সুখের ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে------।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৪৬:৫৩ দুপুর

নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে একদিন দেখা হলো এক পার্টিতে একজন সৌখিন মানুষের সাথে।চাকুরিতে ব্যাবস্হাপক,ঘরে বাইরে পরিপাটি।স্বামী স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে ছোট সংসার।এর পর পারিবারিক আসা যাওয়া তবে তিনি অকেশন ছাড়া কম যেতেন।নিজেকে রাশভারি মনে করতেন।সমাজে এ রকম মানুষ অনেক পাওয়া যায়।ধর্মে কর্মে তেমন উৎসাহ না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ রাখতেন।কখনো কেউ তার বাসায় গেলে না খাইয়ে ছাড়তেন না।আজব আজব গল্প করে লোকজনকে মাতিয়ে রাখতেন।কখনো সপ্তাহের শেষে ঘটা করে ৫/৭টি পরিবারকে ডাকতেন ও নৈশভোজ শেষে পুরুষ ও মহিলারা যার যার যায়গায় আড্ডায় মেতে উঠতো।বিশেষ করে বিদেশে পরিবারগুলো সপ্তাহের শেষে সমুদ্রপাড়ে, ভিলাতে বা কারো কারো বাসায় এই আড্ডাটি জমিয়ে আনন্দ করে।এই সব অনুষ্ঠানে আমি কয়েকবার গিয়েছি তবে ভোজ শেষে আর দেরি করতে ভাল লাগেনি।আর দেরি হলে ফজরের নামাজ পড়া কঠিন সে কারনে আমার স্ত্রীকে বলে রাখতাম ভোজ হলে চলে আসবে।এদের ১% ফজরের নামাজ কায়েম করে কিনা সন্দেহ আছে কারন তারা আড্ডা থেকে উঠে আসে ঠিক ফজরের আজান হলে। যে কাজগুলো হয় তাহলো রাজনৈতিক আলোচনা , গীবত ও চোগলখুরির মত আলোচনাই বেশী হয় বলে পরবর্তী সময়ে পছন্দ হলে দাওয়াত গ্রহন করেছি আর না হয় টেকনিকেলি কেটে পড়েছি।কোন দাওয়াত গ্রহন করা হলো সূন্নত।কিন্তু যদি সেখানে গিয়ে আমার মিশনের দায়িত্ব পালন না করতে পারি আমার মনে হয়, না যাওয়াই উত্তম।কারন সূরা আত্ তওবার ১১৯ আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেন তোমরা সত্যবাদি লোকদের সাথে চল।গ্রীস দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন,'আমরা এমন অনেক জিনিস ছাড়াই চলতে পারি।' কথাটির সত্যতা আছে যদি আমরা বাস্তবে অনুসরন করি।আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমি টেলিভিশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।আমার ছেলে মেয়ে তখনো ছোট মাত্র থার্ড বা ফোর্থ ষ্টান্ডার্ডে পড়ে।একটি সিরিয়েল নাটক চলছিল।নাটকের এক পর্যায়ে নায়িকা বোমির ভান করলো আর আমার মেয়ে বললো মা,এর পরের নাটকে নায়িকার বাচ্চা হবে।আমি কিছু না বলে আমার স্ত্রীকে বললাম এখন টিভি বন্ধ কর আমরা খেতে ডাইনিং এ যাব।রাতে আমার স্ত্রীকে বললাম আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঘরে টিভি রাখবো না।ছেলে মেয়েকে মানিয়ে নিলাম শিক্ষনীয় সিডির ভাল প্রোগ্রাম দিয়ে।ঘরে নিউজ পেপার রাখলাম। একটু বড় হলো, ইন্টারনেটে মা'র সাথে থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস ডাউনলোড করে শিক্ষনীয় বিষয় দেয়া হতে থাকলো।আল্লাহর ইচ্ছায় কোন বেগ পেতে হয় নি।খারাপ জিনিসগুলো বর্জন করার জন্য আমার বা আপনার সিদ্ধান্তই যথেষ্ট।

যাই হোক শুরু করেছিলাম ব্যাবস্হাপক মহাশয়কে দিয়ে।বেশ কিছুদিন কেটে গেল।এরই মধ্যে তিনি দাম্মাম ট্রান্সফার হয়ে গেলেন কিন্তু ভাবী ও মেয়েরা আগের যায়গায় থাকলো।দু/তিন মাস পর পরিবার ও চলে গেল।এর পর প্রায়ই টেলিফোনে যোগাযোগ হতো।বছরখানেক গড়ানোর পর একদিন তার এক বন্ধুর কাছে খবর পেলাম তিনি কানাডা চলে যাচ্ছেন কারন এই মুসলিম সমাজটিকে তিনি পছন্দ করতে পারেননি।তাছাড়া মেয়ে দুটির উন্নত ভবিষ্যৎ জীবন থেকে কেড়ে নিচ্ছে।আল্লাহর নেয়ামতকে অবজ্গা যারা করে তাদের জন্য দুনিয়ায় যেমন আযাব রয়েছে তেমনি রয়েছে আখেরাতে।চলে গলেন সুখের ঠিকানা খুঁজতে।মেয়েরা স্কুলে ভর্তি হয়ে গেল।নিজে কিছু করছেন এবং স্ত্রীও বসে নেই কারন সেখানে বসে থাকার কারোরই অবস্হান নেই।স্বামী স্ত্রীর এবার দেখা হয় খুবই কম।একজন কর্মক্ষেত্র থেকে ঘরে ঢুকেন আর একজন বের হয়ে যান।মেয়ে দু'টো এডাল্ট হয়ে গেল এবং দু'জনই দু'জন খৃষ্টানের সাথে চলে গেল।এবার তাদের একাকিত্ব করে ফেললো এ পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া স্বত্বেও।ছয় মাসের মধ্যে ব্যাবস্হাপক সাহেব ষ্ট্রোক করলেন কিন্তু সেরে উঠলেন বটে তবে কাজ করার আর শক্তি ছিলনা।যারাই আল্লাহর নেয়ামতে অস্বীকার করেছে তাদের আল্লাহ বিপর্যস্ত করেছেন হয় দুনিয়ায় না হয় এ পৃথিবীতে।যারা মুসললিম দেশ ছড়ে বিধর্মীদের সাথে বসবাস করতে হিজরত করে তাদের সম্পর্কে আলকুরানে সূরা নিসার ৯৭ আয়াতে সতর্কবানী করা হয়েছে এভাবে,'নি:সন্দেহে ফেরেস্তারা যাদের মৃত্যু আনয়ন করে যারা ছিল নিজেদের প্রতি অন্যায়কারি,তারা(ফেরেস্তারা) বলবে,'তোমরা কি অবস্হায় পড়ে রয়েছিলে?'তারা(মানুষেরা)বলবে,'আমরা দুনিয়াতে দুর্বল ছিলাম'।তারা(ফেরেস্তারা) বলবে,'আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যার ফলে তোমরা তাতে হিযরত করতে পারতে? কাজেই এরা-এদের বাসস্হান জাহান্নাম আর মন্দ সেই আশ্রয়স্হল।' এই আয়াতটি নাজিল হয়েছিল মদিনায় যখন ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম হয়ে গিয়েছিল এবং কিছু সংখ্যক মুসলমান ইহুদিদের মধ্যে তখনো বসবাস করছিল কারন তারা তাদের সম্পদ ছেড়ে আসতে পারছিলনা।তারা ইসলামের চেয়ে বেশী ভালবেসেছিল তাদের অবস্হানকে।এ কথাই সূরা আত্ তওবার ২৪ আয়াতে আল্লাহ পাক মুসলিমদের স্মারন করে দিয়েছিলেন এভাবে,'বলো-যদি তোমাদের পিতারা ও তোমাদের পুত্রেরা,তোমাদের ভাইয়েরা,তোমাদের পরিবারেরা,তোমাদের আত্মীয় স্বজন,মাল আসবাবপত্র তোমরা যা অর্জন করেছ,ব্যাবসা বানিজ্য যার অচলাবস্হা তোমরা আশংকা কর,বাড়ি ঘর যা তোমরা ভালবাস-তোমাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ও তার পথে সংগ্রামের চেয়ে অধিকতর প্রিয় হয় তবে অপেক্ষা কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিয়ে আসেন তাঁর আদেশ।''

এভাবে অসংখ্য মানুষ জীবনে সুখের ঠিকানা ও উন্নত জীবন খুঁজতে গিয়ে আখেরাতের জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে ও করে চলছে।যখনি তাদের কাছে অকল্যান এসে যায় তখন আর তাদের ফেরার পথ থাকে না।একদিন ব্যাবস্হাপক সাহবের খবর নিতে গেলেন একজন শুভাকাংখি আর গিয়ে দেখলেন তিনি শয্যাশায়ী হাসপাতালের বিছানায়।তিনি তাকে দেখে থমকে গেলেন কৃষকায় একজন মানুষ,বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় এক একটি যন্ত্র। জীর্ণশীর্ণ নিথর দেহখানা আগুন্তকের হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেয়। খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তাঁর মুখের অবয়বে তিনি তার বাবার ছবি দেখতে পান। ক্ষণিক আবেগাপ্লুত নত হয়ে থাকেন। ভেতরের সবটুকু শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ঢেলে দিয়ে মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। কানের কাছে গিয়ে বলে, ‘আঙ্কেল, আমি ,আমি-- কিন্তু তিনি নিষ্প্রভ, নিস্তেজ।এরপর বেরিয়ে পড়লেন, বাইরে ঝকঝকে রোদ।তিনি বের হয়ে মিশে যান ঐ শহরের ব্যস্ত মানুষজনের ভিড়ে…কোলাহলে৷

বিষয়: বিবিধ

১২২৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298302
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৬
হতভাগা লিখেছেন : বাংলাদেশের ম্যাক্সিমাম লোকই চায় আমেরিকা , কানাডা , ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেট হতে ।

DV এর সময় তো মনে হত এই দেশে কেউই থাকতে চায় না।
298333
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : এই জন্যই সময় থাকলে সাধু সাবধান না হলে কিন্তু বিপদে পড়বে। লেখা ভালো লাগলো
298340
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯
আকবার১ লিখেছেন : চমৎকার লেখা, আপনার সাথে একমত।
আপনার লেখা থেকে:দু'জনই দু'জন খৃষ্টানের সাথে চলে গেল।এবার তাদের একাকিত্ব করে ফেললো এ পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া স্বত্বেও।ছয় মাসের মধ্যে ব্যাবস্হাপক সাহেব ষ্ট্রোক করলেন।
ইসলামী জ্ঞান না থাকলে এই অবস্থাই ঘটে।
৬০% বাংলাদেশীদের মাঝে ডিভোর্স ঘটে। ৭০%
ছেলে মেয়ে ইসলামের আলো থেকে দুরে সরে যায়। খৃষ্টানের সাথে চলে যায়,কোন এক সময়ে। আমেরিকা এবং কানাডার জীবন খুব কঠিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File