বাঙালির আত্মসমালোচনা নেই কেন?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:২৮:১৩ বিকাল
আমাদের প্রতিটি মানুষের জন্য এ বিষয়টি কত গুরুত্বপূর্ন তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? শৈশব , কৈশর কত না ভাল ছিল, যখন জীবনের কোন হিসাব ছিল না।যৌবনের উম্মাদনা তাড়িত করেছে, পাখা মেলে বেড়িয়েছে জীবনের উঠতি বয়সে।চল্লিশের পরে আসে ভাটির টান।তখন আর শক্তির দাপট থাকে না।আত্মসমালোচনাই এখন একমাএ স্ংগী।যদি দিনের শেষে বিচানায় গিয়ে মনকে জিজ্ঞাসা করি , কি করেছ দিনের মুহূর্ত ও ,ঘন্টাগুলোকে? হিসাব দাও।তোমার হিসাবের খাতা খোল।যদি পাও ভাল তাহোলে আরো ভালর সাধনা কর।আর যদি পাও মন্দ ধিক্কার জানাও তোমার নফসকে।অ্ংগীকার কর ,ইস্তেগফার কর, নিদ্রা ভ্ংগ কর, লুটিয়ে পড় তোমার রবের পায়ে। এ তোমাকে পবিএ করার এক মহাপরিকল্পনা।পবিএ আত্মা কখনো ভুলে যায় না এ কাজ।রাসূল সা: বলেছেন,একজন জ্ঞানী লোকের চারটি সময় আছে একটি হলো তার আত্মসমালোচনার সময়।ওমর (রা) বলতেন , নিজের সমালোচনা কর ও মুল্যায়ন কর কেয়ামোতের সমালোচনা ও মুল্যায়নের আগে,তোমার আমল ওজন কর কেয়ামতের ওজনের আগে।প্রতি রাতে হাতলোয়ালা চাবুক পায়ে মেরে জিজ্ঞাসা করতেন,বল আজকের দিন তুমি কি করেছ? হাসান আল বসরি (র) বলেন,একজন মু'মিন(বিশ্বাসি) নিজের জন্য পুলিশের মত কাজ করে।সে সমালচনা করে আল্লাহর জন্য আর অবশেষে আল্লাহ ই মুল্যায়ন করবেন।তনি আরো বলেন, হে আদম সন্তান!তোমারা মাএ কতগুলো দিনের সাথে বাঁধা।একটি দিন চলে যায় , জীবনের একটি অ্ংশ নি:শেষ হয়ে যায়।আবু আলী আদ্দাক্কাক বলেন,একটি দিন চলে যায় , একটি অ্ংশ চলে যায়,আমার আত্মায় থেকে যায় তিক্ততার স্বাদ এব্ং ধীরে ধীরে নি:শ্বেষ হয়ে যায়।হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায়,একজন ব্যবসায়ী তার হিসাবের খাতা বন্ধ করে প্রতি মাসের শেষে।দিনের হিসাব দিনে চুলচেরা পরিক্ষা করে।ভুল হলে এন্ট্রি করে পরিশুদ্ধ করে নেয়।বছরের শেষে ফাইনাল হিসাব করে।আগের বছরের সাথে পরের বছরের বিশ্লেষন করে উন্নতি হলো না অবনতি হলো।মানব জীবন ও তাই। ৬০ সেকেন্ডে মিনিট ,৬০ মিনিটে ঘন্টা ,২৪ ঘন্টায় এক দিন , ৩০ দিনে মাস , ১২ মাসে বছর। একটি বছর ছোট নয়।আত্মসমালচনাকারি হেরে যায় না।যদি না হয় দিনে, করে সে সপ্তাহে , না হয় মাসে , না হয় বছরে।আর বলে, হে আল্লাহ ! তোমার কারনে আমি বেঁচে আছি সকালে ও সন্ধায়, তোমার জন্যই আমি বাঁচি , তোমার জন্যই মরি আবার তোমার কাছেই আমার ফিরে যাওয়া , আমার পাহাড়সম গুনাহ ক্ষমা করে দাও।
আত্মসমালোচনা খুব সহজ কাজ নয়। আমরা ধরেই নিই যে আমার কোনো ভুল হতে পারে না। ভুল জিনিসটা সব সময় অন্যের। জাতি হিসেবে আমাদের যেখানে সাফল্যের অভাব, সেটা হয়েছে অন্য জাতি আমাদের প্রতি অন্যায় করেছে বলে। আমরা আসলে বুদ্ধিমান হিসেবে জগতের সেরা। কিন্তু অন্য জাতি আমাদের সুযোগ দেয় না বলে আমাদের বুদ্ধিটা ফুটে ওঠে না। এমনি পরিবেশে রবীন্দ্রনাথ বললেন,
'সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালি করে মানুষ কর নি।'
কী সাংঘাতিক আত্মসমালোচনা! ভাগ্য ভালো রবীন্দ্রনাথ এ যুগে এটা বলেননি।জাতির মানুষ হিসেবে আমরা অনেকেই আত্মসমালোচনা করতে জানি না।কিন্তু আমাদের নিয়ে অন্য জাতির মানুষেরা জোক করে থাকে। একজন তার লেখায় বলেছিল পাকিস্তানিরা বাঙালিদের নিয়ে কী জোক বলে। সেটি হলো-একজন পাকিস্তানি মৌলভী ওয়াজ করছিলেন। তিনি বললেন, বেহেশতে একটা পুকুর আছে আর সেই পুকুর পাড়ে ছিল একটা গাছ। গাছটির যে পাতা মাটিতে পড়ে সেটি বাঘ হয়ে যায় আর যেটি পানিতে পড়ে সেটি কুমির হয়ে যায়। এ সময় এক তরুণ দাঁড়িয়ে বলল, 'আমি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?'পিতৃসুলভ স্নেহে মৌলভী সাহেব বললেন, 'নিশ্চয়ই, জিজ্ঞেস করো।'তরুণটি জিজ্ঞেস করল, 'যদি একটি পাতার অর্ধেক মাটিতে আর বাকি অর্ধেক পানিতে পড়ে তাহলে কী হবে?'মৌলভী সাহেবের মুখ থেকে স্নেহের সব চিহ্ন উবে গেল। রাগে চিৎকার করে তিনি বললেন, 'তুম জরুর বাঙালি হো।'
আর একজন একটি গল্প বলেছিল। একবার একদল পর্যটক নরক দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁরা দেখলেন যে বড় বড় কড়াইতে ফুটন্ত তেলে পাপীদের সিদ্ধ করা হচ্ছে। আর পাপীরা যাতে পালাতে না পারে সে জন্য কড়াইয়ের চারদিকে প্রহরীরা পাহারা দিচ্ছে। ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে একটি কড়াইয়ের কাছে গিয়ে তাঁদের চোখ কপালে উঠে গেল। সেখানে ফুটন্ত তেলে পাপীদের ফোটানো হচ্ছে কিন্তু কোনো প্রহরী পাহারায় নেই। তারা একটু দূরে বসে গল্প করছে। বিস্মিত পর্যটকরা একজন প্রহরীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে কেন ওই কড়াইটির চারপাশে কোনো পাহারা নেই?প্রহরী বললেন, 'ওরা বাঙালি পাপী। ওখানে একজন পালাতে গেলে আর একজন তারা পা ধরে টেনে নামিয়ে ফেলে।'আর একটি জোক বলেছিল , যানজট, বন্যা, ভেজাল ইত্যাদির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এক লোক ঢাকা ছেড়ে মহাকাশে চলে গেল এবং সেখানেই বসবাস করতে শুরু করল। কিন্তু তার আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব থাকে ঢাকায়। একবার ঈদের ছুটিতে সে ঢাকায় বেড়াতে এলো। আর তা জানতে পেরে তার প্রিয় বন্ধু নুরুল দেখা করতে এলো। কথায় কথায় নুরুল বলল যে সেও ঢাকায় ফেডআপ। বন্ধু তাকে মহাকাশে নিয়ে যেতে পারবে কি? বন্ধু বলল, 'তুই আমার সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু। তুই যখন স্পেসে যেতে চাচ্ছিস নিশ্চয়ই নিয়ে যাব।' এবারে নুরুল বলল, 'কিন্তু সেখানে একা গেলে তো ভালো লাগবে না। কয়েকজন আত্মীয়-বন্ধুকে সঙ্গে নিলে ভালো হয়।'
বন্ধু বলল, 'তুই তাহলে ভেবেচিন্তে কাল আমাকে জানা কয়জনকে সঙ্গে নিতে চাস। পরদিন নুরুল জানাল, সে ১০০ জনকে সঙ্গে নিতে চায়। বন্ধু শুনে বলল, 'না রে তাহলে আর হলো না!'নুরুল বলল, '১০০ জন কি খুব বেশি হয়ে যায়?'
বন্ধু বলল, 'তা নয়। তবে ব্যাপার কি জানিস, বাঙালি একাই ১০০ হতে পারে, কিন্তু ১০০ বাঙালি এক হতে পারবে না।'
কবিগুরু কি আর এমনি লিখেছিলেন তাঁর 'রাজা' নাটকে,
'আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে,
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কি স্বত্বে?' আঠার বছর আগে আমি যে কম্পানীতে চাকুরি করতাম সেখানে দু'জন 'টি বয়' চেয়েছিল ম্যানেজমেন্ট।একজন ইন্ডিয়ান নেয়া হলো।সে চাইতো আর একজন ইন্ডিয়ান নিয়ে আসবে।আমি বলে কয়ে একজন বাঙালিকে নিয়ে আসার ব্যাবস্হা করলাম।প্রথম মাসে আমি বুদ্ধি শুদ্ধি দিলাম কিভাবে কার সাথে আচার ব্যাবহার করবে।যখন আরবদের সাথে তার পরিচয় হয়ে গেল তখন সে আমার আপ্যায়ন করা বন্ধ করে দিল।আমি যখন চা বা কফির অর্ডার দিতাম তখন সে ইন্ডিয়ানকে পাঠাতো।একদিন বলেই ফেললো আমি ব্যাস্ত।এ হলো বাঙালি জাতির ব্যাবহার।এর জন্য একজন মানুষ দায়ী নয়,এটি হলো অশিক্ষা।আমাদের সু-শিক্ষা ও আত্মসমালোচনা খুব একটা নেই বলে আমাদের অনেক কিছু থাকতেও আমরা বন্চিত ও নিগৃহীত।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন