'দারিদ্রতা'।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:০৮:৪৫ রাত
দারিদ্রতা' এই শব্দটি শুনলে আমাদের সবারই প্রান আঁতকে উঠে।ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ দারিদ্রতা কেমন ছিল এবং এটি কিভাবে মুসলমানকে ইতিহাসে আক্রমন করেছে তা আমাদের জানা উচিত।ইসলাম দারিদ্রতাকে কোন গুন হিসেবে দেখে না বরং এটিকে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে।ইসলাম গরীব থেকে ধনীতে রুপান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকে।এর মধ্যে যাকাতের সুষ্ঠ বন্টন ব্যাবস্হা অন্যতম এবং সূরা আত্ তওবার ৬০ আয়াতে বর্নীত হয়েছে ৮টি খাতে যাকাত দিতে বলা হয়েছে।রাসূল সা: তাঁর বিভিন্ন হাদিসে দারিদ্রতাকে ভয়ংকর ও বিপদসংকুল বলে আখ্যা দিয়েছেন।ইসলামের ফকিহগন দারিদ্রতাকে আল্লাহর দয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন।কিন্তু মুসলিম দেশগুলোতে আবার এ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে অনেক ভুল বুঝাবুঝির অবস্হান ও তৈরি হয়েছে।যাই হোক ইতিহাসে দারিদ্রতা একটি অবিরাম চলে আসা বিষয় যেখানে রয়েছে দুটো শ্রেনী এক পক্ষ দরিদ্র অর্থাৎ যাদের কোন সহায় সম্বল নেই আর এক পক্ষ ধনী বা সম্পদশালী। ইতিহাস এও বলে যে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই গরীব।আর এক শ্রেনী তারা ভোগ করছে প্রসাদনীয় জীবন ও জীবিকা।তারা তাদের নাম দিয়েছে প্রথম শ্রেনীর দেশ হিসেবে আর অন্যদের তারা বলে তৃতীয় বিশ্ব।ভোগ বিলাসীরা যে যা-ই বলুক না কেন,পৃথিবীর মনিষীরা কিন্তু দারিদ্রতাকে দেখেছে এক মহাপুরস্কার হিসেবে।আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম এই 'দারিদ্র' নামে যে কবিতা আমাদের সামনে রেখে গেছেন তাতেও এর মহত্ব ও তাৎপর্য লক্ষ্য করা যায়:-
'দারিদ্র্য'
- কাজী নজরুল ইসলাম
হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!
দুঃসহ দাহনে তব হে দর্পী তাপস,
অম্লান স্বর্ণেরে মোর করিলে বিরস,
অকালে শুকালে মোর রূপ রস প্রাণ!
শীর্ণ করপুট ভরি’ সুন্দরের দান
যতবার নিতে যাই-হে বুভুক্ষু তুমি
অগ্রে আসি’ কর পান! শূন্য মরুভূমি
হেরি মম কল্পলোক। আমার নয়ন
আমারি সুন্দরে করে অগ্নি বরিষণ!
আলকুরআনে দারিদ্রতাকে 'ফাকর' অথবা বহুবচনার্থে 'ফুকারা' এসেছে বার(১২) বার।ইসলামি পন্ডিতগন বা বিশেষজ্ঞগন একে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।১-আধ্যাত্মিক দারিদ্রতা ২-বৈষয়িক দারিদ্রতা।কিন্তু অধিকাংশ আয়াতগুলো বৈষয়িক দারিদ্রতা সম্পর্কে ধারনা দিয়েছে।আধ্যাত্মিক দারিদ্রতা বলতে বুঝায়-মানুষ তাদের দারিদ্রতার জন্য একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভরশীল।আল্লাহ যেহেতু নিজেই ধনবান ,তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন বরং সৃষ্টির সবাই তার মুখাপেক্ষি।আধ্যাত্মিক দারিদ্রতা এমন একটি বিষয় যার সাথে সম্পর্ক থাকে একমাত্র আল্লাহর।এই শ্রেনীর মানুষ আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে ভিক্ষে মাংগে না।নবী রাসূলগন ছিলেন এর প্রকৃষ্ট উদাহরন।তারা চরম বিপদের সম্মুখীন হয়েও আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চাইতেন না।রাসূল সা: যখন আবু বকরকে রা:কে নিয়ে মদিনায় হিযরত করেন তখন সওর গুহায় অবস্হান করেছিলেন।এ সময় আবুবকর রা: ভীত হয়ে বলছিলেন আমরাতো দু'জন।রাসূল সা: তাকে অভয় দান করে বলেছিলেন আমরা দু'জন নই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।ঠিক একই ভাবে মুসা আ: এর জীবনেও আমরা দেখতে পাই এর প্রমান।তিনি যখন বনী ঈসরাইলিদের নিয়ে নীলনদের কিনারে পৌঁছিলেন তখন অনুসারিরা বলেছিল এবার আমরা ফেরাউনের লোকজনের হাতে ধরা পড়ে গেলাম তখন মুসা আ: অভয় দিলেন আমার আল্লাহ আমাকে পথ দেখাবেন।আল্লাহ পাক মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন,তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর।আল্লাহ নিজেই স্বয়ংসম্পুর্ন।আমরা কিভাবে আধ্যাত্মিক দারিদ্রতা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করতে পারি?এ ব্যাপারে আমরা সূরা ক্কাছাসের দিকে দৃষ্টি দিতে পারি।এই সূরার ১৪ আয়াত থেকে পরের আয়াতগুলোতে বিষদ বর্ননা করা হয়েছে।মুসা আ: যখন পূর্ন যৌবনে পৌঁছালেন তখন আল্লাহ পাক তাকে জ্গান বিজ্গান শিখালেন।তিনি যখন শহরে পৌঁছালেন তখন দেখলেন দু'জন লোক ঝগড়া করছে।একজন তার নিজের দলের আর একজন তার শক্রুপক্ষের।নিজের দলের লোকটি যখন চিৎকার করে সাহায্য প্রার্থনা করলো তখন তিনি এক ঘুষিতে অন্য দলের লোকটিকে মেরে ফেললেন।পরক্ষনে তার চৈতন্য এলো যে আমি তো ভুল করেছি- এতো শয়তানের কাজ।কাজেই তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবংআল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।আবার তিনিও কৃতজ্ঞতা বশত; বললেন আর আপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক হবেন না।এর পর ফেরাউনের সভাসদরা যখন পরিকল্পনা আটলো তাকে মেরে ফেলার তখন তিনি আর ফিরে তাকালেন না,ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে শহর থেকে বের হলেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন,হে প্রভু! আমাকে অত্মাচারি গোষ্ঠী থেকে উদ্ধার কর।'তিনি মাদায়ান অভিমুখে চললেন ও পৌঁছে গিয়ে একটি গাছের নিছে বসে পড়লেন।পানি নেই ,খাবার নেই একেবারে বিধ্ধস্ত অবস্হা।একটু দূরে ছিল জলাশয় এবং তিনি দেখলেন একদল লোক তাদের পশুকে পানি খাওয়াচ্ছে এবং পাশে দু'জন মহিলা তাদের পশুকে আগলে রাখছে।তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তাদের কি ব্যাপার? তারা বললো আমরা পানি খাওয়াতে পারছিনা যে পর্যন্ত না রাখালরা সরিয়ে নিয়ে যায় এবং আমাদের আব্বা বুড়ো মানুষ।সুতরাং তিনি তাদের পানি পান করানোর ব্যাবস্হা করলেন ও গাছের নিছে ফিরে গেলেন।এবারও তিনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন এবং বললেন,আমার প্রভু! তুমি আমার জন্য যে কোন সাহায্য পাঠাবে আমি তার জন্য ভিখারি হয়ে আছি।' মিশর থেকে ভয়ভীতি নিয়ে আট দিন ও আট রাত্রীর এই পথ চলে বিদ্ধস্ত হয়ে গাছের নিছে বসে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করলেন।তিনি আল্লাহর দিকেই মুখ ফিরালেন কোন মানুষের সাহায্য চাইলেন না।এখানে মানব জাতির জন্য শিক্ষার ব্যাপার রয়েছে।কোন বিপদ আসলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।তিনি প্রথমেই আল্লাহর কৃতজ্গতা প্রকাশ করেছিলেন এজন্য যে দুষ্ট লোকেরা তাকে মারার জন্য পরিকল্পনা করেছিল এবং তিনি বেঁচে গেলেন।দ্বীতিয়ত:মুসা আ: তার দারিদ্রতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন।এভাবে দুনিয়ার প্রতিটি মানুষকে তাদের প্রয়োজনে আল্লাহর কাছেই ধরনা দেয়া উচিত কারন তিনিই একমাত্র রিজিকদাতা ও ক্ষমতার মালিক।তিনিই মানুষের সব সমস্যা সমাধান করেন এবং তিনি নিজেই স্বয়ংসম্পুর্ন(Self-Sufficient)।আল্লাহ আলকুরআনে বলেছেন,যারা আল্লাহতে বিশ্বাস রাখে তিনিই তাদের জন্য যথেষ্ঠ এবং যারা আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন।
কেন আল্লাহ বলছেন তার কাছেই আমাদের দারিদ্রতার জন্য চাইতে হবে? কারন হলো-পার্থিব দুনিয়ায় কতেক মানুষ আছে যারা ক্ষমতা ভোগ করে,হতে পারে সেটা দৈহিক শক্তি বা সম্পদে তখন তারা মনে করে যে আল্লাহকে আমাদের প্রয়োজন নেই।তারা দেখতে পায় পৃথিবীতে বাঁচার জন্য যা যা প্রয়োজন তারা তা অনায়াসে পেয়ে যায় আর পরিনামে তারা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যায়।সূরা ক্কাছাসের ৭৬-৭৭ আয়াতে আল্লাহ পাক কারুন সম্পর্কে তা-ই বলেছিল এভাবে,' নি:সন্দেহে ক্কারুন ছিল মূসার স্বজাতিদের মধ্যকার।কিন্তু সে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলো।আমরা তাকে ধনসম্পদের এতসব দিয়েছিলাম যে তার চাবিগুলো একজন বলবান লোকের বোঝা হয়ে যেত।দেখ! তার লোকেরা তাকে বললো,'গর্ব করো না-নি:সন্দেহে আল্লাহ দাম্ভিকদের ভাল বাসেন না।আর আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে তুমি পরকালের আবাস অন্নেষন কর,আর ইহকালে তোমার ভাগ ভুলে যেও না,আর ভাল কর আল্লাহ যা ভাল করেছেন,আর দুনিয়াতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না।নি:সন্দেহে আল্লাহ ফেসাদে লোকদের ভালবাসেন না।' এ কথাগুলোর উত্তরে ক্কারুনের জবাব ছিল এই সূরার ৭৮ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন এভাবে,'আমাকে এ সব দেয়া হয়েছে আমার মধ্যে যে জ্গান রয়েছে সেজন্য।' সে অহংকার করে বসলো,আল্লাহর কৃতজ্গতার পরিবর্তে।এর পর আল্লাহ ক্কারুনকে ও মানবজাতিকে দেখিয়ে দিলেন তাঁর কতৃ্ত্ব যা একই সূরার ৮১ আয়াতে বলা হয়েছে,'অতপর আমরা পৃথিবীকে দিয়ে তাকে ও তার প্রাসাদকে গ্রাস করেছিলাম,তখন তার জন্য এমন কোন দল ছিলনা যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে পারতো।' আল্লাহ পাক সূরা আলাক্কের ৬-৭ আয়াতে মানুষের স্বভাব সম্পর্কে বলেছেন,'মানুষ নিশ্চই সীমালংঘন করে থাকে কারন সে নিজেকে স্বয়ংসম্পুর্ন মনে করে।' যখনি মানুষ কোন ক্ষমতা হাতে পায় তখন সে একে ভালভাবে ব্যাবহার না করে শয়তানের প্ররোচিত রাস্তা অবলম্বন করে।যদিও একজন মুসলিম প্রতিদিন নামাজে কম করে হলেও ২৯বার বলে ,হে আল্লাহ! আমাদের সহজ সরল পথ দেখাও।'আজকাল যারা মানবতার কথা বলে কুরআনকে ও কুরআনের আইনকে অস্বীকার করে,যদি আল্লাহ তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় করতে চান এবং তাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে নিয়ে আসতে চান তা তাঁর পক্ষে এক মহূর্তেই সম্ভব।সূরা আল আরাফের ৬৫ আয়াত থেকে কেয়েকটি জাতির ধ্বংসের কথা আল্লাহ বর্ননা করেছেন তারা জাতি হিসেবে ছিল আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।তাই যারা বলে - আমাদের আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই,আমাদের টাকা আছে,ধন সম্পদ আছে,সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি আছে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।সারাজীবন আল্লাহর নাফরমানি করে,ব্যাভিচারিক কাজে জড়িয়ে থেকে তাদের যদি একশ বারও ইস্তেগফার করা হয় বা জানাযা দেয়া হয় সম্ভব কি আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করা?আল্লাহ সূরা ওয়াক্কিয়ার ৫৭-৭৪ আয়াতে মানুষকে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষের সৃষ্টি যা তারা অস্বীকার করে, মানুষ মরে যাবে ও তার জন্য একটি ক্ষন নির্ধারন করা আছে তাও অস্বীকার করে,ধ্বংসের পরে নতুন সৃষ্টি করতে পারেন তিনি,তিনি প্রশ্ন করেন তোমরা কি শস্য বপন কর না তোমরা তা গজিয়ে তোল? আর তিনি ইচ্ছে করলে ফলানো ফসলকে খড় কুটোয় পরিনত করতে পারেন।তখন তোমরা হবে হতাশ।তোমরা যে পানি পান কর তা কি তোমরা বর্ষন কর? আর তিনি চাইলে তা লোনা করে দিতে পারতেন।তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে গাছগুলো কি তোমরা জন্মিয়েছ? তিনিই এ সব সৃষ্টি করেছেন ও মানুষের পদানত করেছেন।তাহলে তার বিরোধীতা কেন? তাকে সেজদা না করে অন্যকে সেজদা কেন? যারা তাদেরই রক্ষা করতে পারে না তাদের নিকট ধরনা দেয়া কি আল্লাহকে অস্বীকারকারিদের কাজ নয়?বৈষয়িক দারিদ্রতা হলো-যা গরীব মানুষদের নিরাপত্মা দেয়।সে হিসেবে আমরা সবাই কখনো ধনী বা কখনো গরীব।অনেক অর্জিত সম্পদও যদি কোন কারনে চলে যায় তখন সে ধনী লোকটি হয়ে যায় গরীব।আবার এক সময়ের গরীব লোকটি হয়ে যেতে পারে ধনবান।১২টি আয়াতের ১০টি আয়াতই বৈষয়িক এ সম্পদকে নিয়ে আলোকপাত করেছে।এই আয়াতগুলোতে যারা ধনী নয় তাদের বৈষয়িক সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে বা যাদের এ সম্পদগুলো রয়েছে তাদের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে।দারিদ্রের উপর রাসূল সা: এর অনেক হাদিস দেখা যায় এবং পার্থিব জীবনে মানুষের অজ্গতার প্রমান মিলে।ইসলাম কখনো বলে না যে সম্পদ অর্জন করা যাবে না।সম্পদ অর্জিত হতে হলে হারাম ও হালালের সীমারেখা থাকতে হবে।সম্পদ যখন কোন গর্বের কারন হবে না,অন্যায়ভাবে ব্যাভহৃত হবে না সেক্ষেত্রে ইসলাম সম্পদ অর্জনে উৎসাহিত করে।আর যদি সম্পদ অর্জন হয় অন্যায়ভাবে তখনি ইসলাম সম্পদ অর্জনকে অনুৎসাহিত করে।ইসলামে সম্পদ অর্জনে একটি নিয়মনীতি(Principle) রয়েছে।কোন আয়ের উৎস ও মালিকানা পেতে হলে বৈধ উপায় থাকতে হবে।তেমনি আয়কৃত অর্থ ও সম্পদ ব্যায় করার ক্ষেত্রেও বৈধ লক্ষ্য থাকতে হবে।যে কোন উপায়ে আয় করা চলবে না আবার যে কোন খাতে ব্যায় করা চলবে না।অর্থাৎ শরিয়তের বিধিবিধানের মধ্য দিয়েই তা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।আমাদের সমাজে যদি আমরা সবাই চোখ বুঝে লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো আমাদের আয় ব্যায়ের কোন সামন্জস্য নেই।হারাম আয় ও হারাম ব্যায়ের মধ্যে ৯৫% লোকদের কোন না কোন ভাবে আমরা পেয়ে যাব।যারা সম্পদ কুক্ষিগত করে জমিয়ে রাখে ইসলাম এদের বিরুদ্ধে সতর্কবানি উচ্চারন করেছে ও কিছু গাইডলাইন দিয়েছে যাতে করে ধনী ও গরীবের ব্যাবধান কমে যায়।অন্যান্য ধর্মেও এ ধরনের ব্যাবস্হা নেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অভাবি ও বন্চিতদের সাহায্য করা কোন সমিতি গঠন করে,বয়স্কদের জন্য বৃদ্ধা আশ্রম,এতিমদের জন্য এতিমখানা,স্কুল কলেজ নির্মান,যারা একেবারে চলা ফেরা করতে পারে না(পংগু) তাদের জন্য স্হায়ী নিবাস তৈরি করা ইত্যাদি।রাসূল সা: বলেছেন,যদি আমার কাছে ওহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ন আসে আমি তিনদিনের মধ্যে তা বিলিয়ে দেই।
ধনীরা যদি তাদের অর্থ অন্যায় পথে অর্জন না করতো তাহলে সমাজে পূঁজিপতির উত্থান হতো না।রাসূল সা: যেমন দারিদ্রতা থেকে মুক্ত হতে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন তেমনি অতি সম্পদ অর্জন থেকেও বিরত থেকেছেন।তাঁর জীবন সায়াহ্নে সামান্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া কিছুই ছিলনা।তাঁর সারা জীবন তিনি উত্তম জবও খেয়ে যেতে পারেন নি।গনীমতের মাল আসলেও তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষের মাঝে।একজন শাসক হয়েও তিনি দরিদ্রের মত জীবন যাপন করেছেন।তিনি আশ্রয় চাইতেন আল্লাহর কাছে অন্যায় পথে যেন অর্থ না আসে।আবার দারিদ্রতা ,দুর্ভিক্ষ ও হতভাগ্য জীবন থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যও আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।সেকালে বৈজ্গানিক এত উন্নতি না হলেও দারিদ্রতা বিমোচনের জন্য ধনী সাহাবাগন তাদের নিজ নিজ টাকা দিয়ে দাস মুক্ত করতেন।পরবর্তী সময়ে ইসলামিক কালসারেল সেন্টার যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন ছড়িয়ে পড়েছে তার মাধ্যমে দীনকে প্রসারিত করা হচ্ছে।তাছাড়া বিভিন্ন সংঘ ও সমিতির মাধ্যমে দরিদ্রদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।আর সাধারন দান খয়রাত তো চলছেই।ইসলামই একমাত্র ধর্ম এবং জীবন ব্যাবস্হা যা এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে,তিনিই মানবজাতির জন্য সব সুষ্ঠুভাবে নির্ধারন করেছেন।ধনী এবং গরীব সমাজে থাকবেই।তবে এই বৈষম্য প্রকট হবে না।ওমর রা: এর শাসনকালে যাকাত নেয়ার মত কোন লোক খুঁজে পাওয়া যায় নি।রাসূল সা: এর হাদিস থেকে প্রমান পাওয়া যায় গরীব ধনীর ৫০০ বছর বা অন্য হাদিসে ৪০ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।সুতরাং দারিদ্রতাকে গ্রহন করে আল্লাহর হুকুম আহকামকে যথাযথ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাই হলো মু'মিনের উদ্দেশ্য।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: মানবরচিত মতবাদের কর্নধারগন পৃথিবীতে যে সিস্টেম চালু করেছে সেখানে রয়েছে অবিচার অ-মানবতা।পৃথিবীর ১৭% লোক নিয়ন্ত্রন করছে ৭০% পৃথিবীর ধন সম্পদ আর তারা বাস করে পশ্চিমা দেশগুলোতে।যদি ইসলামি আইন বাস্তবায়িত হতো সমাজের সর্বস্তরে, তাহলে মাত্র অল্প সময়ে পৃথিবী থেকে ক্ষুধার্ত,দারিদ্রতা উবে যাওয়া সম্ভব ছিল। ইসলাম সেজন্য মুসলমানদের জন্য যাকাত বাধ্যতা মুলক করেছে তাদের পুন্জিভূত ধন সম্পদের উপর।রাষ্ট্র যাকাত কলেক্শন করে তা দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করবে যাতে কেউ আর গরীব না থাকে।যাকাতের অর্থই হলো সম্পদের পরিশুদ্ধতা ও বৃদ্ধিসাধন।ইসলামে ইহা ৫টি বুনিয়াদের একটি।আজকে মুসলিম দেশগুলো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে কেন পিছনে তা তাদের ভেবে দেখা উচিত।মুসলিম আজ বহু ক্ষেত্রে অমুসলিমদের অনুসরন করে চলছে এবং তাদের উপর নির্ভর করছে।তারা তাদের ঐতিহ্যকে ভূলুন্ঠিত করে অপসংস্কৃতিকে আমদানি করছে।উন্নত দেশগুলোর উপর মুসলমানরা নির্ভর করছে এই ভুলবুঝাবুঝিটা আমাদের দূর করতে হবে সর্বাগ্রে।মুসলমানদের নিজেদের যে স্বকীয়তা রয়েছে তা পৃথীবির কোন ধর্মে নেই।দুর্ভাগ্য হলো,মুসলমানরা তাদের ধর্মগ্রন্হকে অনুসরন করছে না তাদের ব্যাক্তিজীবনে,পারিবারিক জীবনে ,সামাজিক জীবনে ও রাষ্ট্রীয় জীবনে।সুতরাং মুসলমানদের ভাগ্যের চাকা ঘুরার জন্য যত সভা সেমিনার করা হোক না কেন, কোন কল্যানই বয়ে আনবে না।কাজেই মুসলিমরা যদি তাদের মেজর সমস্যা সমাধান করতে চায় তাহলে আলকুরআনের মৌলিক শিক্ষা আলকুরআনকে আত্মস্হ ও অনুশীলন করতে হবে তাদের প্রাত্যহিক জীবনে এবং এর কোন বিকল্প নেই।
বিষয়: বিবিধ
৩৯৩২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দারিদ্র না থাকলে সুখ এবং দুঃখ জিনিসটাই মানুষ বুঝতে পারতোনা।
দারিদ্র না থাকলে মানুষে মানুষে ভালোবাসার প্রকাশ ভঙ্গি সঠিক ভাবে বুঝা যেতোনা।
দারিদ্র মানুষকে মানুষে দুঃখ বুঝতে শেখায়। ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন