মানুষের ওপর বিশ্বাস ও দায়িত্বশীলতা।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৫৩:২৩ দুপুর

কাজী নজরুল ইসলাম আমৃত্যু মানুষকে ভালোবেসেছেন। ভরসা রেখেছেন মানুষের উপর। তার দীর্ঘজীবন ও বিশাল সাহিত্যসম্ভারের সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে এ অনন্য ভালোবাসা ও বিশ্বাসের অজস্র দৃষ্টান্ত। কিন্তু এক পর্যয়ে তিনিও সংশয়গ্রস্ত হয়ে উঠেছিলেন। প্রবলভাবে টলে উঠেছিল মানুষের প্রতি তার বিশ্বাস ও ভালোবাসার ভিত্তি। নিজ দেশের কিছু মানুষের শঠতা, হিংস্রতা ও আত্মঘাতী হানাহানি দেখে তার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও বলেছেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’ জাতীয় কবির এই বাণী আমিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। কিন্তু চারপাশে যা ঘটে চলেছে তাতে সেই বিশ্বাস অটুট রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।কবি নজরুলের প্রভাব যে সর্বব্যাপী তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষ করে দুটি ক্ষেত্রে তার কাছে আমাদের ঋণ অপরিসীম। প্রথমটি হলো- মানুষের প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা। দ্বিতীয়টি হলো- দেশাত্মবোধ। দেশ ও মানুষকে কীভাবে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে দেশের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্ম হতে হয়- সেটা নজরুলের মতো করে আর কেউ আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারেননি। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে শুধু নয়, এখনও সকল সঙ্কটে-দুর্বিপাকে নজরুলের অবিস্মরণীয় সব গান ও কবিতা আমাদের সাহস ও প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। সবচেয়ে বড় যে সত্যটি তিনি নানাভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তা হল- দেশ মানে একটি ভূখন্ড বা মানচিত্র মাত্র নয়, বরং মানুষই হলো দেশের প্রাণ। মানুষের মধ্য দিয়েই দেশের অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। মানুষ তথা নাগরিকরা ভালো কাজ করলে দেশ গৌরবান্বিত হয়। এগিয়ে যায় সামনের দিকে। আর মন্দ কাজ করলে দেশের বদনাম হয়। আখেরে দেশ রসাতলে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্বাধীনতার জন্য আমরা বিপুল ত্যাগ স্বীকার করেছি। সেজন্য বিশ্বসভায় দেশের মর্যাদা বেড়েছে। ভাবতে কষ্ট হয় যে, স্বাধীনতার মাত্র চার দশকে সেই দৃশ্যপট বদলে গেছে। ক্রমাগত উধাও হয়ে যাচ্ছে যাবতীয় নীতি-আদর্শ ও সৎগুণ। স্বাধীনতা মানুষকে অধিকতর সৎ ও দায়িত্বশীল করে তোলে। দেশাত্মবোধ আরো গাঢ় হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের ক্ষেত্রে যেন ঠিক উল্টোটাই হয়েছে। এখন চারপাশে প্রতিনিয়ত যা হচ্ছে তাতে শুধু যে মানুষের উপর বিশ্বাস রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে তাই নয়, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়েও মনে শঙ্কা জাগে। জনসংখ্যা ইতোমধ্যে ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বসবাস দারিদ্রসীমার নিচে। অধিকাংশই অদক্ষ। শিক্ষার হারও আশাব্যাঞ্জক নয়। সীমিত সংখ্যক সৌভাগ্যবান মানুষ, যারা শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন তাদের নানা প্রশ্ন। শিক্ষিত-অশিক্ষিত মিলিয়ে জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষই বেকার। সহসা কাজের সুযোগ, বুদ্ধির সম্ভাবনাও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কর্মসংস্থানের প্রধান দুটি খাতেও চলছে নানা সমস্যা। নানা কারণে কর্মসংস্থান আশানুরূপ হারে বাড়ছে না। সর্বব্যাপী এই সঙ্কটে প্রধান ভরসা হলো দেশের মানুষ। মানুষের সৎ ও আন্তরিক প্রচেষ্টাই কেবল সঙ্কটের এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে পারে, এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সামনের দিকে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সেই মানুষই এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা বাহুল্য, সব মানুষ অবশ্যই নয়। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের নীতি-আদর্শবিবর্জিত বেপরোয়া কার্যকলাপের দায় বহন করতে হচ্ছে দেশের সব মানুষকে। দেশে চাকরির সুযোগ খুবই সীমিত। প্রশাসনিক কাজের জন্য সরকার যে যৎসামান্য নিয়োগ দিয়ে থাকে তার জন্য হাজার হাজার নয়, বরং লক্ষ লক্ষ বেকার তরুণ-তরুণী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে যোগ্যপ্রার্থীরা চাকরি পাবেন এটাই প্রত্যাশিত। সৎ ও দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলার জন্যও এটা জরুরি। সর্বোপরি, স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চাকরির সমান সুযোগ পাওয়া নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারও বটে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের উপর অর্পিত, তাদের একটি অংশই যে গর্হিত কর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে, তা এখন আর বিশদ বলার অপেক্ষা রাখে না। অনিয়ম আর অন্যায় কর্মের মধ্য দিয়ে একটি চক্র রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ে তুলে সমাজে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করছেন। অসৎ ও অযোগ্য ব্যক্তিরাও নিয়োজিত হচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। আর সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। যে ভাবেই দেখা হোক না কেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, মুখে সততা ও দেশপ্রেমের ফেনা তুললেও বাস্তবে অনেকেই তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। বলতে দ্বিধা নেই, গোটা দেশ এখন বিশৃঙ্খলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সময়ের কোনো মূল্য নেই, কেউই সময় মতো অফিসে যান না, গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তিদের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। বেশিরভাগ রাস্তাই ভাঙা, যানজট আর বিশৃঙ্খলা তো আছেই। এখানে-সেখানে জমে আছে আবর্জনার পাহাড়। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। অথচ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় তাদের দায়িত্ব ঠিকঠিক মতো পালন করলে দিনের পর দিন নিশ্চয় এ দুঃসহ অবস্থা চলতে পারত না।বিশাল সম্ভাবনার আমাদের এই দেশে যদিও সেই সম্ভাবনার পথে পথে অজস্র পাথর ছড়ানো। আর এর জন্য প্রধানত দায়ী হল নীতি ও আদর্শবিবর্জিত কিছু মানুষ। তাদের চরম স্বার্থপরতার জন্যই বার বার কষ্টার্জিত গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। থমকে যায় উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকা। তারপরও দেশকে ঘিরে কোটি কোটি মানুষের আশা ও স্বপ্নের কোনো শেষ নেই। জনগণের সেই স্বপ্নকে সফল করতে হলে শেষ ভরসাও মানুষ। তাই পারিপার্শ্বিক চরম হতাশার মধ্যেও মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। জ্বালিয়ে রাখতে হয় আশার প্রদীপ। ইতিহাসের শিক্ষা হলো, শেষ পর্যন্ত অবশ্যই শুভবুদ্ধি ও শুভবোধের জয় হবে।

বিষয়: বিবিধ

১১১২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

340939
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো মানুষের উপর বিশ্বাস রেখেই শান্তি আসবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File