পরকে জানার আগে নিজেকে জানতে শিখুন।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:১৪:০৯ দুপুর

'সম্মানিত ব্লগারদের জন্য--।' এই পোষ্ট-টি অপসারিত হয়েছে আমার ব্লগ থেকে।আবারো পড়লাম।সেখানে ব্লগার তথা জাতির মান উন্নয়নে কিছু কথা লিখা ছিল।আর কিছু কথা ছিল ভোগবাদি সমাজের আলোকে কিছু কথা যারা সমাজে ভোগ করে চলছে।নৈতিক কথাগুলো নৈতিক মানুষেরা লুপে নেয় আর অনৈতিক মানুষগুলো চায় সেগুলো যেন দ্রুত অপসারিত হয়।তাহলে তারা সমাজে নোংরামিকে আরো সমপ্রসারিত করতে পারবে।কিন্তু ব্লগ এমন একটি যায়গা যা ক্ষুদে লেখদের দ্বারা একে অন্যকে শিক্ষিত ও চেতনাবোধে জাগ্রত করতে পারে।

একজন মানুষের উচিত নিজেকে,নিজের বিবেক ও বিচার বুদ্ধিকে ও নিজের ভীতরের আসল মনুষ্যত্বকে জানা।এটিই আসল মানুষ।সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞান-এই শব্দগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই জানি কিন্তু এগুলোর প্রয়োগ আমাদের জানা নেই।ব্যাক্তি বক্তৃতা দিচ্ছেন,কথার ফুলজুরি ফুটাচ্ছেন কিন্তু তার অন্তরস্বত্তা তাকে নিয়ে হাসছে।শ্রোতা হাততালি ও বাহবা দিচ্ছে।বক্তা যখন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে একা তখন তার মন বলছে তুমি আজ একটি ভন্ডামি করে আসলে।তোমার সততা নেই,নৈতিকতা নেই,সামাজিক মুল্যবোধ নেই।তাহলে তুমি অনৈতিক এ কাজ গুলো করছো কেন? লেখক বই লিখেছেন আর প্রকাশক বই ছাপিয়েছেন।দু'টোতেই রয়েছে ভন্ডামি।লেখকের সখ জেগেছে একটি বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান করবে।সবাই জানবেন তিনি একজন লেখক।প্রকাশক বললেন এটি সম্ভব নয়,আপনার বইয়ের লেখার মান ভাল নয়।এই বই পড়ে পাঠকদের নৈতিকতা বিলোপ হবে। লেখক বললেন কত টাকা লাগবে? প্রকাশক এবার অসম্ভবকে সম্ভব করলেন টাকার মাপে।একজন সৎ ব্যক্তির পক্ষে কখনো কোনো অনৈতিক ও নীতিজ্ঞানবহির্ভূত কাজ করা সম্ভব নয়। যেকোনো অসৎ, অনৈতিক ও নীতিজ্ঞানবহির্ভূত কাজ অন্যায় হিসেবে পরিগণিত। ন্যায়ের বিপরীত হলো অন্যায়। সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানকে আকৃষ্ট করে ন্যায়।পৃথিবীর যেকোনো দেশ ও সমাজ যত বেশি সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ দিয়ে সমৃদ্ধ হবে সে দেশ ও সমাজ তত বেশি আদর্শ ও ন্যায়নিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।কত শত সংঘ গড়ে উঠেছে,ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করছে।তার সিংহভাগ কর্নধার হলো ভন্ড।কিভাবে নিরুপন করবেন ভন্ডামি।আমার ধর্মের কথা দিয়েই বুঝাতে চেষ্টা করছি। একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর জন্য ঈমানদার হওয়া অত্যাবশ্যক। একজন ঈমানদার ব্যক্তি মনেপ্রাণে অন্যায়কে বর্জন ও ঘৃণা করে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- একজন ঈমানদান ব্যক্তি যেকোনো অন্যায় দেখলে তা শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে, শক্তি দিয়ে প্রতিহত করার সাহস না থাকলে সে ক্ষেত্রে মুখে প্রতিবাদ করবে আর মুখে প্রতিবাদ করার সাহসও যদি দেখাতে না পারে সে ক্ষেত্রে ঘৃণা করবে। প্রথমোক্তটির চেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক। বাংলাদেশের অধিবাসীদের ৯০ শতাংশের অধিক ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও এ কথাটি সত্য যে, আজ আমাদের দেশে দুর্বল ঈমানদার মানুষের সংখ্যাই অধিক।কোন জলছায় মুয়াল্লেম কথা বলতেই ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলেন।কেঁদে ফেলা একটি নরম অন্তরের ও ভাল মানুষের কাজ।কিন্তু মুয়াল্লেমের যদি কোনভাবে খোঁজ নেয়া যায় তিনি তার পরিবারে,সমাজে কেমন মানুষ? তাহলে প্রথম খবরটি আসে এটি তার ভন্ডামি।তিনি খেয়ানত করেন পরিবারে ,খেয়ানত করেন তার প্রতিষ্ঠানে।তাহলে তিনি চোখের পানি ফেললেন তার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য।সৈয়দ মুজতবা আলির 'লাল সালু' আমরা পড়েছি অনেকে।পড়ে নিতে পারেন আপনারাও।ধর্মব্যাবসায়ি রয়েছে সব ধর্মে।কিন্তু মুসলমানরা এমন একটি ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে যাতে রয়েছে নৈতিকতার পূর্ন মান।রয়েছে সততার চরম উৎকর্ষতা।সে সৎ মানুষ ভন্ড হয় কি করে? আপনি সুন্দর ইসলামি পোষাক পরেছেন।টুপি মাথায় দিয়েছেন।মুখে লম্বা দাঁড়ি ও হাতে তাছবিহ।সভায় সুন্দর কথা বলেন।আপনার মুখে হাসি অথচ অন্তরে কপোটতা।কি করে সুদ,ঘুষ,জিনা,পরের আর্থিক ক্ষতি ও নারীনির্যাতনের মত কাজ করতে পারেন।এগুলোর অনেক প্রমান রয়েছে সমাজে।সমাজ বিশ্লেষন করলে ও অন্তরকে খুলে সমাজের চিত্রগুলো দেখলে অনুমান করতে পারবেন।যাদের অন্তর কাঁপে না মিথ্যা ও প্রহসন করতে তাদের কোন মনুষত্ব নেই।নিজেকে পরীক্ষা করুন আপনি কতটুকু সৎ।আপনার জীবনের আপাদমস্তক নীরিক্ষন করুন।নিজের অন্তরকে প্রশ্ন করুন।আপনার দু'পাশে দুইজন সম্মানিত লেখক(কেরামান কাতেবিন) রয়েছেন যারা লিখে চলছেন যা আপনি বলছেন বা করছেন।সাক্ষি শুধু তারাই নয়,সত্যের সাক্ষি আপনার চার পাশের সমস্ত মানুষ।আপনি সত্যবাদি হলে সমাজের সবাইকে ডেকে বলুন আমি ভুল করছি কি না? কারন আপনার ভুল সংশোধনের এটিই প্রকৃষ্ট সময়।যে নিজেকে জানতে শিখে সেই বড় শিক্ষক।পৃথিবীতে এত অনাচার ও অবিচার কেন? কারন হলো মনুষ্যত্যের বিকাশ হয় নি।আমরা শিখছি না ও শিখাতে ব্যার্থ হচ্ছি।সভ্য ও উন্নত জাতি যাদের বলা হয় সেখানকার সমাজ ব্যাবস্হা কি?উন্নত দেশে একটি সন্তান জন্ম নেয়ার পর থেকেই আলাদা খাটে থাকে। শিশুকে ঘড়ি ধরে খাওয়ানো হয়। কাঁদলেও সময়ের আগে খাওয়ানো হয় না। সন্তান দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা-মামা, ফুফু, খালাদের সঙ্গ পায় না। বয়স হলে আলাদা বাসায় থাকতে হয়। তার চাকরি তাকেই জোগাড় করতে হয়। তার বিয়ে তাকেই করতে হয়। মেয়ে হলে শত শত ছেলের পেছনে ঘুরতে হয়। সে হয়ে যায় ব্যাভিচারি।তারা নিজেরা বিয়ে করে। মা-বাবার সাথে সম্পর্ক তার খুব কমই থাকে। এ ধরনের বিয়ে টেকেও কম। ছাড়াছাড়ি অনেক বেশি হয়। স্ত্রী বা স্বামী বদল অনেক ঘটে।সমাকামি বিয়ে হয় অহরহ।নিরর্থক। মদ ও নোংরামিই যেন তাদের কালচার। সিনেমা, টিভিতেও রয়েছে নগ্নতা। সি-বিচ, হোটেল, ভ্রমণ সব কিছুতেই নোংরামি ও নগ্নতা। শত উন্নতি সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের আর্থিক ব্যবস্থাকে ভালো বলা যায় না। নিজের দেশের নিম্নবিত্তদের ও পরদেশ শোষণ করে ইউরোপ ও আমেরিকার বিত্ত গড়ে উঠেছে। পুঁজিপতিরা মূলত শোষক। কিছু করপোরেশনের হাতেই সব বিত্ত। সুদব্যবস্থা সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণে সাহায্য করেছে। সে দেশে গৃহহীন লোকের সংখ্যা অনেক। অনেকের চিকিৎসাসুবিধা নেই। পুঁজিবাদ যে দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান করতে অক্ষম সেটি দেখা যায় তাদের সামাজিক ব্যবস্থায়। সেসব দেশের ভালো দিক বলা যায় গণতন্ত্রকে। কিন্তু তা-ও এখন পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণে। পুঁজিপতিদের চাঁদায় তারা নির্বাচিত হন এবং পার্টি চালান। ফলে পুঁজির স্বার্থে তাদের দেশীয় নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়। এ অবস্থায় গণতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে মনে হয় না।এর তুলনায় আমাদের ব্যবস্থা অনেক ভালো। ইসলামি ব্যবস্থার তো কথাই নেই- যেখানে পরিবার শক্তিশালী করাই মূল কথা। বাবা-মা ও শিশুদের স্বার্থরক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম কালচারে নোংরামি ও নগ্নতা বলে কিছু নেই। মুসলিম সমাজের নোংরামি পাশ্চাত্য থেকে আমদানিকৃত।এই আমাদানি বন্ধ করা হলে আমাদের সমাজ হবে উৎকৃষ্ট।কিন্তু কিভাবে সম্ভব একটি ধষে যাওয়া ও সামাজকে গড়ে তোলা? এটি ষোল কোটি মানুষের যার যার নিজের কাজ।নিজের মনুষ্যত্বকে গড়ে তোলা,চরিত্রকে উন্নত করা ও সর্বোপরি সমস্ত অপরাধকে নিজের জীবন থেকে পরিহার করা।সেজন্য পরকে না জেনে আগে নিজেকে জানতে ও বুঝতে শিখুন।আপনার পরীক্ষা আপনি করে নিন আপনার সমাজে আপনি কতটুকু নৈতিক বলে বলিয়ান।আপনি ভাল হলে সমাজের প্রতিটি মানুষ যেমন জানবে তেমনি আপনিও জানাবেন নিজেকে।

বিষয়: বিবিধ

১২০৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

339024
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৪৬
পললব লিখেছেন : ইসলামে চেনা, জানা এবং মানা সমান্তরালে বিরাজ না কোন নৈতিকতাই ঠিক থাকবে না। অন্তর এবং বাহিরের লেবাস এক করতে হবে। তবেই উন্নতি। পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
339035
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
নাবিক লিখেছেন : আপনার কথাগুলো ভালো লাগলো ধন্যবাদ।

** 'লাল সালু' উপন্যাসটির লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
339036
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৩১
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আমার ব্লগ মানে কি আপনার নিজের ব্লগ সাইট নাকি অন্যকিছু বুজিয়েছেন?
339061
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৩
মহিউডীন লিখেছেন : ধন্যবাদ।'লাল সালু'র লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।এটি ছিল লিখার ভুল।আবারো ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File