বাংলাদেশে কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ইসলাম বজায় আছে নাকি নাৎসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৫৩:২৪ দুপুর

বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি ক্ষুদ্র দেশ হলেও এটি একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে পরিচিত।অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার সুফল দীর্ঘ ৪৩ বছরেও ঘরে ঘরে পৌঁছে নি।আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মূল চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করা, যেখানে দেশের সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে।বাঙালি জাতি ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা পরিচালনার অধিকার অর্জন করলেও পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা সেই গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের বাঙালি জাতির প্রতি এ অন্যায়ও দুর্নীতি।বাঙালি জাতি গণতন্ত্র হরণের জন্য মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, মুক্তিসংগ্রামের পর এ দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা স্থায়ী রূপ পাবে, যার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশটি উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।কিন্তু না,আমরা সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারিনি আর পারিনি জাতিকে সুশিক্ষিত করতে।যার পরিনতি হলো-আমরা দিন দিন রাজনীতির নামে জংলী হয়ে উঠেছি,ধর্মের নামে অধর্মকে ছড়াচ্ছি।মোটকথা বর্তমান সামাজিক অবস্হান দেখে মনে হচ্ছে দেশ নাৎসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।গত কয়েকদিনের পরিস্হিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।সমাজে এই বৈপরিত্ব মানব কল্যানে নয়।পেশী শক্তির মাধ্যমে একে অন্যকে নি:শেষ করার যে পরিকল্পনা চলছে তাতে যে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়,সবচেয়ে বেশী ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো।গতকাল(২৯/১২/২০১৪) ইত্তেফাকে প্রান্তিক এলাকার একটি কৃষক পরিবারের জমি চাষের একটি দৃশ্য যারা দেখেছে আমি জানি না তাদের অন্তর তাদের কি প্রনোদনা দিয়েছে।আমার দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্র চোখ পানিতে চলচল করছিল।তিনজন কৃষক,দু'জন হালের বলদের মত জোয়াল টানছে আর একজন মই ধরেছে।শীতের সকালে যখন আমরা স্যুট পরে অফিসে কাজ করছি বা কেউ চাদর জড়িয়ে রোদ পোহাচ্ছে বা কেই কম্বল মুড়ি দিয়ে নিদ্রায় আচ্ছন্ন, সে সময়ে এ তিনজন তাদের নিত্যদিনের কর্ম করে যাচ্ছে।এরা খাদ্যের যোগান দিয়ে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ন করেছে আর টাক মাথাওয়ালারা মিডিয়ায় বসে মানুষকে উন্নয়নের জোয়ারের উপাখ্যান শুনাচ্ছে।আমি যদি আপনাদের প্রশ্ন করি এদের মধ্যে কে বড়? আপনারা নির্ধিধায় বলবেন আমাদের এই কৃষক সমপ্রদায়।কিন্তু তাদের যে হালের বলদটিও নেই সে খবর রেখেছে স্হানীয় প্রশাসন?যাই হোক এই একটি উদাহরন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলার আনাছে কানাছে।কেউ তাদের খবর রাখে না কিন্তু তারা দেশকে দিয়ে যাচ্ছে।

ইসলাম শান্তি-সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম। কোনরূপ সহিংসতা, বিবাদ-বিসংবাদের স্থান ইসলামে নেই। ন্যূনতম শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন আচরণকেও ইসলাম প্রশ্রয় দেয় না। পবিত্র কোরআন মজীদে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন ‘ফিৎনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ (সুরা বাকারা- আয়াত-১৯১)। ‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর তাতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না।’ (সূরা আ’রাফ- আয়াত-৫৬)। অমুসলিমদের প্রতিও কোন অন্যায় আচরণ ইসলাম অনুমোদন করে না। শান্তি-সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় ইসলামের রয়েছে শ্বাশত আদর্শ ও সুমহান ঐতিহ্য। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতিটি আচরণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল ও প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক অমুসলিম বৃদ্ধার ঘটনা ইতিহাসে আমরা জেনেছি। সে বৃদ্ধা প্রতিদিন মহানবী (স.)-এর চলার পথে কাঁটা দিত। একদিন রাসূল (স.) দেখলেন, পথে কাঁটা নেই, তখন তিনি ভাবলেন, হয়ত ওই বৃদ্ধা অসুস্থ হয়েছে বা কোন বিপদে আছে, তার খোঁজ নেয়া দরকার। এরপর দয়ার নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ওই বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে দেখেন ঠিকই সে অসুস্থ। তিনি বৃদ্ধাকে বললেন, আমি আপনাকে দেখতে এসেছি। এতে বৃদ্ধা অভিভূত হয়ে গেল যে, আমি যাকে কষ্ট দেয়ার জন্য পথে কাঁটা পুতে রাখতাম, সে-ই আজ আমার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। ইনিই তো সত্যিকার অর্থে শান্তি ও মানবতার অগ্রদূত। রাসূলে কারীম (স.)-এর ঘরে একবার এক ইহুদী মেহমান হয়ে আসল। রাসূল (স.) তাকে যথাযথ মেহমানদারী করলেন এবং রাতে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিলেন। পরে সে ইহুদী মেহমান অসুস্থতাবশত বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ করে। তাই রাসূল (স.) তাকে কিছু বলবেন এই ভয়ে সে প্রভাতের আগেই ঘর থেকে পালিয়ে গেল। ভোরে ওই ময়লাযুক্ত বিছানা দেখে রাসূল (স.) এই মর্মে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন যে, হায়! আমি ওই ব্যক্তিকে যথাযথ মেহমানদারী করতে পারিনি; এতে সে কষ্ট পেয়েছে। অতঃপর মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) নিজ হাতে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বিছানাটি পরিষ্কার করলেন এবং সেই ব্যক্তির কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলেন, ভাই আমি আপনাকে যথাযথ মেহমানদারী করতে পারিনি। এজন্য আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন ইহুদি লোকটি বলল, অপরাধ করলাম আমি আর ক্ষমা চাচ্ছেন আপনি। ইসলামের আদর্শ তো সত্যিই মহৎ! অতঃপর রাসূল (স.)-এর এমন উদারতা ও আদর্শে মুগ্ধ হয়ে সে ইসলাম গ্রহণ করে। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর এই উদার ঐতিহাসিক চরিত্রকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে, “তোমার ধর্মে অবিশ্বাসীরে তুমি ঘৃণা নাহি করে/আপনি তাদের করিয়াছ সেবা ঠাঁই দিয়ে নিজ ঘরে।” এরূপ উৎকৃষ্টতম আদর্শের মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার ও জাগরণ ঘটেছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মক্কা থেকে মদীনা হিজরত করার পর যে ‘মদীনা সনদ’ প্রণয়ন করেন তা বিশ্ব ইতিহাসের সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান এবং শান্তি-সম্প্রীতির ঐতিহাসিক দলিল। এই সনদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা প্রদান সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ধারা সন্নিবেশিত রয়েছে। যেমন- “সনদে স্বাক্ষরকারী সকল গোত্র-সম্প্রদায় ‘মদীনা রাষ্ট্রে’ সমান অধিকার ভোগ করবে, সকল ধর্মসম্প্রদায়ের স্ব-স্ব ধর্ম-কর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার যথারীতি বহাল থাকবে; কেউ কারও ওপর কোনরূপ আক্রমণ করবে না, সন্ধিভুক্ত কোন সম্প্রদায় বহিঃশত্রুকর্তৃক আক্রান্ত হলে উক্ত আক্রান্ত সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে সহযোগিতা করতে হবে এবং শত্রুদের প্রতিহত করতে হবে, কোন নাগরিক কোন অপরাধ করলে তা তার ব্যক্তিগত অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।”এভাবে ঐতিহাসিক মদীনা সনদের মাধ্যমে শান্তির বার্তাবাহক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের মাঝে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, সাম্য-মৈত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন রচনা করে আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্রের অদ্বিতীয় নজির স্থাপন করেন। মুসলিম ও কুরাইশদের মাঝে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধির বেশক’টি ধারা ছিল মুসলিম স্বার্থবিরোধী। এতদসত্ত্বেও সুদূরপ্রসারী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তা মেনে নেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের প্রতিনিধি সুহাইল ইবনে আমর হুদায়বিয়ার সন্ধিতে হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর নামের সাথে ‘রাসূলুল্লাহ’ লেখা যাবে না মর্মে আপত্তি জানিয়ে বলল, আমি যদি সাক্ষ্য দিতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, তাহলে তো আর আপনার সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ হতো না, আপনাকে বায়তুল্লাহ যেতে বাধা দিতাম না। তখন রাসূল (স.) সন্ধির লেখক হযরত আলী (রা.)কে বললেন ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি কেটে দিয়ে ওর ইচ্ছানুযায়ী শুধু আমার নাম লিখ। এতে হযরত আলী (রা.) অপারগতা প্রকাশ করায়, রাসূল (সা.) নিজ হাতেই তা কেটে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উদারতার অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত পেশ করেন। ইসলামের ইতিহাসে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায়, মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী (স.) বিজয়ীবেশে মক্কায় প্রবেশ করলে কুরাইশদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মহানবী (স.) বিজিত শত্রুদের প্রতি কোন ধরনের দুর্ব্যবহার করেননি এবং কিঞ্চিৎ পরিমাণ প্রতিশোধস্পৃহাও প্রকাশ করেননি, বরং দুশমনদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। তিনি কুরাইশদের বলেছেন, ‘হে কুরাইশগণ! আমি তোমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করবো বলে তোমরা মনে করো? তারা বললো, ‘আপনি আমাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করবেন বলে আমাদের ধারণা। আপনি দয়ালু ভাই। দয়ালু ভাইয়ের পুত্র। অতঃপর রাসূল (স.) বললেন, আমি তোমাদের সাথে সেই কথাই বলছি, যে কথা হযরত ইউসুফ (আ.) তাঁর ভাইদের উদ্দেশে বলেছিলেন- ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। যাও তোমরা সকলেই মুক্ত।’ হযরত আনাছ (রা.) বর্ণনা করেন, “আমরা একদিন মসজিদে নববীতে রাসূলে কারীম (স.)-এর সামনে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন বেদুঈন এসে মসজিদের ভিতরে পেশাব করতে লাগল। এতে উপস্থিত সাহাবীগণ তাকে ধমক দিলে রাসূল (সা.) বললেন, তাকে পেশাব করা থেকে বাধা প্রদান করো না। তাকে সুযোগ দাও; যাতে সে পেশাবের প্রয়োজন সেরে নিতে পারে, কারণ মধ্যখানে বন্ধ করলে ক্ষতি হবে। সে বেদুঈনের পেশাব করা শেষ হলে নবী কারীম (স.) তাকে ডেকে বললেন যে, এটা পেশাবের স্থান নয়; বরং এটা আমাদের ইবাদতখানা, পবিত্রস্থান। এ বলে তিনি তাকে বিদায় করে দিলেন এবং এক সাহাবীকে পানি নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর মহানবী (স.) নিজেই সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে মসজিদ থেকে উক্ত পেশাব ধুয়ে দিলেন।” (বুখারী ও মুসলিম)। প্রতিশোধের পরিবর্তে শত্রুদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ক্ষমা ও মহানুভবতার এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত শান্তি- সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের চিরন্তন আদর্শের জানান দেয়। পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের যে বিধান ইসলামে রয়েছে তাও সম্প্রীতির বন্ধন সুসংহতকরণের উজ্জ্বল প্রয়াস। ‘সালাম’ অর্থ শান্তি। সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে মূলত একে অপরের শান্তিই কামনা করেন। এতে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচিত হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলাম এতই সোচ্চার যে, রাসূল (সা.) নিজেদের জানমালের পাশাপাশি সংখ্যালঘু অমুসলিম সম্প্রদায়ের জানমাল রক্ষায় সচেষ্ট থাকার জন্যও মুসলমানদের প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়; অন্য ধর্মাবলম্বী ও তাদের উপাসনালয়ের ওপর আঘাত-সহিংসতাও ইসলামে জায়েজ নেই। সহিংসতা তো দূরের কথা অন্য ধর্মকে কটূক্তিও না করার জন্য কুরআন মজীদে আল্লাহপাক নির্দেশ দিয়েছেন।আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, “তোমরা তাদের মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে।” (সুরা আনআম- আয়াত ১০৮)।

উপরোক্ত আলোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি, শান্তি, সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান ও সদ্ব্যবহার ইসলামের অনুপম শিক্ষা। শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম সংঘাত, সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িকতাকে চরমভাবে ঘৃণা করে। রাসূল (সা.)-এর অনুসারি হিসেবে কুরআন ও সূন্নাহের উলামারা নিরবচ্ছিন্নভাবে শান্তি-সম্প্রীতি ও মানবতার সুমহান শিক্ষা দান করে চলেছেন। আমাদের সবার উচিত শান্তি -সম্প্রীতি সুরক্ষায় ইসলামের মহান শিক্ষা ও আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া ও সাম্য-মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করা। কিন্তু আমরা রাজনীতির নামে সমাজ পরিবর্তনের যে প্রভাব লক্ষ্য করছি তার মধ্যে কি মুসলমানিত্য আছে? অতীতে যে সরকারগুলো ক্ষমতায় ছিল বা যারা বিরোধীদলে ছিল কম বেশী তারা ক্ষমতা দখলের একই কার্যক্রম চালু করেই ক্ষমতায় এসেছে।গত কয়েকদিন পূর্বে বকশীবাজারে শোডাউন করতে গিয়ে বিএনপি ছাত্রলীগের কর্মীদের কাছে মার খেয়েছে।টেলিভিশনে টকশোতে একজন বিশিষ্ট আলোচক বললেন যে, গাজীপুরে বিএনপি আত্মসমর্পণ করেছে। দৈনিক ‘প্রথম আলো’ প্রথম পৃষ্ঠায় লিখেছে, গাজীপুরে বিএনপি পিছু হটেছে। দৈনিক ইনকিলাব লিখেছে, ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’। যদি স্বীকার করতে হয় যে, গাজীপুরে বিএনপি তথা ২০ দল হেরেছে তাহলে এ কথাও সাথে সাথে স্বীকার করতে হবে যে, এই পরাজয়ে গণতন্ত্র মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। কথাটি এই জন্যই বলছি যে, গাজীপুরের জনসভাকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা যা বলেছেন তার ফলে গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজে উঠেছে। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান যখন ৬ দফা দেন তখন ৬ দফা আন্দোলন দমন করার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খাঁন যে ভাষায় কথা বলেন সেটিকে শেখ মুজিব ‘অস্ত্রের ভাষা’ বলেন, যদিও আইয়ুব খাঁনের বক্তৃতা বা বিবৃতিতে কোন অস্ত্রের নাম ছিল না। অনুরূপভাবে এখনকার মন্ত্রীরা বেগম জিয়া এবং বিএনপি সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলছেন সে ভাষাকে ১৯৬৬ সালের মাপকাঠিতে অস্ত্রের ভাষা বলে উল্লেখ করা যায়। একই সাথে এ কথাও বলা যায় যে, গণতন্ত্রকে শাসক দল মরণ দশায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে কয়েক মন্ত্রীর বক্তব্য নিচে তুলে ধরা যায়।

গত ২৭ ডিসেম্বর জয়দেবপুরের রাজপথ ও মাঠ দখল করার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির আগে দেশে কোনও জাতীয় নির্বাচন হবে না। সংবিধান অনুযায়ী সময় মতো দেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ছাড়া কাউকে রাজপথে নামতে দেয়া হবে না। মন্ত্রী বলেন, ভেবেছিলাম গাজীপুর রণক্ষেত্র হবে। খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরে একটি কুত্তাকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি, আর বিএনপির নেতাকর্মী তো দূরের কথা। তিনি বলেন, গয়েশ্বর নামের একটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আর দু’একটাকে গ্রেফতার করা হলে বিএনপির অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে সাংবাদিক ভাইদের করজোড়ে অনুরোধ করছি, এদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। দেখবেন রাজনীতিতে এদের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তারেক বেয়াদব আর তার মা বড় বেয়াদব। মহা-বেয়াদব মায়ের সন্তান তো বেয়াদবই হবে। এরা রাজনীতিকে কলুষিত করছে। এদের সরিয়ে রাজনীতি কলুষমুক্ত করতে হবে। কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির এখন মূল অক্সিজেন হলো সাংবাদিক। তাদের মাঠে খুঁজে পাওয়া যায় না। একজন কাঁথা-বালিশ নিয়ে পার্টি অফিসে বসে থাকেন আর সকাল-বিকাল দুবার ব্রিফিং করেন। এটাই তাদের আন্দোলন। তিনি বলেন, এবার আর বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না। এটা আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রাজপথে থাকবো।রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বীরউত্তম খাজা নিজামউদ্দিন মিলনায়তনে স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতারের পর দলটির নেতাকর্মীরা এখন গর্তে ঢুকবেন। অনেককেই আর পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বিএনপি ২০১৩ সালের মতো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তিনি ছাত্রলীগের প্রতি বলেন, ‘যেভাবে মাঠে নেমেছ; সে অবস্থান আরও জোরদার করো, যাতে ওরা মাঠে নামতে না পারে।’ বকশীবাজারে বুধবার বিএনপির ওপর হামলা ও গাজীপুরে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়ার ঘোষণার জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, গয়েশ্বরকে গ্রেফতার করায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখন ডিপ ফ্রিজে ঢুকে গেছে। আরেকটা ধরলে বাকিরা আরো গভীর কোনো ফ্রিজে ঢুকে যাবে। বিএনপিকে আর মাঠে নামতে দেয়া হবে না। কামরুল বলেন, বিএনপি অযথা হরতাল ডেকেছে, যে হরতালে একটি কুকুরও পিকেটিংয়ে নামেনি। রাজনীতি বা আন্দোলন করার মতো শক্তি বিএনপির নেই। বিএনপি শুধু একটি কাগুজে সংগঠনে পরিণত হবে।

সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হলো গোপালগঞ্জ। আর বিএনপির ঘাঁটি হলো বগুড়া। অন্তত জনগণ সেটাই জানে। ২০১৩ সালের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বগুড়ায় বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী, যে হরতালেরই ডাক দিক না কেন, সেই হরতাল সর্বাত্মক সফল হয়েছে। বলা যায়, ওই সব হরতালে কাক-পক্ষীও গাছের পাতা থেকে নড়েনি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের উস্কানির যোগ্য প্রত্যুত্তর দিয়েছে তারা। আওয়ামী ঘরানার একজন নেতার ওপরও সেদিন কোন হামলা হয়নি। বিএনপি-জামায়াত তথা ২০দলীয় জোট গত বছরে যেদিন যেদিন হরতাল ডেকেছে সেদিন জনরোষের ভয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অনেক নেতাকর্মী পালিয়ে থেকেছেন। সেই বগুড়াতেও আজ বিএনপির একি দশা। ২৮.১২.২০১৪ এর খবরের কাগজে প্রকাশ বগুড়া চেম্বার অব কমার্স ভবনে ককটেল হামলার অভিযোগে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (টিএসআই) মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া শনিবার দুপুরে বগুড়া সদর থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারকে প্রধান আসামি করে ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ২০ জনকে। উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেলে বিএনপির মিছিল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের পোস্টার ও ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার পর রাত ৯টার দিকে চেম্বার ভবন লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন নেতাকর্মীদের নিয়ে চেম্বার ভবনে অবস্থান করছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আবার এর বিপরীত বিশ্লেষণও রয়েছে। ৩ ও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুমতি চেয়ে আবেদনও করা হয়। সমাবেশ করতে দেয়া না হলে ৭২ ঘণ্টার হরতাল দেয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক কর্মসূচিরও চিন্তাভাবনা রয়েছে। এমন পরিকল্পনা সামনে রেখে আগেভাগে শক্তি ক্ষয় করতে চাননি তারা। গাজীপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সেখানে যেতে অনড় থাকলে সরকার নেতাকর্মীদের ওপর বড় ধরনের ক্র্যাক ডাউন করতে পারে। কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করারও আশঙ্কা ছিল। এতে সামনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এসব চিন্তাভাবনা থেকেই শেষ মুহূর্তে গাজীপুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে তারা।

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গাজীপুরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েও পিছু হটায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ। তাদের মতে, সমাবেশ থেকে পিছু না হটে ঢাকা থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া উচিত ছিল। প্রয়োজনে উত্তরা পর্যন্ত যাওয়ার পর পুলিশ বাধা দিলে সেখান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা যেত। তাতে সরকারও চাপে থাকত। নেতাকর্মীদের মাঝেও উদ্দীপনা তৈরি হতো। বিএনপির সহ-সাংগাঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ঘরে বসে হরতাল ঘোষণা করে ঘরে বসে থেকে লাভ কি। হরতাল দিয়ে ঢাকায় তো কেউ নামবে না। ঢাকায় না নামলে সারা দেশে হরতাল পালন করে লাভ কি। মঞ্জু বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। তাতে নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পাবে। দৈনিক ‘ইনকিলাব’ সঠিক শিরোনাম দিয়েছে। শিরোনামটি হলো, ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’ কিংবা ‘যতো গর্জে ততো বর্ষে না’। বাংলায় এ ধরনের প্রবাদগুলোই আবার সত্য হলো বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচির বেলায়। গাজীপুরের জনসভাকে কেন্দ্র করে দেশে এবং বিদেশে যখন নানা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল তখন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা আবারো নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের চরম হতাশায় ডুবিয়ে দিল। আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম বলেছেন, শুনেছি গয়েশ্বরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবার দেখবেন বিএনপির সব নেতাই গর্তে ঢুকে যাবে। মাত্র ১২ ঘণ্টা আগে সেই কামরুল ইসলামের ভবিষ্যদ্বাণীই সত্য হলো। গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে যে কোনো মূল্যে জনসভা করার ঘোষণা ছিল বিএনপির। আর যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার পাল্টা ঘোষণা ছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের। এ নিয়ে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এই ঘোষণার ৬ ঘণ্টা পরেই বিএনপির মুখপাত্র হুংকার দিয়েছিলেন, সভা হবেই। কিন্তু তা থেকে ইউটার্ন নিল দলটি। যদিও তাদের দলের অন্য নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, সর্বশক্তি নিয়োগ করে হলেও গাজীপুরে জনসভা হবে। গাজীপুরের বাসিন্দারাও অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল। শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে দুদিন আগেই ছুটি নিয়েছিল। প্রস্তুতির কমতি ছিল না ব্যবসায়ীদেরও। দূরপাল্লার যাত্রীরা তাদের টিকিট বাতিল করেছিল। খবর সরাসরি সম্প্রচার করবে তাই টিভি মিডিয়াতেও ছিল জোর প্রস্তুতি। কিন্তু সব আশায় গুড়েবালি পড়লো গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় থেকে আসা একটি ঘোষণাতেই। গাজীপুরে জনসভা হচ্ছে না, প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।

একজন বুদ্ধিজীবী লিখেছেন, বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদের দিক দিয়ে আগের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এরা এখন সম্পূর্ণ বেপরোয়া। যেভাবে এরা নির্বাচিত হয়েছে তার সঙ্গে যে এদের বর্তমান বেপরোয়া ফ্যাসিবাদী চরিত্র ওতপ্রোত ভাবে সম্পর্কিত। বদরুদ্দিন ওমর লিখেছেন, অবস্থা দেখে মনে হয়, এরা জনগণের কোনো তোয়াক্কা আর করে না। কারণ জনগণের ভোট ছাড়াই এরা যেভাবে সাংবিধানিক সরকার গঠন করেছে এ পদ্ধতিতে এরা অন্তত ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবে, এটা এরা ধরেই নিয়েছে! এছাড়া এদের শক্তির একটা ভিত্তি হয়েছে ভারতের পুরোদস্তুর সমর্থন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করলেও পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের অবনতি ঘটায় বাংলাদেশের বৈদেশিক পৃষ্ঠপোষক শক্তি হিসেবে ভারতের আধিপত্যই এখানে প্রধান। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে এখন ভারতের একটি মক্কেল রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করাটাও কোনো ভুল নয়। শুধু তাই নয়, এই মক্কেলগিরির জোরেই আওয়ামী লীগ সরকার এখন ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসেবে বেপরোয়া। জনগণকে এদের আর প্রয়োজন নেই! বদরুদ্দিন ওমর আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট দমন কান্ডের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো, ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির ঘোষিত সমাবেশ বন্ধ করা। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সরকার খুব পরিচিত কৌশলেই বিএনপির এই কর্মসূচি পন্ড করেছে। তারা নিজেদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের নামিয়েছে বিএনপির সভা বন্ধ করার জন্য।ছাত্রলীগের এই কর্মীরা বড় আকারের মিছিল এবং মোটরসাইকেলের মিছিল করে পুলিশের নাকের ডগায় থেকে বিএনপির সমাবেশ বন্ধের জন্য শক্তি প্রদর্শন করেছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় অশান্তি রোধ করার নামে ১৪৪ ধারা জারি করে বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করেছে। এ এক খুব পরিচিত কৌশল। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের জায়গায় সরকারি দলের লোক দিয়ে পাল্টা সমাবেশের ব্যবস্থা করে এলাকায় শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কার কথা বলে বিরোধীদের কর্মসূচি বানচাল করা এবং গাজীপুরে তাই হয়েছে।এই বিরাজমান অবস্হার দায় দায়িত্ব কে বহন করবে? গনতান্ত্রিক নিয়ম বা পদ্ধতিতে থাকবে একে অন্যের সাথে সমপ্রীতি।দেশ গড়ার কাজে একে অন্যের পরিপূরক।সবাই যদি দেশকে দিতে চায় তাহলে দন্দ কেন? দন্দের কারন হলো একে অন্যকে সহ্য করতে না পারা।এই প্রতিহিংসা জন্ম নেয় স্বার্থপরতা,লোভে ও সম্পদ লুন্ঠন করার কারনে।সুতরাং ইতিহাস দেখে আমাদের এটুকুই বলতে ইচ্ছে হয় যে,যারা শাসন ক্ষমতা চায় তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ইসলাম বজায় রাখতে চায় না বরং নাৎসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের উত্থানের মাধ্যমে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায়।কিন্তু এদেশের মানুষ কস্মিনকালেও তা হতে দিবে না।

বিষয়: বিবিধ

১৭১৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298148
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : তুরস্কের সেকুলার করনের প্রক্রিয়ার সাথে তুলনা করলে, বাংলাদেশ নিয়ে ভীত হতে হয়।

বুড়ির কাঁটা ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি আসসাল্লাম এর ঘটনা একটি জাল হাদীস।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File