তাওহিদ ও শির্ক - সম্পর্কে জেনে ইবাদত করুন।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৮ মার্চ, ২০১৫, ০৪:১০:৫৫ বিকাল

দ্বীন শিখার যেমন শেষ নেই তেমনি আল্লাহর গুনগান করে শেষ করা যায় না।আল্লাহ ও তাঁর রসুল সম্পর্কে যতই ভাবতে থাকি, ততই অন্তর আলোড়িত করে।সেই ছোট গল্পটির মত-'ছোট প্রান ছোট ব্যাথা,ছোট ছোট দু:খ কথা নিতান্তই সহজ সরল।সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি, তারি দু'চারিটি অশ্রু জল। অন্তরে অতৃপ্তি রবে,সাঙ বলে মনে হবে, শেষ হয়ে হইলো না শেষ।'তাওহিদকে জানতে ও বুঝতে গিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি।দৈনন্দিন যে ইবাদতগুলো করছি তাতে দেখছি বড় শির্ক না থাকলেও ছোট শির্ক মনের অজান্তে লুকিয়ে আছে।আর আজকের কোটি কোটি মুসলিম তারাতো বিভক্ত হয়ে তাদের গলায় লাগাম লাগিয়ে দিয়েছে অসংখ্য দলের নেতা ও বিভিন্ন ত্বরিকতের পীর বুজুর্গের হাতে আর তারা তাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে জাহান্নামের দিকে। 'ইসলাম নিয়ে জন্মেছি আমরা মুসলমান সম্প্রদায় কিন্তু যিনি এই ইসলাম ধর্মের মালিক তার আদেশ নিষেধ মেনে আমরা চলছি না।তাঁর রাজ্যে বসবাস করার জন্য সংবিধান(Constitution) রুপি আলকুরআন আমাদের জীবনের কাছে নেই এবং সেটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার মত মানুষিকতা ও আমরা সমাজ জীবনে গড়ে তুলছিনা অনেকে।আবার যারা এর জন্য কিছু কাজ করছি তাও নির্ভেজাল নয়।ধর্মের কাজের সাথে অধর্মকে মিলিয়ে তা পালন করছি।ইসলামের জ্ঞান আহরন করতে গেলে প্রথম বিষয়টিই হলো আল্লাহ সম্পর্কে জানা ও বুঝা।তাওহিদ হলো আল্লাহর একত্ব।একজন মুসলিমকে মুসলিম হতে হলে এক আল্লাহর উপর ঈমান আনতে হয় অর্থাৎ তাওহিদের উপর বিশ্বাস স্হাপন করতে হয়।এই বিশ্বাস যদি বান্দাহের অন্তরে স্হাপিত না হয় তাহলে বান্দাহের কোন আমলই আল্লাহর কাছে কবুল হবে না।এই বিষয়টি শরিয়তে এত গুরুত্বপূর্ন যে,অধিকাংশ মুসলমানের অজানা এবং তারা এই বিশ্বাসকে অন্তরে স্হাপন না করেই তাদের দৈনন্দিন হাজারো ইবাদত করে যাচ্ছে।নামাজ ,যাকাত,রোজা,হজ্জ ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এ সমস্ত সব কিছুর উপর হলো তাওহিদের মর্যাদা।যার মধ্যে তাওহিদের মর্যাদা নেই তার কোন ইবাদত কস্মিনকালেও গ্রহনযোগ্য হবে না।এ বিষয়টি ইবাদত কারিদের প্রথমে স্পষ্ট করতে হবে।তাওহিদ ও শির্ক সম্পর্কে প্রতিটি মুসলমান কম বেশি জানে যদিও এর গভীর রুপটি সম্পর্কে ধারনা আছে খুব কম মানুষের।তবে এটিকে আমাদের বিশ্লেষন করে বুঝতে হবে আমাদের কাছে কেয়ামত এসে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।

এই তাওহিদ শব্দটি আরবি 'ওয়াহেদ' শব্দ থেকে এসেছে।আমরা যারা আরব দেশগুলোতে ভাগ্যক্রমে এসেছি তারা আরবি ভাষার ছোট ছোট শব্দ বা বাক্য সম্পর্কে অবগত আছি।অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয় যখন আমাদের ভাইরা ইউরোপ বা ফারইষ্টে যায় তখন সে দেশের ভাষাটি প্রথমে শিখে নেয়।আর সবার আগে শিখে ইংরেজি।কারন হলো তাকে পার্থিব কিছু অর্জন করতে হবে।কিন্তু যে সব ভাইরা আরব দেশগুলোতে বিশ বা ত্রিশ বছর পার করে দিলেন তাদের ৯৫% আরবি ভাষাটার দিকে নজর দেন না।তবে সামান্য কিছু শিখেন জীবনের তাড়নায় যা দিয়ে তারা কামাই রোজগার করতে পারে।গত বাইশ বছরে এমন অসংখ্য মানুষকে দেখেছি যারা মুসলিম ঘরে জন্মেছে কিন্তু ছহিশুদ্ধ কুরআন পড়তে জানে না।একজন গ্রামীন অশিক্ষিত হলে বলা যায় বেচারা নিরক্ষর।কিন্তু যদি তিনি হন ডাক্তার,ইন্জিনিয়ার বা অন্য কোন ভাল পেশার কর্মকুশলী,তারাও নামাজে ইমামতি করতে গেলে সুরা ক্কেরাত ঠিকমত পড়তে জানে না।অথচ তারা দীর্ঘকাল এই জাজিরাতুল আরবে বসবাস করছে।আমরা মুসলমান এতটুকুই কি আমাদের পরিচয়? না আমাদের ধর্মগ্রন্হ পড়তে ও বুঝতে হবে প্রতিদিনের ধর্মকর্ম পালনের জন্য।যাই হোক,তাওহিদের অর্থ হলো একত্ববাদ।আল্লাহকে এক হিসেবে জানা মানা ও একমাত্র তাঁরই খালেস ইবাদত করা।এই বিষয়ের আলোকে একজন মুসলমান নিজেকে আলোকিত করে তোলে এবং এর বিপরীত আক্কিদাকে নিজের মন মষ্তিষ্ক থেকে দূর করে দেয়। এরই নাম তাওহিদ।আল্লাহ পাক এক এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করা যাবে না।তাওহিদের বিপরীত হলো শির্ক।শির্ক শব্দটির অর্থ হলো অংশ গ্রহন করা বা করানো।আমরা সাধারনত 'অংশ' ব্যাবহার করার ক্ষেত্রে শরিক শব্দটি ব্যাবহার করে থাকি।যেমন-এই বাড়িটির কতটি শরিক বা কুরবানিতে কতজন শরিক ইত্যাদি।কিন্তু বান্দাহ যখন আল্লাহর ইবাদত করবে তখন তার সাথে কোন শরিক থাকতে পারবে না।এমনকি সামান্য পরিমান ও শরিক থাকবে না।এই দু'টো জিনিসের বিস্তারিত কনসেফ্ট যদি একজন মুসলমান না জানে তাহলে তার ইবাদতে ঢুকে যেতে পারে শির্ক।সেজন্য বান্দাহকে খুব সতর্ক থাকতে হবে তার প্রতিটি ইবাদতে।

আরবিতে একটি প্রবাদ আছে প্রতিটি জিনিস জানতে হলে তার বিপরীত জিনিস জানতে হয়।কারন বিপরীত জিনিস জানলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।যেমন-সাদা ও কালো দুটো রং।যদি কালো না থাকতো তাহলে সাদার মুল্যায়ন হতো না।তেমনি তাওহিদকে বুঝতে হলে শির্ককে বুঝতে হবে।ওমর রা: বলেছেন,' যে ব্যাক্তি জাহেলিয়াত জানলো না সে ইসলাম বুঝতে সহায়ক নয়।আল্লাহ পাক আমাদের ইসলাম গ্রহনের বা ঈমান নবায়নের জন্য যে কালিমা-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ব্যাতীত সত্য কোন মা'বুদ নেই-এই কালিমা দিয়েছেন,এখানে দুনিয়ার সমস্ত ভ্রান্ত মা'বুদকে অস্বীকার করতে বলেছেন।সেজন্য আলোর গুরুত্ব বুঝতে হলে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে হয়।আমরা যদি অমাবশ্যা রাতে ভ্রমনে বের হই তাহলে বুঝতে পারি পূর্নিমার রাতের কত কদর।সেজন্য কুরআন ও হাদিসে তাওহিদ ও শির্ককে বিশ্লেষন করা হয়েছে যাতে বান্দারা বুঝে ইবাদত করতে পারে।ঈমানের সাথে তাওহিদ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।কারো ঈমান আছে আর যদি তাওহিদ না থাকে তাহলে সে শির্ক ও কুফরিতে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে।সুরা আল বাক্কারার ১৬৩ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,'তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ,তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং তিনি রাহমান ও রাহিম।' সুরা ইখলাসেও আমরা দেখতে পাই,'আল্লাহ একক ও অদ্বিতীয়।' যখন 'আহাদ'বলা হয় তখন আর কোন দ্বিতীয় বা তৃতীয় আসার সুযোগ নেই। সেজন্য কালিমাকে আমাদের অন্তরের অন্তস্হল থেকে বুঝতে হবে।আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা'বুদ নেই এবং মোহাম্মদ সা: আল্লাহর বান্দাহ ও রসুল।তাহলে বুঝা গেল তাওহিদ ছাড়া ঈমানের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই।বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠি যারা কাফের ও মুশরিক তারাও আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং বিভিন্ন নামে ডাকে।হিন্দুরা ও আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং ঈশ্বর বলে ডাকে যদিও তাদের আরো অনকে দেবতা আছে কিন্তু ইলাহ বলতে তারা ঈশ্বরকেই বুঝায়।আমাদের মুসলমান সমাজে আল্লাহকে যারা নিরাকার বলে তারা হলো মিথ্যাবাদি।আল্লাহর আকার আছে তবে আমরা জানি না তা কেমন।এই নিরাকার কথাটি এসেছে হিন্দুদের থেকে।তাওহিদ বুঝার জন্য আমরা মোটামুটি তিনটি দিক কে আমাদের সামনে নিয়ে আসতে পারি। প্রথম ও দ্বতীয়টি হলো-তাওহিদে রুবুবিয়াহ ও উলুহিয়া।সমস্ত কাফের মুশরিকরা তাওহিদে রুবুবিয়াহকে মেনে নিয়েছে তার পরও তারা কেন কাফের মুশরিক তা আমাদের বুঝতে হবে।আমরা যদি ইহুদি ,খৃষ্টান ,হিন্দু ,বৌদ্ধ বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের প্রশ্ন করি তোমাদের কে সৃষ্টি করেছেন? তখন তারা আল্লাহর কথাই বলে।খৃষ্টানরা ঈসা আ;কে মুল সৃষ্টিকর্তা বলে না।এভাবে সবাই আল্লাহর রুবুবিয়াতকে স্বীকার করে নেয় ও রব মেনে নেয়।কিন্তু রবের অনেকগুলো অর্থ রয়েছে।রব মানে সৃষ্টি কর্তা,যিনি জন্ম ও মৃত্যু দেন,যিনি রিজিকদাতা,যিনি সমস্ত নেয়ামতের মালিক,যিনি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা, তাদের রক্ষনাবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রন করেন।এই ক্ষমতাগুলো রুবুবিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত।এই ব্যাপারে মক্কার কাফেররা নিশ্চিত ছিল যে সৃষ্টিকর্তা একজনই।তাদের যে লাত,ওজ্জা,হোবল ও মানাত সহ ৩৬০ টি মূর্তি ছিল,এগুলো যে সৃষ্টিকর্তা নয় তারা ভাল করেই জানতো।এর প্রমান হলো আল্লাহ পাক আয়াত নাজিল করে রসুল সা:কে বললেন তাদের জিজ্গেস করুন,'কে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে সেই মহাশক্তিশালী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন।সুরা যুখরুফের ৮৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আর তুমি যদি তাদের জিজ্গেস কর-কে তাদের সৃষ্টি করেছে তারা নিশ্চই বলবে,আল্লাহ।তাহলে কেন তারা ফিরে যাচ্ছে? আজকের পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে যদি জিজ্গেস করা হয় আল্লাহ সম্পর্কে তাহলে আস্তিকের সংখ্যাই বেশী হবে।এই বিশ্বাসটিই যথেষ্ট নয়।কারন তারা আল্লাহকে এক মা'বুদ হিসেবে স্বীকার করে ইবাদত করতে বিশ্বাসী নয়।সমস্ত নবী রসুলকে এই তাওহিদ নিয়েই আল্লাহ পাঠিয়েছেন।সুরা আ'রাফের ৫৯ আয়াত থেকে পর পর কয়েকজন নবী( নুহ আ;,হুদ আ; সালেহ আ; ও শোয়াইব আ একটি দাওয়াত দিয়েছিলেন,'হে আমার সম্প্রদায়!আল্লাহর ইবাদত কর।তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন উপাস্য নেই।' এ সব যামানায় আস্তিকই ছিল বেশির ভাগ মানুষ।দুনিয়াতে যতরকম গোলমাল লেগেছে এর মুলে ছিল তারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে না।তাওহিদে উলুহিয়াই হলো মু'মিন ও কাফেরদের মধ্যে প্রধান প্রতিবন্ধকতা।উলুহিয়া শব্দটি এসেছে ইলাহ শব্দ থেকে।ইলাহ শব্দটির অর্থ যিনি ইবাদত পাওয়ার উপযুক্ত।ইবাদতের মধ্যে তাওহিদকে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো মু'মিনদের মুল কাজ।তাওহিদে উলুহিয়া যদি মানুষের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাহলে সব রকম ভূয়া বা নকল ইলাহ ও সব রকম অপকর্ম তিরহিত হয়ে যায়।সুরা আল আম্বিয়ার ২৫ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,'তোমার পূর্বে আমরা কোন রসুল পাঠাইনি যার কাছে আমরা প্রত্যাদেশ না দিয়েছি এই বলে যে,'আমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই,কাজেই আমারই উপাসনা কর।' এই ইবাদত নিয়েই আল্লাহ পাক নবী রসুলদের পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য।কারন মানুষতো আল্লাহকে স্বীকৃতি দিচ্ছে তুমিই আমাদের রব।পরীক্ষাটি হয়ে যাবে ইবাদতের মাধ্যমে।মক্কার কাফেররা যখন এক আল্লাহকে বিশ্বাস করলো তখন আল্লাহ পাক রসুলের মাধ্যমে জিজ্গেস করলেন তাহলে ৩৬০ টি মূর্তির কেন তোমরা ইবাদত কর? এ কথার উত্তরে তারা সুরা যুমারের ৩ আয়াতে বলে,'আমরা তাদের উপাসনা করি এজন্য যে,তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী নিয়ে যাবে।' আজ সাড়ে চৌদ্দশ বছর পরের এই মুসলমানদের যদি জিজ্গেস করা হয় তোমরা কবর বা পীর পূজা কেন কর? তারা এই উত্তর-ই দিয়ে থাকে।তাহলে আমরা যদি মক্কার কাফেরদের এই মুসলিমদের সাথে তুলনা করি,দেখতে পাব ঐ কাফেররাই এই মুসলমানদের চেয়ে উত্তম।কারন তাদের কাছে ইসলাম ছিল না বলে তারা ছিল মূর্খ।আর রসুলের উম্মত হয়ে সব কিছু জানা বুঝার পরও যারা সাড়ে চৌদ্দশ বছর পূর্বের ধ্যান ধারনায় ফিরে যায় এরাই হলো বড় জাহেল বা মূর্খ।

ইবনে আব্বাছ রা: এই মূর্তিগুলো সম্পর্কে বলেছেন,এরা ছিল পূর্বের জামানার নেককার লোক।যেমন নুহ আ; আর সময় নেককার লোকদের (ওয়াদ,সুওয়াক,য়াগুস,ইয়া'উক ও নাসর) তারা ইবাদত করতো।ঈমানদারদের জন্য নুহ আ; এর জীবনের মধ্যে রয়েছে কল্যান।নুহ আ;যখন ইন্তেকাল করলেন,তারও অনেক পরে পরবর্তী বংশধর যারা এ সমস্ত নেককার লোকদের দেখেনি তাদের কাছে শয়তান এসে প্ররোচনা দিল,তোমাদের পূর্বে এ সমস্ত নেককার লোকদের তোমরা ভুলে গেলে? তাদের এভাবে ভুলে যেতে নেই। তাদের যেখানে কবর আছে সেখানে মাজার বানাও। এর পর তাদের বললো মাজার তো বানালে কিন্তু লোকটি কেমন ছিল তাতো তোমরা জান,তোমাদের পরবর্তীরা তো জানবে না, এবার মূতি তৈরি কর তাহলে এ সমস্ত ভাল মানুষদের জানতে পারবে। তারা পাথর খোদাই করে মূর্তি বানিয়ে সেখানে রেখে দিল এবং তাদের আসতে যেতে সম্মান করতো।এর পরের বংশধরদের শয়তান বললো,তোমাদের পূর্বের লোকরাতো এদের সেজদা করতো।তাদের কাছে চাইতো ও দোআ করতো। আর এভাবে শির্ক আজ পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে সারা দুনিয়ায়।শয়তান কখনো মানুষকে সরাসরি ধোকা দেয় না।ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে।যেমন-যারা ব্যাভিচারি হয় প্রথমে শয়তান ব্যাভিচারি বানিয়ে ফেলে না।কোন ছেলে মেয়ে একে অন্যের সাথে পরিচিত হলো।শয়তান বলে একটি ফোন কল দিলে তো ক্ষতি নেই।যখন বার বার ফোন কল করা হলো তখন শয়তান বলে এবার একটু দেখা হলে তো কোন ক্ষতি নেই।যখন বার বার দেখা হয়ে গেল তখন শয়তান প্ররোচনা দেয় চল কোন হোটেলে বা গোপন কোথাও গিয়ে একটু প্রমোদ ভ্রমন করে আসি।এভাবে শয়তান মানুষকে ধংসের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করে।শির্কের মত কাজগুলো শয়তান অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথে করে থাকে।গ্রামে অনেকে বলে সকালে কাজে বের হইনা আগে বাবা - মা'র কবর জেয়ারত করা ছাড়া।কবর যেয়ারত করতে হবে কবর বাসির কল্যানে যাতে তারা কবরে সুখে থাকে।কিন্তু কবর যেয়ারতের সাথে কাজের সম্পর্ক কি? শয়তান বড় অপরাধে নেয়ার জন্য এভাবে মানুষকে প্রোরোচিত করে।কবর মাজার গুলোতে যাওয়ার জন্য শয়তান এভাবে সাধারন মানুষগুলোকে প্ররোচিত করে থাকে।কবর মাজারগুলো এবং পীরদের খানকা গুলোতে শিরনি দেয়া,ফুল ও মোমবাতি দেয়া,অর্থ দান করা হয় এ কারনে যে,এদের খুশি করলে পরকালে নাযাতের ব্যাবস্হা হবে।এ ভাবে প্রত্যেক উম্মতের কাছে শির্ক এসেছে।হাদিছে এসেছে দোআ হলো ইবাদত। দোআ'র অর্থ হলো ডাকা।তাওহিদবাদিরা বিপদ আপদে ডাকে আল্লাহকে।আর শির্ক যারা করে তারা ডাকে তাদের কবর মাজারে শায়িত মৃত ব্যাক্তিদের।তাদের ধারনা তারা মরে গেলেও শুনতে পায় এবং আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে।কাফেরদের দোআর একটি বিরাট অংশ ডাকা।আল্লাহ বলেন,যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকে তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রমান নেই।আল্লাহ তার হিসাব লিখে রাখছেন।কাফেররা কখনো কামিয়াব হবে না। সুরা আহকাফের ৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'কে বেশী বিপথে গেছে তাদের চাইতে যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাকে ডাকে যে তাদের প্রতি সাড়া দেয় না কেয়ামতের দিন পর্যন্ত আর তারা এদের আহ্বান থেকে বেখেয়ালই থাকে।' সুরা আল'আনআমের ১৭ আয়াতে বলেন,'আল্লাহ যদি তোমাকে দু:খ দিয়ে স্পর্শ করেন তবে তার মোচনকারি তিনি ব্যাতীত আর কেউ নেই।আর যদি তিনি স্পর্শ করেন কল্যান দিয়ে তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।' মানুষের ভাল এবং মন্দের মালিক একমাত্র আল্লাহ।যিনি মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সারা পৃথিবীর মানুষের রসুল তার কাছেও কোন কিছু চাওয়ার এখতিয়ার নেই।দোআ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে এবং চাইতে হবে তাঁরই কাছে।কোন ওলি,কোন মাজার,কোন বুজুর্গ ও কোন নবী রসুলেরও ক্ষমতা ছিল না ভাল বা মন্দের মত কোন কিছু ঘটানোর।সুতরাং এ সমস্ত ভ্রান্ত পথ পরিহার করার জন্য মানুষদের তাগিদ করতে হবে।

তৃতীয়টি হলো- আল্লাহর গুনাবলীতে বিশ্বাস স্হাপন করা।আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম।আল্লাহকে ডাকতে হবে ঐ সুন্দর নামগুলো দিয়ে।যারা আল্লাহর নামের উপর সীমালংঘন করে তাদের বর্জন করে চলার কথা বলা হয়েছে।আর এদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।আল্লাহ পাকের ৯৯টি নাম রয়েছে।বিপদে মুচিবতে পড়লে এই নামগুলো ধরে আল্লাহকে ডাকতে হবে তাহলে নিশ্চই আল্লাহ শুনবেন।বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন,রাহমান আল্লাহ আরশের উপর রয়েছেন।আল্লাহ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা যাবে না তিনি কিভাবে আরশে আছেন? তিনি তাঁর মতই আছেন।তিনি দেখতে তাঁর মতই।তার মুখমন্ডল ও হাত আছে এবং সেগুলো তাঁর মতই।কোন সৃষ্টির মত তিনি নন।ঈমানদারদের এ সমস্ত প্রশ্ন থেকে দূরে থাকতে হবে।আমাদের বিশ্বাস করতে হবে তিনি আরশের উপর আছেন।আমাদের যদি কেউ প্রশ্ন করে আল্লাহ কোথায়? তাহলে আমাদের নিশ্চই বলতে হবে আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত।বিদাআতিরা যেভাবে বলে আল্লাহ সব যায়গায় আছে সেভাবে বলা যাবে না।আল্লাহর ফিজিকেল মুভমেন্ট নেই তবে আল্লাহ তাঁর জ্ঞানের দ্বারা বান্দাহের খুব কাছাকাছি।সুরা ক্কাফের ১৬ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,'আমরা কন্ঠশিরার চেয়েও আরো নিকটে রয়েছি।' আল্লাহপাক ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন এর অর্থ কি? এর অর্থ হলো যারা ধৈর্য ধারন করেন তাদের পক্ষে আছেন।আল্লাহ আমাদের দেখেন ও শুনেন।আমাদের অন্তরে কি আছে তাও তিনি জানেন।এটি তার ইলম,কুদরত ও ক্ষমতা।এর জন্য আল্লাহকে আরশ থেকে নামতে হয় না।আচ্ছা, মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে এ অবান্তর প্রশ্ন যখন করে তারা কি ভেবে দেখে না যে,কোন নেতা যখন তার জন গনকে কেন্দ্র থেকে বলে আমি তোমাদের সাথে আছি।এটি কি সেই নেতার পিজিকেল মুভমেন্ট? আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন,আল্লাহর কোন সাদৃষ্য নেই এবং কোন দৃষ্টি তাঁকে দেখবে না।আমাদের কাজের সাথে আল্লাহর কাজের কোন মিল নেই।আল্লাহর দেখা আমাদের দেখার মত নয়।আল্লাহর শুনা আমাদের শুনার মত নয়। ঈমাম মালেক (র) কে আল্লাহ সম্পর্কে জিজ্গেস করা হয়েছিল,আল্লাহ পাক আরশে কিভাবে আছেন? তিনি বলেছেন,আল্লাহ পাক সেখানে আছেন তবে কিভাবে আছেন এটি আমাদের অজানা।এই বিষয়ে ঈমান আনা ওয়াজিব।আর এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া বিদাআত।' সুরা হাশরের শেষ আয়াতগুলোতে আল্লাহর সিফাত বর্ননা করা হয়েছে আল্লাহ অদৃশ্যের খবর জানেন।এখন অনেক মুসলমান তারা দাবি করে তাদের ঈমান আছে আর বলে তারাও অদৃশ্যের খবর রাখে।তারা এটি রসুল সা: এর উপরও দিয়ে দিয়েছে যে রসুল গায়েব জানেন।রসুল সা;কে আল্লাহ যতটুকু জানিয়েছেন তিনি তা জানেন এবং এর বেশী তিনি জানতেন না।সুরা মারিয়ামে মারিয়ামের ঘটনা রসুলকে জানিয়ে বললেন আপনি এগুলো কিছুই জানতেন না আমি না জনালে।এখন মুসলিম নামের মুশরিকরা বলে আল্লাহর নবী গায়েব জানতেন।এই অপবাদ রসুলের উপর চড়িয়ে তারা কঠিন পাপের দিকে নিজেদের ধাবিত করেছে।সুরা আল আ'রাফের ১৮৮ আয়াতে আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন,' বলো-আমার কোন অধিকার নেই আমার নিজের কোন লাভ ক্ষতি করার আল্লাহ যা চান তা ব্যাতিত।আর যদি আমি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতাম তবে কল্যানের প্রাচুর্য বানিয়ে নিতাম।আর কোন অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না।' মা আয়শা রা: এর উপর মোনাপেকরা অপবাদ দিলো এবং রসুল সা: বললেন তুমি অপরাধ করলে তওবা কর।তিনি যদি গায়েব জানতেন তাহলে মাসাধিক কাল এই মানুষিক কষ্টে কেন থাকলেন? সুরা হুদের ১৩২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'একমাত্র আল্লাহর কাছেই গায়েবের খবর রেয়েছে।'

দুনিয়ার মুসলমানের কাছে এখন তাওহিদের উপর বিশ্বাস নেই বললেই চলে।যারা আল্লাহর গুনাবলীর সাথে আল্লাহকে সম্পৃক্ত করে ফেলে তাদের কোন ঈমান থাকার কথা নয়।শির্ক থেকে আমাদের পুরোপুরি মুক্ত থাকতে হবে।শির্ক আসে দু'ভাবে।বড় শির্ক ও ছোট শির্ক।বড় শির্কগুলোর উদাহরন হলো আল্লাহর ইবাদতের সাথে অন্যকে শরিক করা যা খৃষ্টান ও হিন্দুরা করে।খৃষ্টানরা ঈসা আ;কে আল্লাহর সাথে শরীক করে।আবার হিন্দুরা অসংখ্য দেবদেবির পূজা করে।মুসলমানদের মধ্যে একটি শ্রেনী পশু জবাই করতে হবে আল্লাহর নামে কিন্তু তা না করে তারা করে পীর ওলিদের নামে।ওরসের সময় যে পশু জবাই হয় তা ঐ কবরে শায়িত ব্যাক্তির নামে করা হয়।এই জবাইটি হলো শির্ক।মাজারে গিয়ে পিরের নামে টাকা পয়সা,হালুয়া রুটি দেয়া ও নিজের মুচিবত থেকে মুক্তির জন্য দোআ করা এসব শির্ক।এ সব যায়গায় যেয়ারতে যাওয়া ও মানত করা বড় শির্ক।ছহি বোখারিতে এসেছে,যে ব্যাক্তি আল্লাহর সংগে অন্য কাউকে শরিক করলো এবং তওবা না করে মারা গেল সে ব্যাক্তি জাহান্নামে চলে যাবে।এই হাদিসটির দলিল হলো সুরা নিসার ১১৬ আয়াত।সুরা আল মাঈদার ৭২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'যে আল্লাহর সাথে শরিক করে,আল্লাহ তার জন্য হারাম করেছেন জান্নাত আর তার আবাস হলো জাহান্নাম।' সুরা আল ফুরক্কানের ২৩ আয়াতে আল্লাহ পাক মুশরিকদের আমল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলেন,'আমি তাদের আমলের দিকে যাব আর সব ধূলিসাৎ করে দিব।' বড় শির্ক করলে তাকে বলে মুশরিক।দুনিয়ার অধিকাংশ লোক এই শির্ক নিয়েই ইবাদত করে থাকে।সুরা ইউছুফের ১০৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তাদের অধিকাংশ ঈমান আনে এবং শির্ক ও করে।এই মুশরিকদের মধ্যে দুনিয়ার তথাকথিত মুসলমানও রয়েছে যারা হাজত পুরা করার জন্য তাদের মত মানুষের কাছেই ধরনা দেয়।ভারত উপমহাদেশে যে সমস্ত কবর মাজার,পীরের দরবার,খানকা ও দরগাহ আছে সে যায়গা গুলো পর্যবেক্ষন করলেই দেখা যাবে কোটি কোটি মুসলমান সেখানে যায় তাদের পার্থিব আশা আকাংখ্যা পূরন করার জন্য।তারা মনে করে ওসব যায়গায় কবরে যারা শুয়ে আছে তারা মানুষের আকুতি মিনতি শুনতে পায় এবং তাদের কাছে ক্ষমতা রয়েছে।আমি শুনেছি যারা আজমিরে খাজা বাবার দরবার,দিল্লীর নিজামুদ্দিন ,আব্দুল কাদের জিলানী,কুপাতে আলি রা; এর কবরে,হাছান হোসাইনের কবরে,কারবালাতে সুদান ,সিরিয়া,ইরাক, মিশরের মাজারগুলোতে গিয়েছে সেখানে কি পরিমান শির্ক তথাকথিত মুসলমানরা করে যা কল্পনা করা যায় না।শিয়া এবং তথাকথিত সুন্নীদের ভীতরে এ সমস্ত শির্ক ভরপুর।এই অধিকাংশ মুসলমান ঈমানের দাবি করে শির্কের ভিত্তিতে।

ছোট শির্কগুলোকে অনেকে মনে করে সাধারন গুনাহ আসলে তা নয় এগুলোও বড় গুনাহ।যেমন-রিয়া(অন্যকে দেখিয়ে ইবাদত করা)।মানুষের মধ্যে এমন মানুষ রয়েছে যারা ইবাদত করে এই উদ্দেশ্যে যে,ইবাদতে আল্লাহকে যেমন খুশি করে তেমনি করে মানুষকেও।অনেক মানুষ নিজেদের জাহির করার জন্য মানুষের সামনে বলে ত্রিশ দিনে একদিনও তাহাজ্জুদ কাজা হয় না।তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া হয় রাতের শেষ ভাগে অতি গোপনীয় সময়ে।এটি আল্লাহর সাথে বান্দাহের নফল ইবাদত।মানুষকে জানানোর উদ্দেশ্য হলো মানুষ তার একটু প্রশংসা করুক। আবার অনেক মানুষ আছে মসজিদ ,মাদ্রাসা করে মানুষের কাছে প্রচার করে।তারা চাঁদা আদায় করে মানুষের কাছ থেকে অনেকটা জোর পূর্বক।কেউ কেউ অফিস আদালতে খরিদ্দারদের কাছ থেকে নিজের এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য জোর পূর্বক এ চাঁদা আদায় করে এবং তারা বাধ্য হয়ে নিজের টাকা গুলো আদায় করার জন্য এই চাঁদা পরিশোধ করে।কেয়ামতের দিনে তাদের এই কাজগুলো তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে।কখনো এগুলো ইসলামের কাজ নয়। রিয়া করলে মুসলিম থেকে বের হয়ে যাবে না।বড় শির্ক ও ছোট শির্কের পার্থক্য হলো - বড় শির্ক করলে মুশরিক হয়ে যাবে এবং তাকে তওবার মাধ্যমে ঈমান এনে ইসলামে ঢুকতে হবে।আর ছোট শির্ক করলে কাবিরা গুনাহ হয় কিন্তু মুসলিম থাকে কিন্তু তওবা করে নিতে হবে যেন এ গুনাহ আর না হয়।রসুল সা: এর কাছে একজন সাহাবি এসে বললেন,আল্লাহ যা চান আর আপনি যা চান তা-ই হবে।এ কথা শুনে রসুল সা: বললেন,'তুমি আমাকে আল্লাহর সমান করে ফেলেছ?বরং আল্লাহ যা চান তা-ই হবে।আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন নামে কসম খাওয়া ছোট শির্ক।এই শির্কটি বহুল প্রচলিত।বাবা মায়ের নামে,সন্তানের মাথা ছুয়ে,বিদ্যার কসম করে,স্ত্রীর কসম করে অনেকে কসম গুলো করে।যারা এ কাজগুলো করেছে তাদের তৎক্ষনাৎ তওবা করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাপ করে নিতে হবে।তিরমিযি শরীফে রসুল সা: বলেন,'যে ব্যাক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে সেই ব্যাক্তি কুফরি করে বা শির্ক করে।' আবু দাউদ শরিফের হাদিছে রসুল সা: বলেন,' তাবিজ - তুমার লটকানো , বিভিন্ন মন্ত্র পড়ে ঝাড় ফুঁক করা এবং কোন গাছ পালার বাকল লটকানো শির্ক।'আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ দেখলেন উনার স্ত্রী(যায়নব) রা: এর গলায় একটি সুতা।তিনি জিজ্গেস করলেন এটি কি? তিনি বললেন, চোখে যন্ত্রনা হলে এক ইহুদি থেকে মন্ত্র পড়ে নিয়ে এসেছিলেন এবং এর পর তার ভাল বোধ হলো।আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এ কথা শুনে সুতোটি ছিঁড়ে ফেললেন।তার পর বললেন,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের পরিবারকে আল্লাহ পাক এই শির্ক থেকে বাঁচিয়ে দিন।স্ত্রী বললেন আমি তো এ থেকে একটি স্বস্তি পাচ্ছিলাম।তিনি বললেন শয়তান তোমাকে শির্ক করার জন্য তোমার চোখে খোঁচা দেয়।আমাদের শরীরে যেমন রক্ত প্রবাহিত হয় শয়তান ও সেভাবে আমাদের শরীরে চলাচল করে।যখন তুমি শির্কটি করলে তখন তুমি শান্তি অনুভব করলে এর অর্থ হলো শয়তান তোমার চোখে আর খোঁচা দেয় না।তোমার চোখে যদি এর পর যন্ত্রনা হয় তখন রসুল সা: এর এ দোআটি পড়বে,'হে আল্লাহ! যত অসুবিধা আছে তা দূর করে দিন।আল্লাহ আপনি মানুষের রব।আল্লাহ আপনি রোগ মুক্ত করার মালিক।আল্লাহ আপনা থেকে মুক্তি না পেলে তো কেউ মুক্তি দিতে পারে না।এমন ভাবে রোগ মুক্তি দিন যাতে আমাদের আর কোন রোগ থাকবেনা।' আমাদের বহু রোগের সাথে শয়তান ও জ্বীনের সম্পর্ক রয়েছে।যারা এই কুফরিগুলো করে তারা জ্বীন শয়তানকে কাজে লাগায়।এতে রোগের উপশম হয়।কিন্তু ঈমানদারদের তাওয়াক্কুল থাকবে আল্লাহর প্রতি।আমাদের রোগ বালাই আসলে চিন্তা করে কাজ করতে হবে।যা কুরআন ও হাদিছে নেই তা থেকে দূরে সরে থাকতে হবে।সুরা জ্বীনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।কোন কোন মানুষের মুখের ও চোখের দোষ রয়েছে।এ ধরনের মানুষ কোন কিছু দেখে মন্তব্য করলেই ফলে যায়।অনেকে সুন্দর একটি বাচ্চা দেখেই বলে কি সুন্দর বাচ্চা? বা বাচ্চাটি মায়ের দুধ পান করছে।পাশে একজন মহিলা দেখে মন্তব্য করলো আপনার বাচ্চাটি কি সুন্দর দুধ পান করে।আমার বোনের বাচ্চাটিকে দুধ পান করানো যায় না।সাথে সাথে বাচ্চাটির দুধ পান করা বন্ধ হয়ে গেল।এ রকম ঘটনা ঘটেছে।সেজন্য মা বোনদের উচিত কারো সামনে বাচ্চাকে দুধ পান না করানো।আর সাথে 'মাসাআল্লাহ' শব্দটি বললো না।সেজন্য দেখা যায় একটু পরে হলেও বাচ্চাটি অসুখে পতিত হয়।আমাদের প্রত্যেকের চোখের কম বেশি দোষ আছে।সেজন্য আমাদের উচিত এ সমস্ত চোখে না দেখা ও মুখ থেকে এ সমস্ত কথা উচ্চারন না করা। এ ব্যাপারে ছহি বোখারিতে রসুল সা: বলেন,' মানুষের মুখে চোখে দোষ আছে এটি হক্ক কথা।' যারা এরকম কথা বলে সাথে সাথে তাদের শিখিয়ে দিতে হবে 'মাসাআল্লাহ'বলুন।রসুল সা: কিছু ঝাড় ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন।সুরা ইখলাস,ফালাক্ক ও নাস তিনবার করে পড়ে সকাল -সন্ধা ও রাতে ঘুমানোর সময় কপাল থেকে শরীরের যততুকু দেয়া যায় মুছে দিতে হবে।এ কাজটি যেমন নিজেদের করতে হবে তেমনি বাচ্চাদের ও করে দিতে হবে যাতে খারাপ নজর না লাগে।বাচ্চাদের জন্য আর একটি দোআ পড়ে ফুঁক দেয়ার জন্য রসুল সা: শিখিয়েছেন,'হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে যত প্রকার বিপদ ও বালা মুছিবত রয়েছে তা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।' জাহেলি যুগে কিছু ঝাড় ফুঁক দেয়া হতো।ইসলামি যুগে সাহাবারা রসুল সা:কে বললেন আমরা জাহেলি যুগে কিছু ঝাড় ফুঁক করতাম যা থেকে আমরা রোগ মুক্ত হতাম।রসুল সা: বললেন সেগুলো আমাকে শুনাও,যদি সেগুলোতে শির্ক না থাকে কোন অসুবিধে নেই।আমাদের দেশে আলেম উলামারা যে ঝাড় ফুঁক দেয় তাতে তিনি কি বলেন কিছুই বুঝা যায় না।আর যিনি ঝাড় ফুঁক নিতে যান তিনিও কোন প্রশ্ন করেন না।এদের মধ্যে অধিকাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত।যারা ঝাড় ফুঁক দিবেন তাদের উচিত উচ্চ স্বরে দোআ পড়া যাতে রোগী বুঝতে পারে।

আমাদের আমলের মধ্যে অনেক শির্ক রয়েছে।বাজারে অনেক অজিফা রয়েছে যাতে কুরআনের আয়াত ও দোআ রয়েছে এবং তার সাথে শির্ক ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যা অজ্ঞ ও অসহায় মানুষ পড়ে আমল করে।এর মধ্যে যেমন-আলীর কাছে দোআ করে,'আলীকে ডাক।কত যে তার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।আলীকে তুমি সকল মুছিবতে পাবে।সমস্ত দুশ্চিন্তা ,বালা মুছিবত দূর হয়ে যাবে আপানর নবুওতের কারনে হে মোহাম্মদ! হে আলি!হে আলি! আমাকে উদ্ধার কর।' এই রকম শির্কিয় কথাগুলো বিভিন্ন অযিফাতে থাকে বিভিন্ন ভাবে।দুরুদে তাজে রয়েছে শির্ক। দুরুদ শুরু করে এর পর বলা হয়েছে তিনি বালা মুচিবত থেকে মুক্ত করার মালিক,মহামারি দূর করার মালিক,দুর্ভিক্ষ দূর করার মালিক ও মানুষের যত কষ্ট ও যন্ত্রনা আছে তা দূর করার মালিক।এই দুরুদ যখন কোন অশিক্ষিত ও অজ্ঞ লোক পড়বে যার কুরআন ও হাদিসের কোন জ্ঞান নেই,সেতো তার ইবাদত হিসেবে নিবে।এ কাজ করে চলছে আমাদের দেশের জ্ঞান পাপিরা এবং বাংলা বাজার থেকে বিভিন্ন প্রকাশনি ছেপে বাজারে ছাড়ছে।এ ছাড়াও আমাদের গনতান্ত্রিক সমাজে নতুন কিছু সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে যেমন- কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করা,শহিদ মিনার,বুদ্ধিজীবি দিবসে,শিখাচিরন্তনে,কবর মাজারে ফুল দেয়া এগুলো কুফরির পথ।এগুলো আজ ইবাদতে পরিনত হয়েছে।পরকালীন জীবনে আত্মার উন্নতির জন্য আমরা সব সময় নামাজের পর দোআ করতে পারি। সিরাতের আলোচনা যারা বছরে একটি মাসে বা একটি দিনে করেন তারা বিদাআত করেন।রসুল সা: কে আমাদের জানতে হবে প্রতিদিন।এর আলোচনা হবে বছরের সব সময় এটিই সুন্নাহ।বছরের কোন একটি দিন বা রাত্র ইবাদত করা সুন্নাহ বিরোধী ইবাদত।বছরে একটি দিন কোন অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে শির্ক ও বিদাআত হয়ে আসছে আমাদের সমাজে যার মুক্তির জন্য হক্কানি উলামাদের মানুষদের জাগরিত করতে হবে।মুসলিম দেশে যেন এগুলো না হয় তার জন্য মানুষকে বুঝাতে হবে কিন্তু কোন মানুষ আইনের বাইরে গিয়ে কোন অপরাধ করতে পারবে না।ইসলামি সরকার দেশে থাকলে এগুলো হতো না। তার পরও যখন যে সরকার থাকবে সে আইনের কাছে অপরাধিদের সপর্দ করতে হবে।আর ঈমানদারদের ধৈর্যধারন করতে হবে ও আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে।ইসলাম ছাড়া যত মতবাদ তৈরি হয়েছে সবগুলো হলো কুফরি মতবাদ কারন এগুলো মানুষের তৈরি।এগুলো থেকে মুসলিম উম্মাহকে দূরে থাকতে হবে। তাবিজের উপর বই রয়েছে।রসুল সা: ও সাহাবাদের থেকে এর কোন প্রমান নেই অথচ এগুলো আমাদের সমাজে অধিক প্রচলিত যার মধ্যে রয়েছে কুরআনের আয়াত ও হাদিছ।এগুলো সরাসরি শির্ক নয় তবে যেহেতু রসুল সা: করেন নি তাই সেগুলো বিদাআতের অন্তর্ভুক্ত।এরা সুন্নতি আমল গুলোর উপর বই তৈরি না করে বিদাআতের উপর আমল করে জাতিকে ভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।সুন্নতি কাজগুলো হলো রসুল সা: যখন যে পরিস্হিতিতে দোআ শিখিয়েছেন সে দোআ গুলো মুখস্ত করা ও বাস্তবে অনুশীলন করা।আর যারা এই তাবিজ তুমার ও ঝাড় ফুঁকের জন্য যায় তাদের যদি দোআ শিখতে বলা হয় তারা অনেকে বলে এত দোআ শিখার সময় আছে? তাবিজ দিয়ে দেন এতেই চলবে।এই জাহেলিয়াতের কারনে দুষ্ট আলেমরা সমাজে তাদের জাল বিস্তার করে মানুষকে শির্ক ও কুফরিতে নিমজ্জিত করেছে।আবার অনেকে বলে আপনি যদি রোগ বালাই থেকে আমাদের মুক্ত করতে না পারেন তাহলে আলেম হলেন কেন? কোরআন ও হাদিসের উপকারিতা আমাদের বুঝতে হবে।কোরআন এসেছে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য।মানুষের জীবনকে সংশোধন করার জন্য।এটি নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে।এটিকে বার বার পড়তে হবে ও বুঝতে হবে।পড়লে প্রতিটি হরফে দশ নেকি পাওয়া যাবে।কিন্তু তাবিজে ঢুকিয়ে রাখলে বা ঘরে সুন্দর কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখলে কি উপকার পাওয়া যাবে? রসুল সা: এর জুতোর নক্ক্সা সম্বলিত তাবিজ বিক্রয় হচ্ছে।তারা কোথায় পেল রসুল সা: এর জুতো? এ ছাড়াও অসংখ্য নকক্সা সম্বলিত তাবিজ,আশারা মুবাস্বেরাদের(দশজন জান্নাতি সাহাবি) নাম সম্বলিত তাবিজ, দিয়ে গরীব মানুষ গুলোর পকেট খালি করছে এই সমস্ত ভন্ডরা। মানুষকে শিক্ষিত করা না গেলে ও হক্কানি উলামারা আরো বেগবান না হলে সমাজে এগুলো বাড়তে থাকবে এবং সুন্নাহের যায়গায় শির্ক ও বিদাআত প্রতিষ্ঠিত হবে।তাওহিদের উপর বই পড়তে হলে- সাধারন লোক যাদের বুদ্ধি বিবেচনা নেই তারা হক্কানি উলামাদের থেকে রেফারেন্স নিয়ে বই খরিদ করবেন।শির্কের উপর কিছু ছহি বই রয়েছে যেমন- তাওহিদের মূল সুত্রাবলী-ডক্টর আবু আমিনা বিলাল,সুন্নাত ও বিদাআত-মাও: মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ইসমাইল রচিত-শির্ক একটি জগন্যতম অপরাধ এবং আর একটি বই-শরিয়তের দৃষ্টিতে অসিলা,সুন্নতে রসুল আঁকড়ে ধরা ও বিদাআত থেকে সতর্ক থাকা অপরিহার্য- মুল লেখক-শাইখ বিন বাজ (র) অনুবাদক- মোহাম্মদ রকিব আহমদ,ইবাদত শির্ক ও বিদাআত - রচনা করেছেন কাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম(এখানে তিনি ইসলামি দল সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন সে যায়গাটুকু ইগনোর করলে শির্ক সম্পর্কে শিক্ষনীয় রয়েছে)। এছাড়াও বাজারে আরো শির্কের উপর বই রয়েছে,ইসলামি আক্কিদার উপর বই রয়েছে যা পড়া প্রতিটি মুসলমানের জন্য জরুরি।

প্রাত্যহিক ইবাদত গুলো ভালভাবে করতে হলে তাওহিদ-শির্ক,সুন্নত -বিদাআত জানা অপরিহার্য।অনেকে সারা জীবন ইবাদত করছে,দান খয়রাত করছে কিন্তু শির্ক বিদাআত থাকার কারনে কেয়ামতের দিন নিস্ফল দেখতে পাবে।এজন্য যে কাজটি করতে হবে তা হলো-আমাদের প্রতিটি কাজই হলো আল্লাহর ইবাদত।কাজগুলো শুরু করতে আমাদের পর্যবেক্ষন করতে হবে সেগুলো আমরা কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক করছি কিনা? রসুল সা: আমাদের যতটুকু করতে বলেছেন তা-ই করবো,যা করতে নিষেধ করেছেন তা করবো না।আমরা বেশি বশী লাভের জন্য যদি নিজের মর্জিমত, পীর বা নেতার মত চলতে শিখি তাহলেই আমরা পাপে নিমজ্জিত হব।বরং আমাদের পীর বা নেতাদের কথাগুলোকে পরীক্ষা করতে হবে রসুল সা: এর ছহি হাদিসের সাথে।যদি হাদিসের সাথে মিলে যায় তাহলে আমরা গ্রহন করবো তা না হলে বর্জন করবো।সালাফে সালেফিনরা এভাবেই দ্বীন কায়েম করেছিলেন তাদের ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে।

বিষয়: বিবিধ

২১৩০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

309701
১৮ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৭
নিরবে লিখেছেন : এটা কি থিসিস ???????

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File