পর্দা নারীর সৌন্দর্য ও সুরক্ষার ঢাল।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৪৭:৪৯ রাত
ইসলাম শব্দের মূল হচ্ছে শান্তি। একমাত্র দ্বীন ইসলাম-ই পেরেছে এবং পারে যমীনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বাইরে কোথাও শান্তি পাওয়া যায়নি এবং যাবেও না। জীবনের এমন কোনো অঙ্গন নেই, যেখানে ইসলামের বিধান ও শিক্ষা নেই। সেই শিক্ষা ও বিধান যখন আমরা ভুলে যাই তখনই আমাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসে। আখেরাতের ভয়াবহ শাস্তি তো আছেই, দুনিয়ার জীবনও বিপর্যস্ত হয়ে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারী ও পুরুষকে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছেন। এই বৈশিষ্টগত পার্থক্যটা সৃষ্টিগত; যা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। আর কিছু পার্থক্য আছে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। একজন পুরুষ যে দায়িত্ব পালন করতে পারে নারীরা তা পারে না। আবার একজন নারী যে কাজ করতে পারে একজন পুরুষ তা করতে পারে না। নারীর জন্য সন্তান লালন-পালন, স্বামীর খেদমত, আপনজনকে আপ্যায়ন, ঘরের রান্না- বান্না ইত্যাদি কর্মই হল শোভনীয়। আর পুরুষের জন্য খেত-খামার, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি শোভনীয়। নারী ও পুরুষের প্রত্যেকেরই নিজস্ব অঙ্গনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নারী ও পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র ও দায়িত্ব ভিন্ন হলেও আল্লাহ তা‘আলার নিকট মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনা হলো তাকওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহকে যত বেশি ভয় করবে, চাই সে নারী হোক বা পুরুষ হোক আল্লাহর নিকট তার মূল্যায়নটা তত বেশি হবে।নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় গঠিত হয় পরিবার, সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র। একটি আদর্শ পরিবার ও সমাজ গঠনে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুরুষের ভূমিকার পাশাপাশি নারীর ভূমিকাও মুখ্য। একমাত্র ইসলামই নারীর অধিকার যথার্থভাবে সংরক্ষণ করেছে। তাকে বানিয়েছে গৃহের রাণী। রাসূল (সা.) বলেছেন, “নারী নিজ গৃহের দায়িত্বশীলা, তার গৃহ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে।” তাই বলে ইসলাম তাকে ঘরের আসবাবপত্র বানায় নাই। বরং প্রয়োজনের তাগিদে হিজাব পরিধান করে বা পর্দা সহকারে মার্জিতভাবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার এবং প্রয়োজনীয় সকল প্রকার হালাল কাজের অনুমতি দিয়েছে। তবে শর্ত তা-পর্দা ও শালীনতা সহকারে করতে হবে এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করা যাবে না।আজ আমাদের ঘরে-বাইরে, সমাজে-রাষ্ট্রে সবদিকেই শুধু অশান্তি আর অস্থিরতা। বিশেষ করে নারীঘটিত ফিতনায় সমাজ জর্জরিত। নারীরা আজ সর্বত্র লাঞ্ছিত, অপমানিত। পর্দাহীনতার পরিণতিতে তারা শিকার হচ্ছে সম্ভ্রমহানির, টিজিংয়ের, যাক মেইলের, খুন হচ্ছে যৌতুক ও অন্যান্য কারণে। এর সবগুলোর পিছনে কারণ ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া; অর্থাৎ ইসলামী শরয়ী পর্দার বিধান মেনে না চলা। কারণ ইসলামী বিধান অর্থাৎ শরয়ী পর্দা মহিলাদের সম্মান, ব্যক্তিত্ব ও পবিত্রতার প্রতীক। পরপুরুষের সাথে বন্ধুত্ব, কথা বলা ও যোগাযোগ রাখা, প্রয়োজন হলে আত্মীয়-সঙ্গী সাথে না নিয়ে একাকী অন্য পুরুষের কাছে যাওয়া ইত্যাদি।মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে হিজাব শব্দটি বহুবার এসেছে, যার আভিধানিক অর্থ- প্রতিহত করা, ফিরিয়ে আনা, আড়াল করা, আবৃত্ত করা, আচ্ছাদিত করা ইত্যাদি।আল্লাহ তা‘আলা নারীদের ইজ্জত, সম্ভ্রম ও সম্মান রক্ষার জন্য পর্দার বিধানকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। পর্দা নারীর সৌন্দর্য এবং নারীর ইজ্জত সুরক্ষার ঢাল। পর্দাহীন নারী বাকলহীন কলার মত- যার উপর পোকা-মাকড়, ধূলা-বালি, মশা-মাছি বসার কারণে কেউ তা নিতে চায় না। বাজারে তার কোনো দাম নেই। অনুরূপ নারীও যখন ঘরের বাইরে পর্দাহীন অবস্থায় বের হয়, তখন সমাজে তার কোনো দাম থাকে না।আজ পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের মুসলিম-সমাজ এতটাই প্রভাবিত হয়ে পড়েছে যে, কুরআন ও সুন্নাহর বিধান তাদের ভালো লাগে না। মনে করে এটা অপরিচিত ও অপ্রয়োজনীয় যা নিজের পায়ে কুঠারাঘাতের শামিল। ইসলামের যাবতীয় বিধান শুধু আমাদের আখেরাতে নাজাতেরই উপায় নয়, আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্থি ও পবিত্রতারও রক্ষাকবচ। মুসলমান আজ নিজেদের আর্দশ ত্যাগ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। আমাদের পরিবার ও সমাজেও পশ্চিমা সমাজের ভয়াবহ উপসর্গগুলো প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। পশ্চিমা সভ্যতা যেসব মরণব্যাধিতে আক্রান্ত তা থেকে যদি আমরা আমাদের পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করতে চাই তার একমাত্র উপায় ইসলামের বিধান ও আদর্শের উপর আত্মসমর্পণ। আমরা যদি আমাদের পরিবারিক শান্তি ফিরে পেতে চাই তাহলে নারী-পুরুষ সকলকে পর্দার বিধানের অনুসারী হতে হবে।পর্দার বিধানটি আজ নানাবিধ ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে জর্জরিত। খোদ মুসলিমদের দ্বারাই লঙ্ঘিত আজ পর্দার প্রকৃত বিধান। এখনকার উঠতি ছেলে-মেয়েদের পোষাক হলো- প্যান্ট, ফতুয়া, নেটের জামা, টাইটস-সর্টস যা এমন টাইটফিট, আঁট-সাঁট যাতে দেহের প্রতিটি অঙ্গের আকার, আকৃতি কাপড়ের উপরেও বুঝা যায়। এমন চোস্ত ও ফ্যাশনের লেবাস মুসলিম নারী পরিধান করতে পারে না, যাতে তার দেহের আকর্ষণীয় সৌষ্ঠব প্রকাশ পায়। যা কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক সুদৃঢ় ও মধুময় করার জন্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সমাজে ফিতনা ছড়ানোর জন্য নয়। নারীদের বেশ ধারি পুরুষের উপর অভিশাপ এবং পুরুষদের বেশ ধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। পশ্চিমা সংস্কৃতি-সভ্যতা কখনো আমাদের অনুকরণের বস্তু হতে পারে না। যাতে নারীর বিন্দুমাত্র মর্যাদা নেই। সেখানে তো নারী নিছক ভোগের বস্তু। বিভিন্ন উপায়ে নারীকে প্রলুব্ধ করা হয়েছে পুরুষের ভোগের চিতায় আত্মাহুতি দেওয়ার জন্য। বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন স্বভাবতই কামপ্রবণ এবং অনিয়ন্ত্রিত-দুর্নিবার কামনা- বাসনা মানুষকে অন্ধ, বধির ও পশুতুল্য করে তোলে।পোশাক-পরিচ্ছদের ভালো-মন্দ মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা তথা মানবিক জীবনের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে এবং অন্তর ও মন-মানসিকতায় গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাই পোশাকের বিষয়টি এ রকম সাধারণ কোনো বিষয় নয় যে, একটি কাপড় কিনলাম এবং তা পরে নিলাম। বরং এক্ষেত্রে শরীয়তের দিক-নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। আমাদের দেশের কিছু জ্ঞান-পাপী বুদ্ধিজীবী রয়েছেন যারা হর-হামেশা বলে থাকেন পর্দাপ্রথা নারীর অধিকার হরণ করে এবং প্রগতির অন্তরায়। অবশ্যই এদের নিকট নৈতিক চরিত্রের প্রশ্নটি নিতান্তই বাহুল্য।কোনো ইঁদুর নিজের চোখ বন্ধ করে যদি মনে করে যে, সে সমস্ত বিড়াল থেকে নিরাপদ তবে এ তার বোকামী নয় কি? নারীর সৌন্দর্য দেখে বদখেয়াল, কুচিন্তা আসাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক। অতএব পর্দা না করে কাম লোলুপতা ও ব্যভিচারের পথ বন্ধ করা সম্ভব নয়।ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় কি নারী কি পুরুষ- বড় বড় বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষক, চিকিৎসকের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব কৃতিত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ কোন মূর্খ মায়ের কোলে লালিত পালিত হননি। হজরত আয়েশা (রা), রাবেয়া বসরীর ন্যায় বহু জ্ঞানী মহীয়সী নারীর ইতিহাস আমরা জানি। পর্দার বিধান পূর্ণভাবে মান্য করেই তারা জ্ঞানের জগতে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাই যারা মনে করেন পর্দা প্রগতির অন্তরায় তাদের ইসলাম সম্পর্কে জানা উচিত। হতে পারে তারা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ যার কারণে না বুঝেই বিরোধিতা করে নয়তো তারা নারীর উন্নতির নামে পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থাকে কবর দিয়ে নিজেদের নিকৃষ্ট কামনা বাসনাকে পূর্ণ করতে চায়।স¤প্রতি নারীনির্যাতন খুব বেড়ে গেছে, বিশেষত উঠতি বয়েসী মেয়েরা চরম নিরাপত্তাহীনতার শিকার। এটা এ সমাজের চরম ব্যর্থতা যে, নিজেদের মা-বোনকেও নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এ অবস্থায় মা-বোনদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন প্রয়োজন অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য এই যে, বিপর্যয়ের সাথে পাল্লা দিয়েই যেন বেড়ে চলেছে আমাদের অবহেলা ও অসচেতনতা।নিজের ঘরকে অরক্ষিত রেখে নারীরা বিভিন্ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হবার কারণে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত সন্তান বড় হচ্ছে নৈতিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষাহীনভাবে। এ অবস্থার ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়ে আমাদের সন্তানেরা এক পর্যায়ে বখাটে, নেশাখোর, সর্বশেষ সন্ত্রাসী হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করছে।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন