্রী ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে যৌন শীকারে পরিনত হয়েছে।শুনেছি মাদ্রাসার ছাত্রিরাও এর কবলে পড়েছে।রাতের পর রাত ছেলে মেয়েরা এখন মোবাইল ফোনে কথা বলা ও এস এম এস এর মাধ্যমে তাদের অশ্লিল যোগাযোগ করে চলছে।সবচেয়ে বেশী এ সময়ে ক্ষতি করছে এখন এফ এম রেডিও।আমাদের বিনোদন মাধ্যমে এই অধুনা সংযোযিত এফএম রেডিওগুলো গভীর রাতে কিছু কিছু অনুষঠানের মাধ্যমে যে অনুষ্ঠান প্রচার করছে যা অনেক বাবা মা খবর রাখেন না।গভীর রাতে এই কোমলমতি ছেলেমেদের যৌন বিনোদন মূলক আনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন এখন উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা সারাদিন কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ঘুরে।খুব কম বাবা মা তাদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন।এতে তারা অশ্লীল বাংলা,হিন্দী, ইংরেজী হিফ হিফ ,র্যাপ ও রকি গান শুনে।আর রাত ১১ বা ১২ টার পর এফ এম রেডিও গুলো প্রচার শুরু করে জীবন ঘনিষ্ঠ অনুষ্ঠান।এসবে থাকে প্রেমের আবেদনময়ি প্রেমকাহিনী।যুবক যুবতীরা তাদের প্রেমের উপাখ্যান বর্ননা করে।প্রেম হয়ে গেলে তারা একে অন্যকে কিভাবে উপভোগ করে তার বিস্তারিত বর্ননা থাকে এ অনুষ্ঠান গুলোতে।ইদানিং লোকাল থেকে গরীব সুন্দরি মেয়েদের নিয়ে আসে কাজের প্রলোভন দিয়ে এবং তাদের দ্বারা অনৈতিক ব্যাবসা ও মাদকের ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোতে তাদের এই ব্যবসা চলে।এই সুন্দরি মেয়েদের দিয়ে স্কুল ,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রদের বাগিয়ে নিয়ে প্রথমে যৌনতার স্বাধ পাইয়ে দেয়, তার পর ধীরে ধীরে গাঁজা ও এলকোহল সেবনের মাধ্যমে তাদের পড়ালেখার জীবন থেকে সরিয়ে অপরাধি জীবনের দিকে ধাবিত করে।এই যে অনুষ্ঠানের নামে নাবালক ছেলেমেয়েদের সামনে প্রেমকাহিনী শুনিয়ে লাখ লাখ ছেলেমেয়ের যারা জীবন নষ্ট করে চলছে আমরা "ক" জন তার প্রতিবাদ করছি বা সরকার কি পদক্ষেপ নিচ্ছে।আজকাল টিভির এই সব লাইভ অনুষ্ঠান থেকে গান বাজনার নামে যে লাইভ অনুষ্ঠান হচ্ছে তা থেকে প্রেম বিনিময় ছাড়া আর কি শিখছে? এসব অনুষ্ঠান শুনে এই কোমলমতি ছেলেমেয়েরা যৌনতার সূড়সূড়ি পাচ্ছে বৈতো কি? এর ফলে পদস্খলন হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের।আমাদের দন্ডবিধিতে ব্যাভিচারের মত একটি গুরুতর আপরাধ রয়েছে, যার ফলে শুধুমাত্র প্রোরচনাদাতাকে শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে অথচ মূল আপরাধিকে শাস্তির বাইরে রাখা হয়েছে।দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় বিবাহের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য ব্যাভিচারকে অপরাধ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে,"কোন লোক যদি অপর কোন নারীর স্বামির বিনা অনুমতিতে বা যৌনকামনার উপস্হিতি ছাড়া যৌনসংগম করে ,যে নারী অপর কোন পুরুষের এরুপ যৌনসংগম ধর্ষনের অপরাধ না হলে ,সে লোক ব্যাভিচার করেছে বলে পরিগনিত হবে ও তাকে যে কোন বর্ননার কারাদন্ডে যার মেয়াদ ৭ বছর পর্যন্ত হতে পারে।এরুপ ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকটি দুষ্করমের সহায়তাকারিনী হিসেবে শাস্তিযোগ্য হবে না।" যেহেতু ধর্ষন নয় বুঝা যাচ্ছে এখানে নারীর সম্মতি ছিল।এভাবেই মূল আপরাধি হয়েও নারীরা আইনসিদ্ধভাবে শাস্তির বাইরে থাকে।এই আইন প্রকৃয়ায় একজন আপরাধিকে ব্যাভিচারে উৎসাহ করা হয়েছে।একটি মুসলিম দেশে এ রকম আইন কিভাবে কার্যকর থাকে তা বিবেচনার ভার আইনজ্ঞাদের উপর এবং তাঁরা ভেবে দেখতে পারেন।ব্যাভিচারকে রোধ করার জন্য সরকার সহ সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।এ থেকে পরিত্রানের উপায় হলো ছেলেমেয়েদের সচেতন করে তোলা আর এগুলোর সঠিক ব্যাবহারের প্রতি আদেশ করা।আমাদের করনীয় কি এ ব্যাপারে? যারা এগুলো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে তারা সামজের এলিট।এখানে আছে কোটি কোটি ডলারের খেলা।তারা কখনো এগুলো বন্ধ করবে না।অমুসলিমদের কাছে এগুলো হতে পারে নগন্য কারন তাদের পরকালের কোন জবাবদিহিতা নেই।যারা মুসলমান তাদের আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে এবং তার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহী করতে হবে।আমরা পারিবারিকভাবে এ জিনিসগুলো নিয়ন্ত্রন করতে পারি। যারা অভিভাবক রয়েছেন তাদের উচিত সন্তানদের এ সব ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করা।ভাল ও মন্দের দিকগুলো তাদের মস্তিস্কে পরিবেশিত করা ও রিজন গুলো তুলে ধরা।কোন কিছু ডাউনলোড করার দরকার থাকলে বাবা মা সাথে বসে সহযোগিতা করা।যারা টিভি দেখেন অশ্লিল চ্যানেলগুলো ডিলিট করে দেয়া আর অসুস্থ বিনোদন থেকে দূরে থাকা।আপনার সন্তানকে মানুষ করার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।আমার আপনার কারনেই আজকের জেনারেশন অসুস্থ সংস্কৃতির কবলে নিপতিত হয়েছে।শুধু তারাই ধংস হচ্ছে না।ধংস হচ্ছে আপনার আমার পরিবার আর ভবিষ্যৎ বংশধর।ইসলামের দাওয়াত বাড়ানো ও আল্লাহর ভয় মানুষের মধ্যে জাগরিত করা প্রতিটি মুসলিমের আজকের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।তাই আর দেরি না করে আপনার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করুন ও জাতিকে সব রকম অশ্লিলতা থেকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা নিন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন