আমাদের সংগ্রাম আমাদের ব্যার্থতা নয়,সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:৫৬:৪৬ দুপুর

প্রতি বছরের মত আমাদের কাছে এসেছে নতুন বছর।কথায় বলে ভোরের সূর্য দেখে বুঝা যায় দিনের অবস্হা কেমন যাবে।অনেকে এ ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন করেন।আমি কিন্তু তাদের সাথে একমত নই।কারন আমি আমার বিবেক ও প্রজ্গাকে সামনে রেখে আমার মতামত প্রকাশ করতে আগ্রহী।ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একমাত্র সর্বজ্গ তিনি যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।সংগ্রাম মানুষের জীবনকে উন্নততর করে।যে মানুষ সংগ্রামী নয় তার জীবন ব্যার্থ ও জড় পদার্থের মত চলমান।আমাদের জাতির জীবনে একটি সংগ্রাম বয়ে এনেছিল আমাদের স্বাধীনতা।স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে যে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন তা আমাদের অনেকের জানা নেই।আমাদের স্বাধীনতার মুল্য আমরা বুঝতে পারিনি কারন স্বল্প সময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।পৃথিবীর অনেক দেশ তারা আজো স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করছে।ফিলিস্তিন ৬৭ বছর ধরে রক্ত ঝরাচ্ছে কিন্তু স্বাধীনতার মুখ দেখতে পাচ্ছে না।আমাদের দেশ একটি মুসলিম দেশ।সম্মানের দিক থেকে নিশ্চই আমরা পিছিয়ে নেই।অর্থ ও সম্মান এক জিনিস নয় তবে জীবনের পূর্নতার জন্য অর্থের প্রয়োজন রয়েছে।অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যায় তারা মানবতকে রাখে সর্বাগ্রে।অথচ মুসলমানদেরই এই মানবতা থাকার কথা ছিল শতভাগ।তারা নতুন বছর এলে একটি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয় যেন আগামি দিনগুলোতে আরো বেশী সুফল পেতে পারে।কিন্তু উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে চলে পিছনে টেনে নেয়ার হিড়িক।দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বলেছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে এবং বর্তমান পরিস্থিতি খুবই বিরক্তিকর। অন্যদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পর্যবেক্ষণ হল, গত তিন সপ্তাহ ধরে সরকার ও বিরোধী দলের সমর্থকরা রাজধানী ঢাকা ও অন্য শহরগুলোয় মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত থাকায় মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটে চলেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুটি সংস্থাই উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে ও সংলাপে বসতে আহ্বান জানিয়েছে।কিন্তু আমরা আমাদের গোয়ার্তুমিকে যেন বাড়িয়েই দিয়েছি।দেশ ও জনগনকে ধংসের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে।

উপরের সংস্থাগুলো দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, তাতে অতিরঞ্জন কিছুই নেই। বস্তুত দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় যা দেখছে, তাদের বক্তব্যের সঙ্গে তার কোনো পার্থক্য নেই। গত ১৮ দিনে প্রায় অর্ধশত মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন, তাদের অনেকেই মারা গেছেন, অবরোধকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন অনেকে। অন্যদিকে একই সময়ে গুম হয়েছেন ১৩ জন, বন্দুকযুদ্ধ ও নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ৩ ব্যক্তি। এককথায় বললে দেশে নিরাপত্তা বলে প্রায় কিছু নেই এখন। এমনকি পুলিশ ও বিজিবি প্রহরাধীনে চলাচলকারী বাস-ট্রাকেও ছুড়ে মারা হচ্ছে পেট্রলবোমা। এ তো গেল মানবাধিকার পরিস্থিতি। দেশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন, পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পণ্য ঘাটতি, সবজিসহ পচনশীল দ্রব্যাদি স্থানান্তরিত না হতে পারায় নষ্ট হচ্ছে ব্যাপক হারে। খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে, জরুরি প্রয়োজনেও দূরযাত্রায় যেতে না পারায় দেখা দিচ্ছে নানা সংকট। এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে অবিলম্বেই দেশ, বিশেষত দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হবে।সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সংকটের অবসান ঘটানোর তাগিদ সত্ত্বেও সরকার ও ২০ দলীয় জোটের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। বরং যতই দিন যাচ্ছে, তারা ততই অনমনীয় হয়ে উঠছে। অথচ বর্তমান সংকট অতি সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। বিরোধী দল যদি অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় এবং সেই প্রেক্ষাপটে সরকার তাদের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানায়, তাহলেই পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে। কিন্তু এই সামান্য শুভবুদ্ধিরও উদয় হচ্ছে না কোনো পক্ষের মধ্যেই। বোঝাই যাচ্ছে, তাদের কেউই হারতে চাচ্ছে না। বিরোধী দল মনে করছে, অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে সেটা হবে তাদের জন্য পরাজয় আর সরকারের ধারণা, অবরোধের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানালে প্রমাণ হবে যে তারা পিছু হটেছেন। জনগণের সামনে কেউই নিজকে পরাজিত প্রমাণ করতে নারাজ, তাতে জানমালের যত ক্ষতিই হোক না কেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই মানসিকতার চরম নিন্দা জানাই আমরা দেশের প্রজাসাধারন। দুই নেত্রী যদি দেশবাসীর উদ্বেগের প্রতি সম্মান না দেখান তাহলে সামনে দুই পক্ষকেই চরম মুল্য দিতে হবে।আমাদের মনে রাখা দরকার, জনগণের সম্মিলিত শক্তির চেয়ে বড় শক্তি নেই দলগুলোর।জনগনের শক্তিকে পুঁজি করে, তাদের জানমালের ক্ষতি করে রাজনীতি, এ কোন রাজনীতি? তাদের পিঠ যে দেয়ালে ঠেকে গেছে তা কি দুই নেত্রী একবার ভেবেছেন? আপনারা লড়ছেন আপনাদের গদি সামলাতে,মানুষের জন্য নয়। যদি আন্দোলন ও সংগ্রাম হবে আপনাদের মধ্যে তাহলে নীরিহ জনগন পুড়বে কেন? আপনারা দুই দলের বড় বড় নেতাদের শায়েস্তা করুন।আপানদের কাউকে তো মরতে দেখিনা।আমরা মরতে দেখি নীরিহ অজ্গ কর্মীদের ও তার সাথে সাধারন মানুষকে। প্রশাসনের চাদরের মোড়কে থেকে আপনারা জনগনের কথা বলেন ও কিছু মানুষকে উস্কে দেন আর পরিনতি ভোগ করে রাস্তায় জীবিকার প্রয়োজনে চলাচলকারি নীরিহ মানুষগুলো।আপনাদের সবিনয় অনুরোধ করছি,আর দেরি নয় একযায়গায় বসুন ,কথা বলুন একে অন্যের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

নববর্ষকে সামনে রেখে আমাদের কাজ হলো, বিগত বছরের অর্জন এবং ব্যর্থতার হিসাব মিলিয়ে দেখা।আমরা কতটুকু অর্জন করলাম না ব্যার্থ হলাম সে অংক কষা। সেই সঙ্গে অধিকতর অর্জন ও ব্যর্থতা অতিক্রম করার পরিকল্পনা নেয়ার মনবাসনা তৈরি করা।আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষকদের কারও কারও ভাষ্য হচ্ছে, ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন অবলুপ্ত হলে এবং বিশ্বের একক নেতৃত্ব আমেরিকার দখলে চলে গেলে বিশ্বে যে শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ প্রত্যাশিত ছিল তা আসেনি। ইউনিপোলার ব্যবস্থা উত্তম বলে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। উন্নত ইউরোপ এড়াতে পারেনি রক্তপাতের ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা তো অত্যন্ত নাজুক। বিশ্বের অনেক দেশের অভ্যন্তরে সংঘাত, সংঘর্ষ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আলোচনা করে কোনো সমস্যার মীমাংসা করতে পারছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকেও তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। সংস্থাটির সংস্কার করতেও কেউ উদ্যোগী হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে আস্থার অভাব। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সংস্থা যে আস্থা অর্জন করেছিল, তা ইতিমধ্যে হারিয়ে ফেলেছে। মিখাইল গর্বাচেভ তাই মনে করেন, আস্থা ছাড়া আজকের পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, অর্জিত আস্থা হারিয়ে ফেলার কারণ কী? কারণ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হলে আশা করা হয়েছিল নতুন এক নিরাপদ বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ইউরোপ নিরস্ত্রীকরণের দিকে এগিয়ে যাবে। কিন্তু সে আশা ফলপ্রসূ হয়নি। পশ্চিমা বিশ্ব সে পথে যায়নি। রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মাথায় একক কর্তৃত্বের ধারণা প্রবল হয়ে উঠতে দেখা যায়। অংশীদারদের স্বার্থের দিকে সম্যক দৃষ্টি না দেয়া এবং নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা প্রবল হওয়া ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। যার প্রতিফলন দেখা যায় যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধে (বিশেষত কসোভোয়), ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় এবং ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার ঘটনায়।আগে যা ছিল ফোস্কা, তা এখন পরিণত হয়েছে ক্ষতে।

তাহলে কি নতুন পরিস্থিতির মূল্যায়নে ইউরোপ ভুল করেছে? ইউরোপীয় মেধা ও মননের উচিত ছিল বিশ্বব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আনয়নে নেতৃত্ব দেয়া। অতীতের মতো শাসন-শোষণ এবং প্রভাব বিস্তারের বাসনা পরিত্যাগ করা। সামরিক দ্বন্দ্ব পরিহার করা। আলাপ-আলোচনা ও কোমল শক্তির চর্চা বাড়িয়ে শান্তি ও সংহতির জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া। তাহলে আজ যে দ্বন্দ্বে ইউরোপ এবং তার প্রভাব বলয়ে থাকা দেশগুলো ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, তা এড়ানো হয়তো সম্ভব হতো। আজ বিশ্ব রাজনীতিতে ইউরোপের শক্তি হ্রাস পেতে পেতে এতটা দুর্বল হয়ে পড়ছে, যেমনটি আশির দশকে ভাবা যায়নি। এই সময়ে ইউক্রেনে যা ঘটেছে তার সমাধান অবরোধ থেকে আশা করা যায় কি? ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের পরিণাম জানা থাকার পরও পারস্পরিক বোঝাপড়ার কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি আসলে সমস্যার সমাধানকে অসম্ভব করে তুলতেই সাহায্য করে।সন্ত্রাসবাদ, দারিদ্র্য, অসমতা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, মহামারী ইত্যাদি বৈশ্বিক সমস্যাগুলো দিন দিন খারাপের দিকে গড়াচ্ছে। আমাদের জানা মতে, এসব সমস্যার কোনো সামরিক সমাধান নেই। প্রচলিত রাজনীতিও এর কোনো সমাধান দিতে পারছে না। বিভিন্ন দেশে শাসক বদলের আন্দোলন হচ্ছে। কোথাও এ আন্দোলন সফল হচ্ছে, কোথাও হচ্ছে না। কিন্তু যেসব রাষ্ট্র বিশ্বের আর্থ-রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের কাছ থেকে বৈশ্বিক সমস্যাবলীর সমাধান করার মতো কোনো পথনির্দেশ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অগ্রাধিকার নির্ধারণে আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব চোখে পড়ছে। যে যার কথা বলে চলেছে, কেউ কারও কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। এই অবস্থায় কথা শোনার ইচ্ছা জাগিয়ে তোলার উপায় সম্পর্কে ভাবতে হবে।

আজকের বৈশ্বিক দৃশ্যপট যতটা ধারণায় আনা যায়, তার চেয়ে অস্থির এবং অনিশ্চিত। কখন কোথায় কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা আন্দাজ করা যাচ্ছে না। মুক্ত অর্থনীতিতে প্রচুর সম্পদ তৈরি হচ্ছে। আরও সম্পদ তৈরি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু বর্ধিত সম্পদ তৈরি করলেই কি সমস্যার নিরসন হবে, বৈষম্য ও হতাশা দূর হবে? এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দিচ্ছেন না। এ সম্পর্কে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভাল্স বলেছেন, সবচেয়ে সফল দেশ হচ্ছে সেটিই, যেখানে চাকরিদাতা ও চাকরিজীবীরা অভিন্ন পরিণতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। এ রকম দেশে সামাজিক সংলাপের উন্নয়ন ঘটে এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু সেই ফ্রান্সের জনগণও ভালো নেই। তবে আশার কথা, সে দেশের হাজার হাজার মানুষ সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলে শামিল হচ্ছে।আজকের দুনিয়ায় প্রতিটি দেশের মানুষের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা যখন সীমা মানছে না, তখন সরকার ও রাষ্ট্র ব্যাপারটা সামাল দিবে কীভাবে? সরকার ও রাষ্ট্রের সামর্থ্য তো অসীম নয়। এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। যদিও আজকের সমস্যাবলীর অনেকটাই তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক ভাবনার গলদ থেকে। অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোসেফ ই স্টিগলিৎস যেমনটি বলেছেন, আমাদের মূল সমস্যা নির্বোধ রাজনীতি। উন্নয়নে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনীতি চালকের ভূমিকা পালন করে থাকে। রাজনীতির কর্ণধাররা করনীতি, রাজস্বনীতি, মুদ্রানীতি, সুদের হার ইত্যাদি নির্ধারণ করে থাকেন। তারাই পলিসি দেন। উৎপাদন বাড়া কিংবা কমার সঙ্গে এসব নীতির ভূমিকা থাকে। সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গেও এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ মন্দার সংকট কাটিয়ে উঠতে এখনও হিমশিম খাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা সংকটের আগের তুলনায় গড়ে সাড়ে ছয় লাখ কমে গেছে। তবে অনেকের ধারণা ছিল এ সংখ্যা আরও বিশ লাখ বেশি হওয়ার। এ রকম বিপদ যদি আমাদের মতো দেশকে গ্রাস করত, তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াত?

যুক্তরাষ্ট্রের মতো সম্পদশালী দেশ বলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে। তারপরও প্রবৃদ্ধির গতি দুর্বল হয়ে পড়ায় শ্রমিকদের মজুরি এক জায়গায় দীর্ঘদিন স্থির রয়েছে, যা হতাশা ছড়াচ্ছে।

অন্যদিকে এশিয়ার উদীয়মান শক্তি চীন এখন ক্রয়ক্ষমতার সামর্থ্যরে বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতেও তার ভূমিকা সবার ওপরে। এই অসামান্য সাফল্যও দেশটির জন্য কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছে। দেশটির সর্বস্তরে দুর্নীতির প্রসার ঘটেছে, বেসরকারি খাতও দুর্নীতিমুক্ত থাকেনি। এছাড়া পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর আর্থিক বৈষম্য তো আছেই। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন। এ লড়াইয়ে চীন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসনের আশীর্বাদ ভোগ করার দিকে এগিয়ে যাবে, না একদলীয় ব্যবস্থার অধীনে থেকে সাফল্য পেতে চাইবে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।চীনের জনগণের মতো রাশিয়ার জনগণও অনেক দিন থেকে ভ্লাদিমির পুতিনের একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে রয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রুশরা তাদের বিশেষ চরিত্রের কারণেই পুতিনকে সমর্থন দেন। যেমন তারা স্তালিন ও রোমানভদেরও সমর্থন দিয়েছিলেন। অভিজ্ঞজনদের অভিমত হচ্ছে, পুতিনের সরকার পৃষ্ঠপোষকদের রুশ সংস্করণ ছাড়া আর কিছুই নয়। পুতিন সরকার রাজনৈতিক আনুগত্য বিবেচনায় সম্পদ ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বিতরণ করছে। এর ভিত্তিমূলে সোভিয়েত যুগের আদর্শিক প্রণোদনা নয়, রয়েছে আবেগময়তা। যদিও তিনি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তকরণ ও পূর্ব ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে সাম্রাজের জন্য জনপ্রিয় হওয়ার বাসনায় জ্বালানি সরবরাহের চেষ্টা করেছেন। তার এ তৎপরতা গভীর রাতে মুখোশ পরা একদল লোকের চুরি-ডাকাতির চেয়ে বেশি কিছু নয়। এদের জন্য ইতিহাসে টেকসই গৌরব লাভের সম্ভাবনা সামান্যই। পুতিন ও তার ঘনিষ্ঠদের প্রধানত ক্ষমতায় টিকে থাকা ও উন্নতি সাধন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়।

বিজ্ঞজনদের এসব মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে রাজনীতি মানবকল্যাণের দর্শন থেকে বিচ্যুত হলে তা কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ক্ষমতার নেশা কাউকে পেয়ে বসলে তার পক্ষে নীতিনৈতিকতার সীমানা লংঘন কিংবা সামাজিক চুক্তি ভঙ্গ করা বিন্দুমাত্র কঠিন কাজ বলে বিবেচিত হয় না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন এফ কেরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও অংশীদারি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তার তদারকি ও আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুনিয়া বদলে যাচ্ছে, তার সঙ্গে আমরা নিজেরাও। মানচিত্রে যে রেখা আছে সেটা আর কোনো বাধা নয়। এমনকি মানুষও কেবল শত্রু ও মিত্র- এই দুই দলে বিভক্ত নয়।

তিনি আরও বলেছেন, এককভাবে কোনো দেশ সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করতে পারবে না, জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলা করতে পারবে না, দূর করতে পারবে না চরম দারিদ্র্য, প্রতিরোধ করতে পারবে না মহাদেশীয় ব্যাধি, পারমাণবিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবে না। তার এসব কথা যদি উপলব্ধির গভীর স্তর থেকে উচ্চারিত হয়

তাহলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পুরনো ধারণা বিসর্জন দিয়ে নতুন করে টেকসই ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব দিতে বাধা কোথায়?একথা সত্য যে, একুশ শতকের পৃথিবী এখনও হিংস্র বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি। যেমনটি বিগত শতকের গোড়ার দিকে জড়িয়ে পড়েছিল। এ জন্য বিশ্ব নেতাদের ধন্যবাদ। কিন্তু সেই সঙ্গে এই তথ্যও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়ায় যা ঘটে চলেছে তার ভয়াবহতাও কম নয়। সেখানে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে একটি-দুটি নয়, ৬০টিরও বেশি দেশ সামরিক, রাজনৈতিক, গোয়েন্দা ও মানবিক সহায়তার ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। সামরিক সংঘাত বিস্তারের কারণে ইতিমধ্যে লাখ লাখ নরনারী উদ্বাস্তু হিসেবে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। অরুন্ধতী রায়ের ভাষায় সন্ত্রাসবিরোধী এ যুদ্ধ সহজে শেষ হওয়ার নয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য হচ্ছে, এই লড়াইয়ে বিজয়ের জন্য আরও শক্তিশালী ঐক্যজোট দরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি বুঝেছেন, স্বার্থের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত বিভিন্ন দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা সহজ নয়। কিন্তু মানব জাতির মহতী স্বার্থের প্রশ্নে বিশেষ করে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঐক্য গড়ে তোলার গুরুত্ব যে অনস্বীকার্য এ কথা তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষাতেই বলছেন। অভিজ্ঞতার আলোকে জন কেরি আরও একটি মূল্যবান কথা বলেছেন, ধনীরা দুনিয়ার প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে টিকে আছে। টিকে থাকারই কথা, কারণ পুঁজির শক্তিতে তারা বলীয়ান। বিত্তবানরা অর্থকে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার নিয়ামক মনে করে থাকেন। বিত্তহীনদের তারা উপহাস না করলেও অবজ্ঞা করেন। এই যখন অবস্থা তখন বিত্তহীনদের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকানো যেতে পারে বৈকি। মাথা গোনায় তারাই তো সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর পরিশ্রমী, মেহনতী মানুষের চেয়ে পুতপবিত্র মানুষ আর কারা? আজকের দিনে কেবল তাদেরই আছে ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর এবং গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার সাহস ও শক্তি। যা ধনিক ও বণিক শ্রেণী ঐতিহাসিকভাবে হারিয়ে ফেলেছে। তাদের ভীরুতা ও কাপুরুষতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশে দেশে স্বৈরশাসন দৃঢ়মূল হয়েছে এবং গণতন্ত্রের পতাকা ধুলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। পণ্ডিত জওহরলালকে পড়ে আমরা জানি, সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার মন্ত্র অনেক আগেই ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে। আজ সময় এসেছে আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় ব্যবহৃত জনগণ-এর চরিত্র নতুন করে বিচার-বিশ্লেষণ করার। জন কেরির ভাষায় ধনীরা যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে থাকে, তাহলে তাদের বাদ দিয়ে যারা থাকবে, জনগণ বলতে তাদেরই বুঝতে হবে এবং তাদের নিয়েই নতুন নাগরিক ঐক্য গড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে মাথা থেকে সামরিক বাণিজ্যের চিন্তা বাদ দিতে হবে। তাহলেই কেবল সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বিষয়: বিবিধ

১০৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File