মুসলিমদের হয়েছে কি?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:০৬:৫৯ দুপুর
প্রতিটি ভাষাভাষি মানুষ তাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য নিজের ভাষাকে পছন্দ করে নেয়।মাতৃভাষার প্রতি থাকে তাদের এক চরম ভালবাসা।যেমন আমাদের রয়েছে বাংলা ভাষা।নিজের ভাষায় যেভাবে ভাব প্রকাশ করা যায়, তা যায় না অন্য কোন ভাষায়।আল্লাহ পাক যে ভূমিতেই নবী রসুল প্রেরন করেছেন সে ভাষাতেই তার বানি পাঠিয়েছেন যেন তাদের বুঝতে কষ্ট না হয়।আলকুরআনে ২৫ জন নবী রসুলের কথা বর্ননা করা হয়েছে।অথচ যুগ যুগ ধরে লাখ লাখ নবী রসূল এসেছেন মানুষের সংস্কারের জন্য।কোন কোন নবী রোজ ক্কেয়ামতে উঠে আসবেন তাদের কোন উম্মত থাকবে না।তাঁরা আল্লাহর বানি প্রচার করেছিলেন তাদের এই হায়াতে জিন্দেগীতে , কেউ স্বীকার করে নেয় নি কিন্তু তাঁরা কামিয়াব হয়েছেন।এখন আমার হৃদয়ে ভাবনার জাল বুনে, কে আমায় অত্যন্ত সুন্দর, পবিত্র, সহজ, প্রাঞ্জল, মধুর ও সৌরভমণ্ডিত ভাষা দিয়ে আমার লেখনিকে প্রস্ফুটিত করেছেন?যে ভাষা ব্যবহারে আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন পূর্ণ অধিকার ও অবাধ স্বাধীনতা। পার্থিব জীবনে এ ভাষাই আমার পরিচয়ের মূল। আমি ছিলাম রিক্ত ও নি:শ্ব।দীর্ঘ পরিসরে আরবি ভাষায় কোরআন পড়ে পড়ে মুখস্ত করে ফেলেছি অনেক আয়াত। পৃথিবীতে অসংখ্য হাফেয ও ক্কারি রয়েছে আলকুআনের।পৃথিবীতে এত জাতি ,ধর্ম ও ধর্মগ্রন্হ কিন্তু কেউ মুখস্ত করতে পারে নি তাদের ধর্মগ্রন্হ। এখানেই আলকুরআনের মোজেযা। যাদের ভাষা আরবি তাদের সাথে কথা বলে বুঝেছি কত আনন্দের সাথে বুঝে পড়ছে।মাতৃভাষার কারনে নিজ ধর্মকে বুঝতে তাদের অনেক সহজ হয়েছে।আমাকে প্রশ্ন করে তোমার ভাষায় আলকোরআন তর্জমা হয় নি?এর পরই আমার মস্তিষ্ক খুলে গেল।মাতৃভাষায় আল কোরআন পড়তে পড়তে আমারই সঙ্গোপনে মাতৃভাষার প্রতি এবং কোরআনের শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রতিটি উপদেশ আমাকে নাড়া দিতে থাকলো।এতদিন যা না বুঝে পড়েছি,এখন বুঝে পড়ায় অতি সহজে রপ্ত করতে পারছি।চমৎকার ভাল লাগা আর ভালবাসার মধ্যে ইবাদতকে পূর্নতায় নিতে আমার ভাষা আমাকে সাহায্য করছে।পড়তে পড়তে যখন সুরা আর রোমের ২২ ও সুরা ইব্রাহিমের ৪ আয়াত এসে উপস্হিত হলো তখন আমার মাতৃভাষা ও আরবি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল।সুরা ইব্রাহিমের ৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আর আমরা এমন কোন রসুলকে পাঠাইনি তার স্বজাতির ভাষা ব্যাতিত,যেন তাদের জন্য তিনি সুস্পষ্ট করতে পারেন।" আর সুরা আর রোমের ২২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে মহাকাশমন্ডলি ও পৃথিবীর সৃষ্টি,আর তোমাদের ভাষা ও বর্নের বৈচিত্র।নি:সন্দেহে এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানী লোকদের জন্য।' জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন কি? যে ভাষায় আলকুরআন রচিত হয়েছে সে ভাষাটি রপ্ত করা একজন মুসলিমের জন্য ফরয কিন্তু আমরা তা করছি কি? সে ভাষার মালিক আমাদের সাথে কথা বলছেন ও আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে কথা বলছি কিন্তু একে অন্যকে বুঝতে পারছি না।আমরা একে ধরে চুমু খাচ্ছি,কপালে ধারন করছি কিন্তু এর ভেতরে কি আছে তা জানার চেষ্টা করছি না।এর নিয়মকানুন গুলো মানার চেষ্টা করছি না। এ ভাষার মালিকের সাথে যোগাযোগের জন্য কোন মাধ্যম নেই একমাত্র তার পাঠানো কুরআন ও নবী সা: এর হাদিস ছাড়া।নামাজি যখন নামাজে দাঁড়িয়ে যায় খুলে যায় সব পর্দা।আমরা কথোপোকথন করি কিন্তু অসাড় হৃদয় বুঝতে পারে না।আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি তা আমরা অনুধাবন করি না।আমাদের উপর বিপর্যয় আসে আমরা বুঝতে পারি না।আমাদের রব আল্লাহ সুরা মোহাম্মদের ৩৮ আয়াতে বলেন,'দেখো,তোমরাইতো তারা যাদের আহ্বান করা হচ্ছে যেন তোমরা আল্লাহর পথে ব্যায় কর,কিন্তু তোমাদের মধ্যে রয়েছে তারা যারা কৃপনতা করছে,বস্তুত যে কৃপনতা করে সে তো বখিলি করছে তার নিজেরই বিরুদ্ধে।আর আল্লাহ ধনবান ও তোমরা অভাবগ্রস্ত।তোমরা যদি ফিরে যাও তবে তিনি তোমাদের স্হলে অন্য লোকদের বদলে আনবেন,তখন তারা তোমাদের মত হবে না।' মানুষকে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ করে।এটি একটি বড় মর্যাদা। মর্যাদার সাথে থাকে সম্মান। সে সম্মানটি অর্জন করতে হয় দায়িত্ব সম্পাদনের মাধ্যমে।কোন সম্মানই অর্জন করা যায় না দায়িত্বপালন করা ছাড়া।ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় ধর্মে আল্লাহ পছন্দ করে নিলেন ইহুদিদের।যারা একটি ভ্রষ্ঠ জাতি।কেউ বা মনে করতে পারে তারা আল্লাহর খুব প্রিয়পাত্র যেমন ইহুদিরা মনে করে।আসলে তা নয়।আল্লাহ সে জাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন বিশেষভাবে পরীক্ষা করার জন্য।তাদের কাছে অসংখ্য নবী পাঠিয়েছিলেন যাদের অনেককে তারা হত্বা করেছে।মুসা,দাউদ,সোলাইমান,ইসহাক আ; এর মত নবী পাঠিয়েছেন ইহুদিদের মধ্য থেকে।আমরা মুসলিমরা ৪টি আসমানি কিতাবকে(তাওরাত,ইন্জিল,যবুর ও আলকুরআন) বিশ্বাস করি তার তিনটিই নাজিল হয়েছিল ইহুদিদের উপর।মুসা আ; এর উপর তাওরাত,ইন্জিল ঈসা আ; এর উপর,যবুর দাউদ আ; এর উপর।এই তিনজন নবীই ইহুদিদের নবী তবে আমরা সকল নবী রসূলকে বিশ্বাস করি।ইহুদিরা ছিল সে যুগের জ্ঞানবান সম্প্রদায়।কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হয়েছিল।ইব্রাহিম আ; এর দুই স্ত্রী - একজন ছারা ও অন্যজন হাজেরা।আল্লাহ পাক হাজেরার ঘরে জন্মালেন ইসমাইলকে আ;কে আর তার ১৩ বছর পর ছারার ঘরে জন্মালেন ইসহাক আ;কে।ইহুদিরা ৩০০০ বছর পর্যন্ত আরবদের উপর ঘৃনা বিদ্দেশ ছড়িয়েছে এবং আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী তাদের থেকে রেহাই পাচ্ছে না।তারা অহংকার করে আরবদের অপবাদ দিত।আল্লাহ সোবহানাওয়াতাআলা একসময় আরবদের ক্ষমতা দান করলেন।মুসলমানরা আটশত বছর রাজত্ব করেছিল।এই আটশ বছর পর সেখানে একজন মুসলিম ছিল না আযান দেয়ার মত।কারন তারা কুরআনকে ছেড়ে দিয়ে প্রাচুর্যের মোহে পড়ে গিয়েছিল।আল্লাহ অপেক্ষা করেছিলেন আটশত বছর।তাদের সুযোগ দিয়েছিলেন কিন্তু যখন তারা তাদের দায়িত্ব পালনে গাফেল হয়ে গেল তিনি আর এক জাতিকে নিয়ে আসলেন।এইভাবে আল্লাহ পাক পরিবর্তন নিয়ে আসেন।আল্লাহ পাক রসূল সা:কে দ্বিনে হক নিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে এ ধর্ম অন্য ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।এই সত্যটি বাস্তবায়নে পৃথিবী ব্যাপি যে একটি সংঘবদ্ধ উম্মাহ গড়ে উঠার কথা তা গড়ে উঠে নি।ইসলামের কাজ হচ্ছে বিভিন্নতায়।লক্ষ কোটি হাফেয আলেম ,মসজিদ মদ্রাসা,দরগাহ,খানকা ও ইসলামের দল তৈরি হয়েছে।যে কাজটির জন্য নবী রসূলকে পাঠানো হয়েছে সেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজটি গৌন হয়ে আস্তরনের কাজটি চলছে।ইস্ফাত কঠিন তেজোদ্দীপ্ত ঈমান ও আক্কিদা নিয়ে মানুষকে তৌহিদের যে দাওয়াত পৌঁছানোর কথা সেটি বিশ্বব্যাপী মন্হর গতিতে চলছে।যেখানে আমাদের হাত দিয়ে বাধা দেয়ার দরকার শক্তি থাকতেও দিচ্ছি না,আমার বাকশক্তি ও লেখাকে শানিত করছি না কারন আমার ভয় সমকালীন শক্তি আমাকে খর্ব করে নাকি।আমি অনেক ক্ষেত্রে খারাপ কাজগুলোকে ঘৃনাও করছি না।প্রতিটি তৌহিদি জনতা যদি নিজের জীবনের একটি পরিকল্পনা করতো,সচেতন হতো,যার যার ক্ষমতায় বাস্তবায়ন করতো তাহলে সমাজ উছৃংখল হতো না।একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের একক হলো পরিবার।আমরা যদি নিজ নিজ পরিবারের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতাম তাহলে সমাজে দুর্বিত্ত আসে কোথা থেকে? দুর্বিত্ত তৈরি হচ্ছে প্রতিটি ঘর থেকে।যখন সমাজে নেতৃত্ব আসে এই দুর্বিত্তদের হাতে তখন সমাজে অন্যায় ও অপরাধের প্লাবন দেখা দেয়।সমাজে অসংখ্য সংগঠন রয়েছে।সে সংগঠন গুলো কি তাদের নিজ নিজ পরিবারকে সরল পথে ধাবিত করতে পারছে? একটি অংশ হচ্ছে বাকি সব অসার।এই কুরআন পরিবর্তন করে দিয়েছিল একটি সমাজকে চৌদ্দশ বছর পূর্বে।এখনো সেটি বর্তমান।এটির সঠিক চর্চা ও বাস্তবায়ন করা হলে আজো সম্ভব।আমরা যে যেখানেই আছি নিজেদের খাঁটি একজন তৌহিদি মানুষ তৈরি করার বাসনা পোষন করতে পারি আজ থেকে।নিজেকে পরিবর্তন করুন,পরিবার ও সন্তানদের কুরআন দিয়ে বিশেষায়িত করুন তারপর বেরিয়ে পড়ুন আশে পাশে।আপনার দাওয়াত পেশ করুন সুন্দর ভাষায় ও হেক্কমত অবলম্বন করে।ইসলামে দীক্ষিত করতে কাউকে পাকড়াও করবেন না।ক্ষমতা থাকলে আগে মানুষের অর্থনৈতিক কল্যান করুন তার পর তার কাছে দ্বিনের কথা বলুন।আপনি জানেন আপনার কাছে দাওয়াতের কোন হাতিয়ারটি আছে তা ব্যাবহার করুন।একবার ভাবুন তো? ষোলকোটি মানুষের মধ্যে কতজন মানুষ পাবেন একমাত্র খাঁটি তৌহিদের উপর কাজ করে যেভাবে নবী রসূল করেছিলেন।অসংখ্য শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন সমাজে কতজন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে এগিয়ে আসছেন? আমাদের খাবার তো আজো আসমান থেকে আসতে পারে।সেই বিশ্বাস আমাদের কতজনের আছে? আমাদের স্ব স্ব অবস্হান থেকে অন্তরকে প্রশ্ন করলে তার উত্তর পাবো আর আল্লাহ তো আহকামুল হাকেমিন।তিনি জানেন আমরা কি বলি আর কি করি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন