এসি ল্যান্ড যখন আল্লাহর মেহমান।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:১০:৫৪ দুপুর
চব্বিশ বছর পর হঠাৎ একটি টেলিফোন এলো।ভদ্রলোককে চিনতে কষ্ট হলো না কারন আমার স্ত্রীর কাছ থেকে আমার নাম্বারটি সংগ্রহ করেছিলেন? ফোন পেয়ে ঠিক আগের মতই জিজ্ঞাসা করলাম কিরে দোস্ত! এত বছর পর স্মরন করার কারন কি? বন্ধু বললো,হাজিদের আল্লাহর মেহমান বলা হয়,আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই আল্লাহর মেহমান হয়ে মক্কায় আসবো।আর তুই সেদেশে আছিস তা-ই যোগাযোগ করাটা নৈতিকতার মধ্যে পড়ে।বন্ধু এখন একজন আমলা যদিও প্রমোশনগুলো বাগাতে পারেনি ঠিকমত।ছোটবেলা থেকে বন্ধুটি মেধাবি ছিল না তবে দিন রাত পড়ে পড়ে একবারেই বিসিএস পাস করে ফেলেছে।১৯৮৩ সালে বন্ধু এফ রহমান হলে থাকাকালীন আমার আর এক বন্ধু (এখন সুপ্রিম কোর্টের উকিল) সহ মাঝে মাঝে যেতাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য।তখনো দেখতাম মাগরিবের সময় হয়েছে বন্ধুটি পড়ছে।যাই হোক, আল্লাহ তার পরিশ্রমকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছেন।১৯৮৯ সালে এক বন্ধু তার একটি জমি নিয়ে পড়ে ভীষন মুশকিলে।বন্ধুটির প্রতিবেশী তার যায়গার কিছু অংশ দখল করে নেয়।তখন জানতে পারে আমাদের পড়ুয়া বন্ধুটি সেখানকার এসি ল্যান্ড।যায়গা নিয়ে মুশকিলে পড়া বন্ধুটি আমার উকিল বন্ধুটিকে নিয়ে যায়, বন্ধু এসি ল্যান্ডের কাছে ও তার সুরাহা হয়।বন্ধুটি চাকুরির কয়েক বছরে বানিয়ে পেলেন টাকা।সারা জীবন সাইলেন্ট থাকা বন্ধুটি ভেতরে এ কাজ করবেন তা অনেকে জানতো না।গত নভেম্বরে আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু যিনি এখন এডিশনাল সেক্রেটারি,তিনি ও অন্যান্য দুই বন্ধু মিলে এক বিকেলে ইন্জিনিয়ার্স ইনিষ্টিটিউশনে আড্ডা হয়।এডিশনাল সেক্রেটারি বন্ধুটি চমৎকার একটি কথা বললেন সাইলেন্ট অফিসারদের সম্পর্কে।তিনি বললেন আমি হিন্দু অফিসার আর অনেকে মনে করে আমার টাকা পয়সা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেই।কিন্তু যাদের মানুষ সাইলেন্ট ও ভদ্র অফিসার মনে করে তারা বছরে দু'টো কেস করে হয়ে যায় কয়েক কোটির মালিক।উনারা তাদের চাকুরি জীবনে ভদ্র রাখার জন্য এ টেকনিকটি অবলম্বন করেন।এটি আমালাদের একটি কৌশল।এর মধ্যে ভাল যে নেই তা নয় কিন্তু সংখ্যাটি কম। এসি ল্যান্ড বন্ধুটি হজে আসার আগে আমি হজ সম্পর্কে একটি পরিচ্ছন্ন নিয়ম কানুন সংক্রান্ত টপিক পাঠিয়েছিলাম।সেখানে মুল কথাটি ছিল-আল্লাহ পাক পবিত্র তিনি তার বান্দাহর কাছে চান পবিত্র ইবাদত।বান্দাহ তার জান ও মাল খরচ করবে যা পবিত্র।সারা জীবনের অনৈতিক উপায়ে অর্জিত সম্পদের উপর বহাল থেকে জীবনের শেষে হজব্রত পালন করাটি কি যুক্তিযুক্ত? এ প্রশ্নটি সাধারনভাবে রেখেছিলাম টপিকটিতে।বন্ধুটি আর যোগাযোগ করলেন না।আমি পৌঁছানোর দায়িত্বটা পালন করেছি মাত্র।আল্লাহর সাথে কেন এট প্রহসন? যদি কেউ জীবনে অপরাধ করে থাকে এবং এক সময় তার মনে হয় আমি অপরাধ করেছি তাহলে তাকে ইস্তেগফারে আসতে হবে।এটি একটি বড় সাইন যা আল্লাহ পছন্দ করেন।বান্দাহ যখন অপরাধ করে আল্লাহর কাছে বার বার ফিরে আসে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি খুশি হন।তাহলে ইস্তেগফার কেমন হবে? ইস্তেগফারটি হতে হবে নিরেট খাঁটি ইস্তেগফার।সুরা নিসার ১৭-১৮ আয়াতে আল্লাহ পাক ইস্তেগফার সম্পর্কে বলেন,'নি:সন্দেহে আল্লাহর পক্ষে ফেরা সম্ভব তাদের প্রতি যারা কুকর্ম করে অজ্ঞানতাবশত: তার পর অবিলম্বে তওবা করে অতএব এরাই-আল্লাহ এদের প্রতি ফেরেন আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞাতা,পরমজ্ঞানী।আর তওবা তাদের জন্য নয় যারা কুকর্ম করেই চলছে,যে পর্যন্ত না মৃতয়ু তাদের কোন একের কাছে হাজির হলে সে বলে-আমি অবশ্যই এখন তওবা করছি।তাদের জন্য আমরা তৈরি করে রেখেছি ব্যাথাদায়ক শাস্তি।'আপনি জীবনের এক পর্যায়ে এসে দেখলেন বাড়ি গাড়ি করেছেন,ছেলে মেয়েদের বিদেশে পড়িয়েছেন ঘুষের টাকায়।আপনার চৈতন্য হলো ও বুঝতে পারলেন।তওবা করার জন্য এগিয়ে এলেন কিন্তু ভোগ করছেন সে সমস্ত ইনভেষ্টমেন্টের অর্জিত অর্থ।আপনি হজ-ওমরাহ করতে উদ্যত হলেন কিন্তু ফিরিয়ে দিলেন না মানুষের সে সমস্ত অর্থ।অথবা কেউ আপনাকে বুদ্ধি দিল এখন আপনি চিল্লায় বেরিয়ে পড়ুন।আপনি সংসার ছাড়া হয়ে গেলেন।এটি তওবা নয়? আল্লাহ কাকে ক্ষমা করবেন,কাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন বা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন সেটি একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ার।আমাদের চিন্তায় বলে একজন জান্নাতে যাবে হতে পারে সে জাহান্নামি কারন আমরা তার অন্তরের খবর জানি না।বনি ইসরাইলে একজন পাপাচারি মহিলা একটি তৃষ্নার্ত কুকুরকে পানি করে সফল হয়েছেন।সুতরাং আল্লাহ কাকে ক্ষমা করে পুরস্কৃত করবেন তিনি জানেন অন্য কেউ জানে না।তবে আমরা কুরআন ও হাদিস থেকে জানতে পারি যারা আল্লাহর নিয়ম কানুন থেকে গাফেল থাকবে তাদের শাস্তির পরিনাম কি? জান্নাতের পুরস্কারের কথা যেমন বর্ননা করা হয়েছে তেমনি বর্ননা করা হয়েছে জাহান্নামের আযাবের কথাও।আমরা সে তথ্যগুলো পৌঁছে দিতে পারি কিন্তু বলতে পারি না অমুক জান্নাতে,জাহান্নামে যাবে বা অমুক শহিদ হয়েছে।আমরা এক একজন মানুষ সমাজে বাস করছি।যাদের ছাত্র জীবনে ২০০০ টাকা খরচ করার আর্থিক সামর্থ ছিল না তারা চাকুরি জীবনে প্রবেশ করে সরকারের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে মাত্র ২০ বছরের মাথায় ১০/২০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবেন এটি কি করে সম্ভব? একজন পিয়ন দু'টি বাড়ির মালিক কিভাবে হয়ে যান? স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাড়ে চার হাজার বাড়ির মালিক যারা হয়েছেন তারা এ সমস্ত টাকা কোথায় পেলেন?ব্যাংকিং সেক্টরের প্রথম সমস্যাটি শুরু হয় বর্তমান সরকারের গতবারের আমলে সৃষ্ট শেয়ার কেলেঙ্কারি থেকে। বলা হয়ে থাকে, শেয়ার মার্কেটে কারসাজির মাধ্যমে জুয়াড়িরা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। দেশের সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট ধুরন্ধর প্রকৃতির একটি মুখচেনা সিন্ডিকেট মাত্র এক বছরের মধ্যে এই বিশাল অঙ্কের টাকা শেয়ার মার্কেট থেকে তুলে নেয় এবং পুরো টাকাই দেশের বাইরে বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, সৌদি আরব, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পাচার করে। এই সময়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির কারণে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠলে সরকার কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কমিশন রিপোর্ট দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশে গঠিত হাজার হাজার কমিশনের মধ্যে একমাত্র ইব্রাহিম খালিদের কমিশন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সব রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে সত্য ও বাস্তব ঘটনার নিরিখে প্রজ্ঞা ও মেধা খাটিয়ে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপট, কারণ এবং দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে রিপোর্ট দেয়।কিন্তু অর্থমন্ত্রী বরাবর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কমিশনের রিপোর্ট দেয়ার পর সারা দেশে আবার হইচই পড়ে যায়। রিপোর্টে বিস্তারিতভাবে দেখানো হয়, কিভাবে সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভুয়া কাগজপত্রের বিপরীতে এবং ভুয়া বিও অ্যাকাউন্ট খুলে হাজার হাজার কোটি টাকা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে গিয়ে পুঁজি হারিয়ে ফেলেন। রিপোর্টে কারসাজির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে তাদের অপকর্মের ধরন ও প্রকৃতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী রিপোর্ট পাওয়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, উল্টো মন্তব্য করে বসেন, ওরা অত্যন্ত শক্তিশালী।তারা কি সরকার বা আল্লাহর চেয়েও শক্তিশালী? এই বিত্তশালি পরিবারগুলো যখন হজ,ওমরাহ ও দান খয়রাতের নামে কাজগুলো করে তখন স্বভাবতই একজন সাধারন ইসলামি জীবনযাপন কারীর কাছে মনে হয় এরা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ।আবার অনেকে তাদের আপ্যায়ন করা বা সহযুগিতা করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন।গত কয়েক বছর আগে আমার একজন আত্মীয় জেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এসেছিলেন পরিবার সহ হজব্রত পান করতে।আমি নি:সন্কোচে বলেছিলাম ভাইজান,হজ করতে তো এলেন তওবা করে এসেছেন তো? তিনি বললেন তওবা তো প্রতিদিনই করছি আর প্রতিদিনই ভংগ করছি।ইসলামের এত নিয়মকানুন পালন করে চাকুরি করা কঠিন।যাই হোক তিনি সব না বললেও সত্যতা স্বীকার করেছেন।আল্লাহর ধর্ম ইসলাম পালন করার জন্য একজন মানুষের ডিটারমিনেশনই জরুরি।আমরা যদি মনে করি সৎ পথে থাকবো তাহলে যত কষ্টই হোক তা পালন করা সম্ভব।যার যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থেকে আল্লাহর ইবাদতগুলো করার মাধ্যমে রেয়েছে স্বার্থকতা।আমরা দুনিয়ার সামান্য ক'টি দিনের জন্য চাটুকারিতা,অন্যায় উপভোগ,পরের সম্পদ লুন্ঠন করে চলছি।অথচ ভাবছিনা রাতে ঘুমুতে গেলে সকালে উঠতে পারবো কিনা? আল্লাহর বিধিবিধানের প্রতি কোন লক্ষ্য নেই,গীবত ,চোগলখুরি ও পাহেসা কাজ করছি আবার ভাল কাজও করছি পরকে ঠকিয়ে।আমাদের আশে পাশে এদের দেখেও কথাগুলো আমরা পৌঁছিয়ে দেয়ার কাজ করছি না বরং তাদের সাথে হাত মিলিয়ে নিজের পার্থিব স্বার্থ আদায় করার জন্য নিজেদের আগ্রবর্তী করছি।ইউনুছ আ; ও ঈসা আ; তাদের জাতিকে আখ্যায়িত করেছিলেন অসৎ ও ব্যাভিচারি জাতি হিসেবে।সে জাতি নি;শেষ হয়নি।নবী মোহাম্মদ সা; এর জাতির একটি বড় অংশ সমাজে ছড়িয়ে চিটিয়ে আছে যাদের জন্য দাওয়াতকে বেগবান করা আমাদের সকলের জন্য জরুরি যার যার ক্ষমতা মত।কাউকে পাকড়াও করা নয় বরং পৌঁছানোর দায়টি রয়েছে আমাদের। আমরা দোয়া করবো - আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে দ্বীনের দিকে ঘুরিয়ে দেন।দ্বীনকে বুঝে তা পালন করার তাওফিক দেন।রসূল সা: একদিন সাহাবাদের প্রশ্ন করেছিলেন,তোমরা কি জান হতভাগ্য কে? সাহাবারা বলেন,যার কোন অর্থকড়ি নেই তারা হতভাগা।রসূল সা: বললেন,আমার উম্মতে হতভাগা হলো তারা যারা নামাজ ,রোজা ,যাকাত ও হজের মত ইবাদত নিয়ে আসবে ও তার সাথে অসংখ্য অপরাধ করবে তার পর তাদের অপরাধের জন্য ভাল কাজগুলো দিতে দিতে একসময় সমস্ত ভাল কাজ শেষ হয়ে যাবে।তার পর পাওনাদারদের সমস্ত গুনাহগুলো চেপে দিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
বিষয়: বিবিধ
১১০৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন