আপনি সৎ কিনা আপনাকে প্রশ্ন করুন।কেন মসজিদের ঈমামের রেফারেন্স দিচ্ছেন?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৩২:৪৩ দুপুর
ইংরেজীতে একটি কথা আছে,' when money is lost nothing is lost,when health is lost something is lost but when character is lost everything is lost.'
আমাদের সমাজ ব্যাবস্হায় এমন সব কান্ড ঘটছে যার ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা যাবে না।ভাল মন্দ মিলিয়ে আমাদের সমাজ।মানুষ মাত্র ভুল করে এবং আমাদের কাজে কর্মে ভুল হয়ে যেতে পারে।ভুল হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি আবার মানুষের ক্ষতি করলেও মানুষের কাছেই ক্ষমা প্রার্থী হতে হয় তা নাহলে আল্লাহ পাক ক্ষমা করবেন না। কারন তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক এবং তাঁর ওয়াদা সত্য।একটি মানুষ জন্ম গ্রহন করে,পরিবারে লালিত পালিত হয়।দেশে বা বিদেশে তার শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হয়।এমনই একটি ঘটনা যা ঘটেছিল।ছেলে অনেক দিন ইউরোপে ছিল সেখানে শিক্ষা গ্রহন করেছে।বিয়ের জন্য কনে দেখা শুরু হলো।ইসলামিক পরিবার বলে খ্যাত একটি পরিবার।অনেক পরিবার থেকে থেকে তাদের জীবন বৃত্তান্তের ফিরিস্তি আসলো।কয়েকটি পরিবার পছন্দ হলো তবে কিছু পরিবার আবার ছেলের জীবনবৃত্তান্ত দেখে পিছু হটে গেল।একটি মেয়ে যে পরিবারের একজন সদস্য একসময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।ছেলের পক্ষ সেখানে ছেলেকে বিয়ে দিতে আগ্রহী হলো।কথোপকোথনের এক পর্যায়ে ছেলের বাবা নিজের ও ছেলের সততার পরিচয় দিতে গিয়ে দেশে ও বিদেশে নামকরা দু'জন মসজিদের ঈমামের কথা বললেন যে,তাদের কাছে আমাদের পরিচয় জানতে পারবেন।এখানেই সমস্যাটা বাঁধলো।মেয়ের পক্ষ বললো আমরা মেয়ে বিয়ে দিব।ছেলের বাড়ি ঘর দেখবো,এলাকায় গন্য মান্যদের সাথে কথা বলবো।যেখানে যেখানে পড়েছে সে প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রয়োজন মত খবর নিব ও এগুলো আমাদের নিজস্ব ব্যাপার।কিন্তু মসজিদের ঈমামের কাছে যাব কেন? যারা কোন আত্মীয় নয়,যারা ছেলের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নয়।কয়েকদিন পর ঘটকের মাধ্যমে খবর পাঠিয়ে দিল আমরা এখানে সম্বন্ধ করবো না।আমাদের সমাজ একটি মুসলিম সমাজ।আমরা ইসলামকে ভালবাসি এবং এটি আমাদের মুসলমানদের অহংকার।আমরা নিজেরা সৎ কিনা আমাদের প্রশ্ন করা উচিত।আমরা যদি সৎ হই,আমাদের কাজের মাধ্যমে সমাজে ফুটে উঠবে আমাদের পরিচয়, তবে আমাদের সৎ মানুষদের সাথে চলতে হবে।আমাকে ভাল হতে হলে অমুক সংগঠনে যেতে হবে তা বাধ্যতামুলক নয়।তবে এমন সংঘ যাতে কোন কপটতা নেই,শির্ক ও বিদাআত নেই,ইসলাম সমপর্কে জানার ও বুঝার ব্যাপার রয়েছে সেখানে শিখার জন্য যাওয়া যায়।যেমন সৌদি আরবে ইসলামের খেদমত করার জন্য অনেক ইসলামি গাইড সেন্টার রয়েছে যারা মানুষকে শরিয়তের বিধি বিধান দিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করে।আপনি বা আমি নিজেকে প্রশ্ন করলেই বুঝতে পারি আমরা সৎ কিনা? আমাদের দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে ফুটে উঠে আমরা কতটা সৎ।আমার পরিবার আমার কাজ ও আচরন দেখছে,আমার কর্মক্ষেত্রে আমাকে আট ঘন্টা হাজারো লোকজন দেখছে আমি কিভাবে কাজ করছি।এরাই আমার সাক্ষি।কোন এলাকায় কোন মানুষ যখন ৫০ বছর বাস করে সে এলাকার লোকজন নিশ্চই জানে ঐ মানুষ বা পরিবারটি কেমন? দু'চারজন হয়ত কোন কারনে শক্রুতা থাকলে খারাপ বলবে কিন্তু ভাল মানুষদের অধিকাংশ মানুষই ভাল বলবে।আসলে সততা সম্পর্কে আমাদের জ্গানের কমতি বিধায় আমরা অন্যের সার্টিফিকেটের আশা করি।আসুন জেনে নেই ইসলামে সততা জিনিসটি কি?
রাসূল সা: বলেছেন,' যখন তোমরা চরিত্র হারাবে তখন কেয়ামতের জন্য অপেক্ষা করবে।' ইসলাম মানুষকে আদেশ করে সর্বদা সৎ থাকতে এবং কেউ যেন কারো সাথে প্রতারনা না করে।সৎ ও সত্যবাদি হতে শিখায় জীবনের সর্বক্ষেত্রে।এটি প্রতিফলিত হয় মানুষের প্রতিটি কাজে ও বিশ্বাসে।আমি যখন কোন কথা বলবো সত্য বলবো,আমি যখন কোন কিছু লিখবো সততার সাথে লিখবো এবং আমার আত্মা এর স্বীকৃতি দিবে যে তুমি সত্য বলছো।সততাই হলো একজন মানুষের পরিচালক জীবনের সর্বক্ষেত্রে।এই একবিংশ শতাব্দিতে যারা আমরা বাস করছি পৃথিবীতে,লক্ষ্য করলে দেখা যায় সততার একান্ত অভাব।ঘরে,কর্মক্ষেত্রে,অফিস -আদালতে কোথাও সততার চর্চা নেই।মিথ্যার অন্ধকারে সততা বিলীন হয়ে চলছে।দোষারোপ করা, কুৎসা রটনা, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা এ কাজগুলোর চর্চাই হচ্ছে সমাজে। আমাদের আদান প্রদানে সততার অভাব,আমাদের মিডিয়ার প্রোগ্রামগুলো অনেক কিছুতেই মিথ্যা প্রচারনা চালায় যার মাধ্যমে আমাদের অন্তর আত্মাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলছে।আমরা অনেকে ঘরে থেকেও আমাদের শিশুদের বলছি ফোনটি ধর ও বলে দাও বাবা ঘরে নেই।এ কথাটি শিশুটির জন্য একটি নেতিবাচক কথা ও মিথ্যে কথা যা শিখানো হলো তার কচি বয়সে।যখন কোন দাওয়াত এলো আর বলে দিলাম আমি এদিনে বুকড অথচ আমি জেনেই মিথ্যাটি বললাম।প্রায়ই অফিস থেকে এসে একলাখ টাকার বান্ডিল শিশুর সামনে স্ত্রীকে দিচ্ছে লকারে রাখার জন্য।শিশুটি স্কুলে গিয়ে বন্ধুর কাছে বা শিক্ষকের কাছে গল্প করে আমরা বাবা অনেক টাকা কামাই করে।শিশুটিকে প্রশ্ন করলে বলে,আমার বাবা অফিসার বা উকিল। এভাবে শুধু আমরাই মিথ্যার চর্চা করছি না,আমাদের উত্তরশূরিরা আমাদের কাছ থেকে শিখছে অসৎ কাজ কিভাবে করতে হয়।পরিনতিতে যে কাজটি হচ্ছে তা হলো সমাজে অসততার বিস্তার ঘটছে।
সততা ও সত্যবাদিতার সাথে একটি নিগূড় সম্পর্ক রয়েছে।সূরা আততওবার ১১৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে ঈমানদারগন! তোমরা সত্যবাদি লোকদের সাথে চল।' ইবনে কাছির এই আয়াতটির ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে,' সত্যবাদিতা এমন যে তুমি যেন ঐ সত্যবাদি লোকদের সাথে অবস্হান করছো যাতে তুমি যে কোন দুর্যোগ থেকে মুক্ত এবং তোমাকে সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত রাখে।' একজন সত্যবাদি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে এবং তার সবকিছু আল্লাহর উপর সমর্পন করে।রাসূল সা: ছিলেন এর সবচেয়ে বড় উদাহরন।মক্কার জাহেলিয়াত যুগে তাঁকে আল আমিন(বিশ্বাসী) বলা হতো।কাফের মুশরিকরা তাঁর বিরোধীতা করতো কিন্তু তারা মিথ্যাবাদি বলতোনা কারন তিনি কখনো আমানতের ক্ষেয়ানত করতেন না।যারা তাঁর বিরোধীতা করতো তারাই তাঁর কাছে তাদের মুল্যবান জিনিস আমানত রাখতো।একদিন রাসূল সা: মক্কায় সবাইকে ডেকে বললেন,'হে প্রত্যেক মক্কাবাসি!আমি যদি বলি পাহাড়ের পাদদেশে সৈন্য সামন্ত তোমাদের আক্রমন করতে আসছে তোমরা কি বিশ্বাস করবে? সবাই বললো আমরা বিশ্বাস করি কারন আমরা তোমাকে কখনো মিথ্যা বলতে শুনিনি।রাসূল সা: বলেছেন,' সত্যবাদিতা ভাল কাজের দিকে ধাবিত করে এবং ভাল কাজ জান্নাতে পৌঁছে দেয়।' একজন সৎ মানুষ হতে হলে তাকে দৈনন্দিন সৎ কাজ করতে হয় আর পরিনতিতে সে হয় একজন সৎ মানুষ ও তার স্হান হয় জান্নাতে।আর অসৎ কাজ মানুষকে দুষ্টলোকে পরিনত করে আর তার যায়গা হয় জাহান্নামে।সমাজে কি পরিমানে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।কথায় কাজে আজ মানুষ এক নয়।হাটে ঘাটে ,অফিস আদালতে,কলকারখানায়,রাজনীতির মাঠে,ব্যাক্তি পর্যায়ে একে অপরকে প্রতারিত করে চলছে।আল্লাহ পাক সূরা আত তাতফিকের ১-৬ আয়াতে এদের সম্পর্কে বলেন,'ধীক প্রতারনাকারিদের জন্য-যারা মানুষের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পুরা মাপ চায়।আর যখন তাদের মেপে দেয় তখন কম করে।তারা কি ভাবে না যে তারাই তো-তারা নিশ্চই পুনরুত্থিত হবে-ভীষন এক দিনে,যেদিন মানুষরা দাঁড়াবে বিশ্বজগতের প্রভুর সামনে?
দুনিয়ার এই ক্ষনস্হায়ী জীবনে নিজের কর্মকে সঠিক কর্মে রুপান্তরিত করা প্রত্যকের দায়িত্ব।এর জন্য অনুসরন করা দরকার আলকুরআন ও সূন্নাহকে।নিজের মর্জিমত ভাল কাজ করা যাহেজ নয়।যা সত্য তা বলতে হবে ও করতে হবে।একজন মানুষ নিজেকে নিজে জানে সে কেমন মানুষ।তার জন্য অন্য কারো দ্বারস্হ হওয়ার দরকার নেই।আমার আপনার ভাল কাজ সমাজে মধূর ঘ্রান ছড়াবে যদি আমরা সৎ মানুষ হই।ভাল কাজই বলে দিবে মানুষটি সৎ কি অসৎ।সুতরাং কোন নেতা নয়,মসজিদের ঈমাম নয়,আসল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার জন্য নিজের অন্তরকে প্রশ্ন করুন,নিশ্চই আপনার সার্টিফিকেট আপনি পেয়ে যাবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩২১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের মধ্যে এখন এই ধরনের মানসিকতাই ঢুকে গেছে যে কেবল ইমাম মুয়াজ্জিন রা ছাড়া বাকিরা সত্যবাদি নন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন