ইসলামে আত্মসমর্পনকারি ভন্ড হতে পারে না।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:০৮:২৮ দুপুর
ইসলামের মৌলিক অর্থ হলো আল্লাহর নিকট একজন মানুষের ইচ্ছাকে সমর্পিত করা।এটির উৎপত্তি হয়েছে 'সালাম'নামক শব্দ থেকে যার অর্থ শান্তি।একজন মুসলিম যখন আর একজন মুসলিমের সাথে সাক্ষাত করেন বা সাক্ষাত হয় তখন বলে,'আচ্ছালামু আলাইকুম' অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হওক।একে অপরের প্রতি এই সম্ভাষনটি এখন অনেকে ঠিকমত করতে ও জানেন না বা যারা করেন তারাও স্পষ্ট করে উচ্ছারন করেন না।ইদানিং আমি লক্ষ্য করছি আধুনিক শিক্ষিত জনরা সালামের পরিবর্তে 'সুপ্রভাত' শুভসন্ধা' 'শুভরাত্রি' বা 'good morning' good evening' good night' বলতে খুবই পছন্দ করেন।হাঁ আমরা বিজাতীয়দের সাথে এ সমস্ত শব্দগুলো দিয়ে সম্ভাষন করতে পারি।কিন্তু মুসলিম রীতিকে শ্রদ্ধা করা আমাদের একটি অনুকরনীয় চরিত্র বটে।রসূল সা: বলেছেন,তোমরা বেশি বেশি করে সালামের প্রচলন কর।' রসূলের কথা হলো ওয়াহি যা আমাদের শুনতে হবে ও মানতে হবে।কারন এর মধ্যে রয়েছে ইহজাগতিক ও পরজাগতিক কল্যান।সুতরাং সেটি থেকে মুসলিম জাতিকে মাহরুম থাকলে চলবে না।মানুষকে প্রকৃতিগত ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য।এটি ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ন মৌলিক বিষয়।এই বিষয়কে উপেক্ষা করা হলে বান্দাহর সাথে আর আল্লাহর সম্পর্ক থাকে না।যদিও মানুষকে পার্থিব জীবনের জন্য স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে,সে ইচ্ছে করলে ভাল কাজ যেমন করতে পারবে মন্দ কাজও করতে পারবে।কিন্তু পরকালে তাকে তার কর্মের হিসাব দিতে হবে আল্লাহর কাছে।প্রতিটি মুসলিমের বিশ্বাস করতে হবে এই আসমান ও জমিন এবং তার ভেতর যা কিছু রয়েছে তা সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ এবং তিনিই একমাত্র স্রষ্টা।সুরা হাশরের ২২-২৩ আয়াতে এর স্বপক্ষে আল্লাহ বলেছেন,'তিনিই সে আল্লাহ যিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই।তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পরকে ওয়াকেফহাল।তিনি পরম করুনাময় ও অফুরন্ত ফলদাতা।তিনিই সে আল্লাহ যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই-রাজাধিরাজ,মহাপবিত্র,প্রশান্তিদাতা,নিরাপত্তা বিধায়ক,সুরক্ষক,মহাশক্তিশালী,মহামহিম ও পরম গৌরবান্নিত। সকল মহিমা আল্লাহর,তারা যা আরোপ করে তার বহু উর্ধে।'প্রিয় রসূল সা: কে আল্লাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল।তিনি উত্তর করেছিলেন সুরা ইখলাসের মাধ্যমে যাতে আল্লাহ বলেন,তুমি বলো-তিনি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়,আল্লাহ পরম নির্ভরস্হল,তিনি কাউকে জন্ম দেন না এবং কেউ তাকে জন্ম দেন নি এবং কেউ তার সমতুল্য নয়।সুরা আলইমরানের ১৯ আয়াতে বলা হয়েছে,'আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামই হলো একমাত্র দ্বীন।'আল্লাহ সুবাহানাওয়াতাআলা বহু সংখ্যক নবী রসূল পাঠিয়েছেন মানব জাতির হেদায়েতের জন্য যাতে মানুষ ভ্রান্ত পথ ছেড়ে সঠিক পথে আসতে পারে।আদম আ: থেকে শুরু করে নুহ,ইব্রাহীম,ঈসা,মুসা এবং শেষ নবী মোহাম্মদ মোস্তফা সা: সহ আরো নবী রসূল।তারা সৎ পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত উম্মতে মোহাম্মদী এ কাজ করতে থাকবে।ইসলাম এমন একটি স্বাভাবিক জীবন ব্যাবস্হা যা একজন মুসলমানকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখতে উৎসাহ যোগায়।ইসলাম আমাদের শিখায় সমস্ত ভাল কাজ করতে ও সমস্ত খারাপ কাজ বর্জন করতে।খারাপ কাজগুলো বর্জনের মাধ্যমে একজন মুসলিম হয়ে উঠে সৎ ও প্রানবন্ত।সমাজে বিকশিত হয় শান্তির ধারা।সমাজের মানুষ যখন আল্লাহর আইন কানুন থেকে দূরে সরে যায় তখন তারা লিপ্ত হয় বিভিন্ন রকম অপরাধে।এই অপরাধ যখন বাড়তে থাকে তখন উছৃংখল হয়ে পড়ে সমাজ।এক পর্যায়ে তা বন্ধ করার চেষ্টা করলেও বন্ধ করা যায় না।এ পর্যায়ে আত্মসমর্পন কারি মুসলিমদের কাজ হলো দাওয়াতকে বেগবর্ধিত করা।আমরা দেখি যখন একটি দেশ বহিশক্রু দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন দেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক যার যা আছে তা নিয়ে শক্রুর মোকাবিলা করে যতক্ষন না জয়ী হয়ে যায়।আজকের মুসলিম সভ্যতা দেশে দেশে যেভাবে ভুলুন্ঠিত হচ্ছে মুসলমানদের তার সেভাবে মোকাবিলা করতে দেখা যায় না।মুসলিমদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে মোনাপেক,কবর পূজারি,বিদাআতি ও আরো বিজাতীয় শক্রুরা।যারা ধংস করতে চায় মুসলিমদের।পৃথিবীর গরীব অধ্যুষিত মুসলিম ও অমুসলিম দেশগুলো থেকে সম্পদ আহরন করে একটি বুর্জোয়া শ্রেনী গড়ে উঠেছে যাদের আমরা পশ্চিমা দেশ বলে থাকি।আর তাদের অনুসরন করছে মুসলিম শাসকগন।আমাদের সম্পদ বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে জমা হচ্ছে সে সমস্ত দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে।এর একটি বিশাল অংশ হলো ভন্ড মুসলিম আত্মসমর্পন কারি।তারা ইসলামি ইবাদতের সাথে যেমন জড়িত তেমনি জড়িত অনৈতিক কাজে।পৃথিবী ব্যাপি এই ভন্ড আত্মসমর্পনকারীদের ইবাদতের পসরা দেখলে অনুমান করা যায় সেগুলো নিছক ইবাদত নয়।যেমন- একজন মানুষের জন্য জীবনে একটি হজ করা ফরয।অর্থের কারনে তিনি নফল হজ করে চলছেন বছরের পর বছর।তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি তো ফরয হজটি করেছেন।নফলও করেছেন।এর পরও আসছেন কেন? তিনি বলেন মহব্বত তৈরি হয়েছে না এসে পারি না।তাকে যদি বলা হয় আপনার আশে পাশে মানুষের হাজারো সমস্যা,সেগুলোর তো কিছু সমাধান করতে পারেন।তিনি বলেন,আমার একার পক্ষে তো এত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলে দেখা যায় তার রয়েছে অনৈতিক ব্যাবসায়, হারাম টাকার পাহাড় গড়েছেন, শেয়ার কেলেঙ্কারি, ব্যাংক লুট, ঘুষ-দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, চোরাকারবার, সুদ গ্রহণ ইত্যাদি কর্ম করার পাশাপাশি প্রায় প্রতি বছর হজ ও ওমরাহ করেন ও মক্কা-মদিনা দৌড়ান; এদের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? অন্য দিকে জেনা, ব্যভিচার, অন্যের হক নষ্ট, জুলুম, অত্যাচার, মিথ্যাচার, অনাসৃষ্টি, আল্লাহ এবং রাসূল সা:-এর সাথে নাফরমানি, শিরক, বিদাআত ইত্যাদি কুকর্ম একজন অন্যজনের সাথে পাল্লা দিয়ে করছে এবং মদ-জুয়ার আসরে বসে সেসব কর্ম নিয়ে প্রতিনিয়ত বাহাস করতে করতে মক্কা-মদিনা দৌড়াদৌড়িকারীদের ব্যাপারে আলেম-ওলামাগণের ফতোয়া কী?কোরবানি সম্পর্কে আমি যা জানি তা হলো এটি মুসলমানদের ফরজ ইবাদত হজের একটি অবশ্যপালনীয় আহকাম। এর বাইরে সামর্থ্যবান মুসলিম নরনারীর জন্য কোরবানি দেয়া এবং ঈদুল আজহার নামাজ হলো ওয়াজিব। কোরবানির বিধান এবং পবিত্র হজের প্রতিটি আহকাম মূলত মুসলমান জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর সুন্নত হিসেবে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য পালনীয় করা হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন- হারাম উপার্জনের অর্থ দ্বারা বাজারের সবচেয়ে বড় গরু, উট বা ছাগল এনে জবাই করলেই কি কোরবানি হয়ে যাবে? অথবা রিয়ার উদ্দেশ্যে কিংবা সমাজে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি জাহির করার জন্য অথবা নেহায়েত আনন্দ-ফুর্তি, গোশত খাওয়া বা সামাজিক মুখ রক্ষার জন্য বাজার থেকে পশু কিনে এনে কোরবানি করলে তা ইসলাম কিভাবে অনুমোদন করবে?আমি আরো প্রশ্ন রাখছি- মুসলমান হিসেবে কেবল পাঁচটি ফরজ ইবাদত নিখুঁতভাবে করলেই কি জান্নাত পাওয়া যাবে? মুমিন ও মুত্তাকিগণের চিন্তা, কর্ম, চেতনা, দায়িত্ব, কর্তব্য, আচরণ, পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কর্মকাণ্ড, সমাজ, সংসার, পরিবার, রাষ্ট্র, আল্লাহর সব সৃষ্টির প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে সে হাজার হাজার ফরজ রয়েছে; সেগুলো পালন না করে কেউ কি আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি আশা করতে পারে? আমরা যারা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করেছি তাদের কর্মের হিসাব নিকাশটি করা জরুরি মনে করছি।এই দুনিয়ার জীবনটিতে আমরা একে অন্যকে সাহায্য করতে পারবো।নিছক ইসলামের পথ অনুসরন না করে নিজের নফসের গোলামি করা আর অন্যকে খুশি করা মোটেই ইবাদত নয়।সমাজকে এ সব ভন্ডামির বেড়াজাল থেকে নিবৃত্ত করতে খাঁটি তৌহিদি মুসলিম ভাইদের এককাতারে এসে সৎ পরামর্শ দিতে হবে।এটি একটি চলমান কাজ।কারো সাথে কোন ব্যাক্তিগত দ্বন্দ সংঘাত নয় বরং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভুল সংশোধন করে দেয়াই মুল উদ্দেশ্য।'ভুল' এই শব্দটি দু'টি অক্ষরের একটি শব্দ যা ক্ষত বিক্ষত করছে মানুষের জীবনেকে।আর আখেরাতে রয়েছে অনন্তকালের প্রজ্জলিত আগুন যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব নয় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া।সেজন্য আল্লাহ কে ভয় করতে হবে ভয়ের মত আর আত্মসমর্পন করতে হবে জেনে ও বুঝে।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন