অভিভাবক ,গৃহ- শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীর মধুর যোগাযোগ রেজাল্ট ভাল করতে সহায়ক হয়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০২:১৮:৫২ দুপুর
একজন শিক্ষক/শিক্ষীকা ও আভিভাবক, ছাত্র- ছাত্রীর জীবনে আলোক প্রদীপ জ্বালাতে পারে আবার নিভিয়ে-ও দিতে পারে।ইদানিং কিছু দৃশ্য চোখে পড়তেই ভেবে নিলাম,যদি জনসমক্ষে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে হয়ত কেউ না কেউ উপকৃত হতে পারে।তাছাড়া সামাজিক কোন দৃষ্টিকটু কিছু যদি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় সেটা জানিয়ে দেয়া দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।আমরা অনেকেই সামাজিক কারনে একে অন্যের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে বা দাওয়াতের ক্ষেত্রে বন্ধু বা বয়োজেষ্ঠদের কাছে যাই।এমন কিছু দৃষ্য চোখে পড়ে যা আমাদের অনেককে ভাবিয়ে তোলে।যেমন ধরুন- আপনি যখন কোন বাসায় গেলেন সে বাসায় একজন গৃহ শিক্ষক পড়চ্ছেন।আমাদের সামাজিক কাঠামোর একটা বড় দূর্বলতা যে, একজন শিক্ষককে অন্য বাসায় গিয়ে জ্গান দান করতে হয় বা পড়াতে হয় কারন চাকুরি করে হয়ত তাঁর সংসার চলছে না আবার ছাত্র-ছাত্রীর পড়ার দূর্বলতার কারনেও অভিভাবককে এ সাপোর্ট দিতে হয়।আমাদের যে একে অন্যকে দরকার সেটা আমরা অনেক সময়-ই ভুলে যাই।যে জিনিসগুলো দৃষ্টিকটু তা হলো,গৃহ শিক্ষক আসলে তাঁকে সাদর সম্ভাষন না করা।সেটা না করে পরিবারের ছোট কাউকে দিয়ে বা বাসার কাজের চাকর বাকরকে দিয়ে অন্য কোথায়ও বসিয়ে রাখা এই জন্য যে ,আপনার ছাত্র বাসায় নেই বা একটু পরে আসছে।অসুবিধা নেই তবে সেটা হতে হবে শালিনতা ও ভদ্রতার সাথে।আর শুধু শুধু অনেকক্ষন বসিয়ে না রেখে এ সময় এন্টারটেইনমেন্ট করলে একজন শিক্ষক মনের দিক থেকে নিজেকে স্হির রাখতে পারেন।আবার অনেক বাসায় শিক্ষক পড়াছ্ছেন পাশেই অভিভাবকরা খাওয়া দাওয়া করছেন অথচ শিক্ষককে সৌজন্যতার খাতিরেও এন্টারটেইনমেন্ট করছেন না।এটা নিশ্চয়ই দৃষ্টিকটু মনে হয়। আবার অনেকে এ কাজটা করতে ভুলেই যান।স্বভাবত একজন গৃহশিক্ষক দূর থেকে আসেন আমার আর আপনার সন্তানকে মানুষ করার জন্য।তাঁর প্রতি সম্মান জনক ও সুন্দর আচরন করাই বান্চনীয়।আবার অনেক অভিভাবক সন্তান ভাল ফলাফল না করায় অন্যের সামনে গৃহশিক্ষককে কটাক্ষ করেন।আবার অনেক শিক্ষকও অভিভাবকদের যাছ্ছেতাই কথা শুনিয়ে দেন।ইদানিং অভিভাবক ও শিক্ষকদের আচরনের আর একটি দিক পরিলক্ষিত হচ্ছে আর তা হলো-টুইশন ফি নিয়ে দরাদরি করা।একজন অভিভাবকের কাছে শুনেছি বছরের প্রথম মাসে পূর্বের মাসের একই ফি দেয়ায় গৃহকত্রীকে গৃহপরিচারিকার খামটি খুলে শিক্ষক কটাক্ষ করেছেন।এটি না করে তিনি নোট লিখে যেতে পারতেন।একদিকে তিনি নিজে অপমানিত হলেন অন্যদিকে গৃহকত্রী ও অপমানিত হলেন।এটি হলো শিক্ষার একটি দৈন্যতা যা আমাদের প্রতিষ্ঠান শিখাতে ব্যার্থ হয়েছে।আসল আর একটি ব্যাপার হলো শিক্ষার প্রতি সরকারের সবচেয়ে কম বাজেট ঘোষনা ও শিক্ষকদের পারিশ্রমিকের অপর্যাপ্ততা।সে কারনে একজন শিক্ষককে কোচিং এর দারস্হ হতে হয়।অভাবটিও বড় একটি বিষয় নয় যদি আমরা ইতিহাস লক্ষ্য করি।ঈমাম বোখারি (র) কে সে সময়ের গভর্নর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তার ছেলেদের বাসায় গিয়ে পড়ানোর জন্য কিণ্তু তিনি তা নাকচ করে দিয়েছিলেন।তিনি বললেন যারাই পড়বে তারা আমার কাছে এসে পড়বে এখানে ধনী দরিদ্রের কোন ব্যাবধান নেই।এ কথায় গভর্নর নাখোশ হলেন এবং ঈমাম বোখারিকে চলে যেতে হলো খোরাসানের একটি গ্রামের দিকে।এর কিছুদিন পরেই উনার ইন্তেকাল হয়ে যায়।আচরনের ক্ষেত্রে এই যে অতিরন্জন অভিভাবক ও শিক্ষকদের তা প্রতিফলিত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে যা আমরা দেখতে পাই আজকালকার সামাজিক অবক্ষয় দেখে।
শিক্ষক তাকে বলে যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত।নি:সন্দেহে একাডেমিক বেকগ্রাউন্ড তো ভাল থাকতে হবে তবে তার সাথে শিক্ষকচিত আচরন ও থাকতে হবে যাতে করে ছাত্র- ছাত্রী অনুগত হয়ে যায় ও সম্মানের চোখে দেখে।।মেধাটা আল্লাহর দান,কারো কম বা বেশী। তবে শিক্ষক যদি তার অভিজ্গতার আলোকে সেই মেধায় শুধু একটু দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে দেন।আর তার সাথে ভাল করার জন্য কিছু গাইডলাইন।এতেই ছাত্র- ছাত্রী তার প্রতিভাকে আরো বেশী আলোকিত ও বিকশিত করতে পারে।শিক্ষক থেকে একজন ছাত্র-ছাত্রী যা আশা করে তা হলো, শিক্ষকের চারিত্রিক দৃড়তা,সময়ানুবর্তিতা ও ভাল রেজাল্ট করার নিয়মনীতি ও ভবিষ্যত ফোকাস।একজন শিক্ষক ইচ্ছা করলে তাঁর পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলতে পারে তার ছাত্র- ছাত্রীকে।আবার যে পরিবারে শিক্ষক পড়াবেন তাদের কাজ, বাসা তথা শিক্ষার পরিবেশকে সমুন্নত রাখা।আমাদের দেশে আজকাল শিক্ষক ও অভিভাবকের মধ্যে যে সম্মান তা অনেকটা দূরে সরে গেছে।কারন হলো- আমাদের ব্যাক্তি জীবনের হীনমন্যতা। যিনি পড়াতে আসবেন তাকে যেমন আপন করে নিতে হবে পরিবারটিকে তেমনি পরিবারটিও শিক্ষককে আপন করে নিবে। এতে করে যে হৃদ্যতা তৈরি হবে তা সারাজীবন থাকবে।এটাই একজন মুসলিমের সামাজিক বন্ধন।
একজন শিক্ষক অনেক কিছুই জানেন। তার পরও কিছু অজানা জিনিস জানিয়ে দেয়া হলে শিক্ষকের পক্ষে ছাত্র ছাত্রীদের এগিয়ে নিতে সহজ হয়ে যায়: একজন অভিভাবক হিসেবে সন্তানের দুর্বলতার দিকগুলো অভিজ্গতার আলোকে শিক্ষকের গোছরিভূত করলে সে শিক্ষকের পক্ষে ছাত্র-ছাত্রীকে এগিয়ে নেয়া সহজ হয়। নিম্নের বিষয়গুলো প্রায় সবার ক্ষেত্রে দরকার:
১- সব ছেলে-মেয়েরা মেধার দিক থেকে ভাল।তবে একটু কম বা বেশি।কেউ কেউ অন্যমনস্কতার কারনে ভুলে যায়।এ ক্ষেত্রে শিক্ষককে বুঝিয়ে দেয়ার পর কিছু কাজ দিয়ে টেষ্ট করতে হবে তারা বুঝলো কিনা।দ্বিতীয় কাজ হলো আগের পড়াটা মাঝে মাঝে জীজ্গেস করা ভূলে গেল কিনা।
২-ডেইলি পড়াগুলো ডেইলি শেষ করলো কিনা।যদি শেষ করতে সক্ষম হয় তাহলে এডিশনাল কাজ করতে দেয়া।
৩-সপ্তাহে যা পড়া হলো তার উপর একটা প্রশ্নপত্র তৈরি করা ও পরীক্ষা নেয়া। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের সময় না থাকলে বাসার দায়ত্বশীলকে জানিয়ে দেয়া যেন ছুটির দিন পরীক্ষা নিয়ে নেয়।শিক্ষক পরে তা দেখে বিচার করে নিবেন।
৪-পড়ার পাশে শিক্ষক কখনো এডিশনাল কিছু বিষয় যেমন-ডিবেট,কলাম লিখার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো(নিজের সাবজেক্ট থেকে বিষয় চুজ করে),নিউজ পেপার পড়া ,কেলিওগ্রাফি,খেলাধূলা এ ধরনের বিষয়ে আগ্রহ তৈরি করার জন্য পরামর্শ দিবেন।
৫-শিক্ষক ও অভিভাকদের মধ্যে অবশ্যই যোগাযোগ থাকতে হবে মধুর সম্পর্কের।কোন ছাত্র ছাত্রী যদি কোন হোম ওয়ার্ক না করে সেটার জন্য জবাবদিহীতা থাকতে হবে।শিক্ষক সরাসরি বলতে পারেন বা নোট লিখতে পারেন যেন অভিভাবক তা তদারকি করতে পারেন।অনেক শিক্ষক প্রহার করেন বা ধমক দেন। তা না করে রিজন গুলো সুন্দর করে বললে সহজে বুঝানো সম্ভব।যেমন- অনেক ছেলে-মেয়েকে যদি ধমক দেয়া হয় ওরা নার্ভাস হয়ে পড়ে।এতে করে তাদের পূর্বের পড়াও ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।ছোট ছাত্র- ছাত্রীদের আদর সোহাগের মধ্যেই বেশী এগিয়ে নিলে সবচেয়ে ভাল হয়।
৬-পরীক্ষায় যদি কোন বিষয়ে আশানুরুপ রেজাল্ট না করে,কটাক্ষ না করে কিভাবে সামনে আরো ভাল করা যায় সে পরামর্শ দিতে হবে।প্রতিটি বিষয়ে ১০০% নাম্বার না পেলে কেন পেল না তা এনালাইসিস করতে হবে।হতে পারে সে ছাত্র বা ছাত্রিটি অন্য মনস্ক ছিল,পড়ার সময়ে বিষয়টি যেভাবে বুঝার দরকার সেভাবে বুঝতে পারে নি,লিখার সৌন্দর্য বা ভূল লিখা হয়েছিল,প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া হয় নি বা বিষয়টির উপর ডিটেইল পড়া ছিল না।এ ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাত্র- ছাত্রীকে না বুঝানোর কারনে ও ভাল রেজাল্ট করার টেকনিকগুলো রপ্ত না করানোর জন্যই তারা পিছিয়ে যায়। তবে শিক্ষক ও অভিভাবক যদি একযোগে শ্রদ্ধা ভক্তির সাথে মননিবেশ করেন তাহলে সব ছেলে মেয়েই ভাল করতে পারে।অনেক অভিভাবক শিক্ষকের সাথে যেমন রুড় আছরন করেন তেমনি শিক্ষক ও রাগান্বিত হন এতে ছাত্র ছাত্রিদের মধ্যে অভিভাবক ও শিক্ষকের মধ্যে একটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।এ ক্ষেত্রে শিক্ষক যতই ভাল পড়ান সেটা আর ছাত্র ছাত্রীর অনূকুলে হয়ে উঠে না।সবচেয়ে সুন্দর কাজ হলো অভিভাবক ও শিক্ষক যদি বুঝতে পারেন তাদের মধ্যে কোন মনকষাকষি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে তখন দ্রুত যে কোন পক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাতে পড়ুয়া ছাত্র/ছাত্রী বুঝতে না পারে আর তা নাহলে শিক্ষক নিজের সম্মান রক্ষার্থে নিজেকে সরিয়ে নেয়া। আচরনের ব্যালেন্স ও সৌহার্দপূর্ন সম্পর্ক যাতে বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা ছাত্র ,অভিভাবক ও শিক্ষকের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
বিষয়: বিবিধ
২০৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন