উত্তপ্ত ও বিপর্যয়শীল সমাজে সন্তানকে কিভাবে কাছে রাখবেন?-----।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৭ জানুয়ারি, ২০১৫, ০২:২৮:৪৬ দুপুর
ক্ষয়িষ্নু সমাজে আমরা পিতা-মাতারা উদ্ভিগ্ন হয়ে পড়ছি।সন্তান যখন ছোট থাকে তখন সন্তান যত যন্ত্রনাই দিক না কেন তা দুশ্চিন্তার কারন হয়ে উঠে না।কিন্তু যখন-ই ওরা বড় হতে থাকে তখন মিশতে থাকে সমাজের আরো ১০/২০টি পরিবারের সন্তানদের সাথে।সব পরিবার যে সন্তানকে পরিকল্পনা মাপিক গড়ে তোলে তা নয়।আমাদের সমাজ বৈচিত্রময় সমাজ।কারো শিক্ষা আছে কারো নেই।কারো সম্পদ আছে কারো নেই।এই বিচিত্রময় পরিবার গুলোর সন্তানরা যখন স্কুল,কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় তখন একে অন্যের সাথে ভাবের আদান প্রদান হতে থাকে।অনেক পিতামাতা প্রতিদিন তাদের সন্তানের কাছ থেকে নতুনত্ব খুঁজে পান যদিও তারা সন্তানটিকে গড়ে তুলেছেন আদব কায়দা দিয়ে।তারা নতুন নতুন বায়না নিয়ে আসে।আজ বন্ধুদের সাথে খাবে দিতে হবে ৫০০ টাকা।কাল তার পছন্দ হয়েছে একটি মোবাইল সেট যার দাম ২০/২৫ হাজার টাকা।অথবা ছুটিতে বেড়াতে যাবে সেখানে দরকার অনকে কিছু--।আজকের সন্তানরা অনেকেই পরিবার নিয়ে ভাবে না।চাওয়ার আগে চিন্তা করে না,জিনিসটি আমার প্রয়োজন আছে কিনা? বা পরিবারের আমারতো আরো ভাই বোন আছে তাদেরও তো খরচ আছে যা বাবা মা'কে যোগান দিতে হয়।অনেকে কষ্ট করে সন্তানকে খুশি রাখতে চান কিন্তু সে সন্তানটি যদি সেটা মনে না রাখে ও ভাল পথ বেচে না নেয় ও ভাল রেজাল্ট না করে তাহলে বাবা মা অশ্বস্তিবোধ করেন ও উদ্ভিগ্ন হন।কিন্তু যদি সন্তানটি তার জীবনের অনেক কিছু গোপন করে,পড়াশুনা না করে,খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে মাদকাসক্ত হয়ে যায় তাহলেতো পরিবারের জন্য বিড়ম্বনা বেড়ে যায়।একটি সন্তানকে মানুষ করার জন্য যেমন দায়িত্ব রয়েছে পরিবারের তেমনি দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বা রাষ্ট্রের।রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।আজকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক সেবনের যে আস্তানা গড়ে উঠেছে তার জন্য দায়ী প্রধানত প্রশাসন।সমাজের উঁচুস্তরের লোকরা বা অনৈতিক ব্যাবসায়িরা কালো টাকার মালিক হচ্ছে এ সমস্ত মাদক দ্রব্য চোরাই পথে যোগান দিয়ে।চোরকে ধরার দায়িত্ব হলো সরকারের আইনশৃংখলা বাহিনীর।সেই রক্ষকরা যদি ভক্ষক হয় তাহলে সমাজের পরিবর্তন আশা করা যায় না।তবে প্রতিটি পরিবার যদি সন্তানদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখতে পারে, সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বের দাবি রেখে ধর্মীয় বিধিনিষেধগুলো তাদের মনে গেঁথে দিতে পারে ও তাদের মনিটর করতে পারে তাহলে বড় বড় ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে।
একটা সময়ের পর সন্তান মা–বাবার থেকে খানিকটা দূরে সরে যায়।এই দূরে সরে যাওয়ার অর্থ কিন্তু পড়ালেখা বা অন্য কোনো কারণে শত মাইল দূরে চলে যাওয়া নয়—একই বাড়িতে থেকেও পরস্পরের মধ্যে তৈরি হতে পারে যোজন যোজন দূরত্ব। সন্তানের নিজের একটা জগৎ তৈরি হয়। নিজের মতো করে বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে চায় সে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কারণে সন্তানেরা সেখানেও সময় কাটাতে পছন্দ করে। অনেক ক্ষেত্রে মা–বাবাও মনে করেন, সন্তান হয়তো দূরে সরে গেছে।এই মানসিক দূরত্ব যাতে তৈরি না হয়, সে জন্য মা-বাবার আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।তাঁদের এটা মেনে নিতেই হবে যে সন্তান একসময় দূরে সরে যাবে।তবু যেন সন্তানের সঙ্গে বন্ধন মজবুত থাকে। তার যেকোনো সমস্যা, দুঃখ, কষ্ট মা–বাবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারে।
একটি শিশু যখন মনঃসামাজিকভাবে বেড়ে উঠতে থাকে, তখন তার মধ্যে জন্ম নেয় স্বকীয়তা। এই স্বকীয়তাবোধ ও আনুষঙ্গিক কিছু কারণে সে মা-বাবার সঙ্গে খানিকটা দূরত্ব রেখে চলে। এই ‘খানিকটা দূরত্ব’ একেবারে স্বাভাবিক, তার বড় হয়ে ওঠার অন্যতম অনুষঙ্গ। কিন্তু কখনো দেখা যায় তার নিজের কোনো সমস্যা বা মা-বাবার আচরণের কারণে দূরত্বটা বেড়েই চলে, তৈরি হয় সম্পর্কের জটিলতা, দূরে চলে যায় আপন সন্তান।খুব ছোটবেলা থেকেই সন্তানের কাছে নিজেদের রাখতে হবে স্বচ্ছ। এমন কোনো বিষয়ে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত নয়, যা সন্তানের কাছ থেকে আড়ালে রাখতে হয়। পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে অসততাকে বাদ দিতে পারলে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। এর বিপরীতে মা-বাবা যদি অনেক কিছু লুকিয়ে রাখেন, তাহলে সন্তানের বেড়ে ওঠা হোঁচট খেতে থাকে। সে বুঝতে পারে, তার মা–বাবা কোনো অন্যায় বা লজ্জা তার কাছ থেকে আড়াল করছে। এতে সন্তানের ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, তৈরি হয় মা-বাবার সঙ্গে মানসিক দূরত্ব।এই দূরত্ব কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সন্তানের বন্ধু হয়ে যাওয়া।
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার উপদেশ প্রায়ই শোনা যায়। এটা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সন্তানের স্বরূপ না জেনে, তাকে বুঝতে না পেরে কেবল বন্ধুত্ব করলেই তাকে কাছে রাখা যায় না, এ নিয়ে একটি উপকথা আছে—‘বানর আর মাছের গল্প’: এক দ্বীপে থাকত একটি বানর, আর দ্বীপের চারপাশের পানিতে বাস করত এক রঙিন মাছ। দুজনের খুব বন্ধুত্ব, দুজন দুজনকে ভালোবাসত, মঙ্গল কামনা করত। মাছ বানরকে পানির তলা থেকে এনে দিত রঙিন পাথর আর বানর মাছকে দিত ডাঙার ফুল ও ফল। একদিন শুরু হলো তুমুল ঝড় আর বৃষ্টি। ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে বানর আশ্রয় নিল গাছের কোটরে আর বৃষ্টি পেয়ে উৎফুল্ল মাছ লাফাতে লাগল পানির বুকে। গাছের কোটর থেকে মাছের এই লম্ফঝম্প দেখে বানর ভাবল, মাছটি বোধহয় ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ডাঙায় আসার চেষ্টা করছে। বানর তখন নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝড়ের ভেতর পানিতে নেমে মাছটিকে ধরে এনে গাছের কোটরে পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দিল। ডাঙায় আনার পর মাছটি লেজ ঝাপটাতে লাগল, বানর তখনো ভাবল মাছটি খুশিতে লেজ ঝাপটাচ্ছে। এভাবে লেজ ঝাপটাতে ঝাপটাতে মাছটি একসময় নিথর হয়ে গেল। নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব, বন্ধুকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রবল চেষ্টা—কোনোটিই মাছ আর বানরকে কাছাকাছি রাখতে পারল না। তাই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা বা সন্তানের ভালো চাওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সন্তানের মনকে জানতে শিখুন, তাকে অনুভব করুন, তাহলেই তাকে পাবেন আপনার কাছে—সব সময়, সব বয়সে।
একদিনে সন্তান আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে—বিষয়টি এমন নয়। তার সঙ্গে নানা রকম গল্প করতে পারেন। তার মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন। তবে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় হলে তার সঙ্গে আলোচনা করুন ও সঠিক রিজনটি বুঝাতে ছেষ্টা করুন। তাকে বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে দিতে হবে তবে ভাল বন্ধুদের সাথে যারা পড়াশুনা ও চিত্রে মাধুর্যে উন্নত। আপনি তাকে বিশ্বাস করেন—বিষয়টি যেন সে বুঝতে পারে। নিজের পছন্দ সব সময় চাপিয়ে না দিয়ে তার পছন্দের বই, ভাল লেখকের গল্প–পড়ার সুযোগ করে দিন।কখনো সে বিমর্ষ হয়ে থাকলে গল্প করুন বা দাবা, লুডু বা ক্যারমের মতো কোনো ঘরোয়া খেলায় সন্তানের সঙ্গে নিজেও অংশ নিন। অনেক দিন ধরে এই চর্চা করলে দেখা যাবে বন্ধু হয়েই গেছেন। সন্তানের মনের কাছে চলে এসেছেন।
অনেক মা–বাবা সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তার ওপর গোপন নজরদারি করতে থাকেন, এতে বয়ঃসন্ধিকালের শিশুরা ব্রিবতবোধ করতে থাকে, বিরক্ত হয়। একপর্যায়ে মা–বাবার সঙ্গে তৈরি হয় দূরত্ব। এই দূরত্বের কারণে সন্তানেরা নির্দোষ বিষয়গুলোও মা–বাবার সঙ্গে শেয়ার করে না—নিজেকে পরিবার থেকে গুটিয়ে রাখে। বন্ধুদের সঙ্গে উচ্ছ্বসিত হলেও মা–বাবার সঙ্গে মোটেও নয়। সন্তানের ওপর গোপন নজরদারি নয়, তাকে না জানিয়ে তার ঘর-আসবাব তল্লাশি করা, তার ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন নাড়াচাড়া করা মোটেই কাম্য নয়। তাতে সন্তানের সঙ্গে তৈরি হতে পারে দূরত্ব। আবার দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে মা–বাবার সম্পর্কের নিবিড়তাও সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে।তবে আচরন গত খারাপ কিছু দেখলে অবশ্যই তাকে সেগুলোর খারাপ দিক জানিয়ে দিতে সুন্দর আছরনের মাধ্যমে।
অনেক সময় সন্তান নিজেই পড়তে পারে কোনো ব্যক্তিগত সমস্যায়—ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন, পড়ালেখার সমস্যা, অসৎসঙ্গ বা মাদকের সমস্যা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে তাকে দোষারোপ না করে পাশে দাঁড়াতে হবে। মা–বাবা যেন একে অপরকে দায়ী করে বিবাদে জড়িয়ে না পড়েন, সেদিকেও নজর দিতে হবে। সন্তানকে তাচ্ছিল্য করা চলবে না, তার ব্যর্থতাকেও গ্রহণ করতে হবে। অপরের সঙ্গে তুলনা করা, অতিরিক্ত শাসন করা, একই আদেশ বারবার দেওয়া থেকে বিরত থাকাও জরুরি।সন্তানের মেধার দিকে লক্ষ্য রেখে তার মেধার উপযোগী কাছের স্কুল কলেজে পড়তে দিতে হবে।অনেকে পরিপার্শিক দিক ও সম্মান বিবেচনা করে সন্তানকেও তাদের মত হওয়ার জন্য যে অসুস্হ প্রতিযোগিতা করে তা কম মেধাবি সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনকে বিপর্যস্ত করে।আপনি আদরের সাথে তাদের বড় বড় মনিষীদের জীবন কর্ম নিয়ে আলোচনা করুন,কিভাবে ভাল রেজাল্ট করা যায় সে টেকনিক গুলো আত্নস্হ করানোর চেষ্টা করুন।হতে পারে আপনার কম মেধাবি সন্তানটিই জীবনের শেষে অন্যদের চেয়ে ভাল করেছে।তাই এই বিপর্যয়শীল মুহুর্তে আমাদের বাব-মাদের উচিত একজন প্রশিক্ষিত ডাক্তারের ভূমিকা পালন করা।আর যদি সনতানটির চরম বিপর্যয় হয়েই যায় ধৈর্যধারন করুন ও আল্লাহর সামনে ছেদায় নত হওন বা প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের মতামত নিন।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত । তাকে সুন্দর আচার ব্যবহার শিক্ষা দেওয়া উচিত ।মনিটর করা উচিত তার একটিভিটি ও মুভমেন্টকে এবং সমস্যায় পড়লে সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন