লজ্জায় আরবের মানুষ
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:২৩:১২ দুপুর
১৯৯০ সালে ইরাক যখন কুয়েতে হামলা চালায় তখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাজারো কুয়েতি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলো। ২৫ বছর পর আজ সিরীয় শরণার্থীদের জন্য এসব ধনী উপসাগরীয় আরব দেশের দরজা বন্ধ। সিরিয়া সংকটে এ দেশগুলোর প্রায় প্রতিটিরই ইন্ধন রয়েছে। এক দিনে তৈরি হয়নি এ সংকট। চার বছরের গৃহযুদ্ধ ৪০ লাখ শরণার্থী তৈরি করেছে, যার চাপ এখন গিয়ে পড়ছে প্রধানত ইউরোপের ওপর। তবে ইউরোপের দরজাও যে এসব অভাগার জন্য এত দিন খোলা ছিল তা নয়। সেখানেও দুয়ারে দুয়ারে ধাক্কা খেয়ে বেড়াচ্ছিল তারা। তুরস্কের উপকূলে তিন বছরের শিশু আয়লানের মরদেহ ভেসে আসা এবং তার ছবি পুরো পরিস্থিতিকে পাল্টে দেয়। যে দেশগুলো এত দিনে 'দূর ছাই' বলে এই লোকগুলোকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে খেদিয়ে বেড়াচ্ছিল, তারাই আজ 'মুখ রক্ষার' জন্য ফুলের মালা আর মিষ্টি নিয়ে তাদের স্বাগত জানাতে বাধ্য হচ্ছে।তবে আরব সরকারগুলোর নীরবতায় সাধারণ নাগরিকদের সায় আছে এমন নয়। তাই আয়লানের কবরের মাথার দিকে 'আরব বিবেক' লিখে একটি পাথর পুঁতে দেওয়া হয়েছে।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সারা হাশাশ শরণার্থীদের বিষয়ে আরব দেশগুলোর এই নীরবতাকে 'লজ্জাজনক' অভিহিত করে কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তীব্র সমালোচনা করেন। এ দেশগুলো একজন শরণার্থীকেও আশ্রয় দেয়নি। অথচ তুরস্ক আশ্রয় দিয়েছে ২০ লাখ সিরীয়কে। ছোট্ট দেশ লেবাননে আছে ১০ লাখ।তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর সরকারের সমর্থকদের অনেকে বলছেন, সিরিয়ার সংকট কুয়েতের তুলনায় অনেক বড়। শরণার্থীদের আশ্রয় না দিলেও আর্থিক সহায়তা করছে দেশগুলো।'অ্যারাব নিউজপেপার'-এর প্রধান সম্পাদক আবদুল্লাহ আল-আথবাহ বলেন, 'কাতার খুব ছোট একটি দেশ। তারা ইতিমধ্যেই জর্দান, তুরস্ক ও উত্তর ইরাকের শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা করছে। যৌক্তিক কারণেই কাতার শরণার্থীদের গ্রহণ করতে পারছে না। বরং তাদের আর্থিক সহায়তা করাই কাতারের জন্য সহজ।' তবে কুয়েতের আল-আন পত্রিকায় গত রবিবার কলাম লেখক জেইদ আল-জেইদ বলেন, 'এ ঘটনায় আরব দেশগুলোর তরফ থেকে সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এ কলঙ্কময় নীরবতায় আমরা বিস্মিত, আমরা দুঃখিত।' সিরিয়া অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যানিয়েল গোরেভান বলেন, 'উপসগরীয় দেশগুলো সক্ষম এবং তাদের আরো কিছু করা উচিত। শরণার্থীদের থাকা, খাওয়া, কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।' আরব দেশগুলোতে সাধারণভাবে শরণার্থীদের জন্য সহানুভূতি রয়েছে। তবে তারা সাহায্য করার বিষয়ে দ্বিধান্বিত। তিউনিসিয়া, এই দেশটি ১২ লাখ লিবীয় শরণার্থীকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আলজেরিয়ায় শরণার্থী আছে ৫৫ হাজার, যাদের মধ্যে সিরীয়ও রয়েছে। আলজেরিয়ার পক্ষেও আর কিছু করা সম্ভব না।ফিলিস্তিনের ব্লগার ইয়াদ আল-বাগদাদি সম্প্রতি এক টুইট বার্তায় বলেন, 'আরব বিশ্বের আয়তন ৫০ লাখ বর্গমাইল। কিন্তু আমার ছেলের জন্মের পর প্রথম যে ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল তা হলো, আমার ছেলের জন্য ওখানে কোনো জায়গা নেই।'
বিষয়: বিবিধ
৮৭৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন