জ্ঞান আহরন ও তার বিতরন।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:২২:০৩ দুপুর
আলকুরআনে ১৫০ এর বেশী আয়াত রয়েছে যাতে আল্লাহ পাকের জ্ঞানের বিশদ বর্ননা রয়েছে।এক একটি আয়াত বিশ্লেষন করতে গেলে মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু বিশ্লেষন শেষ হবে না।সুরা কাহফের ১০৯ আয়াতে আল্লাহ তাঁর নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন,'বলো-সাগর যদি কালি হয়ে যেতো আমার প্রভুর কালিমার জন্য তবে নিশ্চই সাগর নি:শেষ হয়ে যেতো আমার প্রভুর কালিমা শেষ হওয়ার আগে।' আল্লাহর কালাম এসেছে মানব জাতির কল্যানের জন্য যাতে তারা দুনিয়ার জীবনে সৎ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে।এই জ্ঞানের অভাব দেখা দিলে মানুষ পশু হয়ে যায়।মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য হলো মানুষকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে কিন্তু পশুকে দেয়া হয় নি।একটি পশুকে বেঁধে না রাখলে সে তার প্রভুর ফসল যেমন ধংস করে তেমনি করে অন্যের।কারন সে ভাল মন্দ বুঝে না।আপন পর ভাবে না।কিন্তু মানুষকে সৃষ্টিগত ভাবে ভাল ও মন্দের পার্থক্য বুঝার জ্ঞান দেয়া হয়েছে।সেজন্যই মানুষ সৃষ্টির সেরা।আলকুরআনে এমন আয়াত রয়েছে যা আধ্যয়ন করলে মানুষের বিবেককে চরমভাবে নাড়া দেয়।জ্ঞান আহরন ও বিতরন একজন মানুষের কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কাজ।এ কাজটি কেন করতে হবে? কারন হলো-মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ব্যাস্ত সমস্ত করে।সুরা ইসরার ১১ আয়াতে এমনই বলা হয়েছে।মানুষ মন্দের কামনা করে যেমন করা উচিত ছিল ভাল কাজ করার।মানবজাতি যখন উশৃংখল ও অসৎ পথ অবলম্বন করে তখনি নবী-রসূলের আগমন হয় যারা অসৎ জাতিকে সৎ পথে নিয়ে আসার জন্য প্রানান্তকর চেষ্টা করে।নবী-রসূলদের উত্তরশূরি হলো উলামায়ে হক।তারাও মানুষকে আল্লাহর কালামের মাধ্যমে পথ দেখান।এই পথ দেখানোর জন্য কুরআনে পাকে হেকমত পূর্ন আয়াত রয়েছে যা একজন ধর্মপ্রচারকের জন্য অস্ত্রস্বরুপ।সে জ্ঞানটি হাছিল না করতে পারলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।সুরা নাহলের ১২৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমার প্রভুর রাস্তায় আহ্বান কর জ্ঞান ও সুন্দর উপদেশের দ্বারা; আর তাদের সাথে পর্যালোচনা কর এমনভাবে যা শ্রেষ্ঠ।নি:সন্দেহে তোমার প্রভু স্বয়ং ভাল জানেন তাকে যে তার পথ থেকে ভ্রষ্ঠ হয়েছে; আর তিনি ভাল জানেন যে সৎপথ অবলম্বন করে।' এটি আলকুরআনের একটি হেকমাপূর্ন জ্ঞান।আল্লাহর রাস্তায় মানুষকে ডাকার জন্য এই নৈতিক মান সম্পন্ন গুন অর্জন করতে গেলে একজন মানুষেকে কঠিন সিদ্ধান্তে আসতে হয়।কিছু গুন অর্জন করতে হয়।সুরা আলইমরানের ১৭ আায়তে আল্লাহ বলেছেন তারা হবে,'ধৈর্যশীল,সত্যপারায়ন,অনুগত,দানশীল ও রাতজাগরনকারি।ভারত উপমহাদেশে বিভিন্ন দলের উলামা শ্রেনী যখন দ্বীনের দাওয়াত দেন তাদের অনেকের কথা শুনে মনে হয় ব্যাগ্রের মত হুন্কার দিচ্ছেন।অন্যদের বুঝাতে চেষ্টা করেন আমরাই তোমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।এই চরিত্র তো শয়তানের চরিত্র।যিনি দাওয়াত দিবেন তার কথায় থাকবে মধুরতা ও কুরআন হাদিসের নির্যাস যা থেকে মানুষের জীবনের পরিবর্তন হবে।আরো রয়েছে পলিটিকেল ওয়াজ যাদের কথা শুনে মনে হয় চেয়ার থেকে উঠে কাউকে মারতে যাবে।রাসূল সা; কি এ আচরন ও হেকমত অবলম্বন করেছিলেন? মক্কার চত্তরে নামাজ পড়ছেন আর মুশরিকরা পিঠে উটের নাড়িভূঁড়ি চাপিয়ে দিয়েছে।মক্কা বিজয়ের দিন সে সমস্ত মানুষদের ক্ষমা করেছেন।সুরা আন নাহলের ১২০ আয়াতে আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম আ; এর কথা কোড করলেন,'নি:সন্দেহে ইব্রাহীম ছিলেন এক সম্প্রদায়,আল্লাহর অনুগত ও একনিষ্ঠ।আর তিনি শির্ককারিদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।' আখেরি নবী মোহাম্মদ সা: কে একই সুরার ১২৩ আয়াতে নির্দেশ দিলেন,'অতপর আমরা তোমার কাছে প্রত্যাদেশ দিলাম এই বলে-একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মমতের অনুসরন কর।আর তিনি শির্ককারিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।' হযরত ইব্রাহীম আ; ছিলেন মানব জাতির জন্য একটি উদাহরন বিশেষ করে ঈমানদারদের জন্য।আল্লাহর দ্বীনকে পৌঁছানোর করুন আকুতি প্রকাশ পায় সুরা মারিয়ামের ৪১-৪৮ আয়াতে।আল্লাহ এই সুরাতে বলছেন,'আর গ্রন্হখানার মধ্যে ইব্রাহীমের কথা স্মরন কর।নি:সন্দেহে তিনি ছিলেন সত্যপরায়ন একজন নবী।তিনি তার পিতৃপুরুষকে বললেন,হে আমার বাবা!তুমি কেন তার উপাসনা কর যে শুনে না ও দেখে না এবং তোমাকে কোন কিছুতেই সমৃদ্ধ করে না।হে আমার বাবা! নি:সন্দেহে আমার কাছে অবশ্যই জ্ঞান এসেছে যা তোমার কাছে আসে নি।সুতরাং আমার অনুসরন কর আমি তোমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবো। হে আমার বাবা!শয়তানের উপাসনা করো না।নিশ্চই শয়তান পরম করুনাময়ের অবাধ্য।হে আমার বাবা! আমি আশংকা করি যে পরম করুনাময়ের কাছ থেকে শাস্তি তোমাকে স্পর্শ করবে,ফলে তুমি হয়ে পড়বে শয়তানের সাথী।ইব্রাহীমের বাবা বললো,হে ইব্রাহীম! তুমি কি আমার উপাস্যদের উপর বীতশ্রদ্ধ? তুমি যদি না থাম তবে তোমাকে আমি নিশ্চিত পাথে ছুঁড়ে তাড়া করবো।আর তুমি এই মুহূর্তে আমা থেকে দূর হয়ে যাও।ইব্রাহীম বললেন,তোমার উপরে শান্তি।আমি অবশ্য আমার প্রভুর কাছে তোমার জন্য প্রার্থনা করবো।নি:সন্দেহে তিনি আমার প্রতি পরম স্নেহময়।আর আমি সরে যাচ্ছি তোমাদের থেকে ও আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে তোমরা যাদের ডাক ওদের থেকে,আর আমি আমার প্রভুকেই ডাকবো,হতে পারে যে, আমার প্রভুকে ডেকে আমি করুনাবন্চিত হব না।' একজন কল্যানকামি নবী তার বাবাকে কত বিনয়ের সাথে আযাব থেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রান চেষ্টা করলো কিন্তু পারলেন না।ইসলামি দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ও সহনশীলতার পরাকাষ্ঠা দেখাতে হবে।পারস্পরিক যোগাযোগ শুধু নয় বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক রেখে সমস্ত মানুষের কল্যানের জন্য ইসলামি দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে হবে।মানুষের মধ্যে বিভেদ ও গোষ্ঠিবদ্ধতা একটি সংকীর্ন জীবন যাপনের শিক্ষা দেয়।সংকীর্ন মন ও সংকীর্ন দৃষ্টিভংগী নিচতারই লক্ষন।মুসলিম জাতি এমন একটি জাতি যাদের একটি চিরন্তন ঐতিহ্য রয়েছে।রসূল সা: গোটা মানবজাতির কল্যানের জন্য এসেছেন।তার উম্মত হলো শ্রেষ্ঠ উম্মত।তাদের পক্ষে কি করে সম্ভব একটি ব্যাভিচারি জাতিতে পরিনত হয়? মোহাম্মদ সা: শ্রেষ্ঠ নবী হওয়া স্বত্তেও আল্লাহ পাক বলেছেন, একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মমতের অনুসরন কর।কারন হলো ইব্রাহীম আ; উপর অনেকগুলো পরীক্ষা হয়েছিল সমস্ত পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ন হয়েছিলেন।কাউকে ইসলামি দাওয়াত দিতে গেলে ঐশ্বরিক জ্ঞানের প্রয়োজন।মুসলমানের জন্য মৌলিক জ্ঞানটি রয়েছে আলকুরআনে যা পাঠে বন্চিত আজকের মুসলমান।সুরা মায়েদার ৬৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'হে প্রিয় রাসূল! তোমার প্রভুর কাছ থেকে যা তোমার নিকট নাজিল হয়েছে তা প্রচার কর।আর যদি তুমি তা না কর তবে তার বানী তুমি প্রচার করলে না।' পৌঁছানোর দায়িত্ব রয়েছে প্রতিটি উম্মতে মোহাম্মদীর তবে সে পৌঁছানোর কথাগুলো হতে হবে কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত।যেহেতু একবিংশ শতাব্দির এই সময়কালে রয়েছে মিথ্যার ছড়াছড়ি,মানুষ দলে দলে বিভক্ত,কোন কিছু শুনলেই তা প্রচার করা যাবে না।সে কথা ও কাজগুলোকে সত্যায়িত করতে হবে কুরআন ও ছহি হাদিসের সাথে।কোন মানুষের কথা ততক্ষন মনে প্রানে বিশ্বাস করা যাবে যতক্ষন প্রমানিত না হয় সেগুলো কুরআন হাদিসের কথা।একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রসূল সা: এর কথার আনুগত্য করতে নির্দিধায় ও নি:সন্কোচে।মু'মিন বান্দাহদের জন্য তৌহিদের পিলার হলো ইব্রাহিম আ:।জ্ঞানী ও জ্ঞানের শক্ত ভীত ছিল তার জীবনে।একটি বুলডোজার যাকে দলিত মথিত করতে ব্যার্থ।ইসলামে 'কমান্ডার ওফ দি চিপ' বলা হয় ইব্রাহীম আ:কে।এই মডেলটিকে অনুসরন করতে হবে মুসলিম জাতিকে।তৌহিদকে যারা অন্তরে স্হান দিয়েছে তাদের কোন ভয় নেই।বহু সংখ্যকবার বলা হয়েছে ইব্রাহীম আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করেনি।মানজাতিকে বলা হয়েছে তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না।একজন মুসলিমকে কোন ইবাদত করার আগে স্পষ্ট করতে হবে তার জীবনে শির্ক ও বিদাআতের কোন গন্ধও নেই।এ অবস্হায় উপনীত না হতে পারলে কাজ কর্মের মধ্যে কোন না কোনভাবে শির্ক ও বিদাআত ঢুকে যাবে।এ কারনেই ইব্রাহীম আ; এর জীবন কর্ম মুসলিমের জন্য একান্ত অনুকরনীয়।রসূল সা; তাকে অনুসরন করেছিলেন এবং তাকে বলা হয় কুরআনের চরিত্রে সমৃদ্ধ একজন রসূল।মা আয়শা সিদ্দিকা রা:কে প্রশ্ন করা হয়েছিল রাসূলের চরিত্র কেমন? তিনি বলেছিলেন তোমরা কি কুরআন পড়নি? রসূলের চরিত্র কুরআনের চরিত্র।' বিভ্রান্ত মানবজাতিকে পথ দেখাতে হলে নবী ইব্রাহীমের পথ অবলম্বন করতে হবে।অনুনয় বিনয়ের সাথে দাওয়াত পেশ করতে হবে।ঐশ্বরিক জ্ঞান(Devine knowledge) ছাড়া কখনো মানুষকে সন্তুষ্ট করা যায় না।সেজন্যই নবী ইব্রাহীম তার বাবা আজরকে বার বার বলেছেন আমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে আমার অনুসরন করুন।শয়তানের পথ অনুসরন করবেন না কারন শয়তান স্পষ্টত মানুষকে পথভ্রষ্ঠ করে।নূহ আ; ৯৫০ বছর মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন ঐশ্বরিক জ্ঞান ডেলিভারির মাধ্যমে।সুরা নূহের ৫-৬ আয়াতে আক্ষেপ করে আল্লাহকে বলেন,'আমার প্রভু! আমি তো আমার স্বজাতিকে রাতে দিনে আহ্বান করেছি কিন্তু আমার ডাক তাদের পালিয়ে যাওয়া ছাড়া কিছুই বাড়ায় নি।' সমস্ত নবী রসূল কোন মানব রচিত বিধানের অনুবর্তী ছিলেন না।আজকে মুসলিম জাতি আল্লাহর দেখানো নবী রসূলদের পথ ছেড়ে দিয়ে মানব রচিত মতবাদের পিছনে হাঁটছে কেন? এর একমাত্র কারন হলো ঈমান ও তৌহিদের জ্ঞান থেকে বন্চিত।সরল পথের সন্ধান থেকে মানব সমাজ তিরোহিত।মুসলিম ভূখন্ডগুলো এখন ইহুদি ও খ্রীস্টানদের চারন ভূমি।তারা তাদের টাকা বিলিয়ে দেয় মিশনারিতে।একমাত্র বিলগেটস একাই ২৮ বিলিয়ন খরচ করেছে দাতব্য খাতে পৃথিবী ব্যাপি।প্রতি বছর তিনি তার বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধ করেন ১০ লাখ ডলার।আর মুসলমান! আমাদের দেশে ট্যাক্স মওকূপ হয়ে যায় ঘুষ দিলে।সে সমস্ত ব্যাবসা ও বাড়ির মালিকরা যখন তাছবিহ নিয়ে মসজিদে যায় বা হজ ও ওমরাহ করতে আসে তখন তাদের দেখে হাসি পায়।আল্লাহর বান্দাহদের তো এমন ঈমান থাকা উচিত নয়।এই রকম ঈমান নিয়ে জান্নাতে যাওয়ার চিন্তা করা যায় কি? সমাজের প্রেক্ষাপটে জ্ঞানী সমাজটিকে গনমানুষের কাছে দাওয়াত নিয়ে যেতে হবে ইব্রাহীম আ; এর মত।এই ভূমিকা পালন না করা পর্যন্ত সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়।এমন কোন দল বা উম্মাহ কি গড়ে উঠেছে যা ইব্রাহীম আ: এর জীবন কর্ম অনুসরন করে? হাঁ রসূল সা: অনুসরন করেছিলেন ও ১৩ টি বছর মক্কায় নির্যাতন ভোগ করেছিলেন।এটিই জ্ঞান(wisdom)।এই পথ অবলম্বন করলে আজও ইসলামের সৌন্দর্য মানব সমাজ প্রত্যক্ষ করবে।মুসলমানদের মুল চাবিকাঠি এখন ধূসর বালির আস্তরনে বিলীন হতে যাচ্ছে।সেটিকে তুলে আনতে হলে নবজাগরন দরকার।তার কাজ চলছে কিন্তু একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের পথে নয় এবং রসূল সা: এর নিরেট পথেও নয়।সে পথটির ফলক উম্মোচনের দাবি করছি ঈমানদার ভাইদের প্রতি।আমরা যে যেখানেই থাকিনা কেন আমরা একটি জাতি ও একটিই উম্মত।এই উম্মতটিই জান্নাতের আস্বাধ গ্রহন করবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩০০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন