ইসলাম ও গনতন্ত্র বাঁচলে দেশ ও দেশের মানুষ বাঁচবে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:০৬:০২ দুপুর
ইতিহাসে অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে মানুষের স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জিত হয়েছে।বাংলাদেশ ও একটি স্বাধীন দেশ কিন্তু স্বাধীনতার সুফল কি আমরা পাচ্ছি? স্বাধীনতার ৪৩ বছর দেশ নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে।স্বাধীনতাপূর্ব আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছিল গোটা জাতি যার পরিনতি ঘটেছিল একটি রক্তস্নাত ও রক্তিম সূর্যের আবির্ভাব।তখন কেউ বিভক্ত ছিলনা।শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে কিছু দল পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়েছিল।এই সমর্থন জানানোর পিছনে ছিল তাদের রাজনৈতিক কৌশল।কিন্তু এটিও চরম সত্য যে,তারা কি ভেবেছিল তাদের বসবাস কোথায়? যুদ্ধে হেরে গেলে তাদের অবস্হান কি হবে? এই দূরদর্শিতা তাদের ছিল না।তারা মনে করেছিল এটি একটি ছোট ভূ-খন্ড,৭০ এর প্রতাপ ঘূর্নিঝড়ে দেশ বিপর্যস্ত।এদের কোন ভারি অস্ত্র শস্ত্র নেই।এরা কখনো জয়ী হতে পারবেনা।এই চিন্তাচেতনাগুলো যারাই করেছিল তাদের কানাকড়িও দেশাত্ববোধ ছিলনা।পরিনতি কি হলো তাদের মুল্য দিতে হচ্ছে এবং বাংলাদেশ যতদিন বেঁচে থাকবে তাদের মুল্য দিতে হবে ও এর গ্লানি বহন করতে হবে।
বহিশক্রু মুক্ত হওয়ার পর আবার দেশে শুরু হয়েছিল ঘরোয়া শক্রুর আক্রমন।দেশের মানুষ যখন ক্লান্ত ও অবসন্ন,যখন তাদের দরকার পুনর্বাসন,বিদ্ধস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো তখন সেখানে শুরু হয় আর এক নৈরাজ্য।বিভিন্ন পঠ পরিবর্তনের মধ্যেও এদেশের মেহনতি মানুষ দেশকে ভালবেসে উন্নতির চাকাকে ঘুরাতে সমর্থ হচ্ছে।সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী শাসনে থাকা ও বিরোধীপ্রবর,যাদের কাজ ছিল দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।তাদের কাছে দেশের চেয়ে ক্ষমতা অনেক বড়।সেজন্য তারা একে অপরের বিরুদ্ধে কখনো কখনো যুদ্ধ ঘোষনা করে এর পরিনতি ভোগ করে দেশের শান্তিকামি মানুষ।
সেজন্য আক্ষেপ করেই বলতে হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ আর স্বাধীন দেশ নয়। দেশ অধিকৃত ইসলামের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু, মানবতার শত্রু এবং চিহ্নিত বিদেশী শত্রুর ভয়ংকর থাবার মুখে।মুসলমানদের তাদের নিজ নিজ কাজে উৎকর্ষ সাধনের জন্য যে প্রজ্গা থাকা দরকার তা আজ নেই।মুসলমানদের প্রকৃত শক্রু কে বা কারা সেটা না চিনতে পারলে তাদের অস্তিত্ব বাঁচানো মুশকিল হবে বৈ কি? সাম্রাজ্যবাদী শত্রুদের হাত থেকে বাঙালী মুসলমানদের প্রকৃত স্বাধীনতা মেলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্টে। সে স্বাধীনতা শুধু ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের হাত থেকেই নয়,নব্য হিন্দুসাম্রাজ্য নির্মাণে দু’পায়ে খাড়া আগ্রাসী হিন্দুদের হাত থেকেও। বাঙালী মুসলমানদের সে স্বাধীনতাকে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী মহল শুরু থেকেই মেনে নেয়নি। কাশ্মীর,হায়দারাবাদ, গোয়া, মানভাদরের ন্যায় মুসলিম বাংলাকেও তারা ১৯৪৭ সালেই ভারত-ভূক্ত করতে চেয়েছিল। তারা তো চেয়েছিল অখন্ড ভারত। বাঙালী মুসলমানদের স্বাধীনতার সে মহান দিনটিকে ভারতীয় সাম্যাজ্যবাদী মহল আজও নিজেদের জন্য পরাজয়ের দিন মনে করে। ভারত মাতার দেহ খন্ডিত হওয়ার বেদনায় ভারতীয় হিন্দুগণ তো এখনও কাতর। তাদের স্বপ্ন তো সে খন্ডিত ভারতকে আবার একত্রিত করা। ভারতীয় বিদেশ নীতি, সামরিক নীতি ও স্বদেশ নীতির সেটি যে মোদ্দা কথা সেটি কি আজও কোন গোপন বিষয়? পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানীদের শোষনের চক্রান্ত না থাকলে বাংলাদেশ বিভক্ত হতো কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভাঙ্গাটি তাদের সে লক্ষ্য পূরণে প্রথম ধাপ মাত্র, শেষ ধাপ নয়।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট এক অনন্য দিন।এজন্যই বাঙালী মুসলিমের স্মৃতি থেকে ভারত ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টকে ভূলিয়ে দিতে চায়। সে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে উভয়ের পক্ষ থেকেও প্রচন্ড ষড়যন্ত্র শুরু হয় ১৯৪৭ সাল থেকেই।শেখ মুজিবুর রহমানের আগরতলা ষড়যন্ত্রের মূল প্রেক্ষাপট তো সে ভারতসেবী এ ইসলাম বিরোধী চেতনা। তাই ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের যারা মহান নেতা ছিলেন এবং ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রতি যাদের প্রবল অঙ্গিকার ছিল তাদের স্মৃতিকে এ ভারতসেবী পক্ষটি নিজেদের রচিত ইতিহাসের বই থেকে বিলুপ্ত করেছে, অথবা ভিলেন রূপে খাড়া করেছে।
ভারতীয় হিন্দুদের প্রতি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের অনুগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বিশাল। অপর দিকে শোষণ ও নির্যাতনের যাঁতাকলে পড়ে মুসলমানগণ। হিন্দুদের খুশি করতেই আসাম ও পূর্ববঙ্গ নিয়ে গঠিত ১৯০৫ সালের ঢাকা কেন্দ্রীক নতুন প্রদেশকে ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার রদ করে দেয়। এটি ছিল স্রেফ কলকাতা কেন্দ্রীক বাঙালী হিন্দুদের কল্যাণে। প্রবল খুশিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কবিতা লেখেন। সে কবিতায় তিনি রাজা পঞ্চম জর্জকে “জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারত-ভাগ্যবিধাতা! জয় হে,জয় হে,জয় হে,জয় জয় জয় জয় হে” বলে বিধাতার আসনে বসান। এই হলো রবীন্দ্রনাথের চেতনার মান। অথচ ভারতের বুকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন ছিল ছিল দস্যুবৃত্তির শাসন। বরং বহুলাংশে সে শাসন ছিল দস্যুবৃত্তির চেয়েও মন্দতর। দস্যুরা সম্পদ লুন্ঠন করে, কিন্তু গৃহস্বামীর হাত কেটে উপার্জনের সামর্থ কেটে নেয় না। অথচ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশগণ সেটি করেছিল। বাঙালী মুসলিম তাঁতশিল্পীদের আঙুলকেটে তারা জগতবিখ্যাত মসলিন শিল্পকে ধ্বংস করেছিল। সেটি ছিল ব্রিটিশ বস্ত্র শিল্পকে বাজারে প্রতিদ্বন্দিহীন করার লক্ষ্যে।এমন জালেম সাম্রাজ্যবাদীদের বিধাতার আসনে বসানোর জন্য চেতনার পচনটি গভীর হওয়াটি জরুরী। কিন্তু গরুবাছুর,শাপশকুন বা পুতুলকে যারা ভগবানের আসনে বসাতে পারে তাদের সে মানসিক পচনটি কম? ব্রিটিশগণ আর যাই হোক গরুবাছুর বা শাপশকুন নয়। চেতনায় সে গভীর পচন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ যেমন ব্রিটিশ রাজাকে বিধাতার আসনে বসিয়েছেন,তেমনি ভারতীয় কংগ্রেস নেতা মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বাহিনীর জন্য সৈন্য সংগ্রহে নেমেছিলেন। সাম্রাজ্য রক্ষার সে যুদ্ধে ব্রিটিশকে বিজয়ী করতে ৭০ হাজারের বেশী ভারতীয় প্রাণও দিয়েছিল।
বঙ্গভঙ্গ রদের পর পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রচন্ড ক্ষোভ। সে ক্ষোভকে প্রশমিত করতে ব্রিটিশ সরকার ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওয়াদা দেয়। কিন্তু ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পাক -কলকাতাকেন্দ্রীক হিন্দু কায়েমীস্বার্থপরগণ সেটিও চায়নি।পূর্ব বাংলার বুকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তারা প্রচন্ড আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা থেমে যায়। উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের বিরুদ্ধে এমন ইতর আন্দোলন মানব ইতিহাসের আর কোথায়ও হয়েছে -সে নজির নেই। অথচ সেটি হয়েছে বাংলার বুকে। আরো বিস্ময়, কলকাতার রাজপথে সে ইতর বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।অথচ সে রবীন্দ্রনাথের গানই আজ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গিত! এ বাংলার মানুষ বিবেকহীন নয়,তারা রবীন্দ্রনাথকে সম্মান দেখিয়েছে। বিবেকহীন এরূপ ব্যক্তিদেরকে সম্মান দিলে সে ভূমিতে কি বিবেকমান মানুষ সৃষ্টি হয়? বরং তাতে যা প্রবল ভাবে প্রতিষ্ঠা পায় তা হলো সত্যকে পরাজিত করা ও সত্যসেবী বিবেকমান মানুষদেব হত্যা করার পেক্ষাপট। এমন এক প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশ আজ ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের চেয়েও ভারতের হিন্দুগণ যে অধিক সাম্রাজ্যবাদী ও অধিক মুসলিম-বিরোধী -সে প্রমাণ শুধু ১৯৪৭য়ের পূর্বেই নয়,আজও তারা লাগাতার পেশ করে চলেছে। ফলে ১৯৪৭য়ের পর বিগত ৬০ বছরে ভারতীয় হিন্দুদের হাতে যত মুসলিম নিহত হয়েছে বা যত মুসলিম নারী ধর্ষিতা হয়েছে বা যত মসজিদ ও মাদ্রাসা ধ্বংস হয়েছে তা ব্রিটিশ শাসনের ১৯০ বছরে হয়নি। ভারতে প্রায় ২০ কোটি মুসলমানের বাস। বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে এত মুসলমান নেই। অথচ ঢাকা, করাচী বা লাহোরের ন্যায় একটি মাত্র শহরে যত মুসলিম ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী,ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ,আলেম, কৃষিবিদ বা হিসাববিজ্ঞানী তা সমগ্র ভারতের মুসলমানদের মাঝে নাই। ভারতীয় মুসলমানদের যে কতটা পরিকল্পিত ভাবে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে সেটি প্রমাণে কি এরপরও কোন দলীলের প্রয়োজন পড়ে? অথচ বাংলাদেশের এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবিদের কাছে ভারতের এ মুসলিম বিরোধী নেতারাই হলো পুজণীয় ব্যক্তিত্ব। এসব বুদ্ধিজীবীগণ তো ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান সৃষ্টিকে মুসলমানদের জন্য অনাসৃষ্টি বলতে আজও উদগ্রীব। প্রশ্ন হলো,এমন গোলামী চেতনা নিয়ে কেউ কি স্বাধীনতা, মানবতা,গণতন্ত্র, ইসলাম ও মুসলমানের বন্ধু হতে পারে?
রবীন্দনাথের মনে কেন জানি বাঙালীর মানব সন্তান রূপে বেড়ে উঠা নিয়ে দারুন সংশয় ছিল। তাই বিধাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি কবিতা লিখেছেন, “হে বিধাতা! সাত কোটি প্রাণিরে রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করোনি।” প্রশ্ন হলো, কবি রবীন্দ্রনাথ নিজেও কি প্রকৃত মানব রূপে বেড়ে উঠতে পেরেছিলেন? সে ব্যর্থতা কি তার নিজেরও কম? সমাজের অতি নিষ্ঠুর চোর-ডাকাতেরাও শিক্ষাবিস্তারের বিরুদ্ধে কখনো মিছিল করে না। কারণ তারাও বুঝে,কারো বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধটি অর্থশূণ্য করা নয়, বরং শিক্ষাশূণ্য করা বা তাকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা। শিক্ষাশূণ্য করার অর্থ তার বিবেক বা আত্মাকে হত্যা করা। তাতে অসম্ভব করা হয় মানুষ রূপে বেড়ে উঠার সামর্থ।চোর-ডাকাতেরা অর্থ কেড়ে নিলেও সে বিবেক হত্যার সে অপরাধে হাত বাড়ায় না। অথচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন সে অপরাধ করলেন? চেতনার মৃত্যু হলে ব্যক্তি যেমন প্রাণহীন পুতুল,ইতর গরুবাছুর ও বিষাক্ত শাপশকুনকে দেবতার আসনে বসায়,তেমনি ধর্ম ও দেশের ভয়ানক শত্রুকেও পুজনীয় ব্যক্তি রূপে মেনে নেয়। ইসলামের শত্রু ও মিথ্যার প্রচারকগণ তো সেটিই চায়। তখন নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় দুর্বৃত্তনগণও ভগবান রূপে স্বীকৃতি পায়। গণতন্ত্রের দাফনকারি,গণহত্যার নায়ক এবং বিদেশের সেবাদাসও তখন জাতীয় নেতার খেতাব পায়। বাংলাদেশের বড় ব্যর্থতা ও কদর্যতা এখানেই। দেশের রাজনীতি, আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বিভাগ এমন বিবেকশূণ্য মানুষে পরিপূর্ণ! ফলে দেশে প্রবল ভাবে বেড়েছে দুর্বৃত্তি ও মিথ্যাচার। ধর্মকর্ম, নীতিনৈতীকতা ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ দিন দিন দ্রুত পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ তো এটিই। ফলে আজ থেকে শত বছর আগে বাঙালী মুসলমানের যে মান ছিল সেটি আজ কল্পনাও করা যায় না। বরং যেটি সহজ হয়েছে সেটি হলো দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে বার বার প্রথম হওয়া। এবং সহজ হয়েছে ভোটডাকাতি, গণতন্ত্র হত্যার মত কাজ।
আওয়ামীলীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই কেন জানি একটি মহা বিপর্যয় ঘটে। বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের মুখ তখন কালিমালিপ্ত হয় এবং দুর্ভোগ বাড়ে জনগণের।সেটি যেমন শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে ঘটেছিল,তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলেও।যে কোন দায়িত্বশীল সরকারের মূল কাজটি তো দেশের মুখ উজ্বল করা ও দেশবাসীর সুখশান্তি বাড়ানো। অথচ আওয়ামীলীগের নেতাদের সে ভাবনা নাই।সরকারে যেই বসুক তাদের ধৈর্য ও ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হয়।ভোটবিহীন সরকার ও বিরোধীদের উপর নির্যাতন চালানোর মানুষিকতা তো কোন কল্যানকর সরকারের কাজ নয়।তাদের রাজনীতির মূল এজেন্ডা দেশের মানুষকে শান্তির বারতা পৌঁছানো । দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা এবং দেশ ও দেশবাসীর ইজ্জত বাঁচানো।ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযুগিতা করেছে ঠিক সে হিসেবে তারা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র।কিন্তু ভারতের মোটিভ সুস্পষ্ট হয়ে যায় একাত্তরেই। ভারতীয় বাহিনীর ডাকাতি শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানের উপর তাদের দখলদারি প্রতিষ্ঠার পরই। তখন ডাকাতির লক্ষ্যবস্তু ছিল পাকিস্তান আর্মির অব্যবহৃত হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ও অবাঙালীদের মালিকাধীন শিল্পকারখানা ও তাদের গৃহের সহায় সম্পদ। সে ডাকাতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর চাকুরি হারিয়েছিলেন এবং বন্দী হয়েছিলেন মেজর আব্দুল জলীল। অথচ বাকশালী নেতারা সেদিন টু’শব্দটি পর্যন্ত করেনি।বরং তাদের মুখে তখন প্রচন্ড ভারত-বন্দনা।সে বন্দনাটি এখনও অব্যাহত। আর যে ভাবনা থেকে জন্ম নেয় এমন ভারত-বন্দনা তাকেই তারা বলে একাত্তরের চেতনা।বাংলাদেশের ভূমি,নদ নদী,সীমান্তু,সম্পদ,নারী-পুরুষ,গরুমহিষের উপর ভারতীয়দের পক্ষ থেকে ডাকাতি হলে এ চেতনাধারিরা প্রতিবাদ করে না।
সেজন্য তাদের ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতার মসনদকে টিকে থাকাটি সুনিশ্চিত করে ভারত।সেটি যেমন ১৯৭০, ১৯৭১ ও ২০০৮ সালে যেমন দেখা গেছে,তেমনি সেটি ২০১৪ সালেও দেখা গেল।বাংলাদেশের বাইরে একমাত্র ভারতই তাদের নির্ভরযোগ্য মিত্র।জোগালদার পালার এ রাজনীতিতে ভারতের বিনিয়োগটি হাজার হাজার কোটি টাকার।আসামের দৈনিক নববার্তা লিখেছে,একমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনেই ভারতের বিনিয়োগটি ছিল ৮০০ কোটি ভারতীয় রুপির।২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রস্তাবিত বিনিয়োগটি ছিল ১০০০ কোটি রুপির।নির্বাচনের বাইরেও তাদের রয়েছে শত শত কোটির টাকার বিনিয়োগ। তবে এ হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগটি যে ভারতীয়দের নিজস্ব ভান্ডার থেকে আসছে তা নয়। ডাকাত সর্দার কখনই নিজের জমিজমা বিক্রি করে ডাকাত পালে না। সে অর্থটি আসে লুন্ঠিত মালামাল থেকে। একই রূপ কইয়ের তেলে কই ভাজার নীতি ভারতীয়দের।আওয়ামি নেতাদের সহযোগিতায় ভারত পেয়েছে ১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজার।এর চেয়ে ক্ষুদ্রতর বাজারের উপর দখল নিতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেশেরা ৫ হাজার মাইল দূর থেকে বহু সাগর ও মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিল। সে বাজার ধরে রাখতে যুদ্ধ করেছিল এবং সেসব যুদ্ধে জানমালের বিনিয়োগও করেছিল।
ভারতীয়দের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতিটি আদৌ স্বাধীন দেশ রূপে নয়।তারা ভাবে,দেশটি তাদের নিজস্ব যুদ্ধের কামাই। ভাবে,তারা যুদ্ধ না করলে একাত্তরে বাংলাদেশের জন্মই হতো না।ফলে তাদের যুক্তি,জন্মসূত্রেই ভারতের কাছে বাংলাদেশ দায়বদ্ধ।এখন উচিত আজীবন ভারতের পদসেবা করে বাঁচা। সন্তান যেমন পিতাকে অস্বীকার করতে পারে না,বাংলাদেশও তেমনি পারে না ভারতকে অস্বীকার করতে।এমন ধারণাটি যে শুধু ভারতীয়দের -তা নয়। আওয়ামী সময়ে আওয়ামী নেতাদের ও বিএনপি সময়ে বিএনপি নেতাদেরও। তাই ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিটের ফি নেয়াকে এরা বেয়াদবি মনে করে। কারণ পিতা থেকে তো আর ভাড়া আদায় করা যায় না।ভারত চায়,বাংলাদেশের রাজনীতির উপর দখলদারিটা এমন পদসেবী জোগালদারদের হাতেই চিরকাল থাকুক।
লাগাতার ডাকাতি করাই ডাকাতদের স্বভাব। একটি বা দুটি ডাকাতি করে তারা ক্ষ্যান্ত দেয় না। নীরবে বসে থাকা তাদের স্বভাবও নয়।কতেক কুচক্রী ও অনৈতিক নেতাদের হাতে বিগত ৫টি বছর ধরে বহু চুরি-ডাকাতি হয়েছে। দেশীয় ব্যাংক ডিঙ্গিয়ে এ ডাকাতেরা বিশ্বব্যাংকের ভান্ডারে হাত দিয়েছিল। আর তাতে পিছিয়ে গেল পদ্মা সেতুর ন্যায় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প।ভোট ডাকাতির পর্ব সম্প্রতি শেষ হলো।এবার শুরু হতে যাচ্ছে ডাকাতির নতুন পর্ব। সেটি আরো ৫ বছরের জন্য। তাই শুধু পদ্মা সেতু নয়,বহু কিছুই পিছিয়ে যাবে।থেকে যাবে সামনে চলা।সরকারে পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে,বিরোধী দলের সাথে আর কোন আলোচনা নয়। এখন ১৮ দলের বিরোধী দলকে আর বিরোধী দল বলতেও রাজী নয়।এখন বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ দলীয় জোটের নেত্রীকে নসিহত করেছেন,আগামী ৫ বছরের জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। ভারত এমন লুন্ঠনে দু’পায়ে খাড়া তবে এটি হতে দিবে না বাংলাদেশের মেহনতি মানুষেরা। যেমনটি বাংলাদেশে ভূমিতে তাদেরকে একাত্তরে দেখা গেছে। তাছাড়া যে দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বের ২ শত রাষ্ট্রকে হারিয়ে ৫বার প্রথম হয় সে দেশটি নিজেও যে এমন ডাকাতদের স্বর্গ ভূমি –তাতেও কি সন্দেহ আছে? এমন ডাকাতদের উপস্থিতি যেমন রাজনীতির ময়দানে,তেমনি প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীতেও।
এসব দুর্বিত্ত ও ডাকাতদের ডাকাতির লক্ষ্যটি স্রেফ গ্রামীন মানুষের অর্থভান্ডার নয়। ডাকাতির টার্গেট শুধু দেশী ব্যাংক,রাজস্ব-ভান্ডার,সরকারি টেন্ডার,সরকারি ভূমি,বিদেশী অনুদানের অর্থও নয়।আধুনিক ডাকাতদের ডাকাতির সবচেয়ে বড় টার্গেটটি হলো জনগণের ভোট।ভোট ডাকাতিতে সফল হলে ডাকাতদের হাতে অধিকৃত হয়ে যায় সমগ্র রাষ্ট্র।তখন রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর ডাকাতি সহজ হয়ে যায়।তখন সরকারি ডাকাত দলের উপর বন্ধ হয়ে যায় পুলিশ বাহিনী ও আদালতের উৎপাত। মঙ্গোলিয়ার ট্রাইবাল ডাকাতগণ চেঙ্গিজ খান ও হালাকু খানের নেতৃত্বে দুর্ধর্ষ ডাকাতদল গড়ে তুলেছিল।দেশের পর দেশ তারা দখল করেছিল।দখল শেষে ব্যাপক লুন্ঠনও করেছিল।সমরখন্দ,বোখারা,বাগদাদ,নেশাপুরের ন্যায় সমৃদ্ধ নগরগুলিকে শুধু তারা লুন্ঠনই করেনি,ধ্বংসও করেছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরাও এদেশে ১৯০ বছর যাবত ডাকাতি করেছে। তাদের ডাকাতি বাংলাদেশে দুইবার দুর্ভিক্ষ ও সে দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ডেকে এনেছে। দুর্ভিক্ষ ডেকে এনেছে শেখ মুজিব আমলের ডাকাতিও।বাংলাদেশের এসব ডাকাতগণও এখন আর গ্রাম্য ডাকাতদল গড়ে না। বরং গড়ে রাজনৈতিক ডাকাত দল।ডাকাতিতে তাদের প্রবল আগ্রহটি যেমন শেখ মুজিব আমলে প্রমাণিত হয়েছে,তেমনি এরশাদ,খালেদা ও শেখ হাসিনার আমলেও। সন্ত্রাস ও লুন্ঠনের বাইরে ডাকাতদলের কাছে অন্যকোন এজেন্ডা থাকে না। নির্বাচনে সকল দল ও সকল জনগণের অংশ্রগহণ বাড়াতে শেখ হাসিনা সরকারের এজন্যই কোন আগ্রহ ছিল না। জনগণ যে ভোটদানে অংশ নিল না -তা নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নেতাদের এ জন্যই কোন আফসোস নাই। বরং প্রচন্ড উল্লাস ভেজাল বিজয় নিয়ে। বরং শেখ হাসিনা ৬/১/১৪ তারিখে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন,“জনগণ যতটুকু ভোট দিয়েছে এতেই আমরা সন্তুষ্ট।” শেখ হাসিনা সরকারেরও এজেন্ডা,যেনতেন ভোটের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে যে কোন রূপে ধরে রাখা। ফলে কদর বেড়েছে যৌথ বাহিনীর। ক্ষমতায় টিকে থাকাকে বৈধ করতে তামাশার এ নির্বাচনকেও তারা বৈধ বলছে।কথা হলো ডাকাতেরাও কি কোন কালেও তাদের ডাকাতিকে অবৈধ বলে? ফেরত দেয় কি ডাকাতির মাল?
বাংলাদেশ আজ যে ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখোমুখি -সেটি হঠাৎ আসেনি। বরং সৃষ্টি করা হয়েছে একটি গ্রান্ড পরিকল্পনার অংশ রূপে। মূল পরিকল্পনাকারি আওয়ামী নেতাদের সাথে যোগ হয়েছে বাম । লক্ষ্য,বাংলাদেশের মেরুদন্ড চূর্ণ করা। লক্ষ্য, দক্ষিণ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে মুসলিম শক্তির উত্থাণকে চিরতরে প্রতিহত করা। একাজে একাত্তরের ন্যায় আওয়মী লীগ এবারও একা নয়। একাত্তরে পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু ১৬টি কোটি বাঙালী মুসলমানের মাঝে জাগরণের সে সুপ্তশক্তি এখনও রয়ে গেছে। এতেই ইসলামের শত্রু শক্তির মাঝে প্রচন্ড দুর্ভাবনা। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে বাঙালী মুসলমানরাই যে সবচেয়ে বৃহৎ জনশক্তি সেটি ইসলামের শত্রুপক্ষ ভূলে যায় কি করে? এ শক্তিই তো ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিকে অনিবার্য করেছিল। বীজ থাকলে তো চারাই গজাবেই। পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলেও ইসলামের বীজ তো রয়ে গেছে। তাই তারা এবার বাংলার বুক থেকে সে বীজ নির্মূলে হাত দিয়েছে। তাদের প্রচন্ড ভয়, সে বীজ থেকে না জানি ভারতের পূর্ব প্রান্তে আরেক পাকিস্তানের জন্ম হয়।তাই গুরুত্ব পেয়েছে তাফসির মহফিল বন্ধ ও ইসলামের কাজকে সংকুচিত করা। তাই সে প্রকল্পের অংশ রূপেই টিভি, পত্র-পত্রিকা, ব্লগ, ফেসবুক যোগে লাগাতর হামলা হচ্ছে আল্লাহতায়ালা, তার রাসূল পাক (সাঃ) ও ইসলামের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ আমলেও ইসলামের বিরুদ্ধে এতবড় ষড়যন্ত্র হয়নি।
নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হলে তার পরিণতি যে কি হয় -সেটি কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতো না? শুধু শেখ হাসিনা নয়, ভারতও সেটি জানতো। কিন্তু তাদের এজেন্ডা তো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশকে একটি মহাবিপর্যয় উপহার দেয়া। গ্রামবাসীর ঘরে আগুন লাগাতে ডাকাতদের মনে দুঃখ জাগে না। ডাকাতদের হত্যায় যে গ্রামবাসী ধেয়ে আসে তাদের ঘরবাড়ির প্রতি ডাকাতদের দরদ থাকার কথা নয়। তাদের ঘরে আগুণ লাগাতে ডাকাতেরা বরং আনন্দিত হয়। শেখ হাসিনার অজানা নয় যে, সমগ্র বাংলাদেশ আজ তার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে উত্তাল। শেখ হাসিনা নিজে দেখেছেন স্বৈরাচারি শাসনের নির্মূল নিয়ে সে সময় দেশবাসীর উল্লাস। এমন কি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক উকিলও শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বলেছিল “ফিরাউনের পতন হয়েছে।” কেউ কেউ এ সূত্র ধরে বলছেন, দেশ ও দেশবাসীর জানমাল, শিল্প, বানিজ্য,অর্থনীতি ও শিক্ষা নিয়ে শেখ হাসিনা দরদ থাকবে এবং ধ্বংসের হাত থেকে সেগুলি বাঁচাতে তার সরকার এগিয়ে আসবে সেটি কি আশা করা যায়? নিজ দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও কি তার ভাবনা আছে? ফলে দেশের বর্তমান সংকটের চেয়েও জটিল সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান বিশ্বের অন্য কোন দেশে সম্ভব হলেও বাংলাদেশে সেটি যে অসম্ভব তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? শেখ হাসিনা চাইলেও ভারত সেটি হতে দিবে না। সেরূপ একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান ভারত একাত্তরেও হতে দেয়নি। ২০১৩ বা ২০১৪ সালেও নয়। কারণ সেটি হলে বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভাঙ্গার কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাতে অপূর্ণ থেকে যাবে ভারতের ইসলাম-বিনাশী এজেন্ডা। বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে ভারত তাই আনন্দে ডুগডুগি বাজাচ্ছে।একাত্তরের পর ভারত ছিনিয়ে নিয়েছিল পাট ও চায়ের বাজার। ছিনিয়ে নিয়েছিল বেরুবাড়ি এবং পদ্মা ও তিস্তার পানি। ছিনিয়ে নিয়েছিল হাজার হাজার কোটি টাকার পাকিস্তানী অস্ত্র। এবার ছিনিয়ে নিবে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্টস ও চিংড়ি মাছের বাজার।ছিনিয়ে নিবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি। পুরাপুরি দখলে নিবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার। সে সাথে ছিনিয়ে নিবে ইসলামের মৌল চেতনাও। ভারত বাংলাদেশকে বানাতে চায় আরেকটি কাশ্মীর। আরেকটি সিকিম। কুমিরের কাজ তো একের পর এক শিকার ধরা। শিকার ধরার সে রাজনীতিই হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি ভারতের বিদেশ নীতি। ভারত ইতিমধ্যেই কাশ্মীর,জুনাগড়,মানভাদর, হায়দারাবাদ,সিকিম পেটে পুরেছে। এখন চায় নতুন শিকার। সে নতুন শিকারটি যে বাংলাদেশ -তা নিয়ে কি আদৌ কোন সন্দেহ আছে?
এমুহৃর্তে জনগণের দায়ভার বিশাল। ইসলামের শত্রুপক্ষ সব সময়ই প্রতিবেশী ভারতে জামাই আদর পাবে সে যেই হোক, যেমনটি একাত্তরে পেয়েছিল। সে আদর শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এখনও পায় আবার কোন নতুন দল আসলেও পাবে হয়ত কম বা বেশী। কিন্তু বাঙালী মুসলমানদের দেশতো মাত্র এক খানই। তাদের পালাবার স্থান নাই। আর শত্রুর হামলার মুখে পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করা বা পালানো তো কবিরা গুনাহ। সে কবিরা গুনাহ তো জাহান্নামে নেয়। বাংলার প্রতিটি মুসলমানের উপর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বড় আমানত হলো এই বঙ্গভূমি। এ ভূমিতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা তো নিয়োগপ্রাপ্ত খলিফা। মুসলমানের ধর্ম তো অর্পিত আমানতের খেয়ানত নয়। সে কাজ তো মুনাফিকের। মুসলমানের দায়িত্ব হলো আল্লাহর ভূমিতে আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণ বিজয় এবং এক শক্তিতে শক্তিমান। কোন দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম অথচ সে দেশে শরিয়ত থাকবে না সেটি কি ভাবা যায়? সাহাবায়ে কেরামদের জীবনে একটি দিনও কি শরিয়তের আইনের প্রতিষ্ঠা ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে? একাজে মুসলমান কি কখনোই আপোষ করে? তবে সে লক্ষ্যপূরণে প্রাথমিক দায়িত্ব হলো,অধিকৃত ভূমির উপর থেকে দুর্বৃত্তদের দখলদারি নির্মূল। মুসলিম ভূমিতে ইসলামের শত্রু পক্ষের বিজয় মেনে নিলে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে থেকে অর্পিত আমানতের খেয়ানত হয়।আর আমানতের খেয়ানত যা অনিবার্য করে তা তো মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুত আযাব। সে খেয়ানতের কারণেই বনী ইসরাইলের উপর প্রচন্ড আযাব এসেছিল। তাই মুসলিম ভূমি যেখানেই ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত,সংগ্রাম করা সেখানে অনিবার্য হয়ে উঠে। এ সংগ্রাম অনবরত করতে হয় লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত। তাই যে অধিকৃত মুসলিম দেশে সংগ্রাম নেই সেদেশের মুসলমানগণ যে ইবাদতে ব্যর্থ হচ্ছে তা নিয়ে কি সন্দেহ থাকে? এমন ব্যর্থতা কি বাংলাদেশের মুসলমানদের কম?
শত্রুশক্তির হাত থেকে দেশরক্ষার দায়িত্বটি প্রতিটি নাগরিকের। এ দায়িত্ব স্রেফ কিছু ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীর নয়।এ দায়িত্ব সবার। বাংলাদেশ আমাদেরকে কি দিয়েছে সেটি বড় কথা নয়।আমরা এদেশকে শত্রুশক্তির হাত থেকে বাঁচাতে ও আল্লাহর শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কাজে কি করেছি সেটিই মূল। মহান আল্লাহর কাছে তা নিয়েই বিচার হবে।ইসলামের শত্রুপক্ষ আজ একতাবদ্ধ। ইসলামের নির্মূলে তাদের এজেন্ডা ও অঙ্গিকার সুস্পষ্ট। তাদের প্রস্তুতিও বিশাল। একতাবদ্ধ হওয়াটি তাদের কাছে রাজনীতির প্রধান কৌশল। কিন্তু মুসলমানের কাছে সেটি ফরজ ইবাদত। এ ফরজ পালিত না হলে কঠিন গুনাহ হয়। তাদের এ লড়াই স্রেফ ক্ষমতা দখলের রাজনীতি নয়, বরং পবিত্র সংগ্রাম।
মুসলিম ভূমি ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে এরূপ অধিকৃত হওয়ার পরও যদি সংগ্রাম ফরজ না হয় তবে সংগ্রাম আর কবে ফরজ হবে? ইসলামে সংগ্রামের হুকুম কি তবে কোরআনের পৃষ্ঠাতে বন্দী থাকবে? আল্লাহর পথে সংগ্রাম মু’মিনের জীবনে দুটি পরিণতি দেয়। এক, বিজয়। দু্ই, শাহাদত। এছাড়া তৃতীয় কোন সম্ভাবনা আছে কি? আর এ দুটি পরিণতির কোনটি মু’মিনের কাছে অপছন্দের হতে পারে? যারা সংগ্রাম বিমুখ তাদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহতায়ালার হুশিয়ারিঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হলো যে যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে ভূতলে ঝুঁকে পড়? তোমরা কি আখিরাতের বদলে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট? আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ তো অকিঞ্চিৎকর।” –(সুরা তাওবা আয়াত ৩৮)। শাহদত দেয় মু’মিনে জীবনে সবচেয়ে বড় বিজয়। দেয় মৃত্যুহীন জীবন। দেয় কবরের আযাব ও রোয হাশরের বিচার থেকে মুক্তি। দেয় সরাসরি জান্নাতলাভ। মুসলমানগণ যখন একতাবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করে তখন সে ময়দানে তারা একাকী থাকে না। তাদের সাথে থাকেন মহাশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর অপরাজেয় ফেরশতা বাহিনী। বিশ্বের কোন শক্তির কি সামর্থ আছে সে শক্তিকে পরাজিত করার? ফলে বিজয় তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। মুসলমানগণ যে আজ দেশে দেশে পরাজিত তার কারণ, সে সংগ্রামে তারা নিজেদের জানমালের বিনিয়োগ বাড়ায়নি। মসজিদে নামাযীদের ভিড় বাড়লেও সংগ্রামের ময়দান ফাঁকা। অথচ নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে ঘরবাড়ি ছেড়ে শত শত মাইল দূরের জিহাদের ময়দানে হাজির হতেন। আর আজ জিহাদের ময়দান ঘরের সামনে এসে হাজির হলেও তাতে লোকসমাগম নাই। অথচ মু’মিনের ঈমানের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি হয় জিহাদের ময়দানে, জায়নামাজে নয়।পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা সে চরম ঘোষণাটি দিয়েছেন এভাবে, “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে তোমরা (এমনিতেই) জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ তোমাদের কে জিহাদ করেছে আর কে ধৈর্য ধরেছে সেটি এখনো প্রকাশ করেননি?” –সুরা আল ইমরান আয়াত ১৪২)। দেশে ইসলামের খেদমতে মানুষ তৈরি করা জরুরি কাজ।প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব তার পরিবারকে ইসলামি আক্কিদায় গড়ে তোলা।বড় সংগ্রামে জিতার আগে ছোট সংগ্রামে অবতীর্ন হতে হয়।যে দেশে ইসলামের মানুষ তৈরি হয় নি সেদেশে ইসলামি হুকুমাত কায়েম করা সু-কঠিন।আসুন সমস্ত সহিংসতা বন্ধ করে প্রকৃত গনতন্ত্র ও মানুষের কল্যানে দলমত নির্বিশেষে কাজ করি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গনতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন হয়েছে এমন কোন প্রমান পৃথিবির ইতিহাসে নাই। এমনকি যখন সারা পৃথিবিই বিভিন্ন রাজার অধিনে ছিল তখনও কোন এক ভাবে মানুষের বলার অধিকার ছিল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন