বেকারত্য সুনামির মত ধেয়ে আসছে।তরুনদের করনীয় কি?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৩১:৪৪ দুপুর
কবি হেলাল হাফিজ তাঁর ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ নামক কবিতায় লিখেছেন, ‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। কবির এ কথার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণের সুযোগ কারও আছে বলে মনে হয় না। যৌবন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। সেই শ্রেষ্ঠ সময়টি কাজে লাগাতে তৎপর থাকে ব্যক্তি স্বয়ং, সমাজ ও রাষ্ট্র। এ সময়েই সে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর এ সংগ্রাম তো যুদ্ধই বটে।বর্তমানে তরুনরা জীবনযুদ্ধে যে ঝাঁপিয়ে পড়ছে না তা নয়।তারা শিক্ষা গ্রহন করে এখন দিশে হারা।একাত্তর-পূর্ববর্তী সময়ে সাধারণত ২১ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ হতো। ২৫ তো ছিল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের শেষ সময়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে পড়াশোনা বিঘ্নের ক্ষতিটুকু মিটিয়ে নিতে সেই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২৭। আশা করা হয়েছিল, কয়েক বছরের মধ্যেই এটা আবার আগের মতো ২৫-ই হবে। তা হলো না; বরং হয়েছে ৩০। মুল কিছু কারনের মধ্যে একটি কারন হলো সেসনজট।বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষাঙ্গনের সেশনজট এতে রাখছে মুখ্য ভূমিকা। আর সেই সেশনজটের জন্য হরতাল, অবরোধ, অসহযোগসহ অনেক কিছুই দায়ী। এই সেশনজট নিরসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগও লক্ষণীয় নয়। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এরূপই হয়তো থাকবে। এমনকি বাড়িয়ে দেওয়ার দাবিও আছে। উল্লেখ্য, এই বয়সসীমাটি কিন্তু চাকরির জন্য আবেদন করার সময়কালের। এরপর বিভিন্ন ঘাট পেরিয়ে চাকরি পেতে আরও কত সময় লাগে, তা ভুক্তভোগী অনেকেই জানেন। তাহলে ধরে নিতে হয়, তারুণ্যের এই চমৎকার সময়টুকুর পাঁচ-সাত বছর আমরা এমনিতেই হেলাফেলায় নষ্ট করলাম।সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) এর মত একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অবতীর্ন হয় দু'বা তিন লাখ বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ন ছাত্র ছাত্রী।এ সংখ্যা থেকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় দশ থেকে বার হাজার ছাত্র ছাত্রীকে।আবার এ সংখ্যা থেকে মাত্র দু'বা তিন হাজার চাকুরি পায়।আবার সেখানে রয়েছে তদবির ও কোটা।জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় পরিশ্রম করে যে মেধাবি ছাত্র ছাত্রীটি সোনার হরিনের মত চাকুরিটি পেল না তখন হতাশ হয়ে পড়ে।আর এ সংখ্যাটি বিশাল একটি সংখ্যা।দারিদ্রতার কাষাঘাত সইতে না পেরে অনেকে তরুন হারিয়ে যায় সমাজ জীবন থেকে।এই তরুন সমাজ হলো সমাজ বিনির্মানের প্রতীক।তবে আমি অনেক তরুনদের হতাশ হতে দেখি নি।তারা গড়ে তুলেছে বিভিন্ন সংঘ।তাদের নিজের মত করে গড়ে তুলেছে সামাজিক ব্যাবসায়।দেশের শহর ও প্রান্তিক এলাকা গুলো ভ্রমন করলে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত তরুনরা আজ এমন অনেক ব্যাবসায়ের সাথে জড়িত যা থেকে তারা নিজেদের উন্নীত করেছে।যে জিনিসটি বেশি প্রয়োজন তা হলো উদ্দম।একজন উদ্দমি ব্যাক্তিই হতে পারেন সফল ব্যাবসায়ি।শুধু মাত্র চাকুরির উপর নির্ভর হয়ে জীবনকে সংকীর্ন করার মানে হয় না।আমার ২৫ বছরের চাকুরি জীবনে দেখেছি মালিক পক্ষ কিভাবে তিলে তিলে ব্যাবসায়কে উঠিয়ে এনেছেন।সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তিত্বগন।অথচ মালিক একজন সাধারন শিক্ষিত যাকে সমীহ করে চলেন একজন পিএইচডি হোল্ডার।তরুনদের মধ্যে একটি মহা শক্তি আছে।যারা ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে সামান্য একটি চাকুরির ধরনা দেন তা না করে ৫ জন তরুন ২৫ লাখ টাকা দিয়ে ছোট একটি ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন।প্রথম ব্যাবসায় নামলে আঁট সাঁট বেঁধে নামতে হয়।আপনি যে ব্যাবসায়টি করবেন তার প্রতি প্রচ্ছন্ন ধারনা নিতে হবে।পার্টনারদের চরিত্র হতে উন্নত ও সৎ জন।একে অন্যের উপর যেন নির্ভরতা জন্ম নেয় এমন ব্যাক্তিত্ব হতে হবে।বিশ্বাসে কোন ঘাটতি থাকবে না।এমন দলভুক্ত তরুন গড়ে তুলতে পারে বিভিন্ন ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান।সমস্যাটি হলো- এমন অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে ,ব্যাবসায় বড় হওয়ার সাথে সাথে নৈতিকতা না থাকার কারনে পরস্পরের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়ে কোন কোন ব্যবসায়ের ধস নেমে এসেছে বা ব্যাবসায়টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের ভীতরের খবর আমার জানা রয়েছে যেখানে ম্যানেজমেন্টের কিছু ব্যাক্তির নৈতিকতার পদস্খলন রয়েছে যা ব্যাবসায়কে ক্ষতির দিকে নিয়ে গেছে।কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান গুলোর মালিকগন সৎ ও নীতিবান তাদের ব্যাবসায়ের চরম উন্নতি হয়েছে।বাংলাদেশ এমন একটি জলবায়ুর দেশ যেখানে সামাজিক ব্যাবসায়কে এগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।দেশে লক্ষ্যনীয় এমন তরুনদের প্রতিষ্ঠান দেখে আমার মাঝে মাঝে ঈর্ষা জাগে আমাদের লক্ষ লক্ষ তরুন কেন চাকুরির পিছনে হাঁটছে।অধিকাংশ তরুনদের মধ্যে যে অমিত শক্তি আছে তা তারা অনুধাবন করেন না।যে শক্তির অধিকারী হওয়া সম্বন্ধে তরুণরা সচেতন নয়, সে শক্তি থাকা আর না থাকা একই কথা হবে। কারণ সে শক্তির কোনো ব্যবহার হবে না। অব্যবহৃত শক্তি পচে যায়। তরুণদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন কেউ তাদের এই আমিত শক্তিকে ধংস করে না দেয়।যে তরুন জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় শেষ করে যোগ্যতা অর্জন করেছে তাকে কেন চাকুরির পিছনে ঘুরে সময় নষ্ট করতে হবে।তার ভীতরে যে অসম্ভব সৃজনশীল শক্তি বাসা বেঁধে আছে সেটিকে বের করে নিয়ে এসে কাজে লাগাতে হবে।হতাশ হয় অপরাধি লোকেরা।অসম্ভবকে সম্ভব করাই তরুনদের কাজ।আজকের বেকার তরুনদের আমি অনুরোধ করবো তোমরা যারা চাকুরি পাও নি,তোমাদের একটি সংঘ তৈরি কর।যে কোন একটি ব্যাবসায়ে হাত দাও।সৎ ,যোগ্য ও পরিশ্রমী হলে কেউ তোমাদের ঠেকাতে পারবে না।তোমাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতে আসবে চাকুরি সন্ধানী উচ্চ শিক্ষিতরা।তোমাদের চারপাশে কি দেখতে পাও না এমডি হয়ে বসে আছে অনেক তরুন।হয়ত সে শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষিত নয় তবে সে তার যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।যারা সংকোচ করে কোন কাজে হাত দেয় না তারাই জীবনকে পিছিয়ে দেয়।নিজের কাজ নিজে করাতে কোন সংকোচ নেই।যারা দেশের বাইরে আছে তারাও সংঘ গড়ে তুলে কয়েকজন মিলে দেশে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে।বিশেষ করে গাল্প এরিয়ার দেশগুলোতে যেখানে জাতীয়তা দেয়া হয় না,সে সমস্ত দেশে যারা কাজ করছেন তারা কতিপয় যুবা বৃদ্ধ মিলে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে।কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,'কেশে আমার পাক ধরেছে বটে,উহার উপর নজর এত কেনো,পাড়ার যত ছেলে বুড়ো,সবার আমি এক বয়সী যেনো।' সেজন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমার আবারো আবেদন তোমরা বসে না থেকে কিছু করার চেষ্টা কর।তরুন সমাজ যেভাবে অধপতিত হচ্ছে তার একমাত্র কারন তারা নিজেদের মস্তিস্কের ঢাকনাটি খুলে ফেলছে না।একটি দেশের অধপতন তখনি হয় যখন তরুনরা সমাজ থেকে হারিয়ে যায়।সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হলে গরীব ধনীর বিভাজন কমিয়ে আনতে হবে।আমাদের সমাজে এখন অর্থ কিছু মানুষের হাতে আর বাকি বিশাল একটি অংশ শুন্যের কোঠায়।এ অবস্হা যদি চলতে থাকে তাহলে সমাজ অচিরেই অকল্যানের দিকে ধাবিত হবে। সেজন্য আমাদের সবার উচিত ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখা এবং সেটি নিশ্চই হতে হবে সততার সাথে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন