ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৬:৫৪ রাত

শিক্ষা খাতে যেমন নৈরাজ্য ও অনিয়ম চলছে তার চেয়েও বেশি চলছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সীমাহীন নৈরাজ্য।মানুষের মৌলিক প্রয়োজন গুলোর মধ্যে বাসস্হান,স্বাস্হ ও শিক্ষা অন্যতম।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই তিনটিরই নাজুক অবস্হা। মানবসেবার ব্রতে শপথ নেয়া চিকিৎসক সমাজ এখন অনেক ক্ষেত্রে মানব দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠছে। অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসায় জীবন দেয়া তো দূরের কথা, তারা এখন যেন জীবন নেয়ার দূতে পরিণত হয়েছেন। চিকিৎসার নামে তারা যা করছেন, তাকে সংবাদপত্রের শিরোনামে ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’ বলা হলেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে সচেতনভাবেই তাদের হাতে রোগী অক্কা পাচ্ছে।অনিয়ন্ত্রিত ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর চোখ ধাঁধানো জৌলুস আর যন্ত্রপাতির তলায় চিকিৎসা প্রত্যাশী মানুষ আক্ষরিক অর্থেই পরিণত হচ্ছে অসহায় গিনিপিগে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে তাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে মৃত্যু গহ্বরে। তাদের এমন তৎপরতার একটি উদাহরণ- ‘ভাঙল হাতের হাড়, চিকিৎসা কিডনির!’ এ ঘটনা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। বাগমারার আবদুল কুদ্দুস এলাকায় প্রতিপক্ষের হাতে প্রহৃত হয়ে বাম হাত ভেঙে ভর্তি হন হাসপাতালে। সেখানে তার হাতে প্রাথমিকভাবে প্লাস্টার করা হয়। পরে তাকে কিডনি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় কিডনি ওয়ার্ডে। কিডনি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে তার কিডনিতে কোনো সমস্যা পাননি বলে নিশ্চিত জানিয়ে দেন। আবদুল কুদ্দুসের আত্মীয়-স্বজনরা বলেছেন, কোন রোগের চিকিৎসা করতে হবে, তা জানার আগেই উল্টাপাল্টা পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তাররা হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছেন। এতে রোগী যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তেমনি বাড়তি টাকাও নষ্ট হচ্ছে অকারণে।আগে দালালরা হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে রোগীদের এমন বিড়ম্বনায় ফেলত। এখন স্বয়ং ডাক্তাররাই সেই দালালদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। এরই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ উঠে এসেছে ৭ই জুলাইয়ের যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন। কানের ব্যথার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী রক্তের সিবিসি, বিটি, সিটি গ্রুপিং, এইচবিএস এজি, আরবিএস, ইউরিন আর/ই সিএক্সমার এবং এক্স-রে ও ইসিজি পরীক্ষার প্রেসক্রিপশন পেয়েছেন। কোন হাসপাতালে সেটা করাতে হবে, পেয়েছেন তার নির্দেশও। ডাক্তাররা এখন প্রেসক্রিপশনে যে ওষুধের নাম লেখেন, সে ওষুধ অনুসরণ করাটা আদেশতুল্য হয়ে উঠেছে। একই ওষুধ বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন দামে বিক্রি করছে। ডাক্তাররা ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অনৈতিক উৎকোচ নিয়ে অখ্যাত কোম্পানির মানহীন ওষুধও রোগীকে কিনতে বাধ্য করছেন। একইভাবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় রোগী পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রহসন এবং রোগীর আর্থিক ক্ষতির কারণ হচ্ছেন।বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেছেন, নব্বইয়ের দশক থেকে এদেশে ডাক্তারদের ‘কমিশন বাণিজ্য’ শুরু হয়। ’৯৬-এর পর এটি ভয়াবহ রূপ নেয়, যা বর্তমানে মহীরুহ আকার ধারণ করেছে। সত্যি কথা বলতে কী, বর্তমানে চিকিৎসকরাই ‘কমিশন রোগে’র সর্বব্যাপী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এই নৈরাজ্যজনক বাস্তবতা থেকে বের হতে ডাক্তারদের এথিক্স মেনে চলা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও কঠোর হতে হবে। কিছুদিন আগে সংসদে একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য অনৈতিক এবং পেশাগত বিধিমালায় পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন, এটি মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। আমরা মনে করি, এ নৈরাজ্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশের চিকিৎসক সমাজকে পরিপূর্ণ নৈতিকতার চর্চা করতে হবে। দালাল নয়, তাদের প্রকৃত ডাক্তার হতে হবে।একটি বড় সমস্যা হলো আমাদের ধনীর দুলাল দুলালিরা যারা ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে আসছে তারা প্রেকটিকেল এক্সপেরিয়েন্স ছাড়া ডাক্তার হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিয়োজিত হচ্ছে।জাতির এ দুরবস্হায় সরকারকে কঠোর হস্তে সমস্যাগুলো সমাধান করা এবং ডাক্তারদের যথাযথ প্রশিক্ষনের পর প্রেকটিস বা নিয়োগদান করা জরুরি মনে করছি।প্রসূতি মায়েদের এখন আর নরমাল ডেলিভারি হতে দেয়া হয় না।অথচ কয়েকযুগ পূর্বেও ৯০% মায়েদের নরমাল ডেলিভারি হতো।বিজ্ঞানের উন্নতি যতই হচ্ছে মানুষ ততই অমানবিক অনৈতিক হয়ে উঠছে।এ থেকে নিরাময়ের একমাত্র উপায় স্ব স্ব যায়গায় নিজদের সচেতন করা ও মানবিক দিকগুলোকে সম্মান করা।আমরা যদি অন্যদের নিজের মত ও নিজের পরিবারের মত মনে করতে শিখি তখনই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বিষয়: বিবিধ

১৫১১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

341330
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:০৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সর্বক্ষেত্রের মতই চিকিৎসায় ও নৈতিকতা বলতে কিছু নাই

পোস্টে কয়েকটা প্যারাগ্রাফ করলে পড়তে সুবিধা হয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File