ক্ষমতার রশি টানাটানির খেলায় শক্তিমানেরই জয় হবে আর নি:শেষ নীপিড়িত হবে প্রজাসাধারন।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৬:১১:৪০ সন্ধ্যা

মনুষ্যত্ব বিকশিত হলে আন্দোলন সংগ্রামের কোন প্রয়োলজন পড়ে না।মানুষের মাঝে ভালবাসা প্রতিষ্ঠিত হলে জালানো পোড়ানোর মত হিংস্র কাজ কেউ করতে পারে না।সারা দেশে এক বিভিষিকাময় অবস্হা।এক সময় ছিল দাবী আদায়ের মোক্ষম অস্ত্র মিছিল মিটিং,স্লোগান ও দেয়ালে লিখন।এখন আর তা নেই।নিত্যনতুন আবিষ্কার হচ্ছে ডিজিটাল আবিস্কার।বার্ন ইউনিটের মৃত্যুযাত্রীর পরিবারের হাহাকার কান্না ও পোড়া মানুষদের কান্নার আওয়াজ আকশে বাতাশে আন্দোলিত হচ্ছে।এই দগ্ধ করার কাজটি মানুষের নয় আল্লাহর অধিকার।কোন মানুষ যখন মানুষকে দগ্ধ করে বা করার জন্য প্ররোচিত করে তারা আল্লাহর সেই অধিকারটিকে তাদের হাতে নিয়ে নেয়।বাংলাদেশে রাজনৈতিক এই সংস্কৃতি সব দলের মধ্যেই বিরাজমান।

মানুষকে দু' ধরনের আগুনে দগ্ধ করে- এক. প্রতিহিংসার আগুন; এই আগুনে হিংসুক নিজেই জ্বলেপুড়ে দগ্ধ হতে থাকে। দুই. বারুদ থেকে সৃষ্ট আগুন; এই আগুন মানুষের জন্য উপকারী বটে, তবে প্রজ্বালনকারী নির্বোধ হলে নিজেও জ্বলতে পারে, আবার অন্যকেও জ্বালাতে পারে। 'নিজে জ্বলো এবং অন্যকে জ্বালাও'- ইসলাম যেহেতু এর কোনো নীতিকে কোনো অবস্থায়ই সমর্থন করে না, তাই ইসলাম হিংসা-বিদ্বেষকেও হারাম করেছে। আবার বারুদের সৃষ্ট আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো নীতিকেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। আর এটাকে মানবতাবিরোধী গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে।ইসলাম মানুষকে একটি মর্যাদা সম্পন্ন জাতিতে পরিনত করেছে। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অন্য প্রাণীর ওপর স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সুরা ইসরার ৭০ আয়াতে এভাবে, 'অবশ্যই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং স্থলে ও জলে তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করেছি। তাদের উত্তম রিজিক দান করেছি এবং আমার বহু সৃষ্টজীবের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।' লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই শ্রেষ্ঠত্ব কোন গুণাবলির ওপর নির্ভরশীল? উদাহরণস্বরূপ দেখুন, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সুশ্রী চেহারা, সুঠাম দেহ, সুষম প্রকৃতি এবং অঙ্গসৌষ্ঠব দান করেছেন, যা অন্যান্য সৃষ্টজীবের মধ্যে নেই। বাকশক্তি ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার যে নৈপুণ্য মানুষ লাভ করেছে, তা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজের ভাব ব্যক্ত করা এবং আক্ষরিক জ্ঞান সবই মানুষের স্বাতন্ত্র্য-বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর সব আবিষ্কারের মূলেও রয়েছে এই বিবেকবুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি। এরই সাহায্যে সে কত কিছুই না আবিষ্কার করেছে, আগামি দিনে না জানি আরো কত কিছু আবিষ্কার করে! এই বিবেকবুদ্ধির মাধ্যমেই সে স্বীয় সৃষ্টিকর্তার পরিচয় ও তার পছন্দ-অপছন্দ জেনে পছন্দের অনুগমন ও অপছন্দ থেকে বিরত থাকে।

মানব হত্যা বিষয়ে ইসলাম অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা সমর্থন করে না। বরং এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে ইসলাম সব সময় সোচ্চার, সরব এবং হত্যাকারীর জন্য রেখেছে কঠিন শাস্তির বিধান। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সুরা মা'য়েদার ৩২ আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, 'হত্যার বদলে হত্যা ও পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা ছাড়া কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, তাহলে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল, আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।'ভেবে দেখার বিষয় হলো, বিনা কারণে একজন ব্যক্তির হত্যাকারীকে সব মানুষের হত্যাকারী আর রক্ষাকারীকে সবার প্রাণ রক্ষাকারী সমতুল্য বলা হলো কেন? কারণ কোনো ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নরহত্যায় কেবল তখনই লিপ্ত হয়, যখন তার অন্তর থেকে মানুষের মর্যাদা সম্পর্কিত অনুভূতি লোপ পেয়ে যায়। আর এ অবস্থায় নিজ স্বার্থের খাতিরে সে আরেকজনকেও হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করবে না। এভাবে গোটা মানবতা তার অপরাধপ্রবণ মানসিকতার টার্গেট হয়ে থাকবে। তা ছাড়া এজাতীয় মানসিকতা ব্যাপক আকারে ধারণ করলে সব মানুষই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। সুতরাং অন্যায় হত্যার শিকার যে-ই হোক না কেন, দুনিয়ার সব মানুষকে মনে করতে হবে, এ অপরাধ আমাদের সবারই প্রতি করা হয়েছে।' বিপরীতে একজনের প্রাণ রক্ষাকারী গোটা মানবতার রক্ষাকর্তা হিসেবেই স্বীকৃতি পাবে।

মানব মর্যাদা যেহেতু নরঘাতকদের প্রাপ্য নয়, তাই ইসলাম তাদের শাস্তির ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় দেয়নি; বরং তাদের জন্য রেখেছে জাগতিক ও পারলৌকিক শাস্তি। জাগতিক শাস্তি হলো হত্যার বদলায় হত্যা, অঙ্গের বদলায় অঙ্গ ( সুরা মায়িদা-আয়াতে ৪৫)।পরকালীন শাস্তির ব্যাপারে সুরা নিসার ৯৩ আয়াতে ঘোষণা হচ্ছে, 'যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় জেনেশুনে কোনো মুসলমানকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, যাতে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি গজব নাজিল করবেন এবং তাকে লা'নত করবেন। আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।' ইসলামি শরিয়তে প্রানী পোড়ানোর বিধান কি আছে? হত্যা যেভাবেই করা হোক, এটা যে কতটুকু কষ্টদায়ক তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। আর জীবন্ত জ্বলেপুড়ে মরা কী পরিমাণ যন্ত্রণাদায়ক, তা প্রকাশের ভাষাও কোনো মানব-মানবীর পক্ষে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। ইসলাম তো বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু ও কীটপতঙ্গকেও পুড়িয়ে মারতে বারণ করে। তাহলে নিরপরাধ মানুষ পোড়ানোর বৈধতার তো প্রশ্নই আসে না।(আবু দাউদ হা. ২৬৭৫) হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিপীলিকার একটি বসতি পিপীলিকাসহ পোড়ানো দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কারা পিঁপড়ার বসতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছে? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, আমরা। এতদ্শ্রবণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য আগুন দ্বারা কাউকে শাস্তি প্রদান করা অবৈধ।' (আবু দাউদ হা. ২৬৭৩) এই হাদিসে

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'একমাত্র আগুনের সৃষ্টিকর্তাই আগুন দ্বারা কাউকে শাস্তি দিতে পারেন।' (বুখারি হা. ৩০১৭) এই হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'যে জিনিস দ্বারা (আগুন) স্বয়ং আল্লাহ শাস্তি প্রদান করবেন, তা দ্বারা তোমরা কাউকে শাস্তি প্রদান করো না।' ইতিহাসে জ্যান্ত মানুষ পোড়ানোর কয়েকটি ঘটনা

অনুসন্ধান করলে অসংখ্য ঘটনার অস্তিত্ব পাওয়া যায় এ রকম কয়েকটি ঘটনা এখানে প্রদত্ত হলো-

ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনা : নমরুদ ও তার দোসররা যখন হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে যুক্তিতর্কে হেরে গেল, তখন তারা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল যে ইবরাহিমকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হোক। ঐতিহাসিক রেওয়াতসমূহে বর্ণিত রয়েছে, এক মাস পর্যন্ত সমগ্র শহরবাসী জ্বালানি কাঠ ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এরপর তাতে অগ্নিসংযোগ করে সাত দিন পর্যন্ত প্রজ্বলিত করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অগ্নিশিখা আকাশচুম্বী হলে তারা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে নিক্ষেপণযন্ত্রের মাধ্যমে অগ্নিসাগরে নিক্ষেপ করে। কিন্তু ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য উত্তপ্ত আগুন শান্তির বাগানে পরিণত হয়ে গেল!

আসহাবে উখদুদের ঘটনা : পবিত্র কোরআনে আসহাবে উখদুদের (গর্তওয়ালা) ঘটনা সম্পর্কেও সুরা বুরুজে আলোকপাত করা হয়েছে। বিস্তারিত ঘটনা মুসলিম শরিফের ৩০০৫ নম্বর হাদিসে বর্ণিত আছে। এখানে এটাই স্পষ্ট করা হয়েছে যে একদল লোককে আল্লাহর ওপর ইমান আনার কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে অগ্নিগর্তে নিক্ষেপ করার পর অগ্নি আরো বেশি প্রজ্বলিত হয়ে তার লেলিহান শিখা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে যারা ইমানদারদের অগ্নিতে দগ্ধ করে তামাশা দেখছিল, তারাও এই আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। কেবল নরাধম বাদশাহ ইউসুফ জুনওয়াস পালিয়ে যায়। সে অগ্নি থেকে আত্মরক্ষার জন্য সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সেখানেই সলিলসমাধি লাভ করে। এর থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হলো, দঙ্কারীকেও দহন যন্ত্রণা ভোগ করতে হতে পারে।আবু মুসলিম খাওলানি (রা.)-এর ঘটনা : আবু মুসলিম তাঁর উপনাম। তাঁর আসল নাম আব্দুল্লাহ। তিনি ইয়ামানের অধিবাসী। মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার আসওয়াদ আল আনাসি যখন ইয়ামনের ওপর পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, তখন সে হজরত আবু মুসলিম খাওলানি (রা.)-কে তাঁর মত গ্রহণ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু তিনি তা সাহসিকতার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। আসওয়াদ তাঁকে হত্যা করার জন্য বিশাল এলাকাজুড়ে অগ্নি প্রজ্বালিত করে এবং তাতে তাঁকে নিক্ষেপ করে। তবে আল্লাহর রহমতে তিনি নিরাপদে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। অতঃপর তিনি মদিনায় আগমন করলে হজরত উমর (রা.) বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ আমাকে উম্মতে মুহাম্মদির মধ্য থেকে এমন একজন ব্যক্তিকে দর্শন করার সৌভাগ্য দান করেছেন, যার সঙ্গে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর মতো আচরণ করা হয়েছে।

ইসলামে অঙ্গহানি ও অঙ্গবিকৃতি নিষিদ্ধ : দগ্ধ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে সে অনেক বিড়ম্বনার হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু যে প্রাণে বেঁচে যায়, তাকে দিনের পর দিন দহনযন্ত্রণায় ভুগতে হয় আর বিকৃত-বীভৎস আকৃতি নিয়েই এই ধরায় বাঁচতে হয়। অথচ এভাবে মানবাকৃতির বিকৃতি সাধন ইবলিশ শয়তানের প্রতিজ্ঞারই প্রতিফলন। দেখুন, শয়তান আল্লাহ তায়ালাকে চ্যালেঞ্জ করে কী প্রতিজ্ঞা করেছে। কোরআনে সুরা নিসার ১১৯ আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, 'আমি তাদের সরল পথ থেকে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব। তাদের অনেক আশা-ভরসা দেব এবং তাদের আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে এবং তাদের আদেশ করব, যাতে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ আনসারি (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিনতাই ও প্রাণীর বিকৃত করা থেকে নিষেধ করেছেন (সহিহ বুখারি হাদিস- ২৪৭৪)।মূলত কাউকে পেট্রলবোমা মেরে দগ্ধ করাও কারো অঙ্গহানি ও অঙ্গবিকৃতির শামিল। ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, মানবাকৃতির বিকৃতি সাধন করার মতো ঘৃণিত কাজ তদানীন্তন মক্কার পৌত্তলিকরা উহুদ যুদ্ধের মুসলিম শহীদদের সঙ্গে করেছিল। অতএব, নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ পোড়ানোর মতো মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ ত্যাগ করতে হবে। ন্যূনতম ইমানের অধিকারী একজন মুসলিম এজাতীয় কাজে মেতে উঠতে পারে না। আগুন নিয়ে খেলা করা কোনো মানুষের কাজ নয়।একটি মুসলিম দেশে যারা এই ন্যাক্কারজনক কাজগুলো করছে কি করে আমরা তাদের মুসলিম বলতে পারি?

সামান্য কিছু পয়সার বিনিময়ে নিক্ষিপ্ত পেট্রলবোমার অগ্নিব্যাখ্যা দিয়ে আমরাও বুঝতে অক্ষম এ সময়ের আন্দোলনের কনটেক্সট, মনোভঙ্গি, গন্তব্য। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, মহাত্মা গান্ধীর মতো হাল্কা চুমুর আন্দোলন পদ্ধতি দিয়ে সুবিধা করা যাবে না। তাই কর্ণধারদের পলিসিতেই আন্দোলন চলছে। নির্বিচার গালাগালিও একটা ক্ল্যাসিক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। বলা যেতেই পারে যে এরকমক যুদ্ধংদেহী আবহের মধ্যেই আমরা আছি এবং বিবদমান দুপক্ষ পরস্পরকে ঘায়েল করার হেন কোনো হীন কৌশল নেই, যা প্রয়োগ করছে না।কোন ঘটনা ঘটলে যারা অ্যান্টি লিবারেশন ও প্রো-জামায়াতের কথা বলেন তাদের কথা না হয় ছাড়লাম; কিন্তু যারা প্রো-প্রগেসিভ, প্রো-লিবারেশন, সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক তকমার কোনো দাবিই ছাড়তে চান না, তাদের হাতেও তো আইনের শাসন ইউটোপিয়া-ই হয়ে থাকল। যে কোনো হত্যাকাণ্ডের পর নানা মাধ্যমে পরিবেশিত সংবাদকে মনে হয় একটি মিথ্যার প্যাকেজ। আছেন মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক ঠিকাদাররা, যারা বন্দুকযুদ্ধের মৃত্যুতে মানুষের অধিকার ক্ষুণ্নের জন্য গরম নিঃশ্বাস ফেলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বচ্ছতায় তিল পরিমাণ এদিক-ওদিক হলে রমরমা বক্তৃতা বিবৃতি দেন; কিন্তু সম্পূর্ণ স্বকীয় নিখিলবঙ্গীয় অগ্নুৎসবে পোড়া মানুষের জন্য তাদের কোনো স্বয়ম্ভু বয়ান নেই। বহু জটিল আন্তর্জাতিক উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে তাদের অবস্থান। তাদের না হয় মনে মনে ক্ষমা করা গেল; কিন্তু চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বলির পাঁঠাদের (বিএনপির ভাষ্য মতে শহীদ) পরিবারগুলোর ইমিডিয়েট পেটের ভাতের কী বন্দোবস্ত করেছেন দুই মহান গণতন্ত্রী দল? গীতা সেন বার্ন ইউনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন আমরা হাসিনা -খালেদা কাউকে চিনিনা,শুনেছি সেই গীতা সেনই নাকি এখন দুবেলা মলম ব্যবহারের বদলে পোড়া ক্ষতে একবার মলম দেন। এখন প্রশ্ন হল, ভাত-কাপড়-মলমের ইমিডিয়েট হিসাব আগে করব, নাকি গণতন্ত্র উদ্ধার করব? তা-ও যদি হৃষ্টচিত্তে সেই গণতন্ত্র ভোগ করতে পারতাম! গণতন্ত্রের বিজয়োৎসবের পরপরই আবার আতংকে থাকতে হবে বেঘোরে প্রাণ হারানোর। রাজনীতিতে এ অবক্ষয় বা সহিংসতা যাই বলি, কোনো কিছু দিয়েই টেকসই নিরাপত্তা পাওয়া যায় না। সব শব্দই যেন মেয়াদোত্তীর্ণ।

যতই বিস্মিত না হওয়ার ভান করি, যতই হাজির করি রেডিমেড ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, কিছুতেই হিসাব মেলে না। শেষমেশ মনে পড়ে কাফকার দি ট্রায়াল-এর কথা। যেখানে নায়ক আসামি মি. কে জানে না, কারা, কেন, কোথায় তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর তার গন্তব্য-ই বা কোথায়। আমরা কি জানি? এ প্রশ্নের উত্তর আপাতত চ্যাপলিনকে উদ্ধৃত করে দেয়া যাক, যিনি মনে করতেন কেউ যেন হৃদয়ের থেকেও বেশি বামে সরে না যান। অর্থাৎ কিনা মানুষের ঠিক অতখানি প্রগতিশীল না হলেও চলে, এ টুকুতেও চলে যেখানে হৃদয় দিয়ে মানুষকে বোঝা যায়। চ্যাপলিনের এ কথার গভীর অর্থ কি দয়া করে প্রগতিশীল রাজনীতিক আর তাদের কর্মী-সমর্থকরা একটুখানি বুঝতে চেষ্টা করবেন? উত্তর নিশ্চিতভাবেই না। মনে পড়ে দি গ্রেট ডিক্টেটর চলচ্চিত্রটির কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকের সময়ের কথা বলছি।ফ্যাসিজমের জয়-পরাজয় তখনও সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। ঠিক সেই সময়েই চ্যাপলিন তার সকল আবেগ আর নিষ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে। শুনিয়েছিলেন দি গ্রেট ডিক্টেটরের সেই অমেয় ভাষণ। শোনা যাক, আমি বিশ্বাস করি যেখানে দয়া নেই, সেখানে জীবনও নেই। আর জীবন না থাকলে, কী অন্ধকার, বা মর্মান্তিক বলার জন্যও আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। স্বৈরাচার নিজেকে স্বাধীন করে; কিন্তু মানুষকে করে দাস। আমি স্বৈরাচার সম্রাট হতে চাইনি। আমাকে মার্জনা করবেন। বিশ্বাস করি কোনো মানুষই নিজের জন্য নয়, দলের জন্যও নয়, সব মানুষ সব মানুষের জন্য। বিস্মিত হই (না হয়ে পারি না) চ্যাপলিনের সৃজনশীলতার উচ্চমাত্রা অনুভব করে। যে ডিক্টেটরকে দিয়ে চ্যাপলিন এ ভাষণটি দিয়েছিলেন তিনি ছিলেন নকল ডিক্টেটর। দেখতে হুবহু একইরকম একজন নিরীহ নাপিতকে লোকে স্বৈরাচারী সম্রাট ভেবে মঞ্চে উঠিয়ে দিয়েছিল। আর নিরীহ সেই নাপিতের মুখ দিয়েই চ্যাপলিন বের করিয়ে এনেছেন সেইসব কথা, যার জন্য শত শত বছর ধরে মানুষ সংগ্রাম করছেন। কিন্তু চ্যাপলিন জানেন সত্যিকারের স্বৈরাচার, সত্যিকারের ফ্যাসিস্ট কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিজমের অস্তিত্ব স্বীকার করবে না, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে কিছু বলবেও না। তাই দর্শকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করার খাতিরে তাকে হুবহু স্বৈরাচারের মতো চেহারার আরেকটি চরিত্র তৈরি করতে হয়েছে। সাধারণ মানুষের মনের কথা যে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে ভালো বুঝবে, এ তথ্য চ্যাপলিনের চেয়ে ভালো আর কে জানে? অতএব একজন নাপিতের মুখ থেকেই তিনি শুনিয়ে দিলেন বিশ্ববাসীকে যে, স্বৈরাচার নিজেকে স্বাধীন রাখে; কিন্তু আর সব মানুষকে পরিণত করে দাসে। চলচ্চিত্রটি শেষ হয়েছে আকাশের, দীর্ঘ পরিসরের মুক্ত আকাশ দেখিয়ে। মুক্ত আকাশকে ছবিতে মানুষের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। মুক্ত আকাশ স্বাধীনতার প্রতীক, আকাশে ওড়া পায়রা শান্তির প্রতীক; কিন্তু আকাশে যখন সব ছারখার করা ধোঁয়ার কুণ্ডলী, সেই আকাশকে আমরা কিসের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করব? জানি ক্ষমতার রশি টানাটানির খেলায় শক্তিমানেরই জয় হবে। কাল্পনিক থ্রিলারে যেমন হয় আর কী!

বিষয়: বিবিধ

১২২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File