তাওহিদের উপর বিশ্বাস না থাকলে মুসলিম হয় কি করে?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৭ মার্চ, ২০১৩, ০৩:০৮:৫১ দুপুর

তাওহিদ হলো আল্লাহকে এক ও একক (এফরাদুল্লাহে তাআলা) মনে করে বিশ্বাস করা।তাওহিদের বিপরিত হলো শির্ক। সূন্নি আলেমগন বলেছেন বিপরীত বস্তুদিয়ে আসল বস্তুকে চিনা যায়।আলো থাকাতে আন্ধকারকে যেমন বুঝা যায় তেমনি শির্ক সম্পর্কে জানা থাকলে তাওহিদকে বুঝতে শহজ হয়।শির্ক অর্থ হলো অ্ংশীদার স্হাপন করা।আল্লাহর কোন একটা গুন বা কাজের সাথে শরিক করাই হলো শির্ক।আরো যদি বিশ্লেষন করি তাহলে বলা যায়,আল্লাহর এবাদতের ক্ষে্ত্রে বা কোন গুনের ক্ষে্ত্রে বা কোন সৃষ্টির ক্ষে্ত্রে যদি অন্যকে সম্পৃক্ত করা হয় সেটাই শির্ক।একজন মুসলিমকে খুব ভাল করে জানতে হবে,আল্লাহর একত্ব বাস্তবায়ন না হলে যত ভাল কাজই করা হয় কোন লাভ নেই।আর আল্লার একত্বের উপর বিশ্বাস না থাকলে সে মুসলিম নয়।সাহাবা ,তাবেঈ ,তাবে তাবেঈ গন এ ব্যাপারে একমত ছিলেন।তিনটি ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ব বাস্তবায়িত হয়।১- আল্লাহ এক ও একক অন্তরে বিশ্বাস করা ২-মুখে একত্বের স্বীকার করা ৩-অঙ প্রত্যঙের দ্বারা আল্লাহর বিধিনিষেধকে বাস্তবায়ন করা বা আমলে পরিনত করা।

ইসলামে এবাদত হবে একমাএ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।আল্লাহ আরশে আছেন , আল্লাহর স্বত্বা আছে, আল্লাহর হাত আছে (সূরা মুলক প্রথম আয়াত পড়ুন), আল্লাহর চেহারা আছে (সূরা আর রাহমান পড়ুন),আল্লাহ কথা বলেছেন মুসা (আ) এর সাথে,আল্লাহ দেখেন ও শুনেন।ইমাম মালেক (র) বলেছেন আল্লাহর এ সমস্ত গুন রয়েছে তবে তার ধরন কি জানা নেই।লাভক্ষতির মালিক আল্লাহ , সন্তান দেয়ার মালিক আল্লাহ।কিন্তু যদি কেউ পির বাবার কাছে যায়,হুজুর সায়েদাবাদির কাছে যায় বা আজমিরে যায় এ জন্য যে , সেখানে গেলে সন্তান পাওয়া যায় বা ধনী হওয়া যায় তাহলে আল্লাহর ক্ষমতাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে শির্কে ডুবে গেল।উপমহাদেশে হাজারো পিরের দরবার আর কবর মাজার শির্কের আড্ডাখানা।এগুলোর সাথে ইসলামের কোন সমপর্ক নেই।

তাওহিদ তিন প্রকার।১-তাওহিদে রুবুবিয়াত ২-তাওহিদে উলুহিয়াত ৩-তাওহিদে আসমাউসসিফাত।তাওহিদে রুবুবিয়াত হলো আল্লাহর কাজে কর্মে আল্লাহকে একক মনে করা।আল্লাহর কাজ হলো সৃষ্টি করা।এ কাজ মানুষের নয়।মানুষ একটা মশাও সৃষ্টি করতে পারবে না যদিও পুরো মানব জাতি একত্রিত হয়।রিজিক দেয়া একমাএ আ্ল্লাহর কাজ,মৃত্যু দেয়া আ্ল্লাহর কাজ।আমাদের এবাদতে কত যে শির্ক বিদা'আত ঢুকে আছে তা আমরা জানিনা।ধরুন, আপনি ঢাকা থেকে চিটাগা্ং যাছ্ছেন।পথিমধ্যে চালক একটা নির্ঘাত দুর্ঘটনা থেকে যাত্রিদের বাঁচালো।যাত্রিরা এবার বলে উঠলো এ চালক না থাকলে আমরা মরেই যেতাম।যাত্রিরা আল্লাহর ক্ষমতা একজন চালককে দিয়ে দিলেন।আপনার সন্তান অসুস্হ এব্ং আপনি অনেক ডাক্তার দেখালেন ভাল হছ্ছে না। হঠাৎ একজন ডাক্তার পেলেন ও তার ট্রিটমেন্টে ভাল হয়ে গেল। আপনি বলতে থাকলেন এ ডাক্তার না হলে ওকে বাঁচানো যেত না।আপনি শির্ক করে ফেললেন।তাওহিদে উলুহিয়াত হলো , বান্দার কাজে আল্লার একত্ব প্রতিষ্ঠা করা।ইসলামের ৫টি মৌলিক বিষয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করা, সেজদা করা,দোয়া করা,কুরবানি করা,মান্নত করা অর্থাৎ আপনার দৈনন্দিন যাবতীয় ইতিবাচক কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা ও একমাএ আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখা।তাওহিদে আসমাউসসিফাত হলো, আল্লাহর ৯৯টি গুনবাচক নাম রয়েছে এগুলোর উপর বিশ্বাস রাখা,আল্লাহ আরশে অধিষ্টিত,আল্লাহর চেহারা আছে,আল্লাহ রাতে প্রথম আকাশে বান্দাকে মাপ করার জন্য হাত বিচিয়ে রাখেন,আল্লাহই মানুষকে নিরাপদে রাখেন,বিপদ মুক্ত করেন,আল্লাহই খাওয়ান,আল্লাহই রোগমুক্ত করেন, ঈমানের ৬ টি বিষয় রয়েছে সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্হাপন এভাবে হাজারো গুন সমৃদ্ধ আল্লাহ পাক।আল্লাহ জুলম পছন্দ করেন না।আর শির্ক হলো বড় জুলম।(সূরা লোকমান দেখুন) কেউ যদি শির্ক থেকে মুক্ত থাকে আল্লাহ ইছ্ছে করলে অন্য গুনাহ মাপ করে দিতে পারেন।আর যারা শির্ক করবেনা তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপত্তা রয়েছে। তবে ঈমানদারদের জন্য পরিক্ষা রয়েছে।আপনি সহজে বুঝতে পারবেন যদি কোন বিপদ আপনার উপর নিপতিত হয়।আপনি যদি প্রকৃত ঈমানদার হন আর আপনি সরল রাস্তার উপর প্রতিষ্টিত থাকেন,যদি কোন বিপদ এসে যায় আপনি বুঝে নিবেন আল্লাহ আপনাকে পরিক্ষা করছেন।আর আপনার কাজ যদি আল্লাহ বিরোধী হয় তাহলে তো আপনি বুঝতেই পারছেন আপনি একজন অপরাধি।আল্লাহ তার কোন কোন নেক বান্দাহকে দুনিয়ায় সামান্য শাষ্তি দিয়ে আখেরাতে কামিয়াবি করে নেন। সুতরা্ং আমাদের কাজ হলো সুখে দু:খে আল্লাহর কাছে মাথা নত করা।আজকের বিশ্বে মুসলমানদের নির্যাতনের কারন হলো,অধিকা্ংশ মুসলমান তাওহিদে বিশ্বাসি নয়।আল্লাহ কি করে আমাদের সাহায্য করবেন যদি আমরা আমাদের যায়গায় ঠিক না থাকি।আমরা নির্ভর করে আছি মানবরচিত মতবাদের উপর।এমনকি আল্লাহ ও তার রাসুল সা: কে কটাক্ষ করছি।

এই যে আমাদের তরুনরা , যারা ইসলামের নামধারী তরুণ তারা যে কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে তারা কি করে মুসলিম থাকে ইসলামকে কটাক্ষ করার পর।ইসলামের আঙিনায় আসতে হলে তাদের এখন সত্য তাওবা করে প্রবেশ করতে হবে।এটাই ইসলামে নিয়ম। তা না হলেতো কুফরির মৃত্যু বরন করতে হবে। আমাদের আলেম উলামাদের উচিত তাদের আশার বানি শুনানো।অনেক রাজনৈতিক নেতা ভোট হাসিলের জন্য সুন্দর কথা বলেন।তিনি কি তার চরিএ দেখেছেন কি করে বেড়ান।আল্লাহ শহনশিলদের পছন্দ করেন।রাসুল সা: তায়েফে এ স্বাক্ষর রেখেছেন।ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইসলামের পথে চলতে হবে।স্ংবিধানে শুধু আল্লাহর নাম ও ইসলামের নাম থাকলেই কাজ হবে না।স্ংবিধানকে যে পর্যন্ত কোরানের কথা দিয়ে রিপ্লেস করা না যাবে ও কোরানের আইন বাস্তবায়িত না হবে সে পর্যন্ত ইসলামের সৌন্দর্য আসবে না।আর ইসলামের কথা বললেই হবে না ,মানুসের চরিএ হতে হবে কোরানের চরিত্রের মত। আজকের পৃথিবিতে যারা ইসলাম কায়েমের জন্য লড়ছে তাদের ভেবে দেখা দরকার তারা সঠিক অবস্হানে আছে কিনা? এ ভার আপনদের উপর রইল।

আমরা এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি। যখন আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম ও মানবকুলের শিরোমণি আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসুল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করা হচ্ছে। একদিকে দেশে বিরাজ করছে সর্বগ্রাসী সঙ্কট, সীমাহীন নৈরাজ্য ও রাজনৈতিক সহিংসতা; অন্যদিকে কিছু ফেসবুক ও ব্লগে সর্বশক্তিমান আল্লাহ এবং আমাদের নবীজী সম্পর্কে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এক কথায় ইসলাম আজ বিপন্ন। তাই আজ দরকার মুসলিম জনতার ইস্পাতকঠিন ঐক্য ও দৃঢ়তা।

আমি বিস্মিত ও লজ্জিত হই যখন দেখি আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও পবিত্র কোরআন সম্পর্কে যারা কটূক্তি করেছে, তারা এদেশেরই সন্তান এবং মুসলমান নামধারী। কিন্তু যে ভাষায় তারা কোরআন ও নবী-রাসুল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করেছে, তারা ইহুদি-খ্রিস্টান বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলেনি; বরং তারা রাসুল (সা.) ও পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বিপুল প্রশংসা করেছেন। এখানে আমি কয়েকটি উদ্ধৃতি তুলে ধরছি— প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী জর্জ বার্নার্ড শ’ আমাদের রাসুল (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি এ মানবশ্রেষ্ঠ মানুষ (রাসুল সা.) সম্পর্কে গভীরভাবে গবেষণা করেছি। আমার অভিমত হচ্ছে, তাঁকে বিশ্বমানবতার ত্রাণকর্তা হিসেবে অভিহিত করা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর মতন একজন মহান ব্যক্তি যদি গোটা আধুনিক পৃথিবীর সর্বময় নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন, তাহলে একমাত্র তিনি এই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এবং বিভক্ত পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান করতে পারতেন।

মাইকেল হার্ট নামক একজন খ্রিস্টান লেখক ও গবেষক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনীতে লিখেছেন, তাতে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে প্রথম স্থান দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন :‘যে মহামানবের পদচারণায় পৃথিবী ধন্য হয়েছে, আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসা, অন্তরের পবিত্রতা, আত্মার মহত্ত্ব, ধৈর্য, ক্ষমা, সততা, নম্রতা, বদান্যতা, মিতাচার, আমানতদারী, সুরুচিপূর্ণ মনোভাব, ন্যায়পরায়ণতা, উদারতা ও কঠোর কর্তব্যনিষ্ঠা ছিল যার চরিত্রের ভূষণ। যিনি ছিলেন একাধারে এতিম হিসেবে সবার স্নেহের পাত্র, স্বামী হিসেবে প্রেমময়, পিতা হিসেবে স্নেহের আধার, সঙ্গী হিসেবে বিশ্বস্ত, যিনি ছিলেন সফল ব্যবসায়ী, দূরদর্শী সংস্কারক, ন্যায়বিচারক।’

আমাদের পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বিশ্ববিজয়ী নেপোলিয়ান বলেছেন : ‘আমি বিশ্বাস করি সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন পৃথিবীর সমস্ত দেশের জ্ঞানী ও শিক্ষিত মানুষকে কোরআনের নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যাবে। কারণ একমাত্র পবিত্র কোরআনের নীতিগুলোই সত্য যা মানবজাতিকে শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

আমাদের সকলের উচিত স্ংকট বৃদ্ধি না করে ইসালমের কথাগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছানো।কোন স্ংঘাত সমাজকে ভাল কিছু দিতে পারেনি।আমরা যদি সহনশিল হয়ে একে অণ্যের দোষ মুছে দিতে পারি ,একে অন্যকে আপন ভাই এর মত মর্যাদা দিতে পারি তবেই এ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হব।

বিষয়: বিবিধ

১৭১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File