তোমাকে মনে পড়ে যায়: কবি মোহন রায়ান।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:১৩:১৮ রাত

মধুর কেন্টিনে যাই

অরুনের চায়ের কাপে চুমুক

দিতে দিতে

বসু,তোমাকে মনে পড়ে যায়।

তোমার সেই সদা হাসিমাখা উৎফুল্ল ঠোঁট

উজ্জল চোখের দুতি

সারাক্ষন চোখে চোখে ভাসে

বুঝি এখনই সংগ্রাম পরিষদের

মিছিল শুরু করার তাগিদ দিবে তুমি

ওই তো,

ওই তো সবার আগে তুমি

মিছিলে

কি সুঠাম তোমার এগিয়ে যাবার ভংগিমা

প্রতিটি পা ফেলছো কি দৃঢ় প্রত্যয়ে

কি উচ্চকিত তোমার কন্ঠের শ্লোগান

যেন আকাশ ফেটে পড়বে নিনাদে

হাত উঠছে হাত নামছে

মাথা ঝুকছে ঘাড় দুলছে চুল উড়ছে বাতাসে

ওই তো

ওই তো আমাদের ঐক্যের

পতাকা হাতে এগিয়ে যাচ্ছ তুমি

মধুর কেন্টিনে যাই

নিত্য নতুন প্রোগ্রাম

মিছিল সভা বটতলা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে

দুর্জয় শপথ

সামরিক জান্তার ছোবল থেকে শিক্ষাজীবন,

শিক্ষাংগনে স্বায়ত্বশাসন রক্ষার অংগীকারে

ডাক দেই দেশবাসীকে

তোমারি মত নিরাপত্বাহীনতায়

প্রতিটি ছাত্রের দুর্বিষহ

জিম্মীজীবন এখনো এ ক্যাম্পাসে

হলের গেটে গেটে পড়ে থাকে ভয়ংকর

বিস্ফোরম্মুখ তাজা বোমা

প্রতিদিন চরদখলের মত

হল দখলের হিংস্র মহড়া

গুলি ও বোমা ফাটার শব্দ

এখনো আমাদের প্রতিদিনের

জীবনের অংশ

এ অস্ত্রের উৎস কোথায়?

মধুর কেন্টিনে যাই

প্রতিদিন আমাদের জীবন হাতের মুঠোয়

প্রতিদিন হামলা রুখতে হয়

বসু,আজ সেই প্রতিরোধের সারিতে তুমি নেই

আজ বড়ই অভাব অনুভব করছি তোমার

শিক্ষাভবন অভিমুখে সামরিক শাসন

ভাংগার প্রথম মিছিলে তুমি ছিলে

এমন কোন ধর্মঘট,হরতাল,ঘেরাও,মিছিল আন্দোলন নেই যে

তুমি ছিলে না

সেই নৃশংস ঘাতক রাতেও

তুমি অস্ত্রধারীদের দূর্গের দিকে

অবিচল যাত্রা অব্যাহত রেখেছিলে

ঘাতক বুলেট ভেদ করে গেছে

তোমাকে কিন্তু তুমি পিছু হটনি

তুমি বীর,তুমি সাহসী যোদ্ধা,

তুমি সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান

যুগে যুগে সংগ্রামীদের অফুরান প্রেরনা

মধুর কেন্টিনে যাই

অরুনের চায়ের কাপে চুমুক

দিতে দিতে

বসু,তোমাকে মনে পড়ে যায়।

কাউন্টারের সামনে কতদিন

তোমার সংগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খেয়েছি

কতদিন তুমি আমাকে চায়ের

পয়সা দিতে দাওনি

কতদিন চায়ের সংগে একটি

সিংগরা বা কেকের আবদার করেছ

কতদিন তোমার সংগে খোশগল্প

হাসিঠাট্টায় মেতে উঠেছি

বসু,

আজ সব কথা মনে পড়ে যায়।

রিপার বিয়েতে তুমি বলেছিলে

অ্যাকশনে আপনার আর আগে থাকার

দরকার নেই,আমরা তো আছি

বসু,তুমি রক্ত দিয়ে,জীবন দিয়ে

সেকথা প্রমান করে গেলে

বসু,তুমি আমার শ্রেষ্ঠ

ভালবাসার একটি রক্তকরবী বৃক্ষ

মধুর কেন্টিনে যাই

বসু,

তোমাকে মনে পড়ে যায়।

তোমার মৃতয়ুর সেই নৃশংস ঘাতক রাত্রিতে

আমি ছিলাম ঢাকার বাইরে

তোমার গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশ আমি দেখিনি

তোমার মৃত্যুর খবর শুনে

বার বার কান্নায় ভেংগে পড়ছিলো মন

তবু সেই রাত্রে আড়াইশত মাইল দূর

থেকে সংগে সংগে রওয়ানা দিয়েছিলাম

তোমার হত্যার প্রতিশোধ নিতে

তোমার খুনীদের রক্তে হাত রাংগাতে

বসু,আমরা বহুবার তোমার

হত্যার প্রতিশোধ নেবার শপথ

গ্রহন করেছি।

আপরাজেয় বাংলার পাদদেশে,শহীদ মিনারে,বটতলায়,বায়তুল মোকারমে,সারা দেশ তোমার হত্যার বদলা চায়

কিন্তু এখনো তোমার খুনীরা

প্রকাশ্যে সগর্বে ঘুরে বেড়ায়

এখনো তোমার ঘাতকেরা ক্ষমতার

কালো কেদারায় বসে রাইফেল

তাক করে আছে আমাদের প্রতি

বসু,আমাদের শিক্ষানীতি এখনো বদলায় নি

সামরিক খাতে ব্যায় শিক্ষাখাতের চেয়ে আরো বেড়েছে

নতুন নতুন ক্যান্টনমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা হলেও

সংস্কারের অভাবে জগন্নাথ হলের

জীর্ন ছাদ ধ্বসে তোমার অনেক বন্ধু মারা গেছে

এখনো হলে হলে মেধাভিত্তিক সিট বন্টন চালু হয়নি

বসু,তুমি এসবের পরিবর্তন চেয়ে জীবন দিয়েছ

কিন্তু আমরা এখন তোমার একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান করতে পারিনি

বসু,আমরা তোমার কাংখিত লড়াই চুড়ান্ত করতে পারিনি

আমরা তোমার হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারিনি

আমরা এখনো অজস্র বসু হতে পারিনি বলেই--

মধুর কেন্টিনে যাই

বসু,

তোমাকে মনে পড়ে যায়।

খুব মনে পড়ে,মনে পড়ে

মনে পড়ে।

বিষয়: বিবিধ

১২৭৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

342564
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৪
নাবিক লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File